সিরিজা - একটি উপন্যাস aka রজতের কামলীলা_Written By Lekhak (লেখক) [চ্যাপ্টার ৩৩]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/09/aka-written-by-lekhak_94.html

🕰️ Posted on September 8, 2014 by ✍️ Lekhak

📖 5145 words / 23 min read


Parent
সিরিজা - একটি উপন্যাস Written By Lekhak (লেখক) ।। তেত্রিশ ।। দিবাকরের বুকে মাথা রেখে সিরিজা যখন ঘুমে অচৈতন্য, তখনই রজতের ঘুমটা গেল ভেঙে। সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ, তবুও যেন একটু আগেই ঘুমটা ভেঙে গেছে রজতের। পাশে দোলন শুয়ে আছে উলঙ্গ অবস্থায়। পা দুটোর একটা রজতের কোমরের ওপর তুলে দিয়ে ও অঘোরে ঘুমোচ্ছে। মোবাইল ফোনটা বালিশের তলা থেকে তুলে রজত ভাবছিল, দিবাকরকে একটা ফোন করবে কিনা? যদি সিরিজার সাথে একটু কথা বলা যেত। কাল রাতে দোলনের সাথে যৌনসঙ্গমের পরে, কি যেন একটা আশঙ্কায় মনটা অস্থির হয়ে রয়েছে তখন থেকে। দিবাকরকে বিশ্বাস করে সব বলে ফেলেছে রজত। কিন্তু সিরিজা? ও যদি সন্দেহের বশে ভুল বুঝে ফেলে রজতকে। দিবাকরের পেট থেকে রজতের ঐ ফোনে বলা কথাগুলো বের করে নিতে এক সেকেন্ডও দেরী হবে না সিরিজার। ভোলাবালা দিবাকর, সিরিজাকে সব বলে দিলে তখনই বিপত্তি। এমন সুখের সম্পর্কে চিড় ধরলে পাগল হয়ে যাবে রজত। সিরিজা রজতকে ছেড়ে চলে গেলে কাকে নিয়ে থাকবে রজত? এই দোলন ছুঁড়ীকে নিয়ে? এতো সিরিজার সিকি ভাগের যোগ্যতাও পাবে না কোনদিনও। মাগীটা এসে যেন রজতের সুখটাই দিল পন্ড করে। রজত ঘুম থেকে উঠে দোলনকে দেখছিল। দেখলো দোলনও এবার চোখ খুলেছে। পিট পিট করে তাকাচ্ছে ওর দিকে। উঠে বসে ন্যাকামো করে রজতের গলা জড়িয়ে দোলন বললো, "তুমি উঠে পড়েছো? আমাকে জাগালে না?" রজত বললো, "এই তো জেগেছো। এবার উঠে পড়ে কাপড়টা জড়াও দেখি। ওনাদের আসার টাইম হয়ে গেছে। তোমাকে এ অবস্থায় দেখলে কেলেঙ্কারী বেঁধে যাবে।" দোলন যেন কিছুই জানে না। ন্যাকামো করে রজতকে বললো, "কে আসবে গো?"  - "কেন তুমি জানো না? কাল রাতে তো অত কথা হল। সিরিজাকে তো যার জন্য পাঠিয়ে দিলাম। ওনারা আসবে বলেই তো এমনটা করতে হল, নইলে কি আর শুধু শুধু সিরিজাকে পাঠাতাম?" দোলন বেশ বিরক্ত হল, রজতের মুখে সিরিজার নামটাই আর সহ্য হচ্ছে না। ওকে মুখ ভেঙচে বললো, "ওফঃ খালি সিরিজা আর সিরিজা। এই সিরিজা যেন তোমার ঘাড়েই চেপে বসে আছে তখন থেকে। কি পাও তুমি সিরিজার থেকে? মেয়েমানুষের কি রূপটাই সব নাকি? ওর শরীর আছে, সুন্দর মুখশ্রী আছে, তাই বলে ওই শুধু ভালো, আর বাকীরা খারাপ? আমিও খারাপ?" সাত সকালেই রজতের মাথায় আগুন ছুটে যাচ্ছিলো, তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "কেন? আমি কি তোমার মন রাখিনি? কাল এ ঘরে তোমাকে আসার সুযোগ করে দিলাম। সারারাত আমার আদর খেলে। আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলে, নিজেও চটকালে, আমাকেও চটকাতে দিলে, এরপরেও মন ভরছে না?" দোলন রজতের দিকে ঠোঁটটা বাড়িয়ে বললো, "না মন ভরছে না, আমাকে চুমু খাও।" একটু ঠেলা মেরে দোলনকে রজত বললো, "না আর চুমু খেতে হবে না, অনেক হয়েছে।" দোলন বেশ নাছোড়বান্দার মতই বললো, "কেন? কি হল তোমার? কাল তো বেশ আদর করছিলে, এখন আবার করো।" রজত বললো, "তোমাকে বললাম না, একটু পরেই ওরা এসে পরবে, সকালবেলাই চুমু চুমু করে অস্থির করছো।" দোলন বললো, "কে আসবে গো?"  - "কাল অত করে পাখীপড়ার মতন বুঝিয়ে বললাম, সকালে উঠে না বোঝার ভান করছো, কারণটা কি জানতে পারি? তুমি জানো না, আমার বউ এসে পড়তে পারে, কিছুক্ষণের মধ্যে। তোমাকে দেখলেও কিছু হয়তো বলবে না, কিন্তু এ অবস্থায় দেখলে তোমার আর আমার কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছো?" দোলনের যেন খিল খিল করে হাসি রজতের কথা শুনে। ওর কাঁধে দুটো হাত রেখে বললো, "এখনও বউকে ভয়? এই বউ না তোমার দু চোখের বিষ। সিরিজার জন্য বউকে ত্যাগ করলে, আর আমাকে আদর করবে বলে বউকে তাচ্ছিল্য করতে পারছ না?" রজত পুরো রেগে অস্থির, দোলন তবু বললো, "এসো না গো, একটু আদর করো না। আমি ঠিক উঠে শাড়ীটা জড়িয়ে নেব গায়ে, ওরা আসার আগেই পড়ে নেব, কথা দিচ্ছি।" বলেই রজতের গলায় মুখটা ঘসতে লাগলো জোড়ে জোড়ে। জিভ ঠেকিয়ে রজতের থুতনীটা দিল একটু চেটে। রজত বললো, "এই তোমার স্বভাব। ইচ্ছে না থাকলেও জোড় করে ঘাড়ে পড়বে। রাতে আমার মাথাটা খেয়েছ, এখন সকালেও শুরু করে দিয়েছ ত্যাঁদরামি। উফ কি মেয়েছেলেই জুটেছে আমার কপালে।" দোলন চোখখানা বেশ পাকিয়ে বললো, "কি আমি ত্যাঁদোড়? রজত বললো, "হ্যাঁ, ত্যাঁদোড়ই তো। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই আমার মাথাটা খাচ্ছো। কোন মেয়েছেলে এমন হয় আমার জানা ছিলো না।" দোলন বললো, "আমাকে একটা চুমু খেতেই হবে। নইলে কিন্তু কিছুতেই কাপড় জড়াবো না গায়ে।" রজত মনে মনে বললো, সত্যি এমন বেয়াক্কেলে মেয়েছেলে দেখিনি কোনদিন। ও অনিচ্ছা সত্বেও দোলনের ঠোঁটে চুমুটা খেল। গাটা ঘিনঘিন করছিল, তবুও খেতে হল, দোলন তখন ওর ঠোঁটটা কামড়ে ধরে নিজেই প্রবল ভাবে চুষছে। সিরিজার ঠোঁটে যে মিষ্টি স্বাদটা ছিল, দোলনের ঠোঁটে ওটা নেই। অনেক রাত অবধি চুমু খেয়ে দোলনের ঠোঁট দুটোই এখন তেতো হয়ে গেছে। তেতো ঠোঁটে জিভ বোলাতে রজতের কিছুতেই ভালো লাগছে না। দোলন বললো, "এই শোনো, তোমাকে একটা কথা বলবো, রাগ করবে না?" রজত বললো, "রাগের কথা হলে রাগ তো করবোই। আমাকে রাগিয়ে দিলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।" দোলন কি যেন বলতে যাচ্ছিলো সিরিজা বলে। রজত ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "আবার সিরিজা কেন? নিজেই তো বললে। যাও এখন কাপড়টা জড়াও তাড়াতাড়ি। বলছি না ওরা এক্ষুনি এসে পড়বে।" যাচ্ছি যাচ্ছি, বলে দোলন বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। কিন্তু সিরিজার নাম করে যে কথাটা বলতে চাইছিল, সেটা আর বলা হল না। বিছানায় বসে রজত এবার একটা সিগারেট ধরালো। দোলন বাথরুমে ঢুকেছে। ও বেরিয়ে আসার আগেই দিবাকরকে ফোন করে সিরিজার সাথে কথাটা সেরে নিতে হবে। রজত দিবাকরকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলো, দেখলো দিবাকরের মোবাইল সুইচ অফ বলছে, তার মানে ওর ঘুম এখনও ভাঙেনি। দোলন ছুঁড়িটা এখন কাছে নেই। সাতসকালে এই সুযোগে কথাটা বলে নেওয়া যেত। নইলে রজত জানে দোলন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেই চেঁচামেচি শুরু করে দেবে। ওকে বাঁধা দেবে, হাত থেকে ফোনটাও কেড়ে নিতে পারে। ঐ মেয়েকে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই। কেন যে ঘুমটা এখনও ভাঙেনি দিবাকরের, রজত বুঝতে পারছে না। ও একটু অধৈর্য হয়েই ফোনটা পাশে রেখে সিগারেট টানতে লাগলো জোরে জোরে। ভাবছিল, দোলন ঘরে আসার আগেই আরো একবার চেষ্টা করে দেখে নিতে হবে। যদি ঘুম থেকে উঠে দিবাকর মোবাইলটা অন করে ফেলে। সিরিজার সাথে কথাটা বলে নিতে পারলে মনটাও তখন একটু হালকা হয়ে যাবে। টেনশনে সিগারেটটা এত জোরে টানতে লাগলো যে প্রচন্ড বিষম খেয়ে এবার খুক খুক করে কাশতে লাগলো রজত। দোলন বাথরুম থেকেই বললো, "কি হলো তোমার?" রজত বললো, "কিছু হয়নি এমনি।" দু তিনবার কেশে নিয়ে রজত আবার দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করতে লাগলো। দেখলো ফোনটা এবার বাজছে, তার মানে দিবাকর ঘুম থেকে উঠেছে এইমাত্র। দিবাকরের মাথার কাছেই ফোনটা রাখা ছিল। ফোনটা ও অন করেই শুয়েছে রাত্রে। রজত তখন চেষ্টা করে দিবাকরকে ধরতে পারেনি, সিগন্যালে কিছু প্রবলেম ছিল। ফোনটা বাজা মাত্রই দিবাকরের ঘুমটা ভেঙে গেল। কিন্তু সিরিজা চোখ খুললো না। দিবাকরকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে রইলো বিছানার ওপরে। কাম অন কাম অন দিবাকর। প্লীজ পিক আপ দ্য ফোন। রজত অস্থির হয়ে পড়েছে। দিবাকর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রজত ফোন করেছে, ও রিসিভ করলো না। দু তিনবার বাজার পর, ফোনটা কেটে দিল। সাত সকালে রজতের চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। ফোন করছে দিবাকরকে, অথচ ও ধরছে না। এর মানে কি? বিরক্তি মুখ নিয়ে ও আবার চেষ্টা করতে লাগলো। দিবাকর এবার মোবাইলটা সুইচ অফ করে দিল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দোলন ঢুকেছে ঘরে। রজতকে বললো, "কাকে ফোন করছো শুনি?" রজত বিরক্তিমাখা মুখ নিয়েই বললো, "কাউকে নয়।" দোলন এবার একটু খেঁকিয়ে উঠে বললো, "কাকে করছো বলো। নিশ্চয়ই সিরিজাকে?" রজত বললো, "কি হবে তোমার অত জেনে? সব সময় মাথা খাও। যাও নিজের কাজ করো গিয়ে।" দোলন বিছানার ওপরো উঠে, ছোঁ মেরে রজতের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছুটে পালালো পাশের ঘরে। পেছনে ওকে তাড়া করেছে রজত। দোলনকে বললো, "ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। শীগগীর ফোনটা আমার হাতে দাও।" দোলন কিছুতেই ওকে দেবে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছুটে চলে গেছে রান্নাঘরে। রজত ওর হাত থেকে ওটা কাড়ার চেষ্টা করছে। দোলন গায়ে জড়ানো শাড়ীটা টান মেরে খুলে ফেলে আবার উলঙ্গ হয়ে গেল রজতের সামনে। রজত বললো, "একি তুমি? এটা কি হচ্ছে?" দোলন বললো, "কেন? এবার কেমন লাগে? নাও। নাও আমার হাত থেকে ফোনটা নাও। আমিও এই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো, তোমার বউ আসা না অবধি।" একহাতে মোবাইলটা ধরে উলঙ্গ শরীরটা চিতিয়ে দোলন ফিক ফিক করে হাসছে। রজত চেষ্টা করেও ফোনটা কেড়ে নিতে পারছে না। এমন মেয়ের কপালে পড়েছে, যে ওর অবস্থা একেবারে খারাপ করে ছেড়ে দিচ্ছে।  - "তুমি শাড়ীটা আবার খুলে ফেললে?" দোলন বললো, "তুমি যতবার সিরিজার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে, আমি ততবারই খুলে ফেলবো।"  - "বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না দোলন। সবকিছুর তো একটা সীমা আছে। এক্ষুনি ওরা এসে পড়বে। আমি এতো করে বললাম, আবার তুমি উলঙ্গ হলে।" দোলন দেখলো রজত আর ফোনটা নেবার চেষ্টা করছে না ওর হাত থেকে। ফোনটা হাতে ধরেই রজতকে জাপটে ধরে এবার ওর ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। ঠোঁট কামড়ে, গাল চেটে ওর চুমু খাওয়ার বহর কিছুতেই কমছিল না। একটা পা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই রজতের কোমরের ওপর কিছুটা তুলে দিয়ে বললো, "সিরিজাকে ফোন করবে? করো না। আমি না করবো না। তার আগে আমার ভেতরে তোমার ওটা একটু ঢোকাও। আমাকে করো। আমি কাপড়ও জড়িয়ে নিচ্ছি। ফোনটাও তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।"  - "কি? এভাবে রান্নাঘরে?   -- "হ্যাঁ কি হল তাতে? তোমার তো পাজামা পরা আছে। করতে কি অসুবিধা হবে তোমার?" কি করবে রজত বুঝতে পারছে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোলন এভাবে ওকে সঙ্গম করার জন্য জোর করছে। ও পাজামাটা কিছুটা নামিয়ে লিঙ্গটা বের করে দোলনের গর্তে ঢোকাতেই যাচ্ছিলো। এমন সময় শুনলো দরজায় কলিং বেলের শব্দ। তারমানে শ্বশুর বউ দুজনেই বোধহয় এসে গেছে কাপড় চোপড় ফেরত নেবে বলে। মাথা একেবারে খারাপ হবার জোগাড়। রজতের শ্বশুড় মনে হয় এসে পড়েছে এখনই। দোলন তখনও উলঙ্গ শরীরটা দিয়ে জাপটে ধরে রেখেছে রজতকে। মুখে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে রজত দোলনকে খেঁকিয়ে বললো, "দেখলে তো? কি কান্ড বাধালে। এবার কি করবো আমি? শিগগীর ভেতরের ঘরে গিয়ে কাপড়টা পরে নাও। ওনারা যদি এসে থাকেন, এক্ষুনি সাংঘাতিক কান্ড বেঁধে যাবে ঘরের মধ্যে।" কলিংবেলের শব্দ শুনে দোলনও কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। গায়ে পড়ে পীরিত করাটা আপাতত হল না। রজতের চোখ দুটো বড় হয়ে এমন গোলগোল হয়ে গেছে, দোলন ভাবছে, এক্ষুনি বোধহয় ওকে আস্ত খেয়ে ফেলবে। রজত আবার ওকে সাবধান করে দিয়ে বললো, "বলছি না যাও। শুনলে না কলিংবেলের শব্দ। ওরা এসে পড়েছে।" ধ্যাতানি খেয়ে দোলন তখুনি ঘরের মধ্যে ছুটে চলে গেল। শাড়ী, ব্লাউজটা জড়িয়ে কোনরকমে পরিস্থিতিটা সামাল দেবার চেষ্টা করছে। রজত দরজাটা না খুলে আরো একটু অপেক্ষা করতে লাগলো, যতক্ষণ না দোলন শাড়ীটা আবার গায়ে জড়িয়ে না নিচ্ছে ও চুপচাপ দরজা না খুলে দাঁড়িয়ে রইলো। বউ, শ্বশুড় দুজনে যদি একসাথে এখন এসে থাকে। ঘরে ঢুকে সটান চলে যাবে শোবার ঘরে। ও ঘরে দোলন যে অবস্থায় রয়েছে, ঠিকমত শাড়ীটা পরার সময়ও পাবে না তখন। কলিংবেলটা আবার বাজছে। রজত ভেতরের ঘরে মুখ বাড়িয়ে দোলনকে বললো, "হয়েছে? আমি দরজা খুলতে যাচ্ছি।" দোলন বললো, "হ্যাঁ। কাপড় পরে নিয়েছি।" রজত বললো, "তুমি রান্নাঘরে চলে যাও এক্ষুনি। ততক্ষন চায়ের জল বসিয়ে, অন্য কিছু করতে থাকো। আমি ওদের ভেতরে ঢুকিয়ে বাকী কাজগুলো সেরে নিচ্ছি।" দোলন, রজত দরজা খোলার আগেই আবার রান্নাঘরে চলে গেল। শ্বশুড় মশাই তার একমাত্র কন্যাকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন। রজত এটাই আশঙ্কা করেছিল। দরজা খোলামাত্রই দেখলো বাপ-মেয়ে দুজনে একেবারে সাত সকালেই এসে হাজির হয়েছেন। রীতা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর, আবার অনেকদিন বাদে ওর মুখটাকে দেখা। রজত রীতাকে দেখেও যেন না দেখার ভান করলো। শ্বশুড়ের দিকে তাকিয়ে বললো, "আপনারা এসে গেছেন তাহলে? ভালোই হল। এবার যা নেবার নিয়ে নিন। আজ না এলে আপনাদেরই পরে অসুবিধা হত।" ঘরে ঢুকেই রীতা একবার তাকালো শোবার ঘরের দিকে। তারপরই ওর চোখটা পড়লো রান্নাঘরের দিকে। শাড়ীপরা একটা মেয়ে কি যেন ভেতরে করছে। মুখটা একঝলক দেখে নিয়েই রীতা চিনতে পেরেছে মেয়েটাকে। বেশ কিছুদিন আগে একটা কাজের লোকের কথা বলে, তারপরই এ বাড়ী ছেড়ে চলেগেছিল রীতা। কিন্তু ও এখানে কি করছে? তবে কি..... শোবার ঘরে না ঢুকে সোজা রান্নাঘরের দিকে গিয়ে রীতা দাঁড়ালো, দোলনের সামনে। ওকে বললো, "কি ব্যাপার? তুমি এখানে? চিনতে পারছো?" দোলন পিছনে ফিরে রজতের বউকে দেখে বললো, "ও বৌদি। কেমন আছেন? আপনাকে কতদিন পরে দেখলুম।" রীতা বললো, "হ্যাঁ সেটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?" প্রথমে কিছুটা আমতা আমতা করলেও সেয়ানা মেয়ের মতো নিজেকে সামলে নিয়ে দোলন বললো, "ঐ যে আপনি বলেছিলেন? কাজের লোক। তাই চলে এলাম কাজ নিয়ে।" রীতা বললো, "সে তো অনেকদিন আগের কথা দোলন। তুমি বলেছিলে, কেউ একজন আছে। বলে দেখবে। কিন্তু এখন দেখছি তুমি নিজেই....." দোলন বললো, "যাকে বলেছিলাম, সে তো রাজী হল না বৌদি। কি করবো? নিজেরও কাজের একটা দরকার ছিল। দাদাবাবুকে বললাম, দাদাবাবু রাজী হয়ে গেল। এসে দেখলাম, আপনিও নেই। তাই মনটা একটু খারাপ হচ্ছিল।" রীতা এবার বেশ গম্ভীর ভাবে বললো, "তুমি কবে এসেছো এখানে?" দোলন দেখলো অবস্থা একটু বেগতিক। প্রথমে একটু ঢোঁক গিলে, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "আমি? এই তো কালকে। কালকে এসেছি।" রীতার কপালে চিন্তার ভাঁজ। দোলনকে বললো, "কালকে এসেছো?" এদিকে রীতা ভাবছে, রজত বলেছে ওর বাবাকে, সে নাকি থাকবে না অনেকদিন। ফাঁকা বাড়ীটায় দোলন একা থাকবে? হঠাৎ ওকে কাজে রাখার অর্থ কি? শ্বশুড় মশাই সোফায় বসে পড়েছেন। মেয়েকে বললেন, "কার সাথে কথা বলছিস? কে ও?" রীতা সামনে এসে বললো, "ওকে আমি চিনি। ওর নাম দোলন। এই আশেপাশেই থাকে। কাজের লোকের কথা বলেছিলাম, এখন দেখি নিজেই এখানে এসে হাজির হয়েছে।" নিজের স্বামীকে রীতা যতটা চেনে, আর বোধহয় কেউ নয়। রজতের দিকে আড়চোখে তাকালো। মনে মনে বললো, "এটাই শেষ অবধি বোধহয় বাকী ছিল। যা গুল খেলালে তুমি। এখন মেয়েটাকে ঘরে এনে নিশ্চয়ই ফুর্তী মারাচ্ছো?" রজত ওর শ্বশুড়কে বললো, "আপনারা তাহলে যা নেবার নিয়ে নিন। শোবার আলমারীতেই রীতার সব কাপড়চোপড় আছে। সযত্নে রাখা রয়েছে। আলমারী আমি খুলিও নি। যেমনকার জিনিষ, তেমনিই রয়েছে ভেতরে।" বাপ এবার মেয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। রজত বললো, "যা করার তাড়াতাড়ি করে নিন। আমাকে আবার বেরোতে হবে এক্ষুনি। বন্ধুর বাড়ী যাবো, ওখানে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।" রীতা দেখলো, রজত ওর দিকে তাকাচ্ছে না, ভাবখানা এমন আপদ তাড়াতাড়ি বিদায় হলে ভালো হয়। বাবার পাশেই সোফাটার ওপর বসে পড়লো রীতা। মেয়েকে বাবা বললেন, "কি হল বসে পড়লি? কাপড়গুলো নিবি না?" রীতা বাবার কথার জবাব দিচ্ছে না। রজতের দিকে তাকিয়ে আছে। রজত মুখটা একটু অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে শ্বশুড়কে বললো, "আপনার মেয়েকে বলুন, একটু তাড়াতাড়ি করতে। আমার অন্য কাজ আছে।" রীতা মনে মনে বললো, "কাজ না ছাই। তোমার কাজ মানে তো শুধু মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তীকরা। মেয়েটাকে বাড়ীতে কাজে রেখেছো কেন, সেকি আর আমি বুঝি না? আমি নেই, সাপের পাঁচপা দেখেছো তুমি। এরপরেও আর কত নীচে নামবে রজত? ভেবেছিলাম, নিজেকে শুধরে নিলে আবার হয়তো ফিরে আসবো। কিন্তু তুমি যা চীজ, মরে গেলে শকুনেও ছোঁবে না তোমাকে।" রজত দেখলো রীতা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বড় বড় করে ওকে দেখছে। মনে মনে বললো, "যাবি তো যা না, কে তোকে ধরে রেখেছে। ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে, আবার পীরিত পাকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।" শ্বশুড় মশাই দুজনকে একপলক দেখে নিলেন, বুঝলেন, মেয়ে এখনি কোন বেফাঁস কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেই রজত সঙ্গে সঙ্গে রিয়্যাক্ট করে উঠবে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "সে রজত যা ভালো মনে করেছে, তাই করেছে। ওর হয়তো কাজের দরকার ছিল, রজত তাই ওকে রেখেছে। তোর এখন এসব দেখে লাভ কি?" রজত মুখটা আবার অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। শ্বশুড়মশাই বললেন, "তা যাচ্ছো কোথায়? আমি তো ভেবেছিলাম কদিন বাদে আসবো। তুমি তাড়া লাগালে তাই বাধ্য হলাম আসতে।" রজত মুখটা আবার শ্বশুড়ের দিকে ঘুরিয়েছে, কিন্তু জবাব দিতে চাইছে না। বিরক্তি আর অসহ্য লাগছে। ঠিক সেই সময় দোলন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো, "আপনারা চা খাবেন তো?" শ্বশুড় মশাই দোলনের দিকে একবার তাকালেন। রীতাও তাকালো। রজত দেখলো দোলন শাড়ীটা জড়িয়েছে গায়ে, কিন্তু কোমরের ওপর গিটটা এমন ভাবে জড়িয়েছে, পেট নাভি সব দেখা যাচ্ছে। রীতা এসব দেখতে অভ্যস্ত নয়। মেয়ের দিকে তাকিয়ে শ্বশুড় বললেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ। খাবো। চা খেতে অসুবিধে কি? তবে আমারটা চিনি ছাড়া। সুগারের রুগী আমি। চায়ে চিনি খাই না।" মেয়ে বললো, "আমার জন্য করতে হবে না। আমি চা খেয়েই বেরিয়েছি।" দোলন এবার তাকালো রজতের দিকে। রজত বললো, "যাও চা করে নিয়ে এসো। আর শুধু চা নয়, বিস্কুটটাও সাথে এনো।" ঘাড়টা নেড়ে, পাছা নাড়তে নাড়তে দোলন আবার রান্নাঘরে চলে গেল। শ্বশুড় মশাই বললেন, "আগের দিন যখন এসেছিলাম, তোমার সেই বন্ধুকে দেখলাম। স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিল। কি যেন নাম?" রজত বললো, "দিবাকর।"  -- "হ্যাঁ হ্যাঁ দিবাকর। চলে গেছে ওরা?" রজত বললো, "হ্যাঁ ওতো সেদিনই চলে গেছে। আমি অফিস থেকে ফিরে দেখলাম, আপনারা নেই। দিবাকর বললো, আপনারা নাকি অপেক্ষা করেননি। নইলে তো সেদিনই ঝেমেলা মিটে যেত।" সাতসকালে যতসব বেমতলব কথাবার্তা। রজতের মেজাজ খারাপ হতে লাগলো, তারপরও শান্ত থাকার চেষ্টা করে বললো, "আপনি চা টা খেয়ে নিন। ততক্ষনে নয়, আপনার মেয়ে শাড়ীগুলো গুছিয়ে নিক। কিসে নিয়ে যাবেন? সুটকেশ, ব্যাগ কিছু এনেছেন?" শ্বশুড় তাকাচ্ছে তার মেয়ের দিকে। রজত বললো, "আগের দিনই তো সব ঝেমেলা মিটিয়ে নিতে পারতেন। তা না, শুধু শুধু আপনাদেরই দেরী হল।" এবার রীতা বললো, "নিয়ে যাবো বলেই তো এসেছিলাম। যা সব ন্যাকা ন্যাকা কর্তাবার্তা শুনলাম, আমার আর বসবার ভক্তি হল না। যেমন বন্ধু, তেমনি তার বউ।" শ্বশুড় মশাই বাধা দিয়ে বললেন, "আঃ থাক না। ওসব কথা এখন তুলে কি লাভ? তুই যে জন্য এসেছিস, সেটাই করে নে বরঞ্চ গিয়ে। ও বলছে, ওকে নাকি আবার বেরোতে হবে। শুধু শুধু দেরী করিয়ে লাভটা কি বলো?" মেয়ে সোফা ছেড়ে ওঠার নামই করছে না। রজত এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললো, "দেখুন, আমি আগেও বলেছি, আবারো বলছি, আমার কিন্তু অত সময় নেই। ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই বেরোতে হবে আমায়। আজ যদি এগুলো না নেন, আর কিন্তু পাবেন না সহজে। পরে তখন আমাকে দোষ দেবেন না।" রজত কথাটা বলা মাত্রই রীতা সোফা ছেড়ে উঠে পড়লো। বাবাকে বললো, "সেই ভালো বাবা। আজ বরং ওগুলো নিয়ে লাভ নেই। উনি ফিরে এলেই, তারপর না হয় আবার আসবো। তুমি চা টা খেয়ে বাইরে আসো। আমি না হয় ততক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করছি।" রজতের চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। রীতাকে বললো, "এটা একটু অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে না। থেকে থেকেই আমাকে বিরক্ত করা। তারপর আবার নিজের খামখেয়ালি মত ডিসিশন চেঞ্জ করা। আমার কি অন্য কোন কাজ নেই? নাকি এই করে যাবো চিরকাল ধরে?" রীতা যেন গায়ে পড়ে ঝগড়া করার একটা সুযোগ পেয়েছে ভালোমতন। রজতকে বললো, "কাকে কি বলছো তুমি? নিজের মুখটা আয়নায় দেখো গিয়ে একবার ভালো করে। লজ্জ্বা করেনা? বাড়ীতে মেয়ে এনে ফুর্তী করার মত জঘন্য মানসিকতার লোক তুমি, নিজের চরিত্রের কি বাকি আছে কিছু? মেয়েমানুষ নেওটা পুরুষের আবার বড় বড় কথা। কি ভাবো আমায়? আমি কি কিছু বুঝি না? কি করতে মেয়েটাকে কাজে রেখেছো, এই কদিনে কটা মেয়েছেলেকে নিয়ে ফুর্তী করেছো, সবই জানা আছে আমার। আমি কি করবো না করবো, সেটা তি তোমার হুকুমে নাকি? ওতো আমারই মর্জি। চেষ্টা করেও যাকে শুধরোতে পারলাম না, সে আবার বড়বড় কথা বলছে আমাকে। " শ্বশুড় মশাই রীতাকে বললেন, "আঃ রীতা হচ্ছেটা কি? পুরোনো কথা তুলে আবার কেন ঝেমেলা বাড়াচ্ছিস? যে কাজে এসেছি, সেটা করে নিলেই তো সমস্যা মিটে যায়।" রীতা ওর বাবাকে বললো, "তুমি চুপ করো। যা বলছি, ঠিকই বলছি। তুমি কি ওর হয়ে ওকালতি করছো আমার সঙ্গে?" রজত চুপ হয়ে রয়েছে, কোন কথা বলছে না। রীতা বললো, "বেশী কথা আমিও বলতে চাই না। এসব বাজে লোকের সাথে মুখ লাগানো আমার কাজ নয়। যে কাজে এসেছিলাম, সেটা এখন করবো না। পরে যদি সুযোগ হয়, আসবো। নইলে কাপড় পড়ে থাক এখানে। কে আসছে বারে বারে?" রজত এবার রীতার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো, "শোনো, যা বলার তুমি কোর্টে বোলো। এখানে এসব কথা তুলে কোনো লাভ আছে কি? ডিভোর্সের নোটিশ তো পাঠিয়েছ, আমি কি করবো না করবো, তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? রজত কারুর চোখ রাঙানির ধার ধারে না। আমার যা ইচ্ছে তাই করবো। হু দ্য হেল আর ইউ? যে আমাকে শাসন করছো?" রীতা রজতের দিকে চোখমুখ পাকিয়ে বললো, "মুখ সামলে কথা বলো, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।"  -- "উফ, তোরা কি শুরু করলি বল দেখি।" শ্বশুড় মশাই এবার মেয়ে জামাই দুজনকেই ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। রজত বললো, "দেখলেন তো, আমি ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম, আপনারা আমার পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছিলেন। কাল যখন ছেলেটাকে হাতে নাতে ধরে ফেললাম, আপনি অস্বীকার করছিলেন। আমার পেছনে লোক লাগিয়ে আপনারা কি প্রমাণ করতে চাইছেন, জানি না। আমি খারাপ। আমার চরিত্র খারাপ। মেয়েমানুষ নিয়ে ফুর্তী করি, এসব জেনেই তো রীতা এ বাড়ী ছেড়ে চলেগেছিল। তাহলে আবার এখন এসব কথা তুলে লাভ কি? দ্য চ্যাপ্টার ইজ ক্লোজড। এন্ড দ্য ম্যাটার ইজ ফিনিজড। এবার আমাকে আমার মত থাকতে দিন, আর আপনারাও আপনাদের মত থাকুন।" শ্বশুড় মশাই এবার বললেন, "তুমি না বুঝে অনেক কিছু করেছো রজত। সেগুলো নিয়ে আমাদেরও তো কিছু বলার থাকতে পারে। রীতা তোমাকে কিছু বলতে চাইছে। তুমি যদি শোনো, তাহলে আমিও বলতে পারি।" রজত বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, "কি শুনবো? কি বলবেন? সেই তো একই ঘ্যানঘ্যানানি।" শ্বশুড় মশাই এবার একটু গম্ভীর মুখে বললেন, "সিরিজা বলে কোন মেয়ে এসে ছিল তোমার কাছে? বেশ কিছুদিন।" রজত যেন আকাশ থেকে পড়লো। অবাক হয়ে বললো, "সিরিজা? কে সে? তাকে আপনারা চেনেন?" শ্বশুড় মশাই বললেন, "মেয়েটা সন্মন্ধে আমরা অনেক খবর জোগাড় করেছি। তোমাকে বলতেই তো এসেছিলাম। কিন্তু তুমি যদি অবুঝ হও। তাহলে তো কিছু বলার নেই।" রজত এবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ওদের দুজনের দিকে। বউ আর শ্বশুড় দুজনেই তখন রজতকে দেখছে, সিরিজা নামটা শোনা মাত্রই রজতের মুখটা কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেছে। দোলন ঠিক তখনই চায়ের কাপটা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ওদের সামনে। রীতা বলছে, "কি হল? সিরিজার নাম শুনে মুখ যে একেবারে শুকনো হয়ে গেল তোমার? মিষ্টার রজত মল্লিক, সিরিজার নাম শুনেই তুমি কাঁপছো? নিজেকে ভীষন চালাক ভাবো, তাই না? আর বাকীরা সব বোকা? তুমি যদি চলো ডালে ডালে, তাহলে জেনে রেখো তোমার এই বউও চলে পাতায় পাতায়।" থতমত খেয়ে গেছে দোলনও। চায়ের কাপ হাতে ধরে বোকার মত শুধু চেয়ে আছে ওদের দিকে। রীতা কি করে সিরিজার ব্যাপারটা জানলো, সেটা দোলনও বুঝতে পারছে না। কিছুটা দুশ্চিন্তা আর বেশ কিছুটা অবাক হয়ে যাওয়া। দুটো মিলে মিশে রজত এমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল, ভাবলো, এ আবার কি ঝামেলা। সিরিজার নাম, বাপ বেটী দুজনে এক সাথে জানলো কি করে? সন্দেহের তীরটা গিয়ে পড়লো দোলনের দিকে। কটমট করে বেশ কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা এসে থেকে অবধি নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। রীতাকে যদি লাগিয়ে থাকে তাহলে ওই লাগিয়েছে। সিরিজাকে রজতের জীবন থেকে এইভাবেই ও সরিয়ে দিতে চায়। দোলন বুঝতে পারছে রজত ওকে সন্দেহ করছে। চায়ের কাপটা হাতে ধরে মাথা নেড়ে রজতকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, "আমি না, আমি না। আমি বলিনি। অন্য কেউ....." রজতের ইচ্ছে করছিল দোলনকে এক ধাক্কা দিয়ে কাপটা চূড়মাড় করে মাটীতে ফেলে দিতে। কিছুক্ষণ রেগে মেগে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে, রীতা আর শ্বশুড়ের দিকে ফিরে বললো, "হ্যাঁ, সিরিজা আমার কাছে ছিল। তো? আপনাদের তাতে কি?" রীতা খেঁকিয়ে উঠে বললো, "ছিলো মানে? কোথাকার একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরের মধ্যে তুমি যা খুশীতাই করেছো। আবার বলছো তাতে কি?" রজত এবার রীতাকে বললো, "কে বলেছে তোমাদেরকে সিরিজার কথা? দোলন?" দোলন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মুখ কাচুমুচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন সব তড়পানি শেষ। রীতা ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "দোলন বলতে যাবে কেন? সিরিজার কথা আমাকে অন্য একজন বলেছে।" রজত বললো, "কে সে? নামটা একবার শুনি।" রীতা জবাব না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। একটু আগে দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছে রজত। দিবাকর ফোনটা ধরেনি। মনে হল ইচ্ছে করেই যেন লাইনটা কেটে দিয়েছে। কে যে শত্রুতা করছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। রজতের সেই মূহূর্তে মনে হল, সিরিজাকে নিজের ঘরে পেয়ে দিবাকর কি তাহলে এই গেমটা খেললো? শ্বশুড় মশাই আর বউয়ের কানে কথাটা তুলে দিয়ে রজতকে এমন কোনঠাসা করে দেওয়া, যাতে রজত সিরিজার দিকে আর হাত বাড়াতে না পারে। বোকার মত রীতাকে বলে বসলো, "ও তার মানে দিবাকর বলেছে এই কথা?" রীতা বললো, "দিবাকর? ও তোমার সেই গুনধর বন্ধু। সেদিন যে বউ নিয়ে এসেছিল? না না সে কেন বলবে? আমাকে বলেছে অন্য একজন।" রজত বেশ অবাক হচ্ছে। সিরিজার নামটা এরা বলছে। অথচ সিরিজা যে আসলে কে? এরা এখনও কেউ ধরতে পারেনি। সেদিন সিরিজাকে, দিবাকরের সাথে বাপ মেয়ে দুজনেই তো দেখেছে। দিবাকরের সত্যিকারের বউ হিসেবেই ধরে নিল। অথচ সেই মেয়েই যে সিরিজা সেটা এখনও জানতে পারলো না। তাহলে সিরিজার নামটা এদের কানে তুললো কে? রজত বললো, "গোয়েন্দা লাগিয়ে ভালোই খবর জোগাড় করেছেন দেখছি। ট্যাক্সি থেকে নামবার সময় একদিন দেখলাম, ছাতা মাথায় দিয়ে একটা লোক আমার এই গলি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেদিন বুঝেছিলাম, আপনিই এসেছিলেন। কাল ঐ ফড়িংটার কলার ধরলাম। ওকেও আপনারা পাঠিয়েছিলেন। আমি কোন মেয়েছেলে নিয়ে এ বাড়ীতে রয়েছি, সব তথ্য জোগাড় করেছেন। নামটাও জেনেছেন। কাপড় চোপড় নেওয়ার নাম করে বারবার আমাকে তাগাদা কেন মারা, এসবতো এখন খুব ভালোমতই বুঝতে পারছি। সিরিজার জন্য গা জ্বলে যাচ্ছে আপনাদের।" রীতা হঠাৎই বলে বসলো, "মেয়েটাকে কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছ? ভেবেছিলাম তো, আজ সকালে এসে ওকে দেখতে পাবো। আমরা আসার আগেই গায়েব করে দিলে? লাজ লজ্জা নেই, চরিত্রহীন একটা পুরুষ তুমি, আমাদের জন্য তোমার এত ভয়? না হয় মেয়েটাকে একবার দেখতাম। সেও নিশ্চয়ই তোমার মত চরিত্রহীনা হবে।" রজত দাঁত মুখ খেঁচিয়ে বললো, "তুমি নিজে কি?" শ্বশুড় মশাই রীতাকে বললো, "আহ্ চুপ করো না। ওর নিজের ভালো ও নিজেই বুঝবে। তোর ওতে কি?" রজত এবার বললো, "হ্যাঁ, এবার কাপড় চোপড় নিয়ে আপনারা এখান থেকে পাতলা হন তো। আমার অনেক কাজ আছে।" রীতা বললো, "কেন? সিরিজাকে আনতে যাবে বুঝি? তোমার তো কাজ বলতে ওটাই।" শ্বশুড় মশাই ঘড়ি দেখছেন, যেন কারুর আশার জন্য উনি অপেক্ষা করছেন। রজত দোলনকে বললো, "আর সামনে দাঁড়িয়ে কি হবে? চা কেউ খাবে না। যাও, ওটা ভেতরে রেখে এসো।" দোলন চায়ের কাপটা নিয়ে আবার ভেতরে চলে গেল। রজত ওদের দুজনকে বললো, "আপনারা কাপড় চোপড় যখন নেবেন না। তাহলে এবার আসুন। আমি আমার কাজ সারি।" রীতা দড়াম করে দরজাটা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাবাকে বললো, "বাবা তুমি এসো। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।" রীতা বেরিয়ে যাবার পর শ্বশুড়মশাই রজতকে বললেন, "কিছু মনে কোরো না বাবা। বোঝো তো ও তো আমার একমাত্র মেয়ে। রাগে মাথার ঠিক রাখতে পারছে না। ও তো তোমায় ভালো বেসেছিল। কি করবে? দেখছে তুমি যখন ওকে চাও না, রাগ করে আমার কাছে চলে এলো। কারন না থাকলে কেউ কি ঘর ভাঙতে চায়। তুমি রীতার দিকটা একদম চিন্তা করছো না।" রজত দেখছে শ্বশুড় মশাই এবার অন্য সুরে কথা বলছে। মেয়ের জন্য দরদ একেবারে উতলে পড়ছে। হঠাৎ এমন নরম মনোভাব নেওয়ার কারনটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। শ্বশুড়কে বললো, "আপনার মেয়ে আমার সাথে না থাকলেই সুখী হবে। ভালোই তো করেছে। আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখানে থাকলে বরং বেশী কষ্ট পেতো। আমার চরিত্রটা যে খারাপ তাই না?" শ্বশুড় মশাই রজতকে বললো, "তুমি কি রীতাকে এখনও ভালোবাসো?" রজত অবাক হয়ে বললো, "কেন বলুন তো?" শ্বশুড় বললো, "না যদি একবার ভেবে দেখতে, রীতাকে বলে আমি ডিভোর্স কেসটা উইথড্র করে নিতাম। বাপ হয়ে মেয়ের জীবন নষ্ট করতে, আমিও কি চাইতে পারি, তুমি বলো না?" রজত বললো, "কেন, মেয়ের আবার বিয়ে দিয়ে দিন। তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আজকাল অনেকেই তো ডিভোর্সের পরেও বিয়ে করছে। এর আর এমন কি? রীতার জন্য আপনি আমার চেয়ে অনেক ভালো পাত্র পেয়ে যাবেন।" শ্বশুড় মশাই কি যেন ভাবলেন। তারপর রজতের দিকে চোখ বড় বড় করে বললেন, "সে না হয় হলো। কিন্তু তুমি তাই বলে ঐ বিবাহিত মেয়েটার সাথে, যার কিনা একটা বাচ্চাও আছে। স্বামীকে ছেড়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছে। তাকে নিয়ে বাকী জীবনটা কাটাবে?" টেনশনটা যতটা কেটে গিয়েছিল, এখন আবার নতুন করে মনের মধ্যে জমা হচ্ছে। রজত অবাক হয়ে শ্বশুড়মশাইকে বললো, "আপনারা ওর সন্মন্ধে এত খবর জোগাড় করেছেন। কি করে করলেন, আমি সেই ভেবেই তো অবাক হচ্ছি। এসব তথ্য জোগাড় করার জন্য প্রচুর পয়সা খরচা করেছেন বলেই তো মনে হচ্ছে। সিরিজা বিবাহিত, গ্রাম থেকে এসেছে, ওর বাচ্চা আছে। কিছুই জানতে বাকী নেই। কে আপনাদের এসব বললো বলুন তো? একমাত্র দিবাকর ছাড়া আর তো এই ব্যাপারটা কেউ জানে না। দোলনও যখন বলেনি, তাহলে কে আপনাদের বললো?" কেমন যেন একটা ধোঁয়াশা তৈরী হচ্ছে। রজত বুঝতে পারছে না, সাত সকালে বাপ মেয়ে এসে রজতকে যেমন নাকানি চোবানি খাওয়াচ্ছে, এরা যে আদৌ কি করতে চাইছে, সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না। একবার বলে, ঘর করবে না, আবার এসে বলছে, ঘর করার ইচ্ছা রয়েছে। মাথামুন্ডু বাপ মেয়ের মতিগতি বোঝাই তো দায় হয়ে পড়েছে। সন্দেহটা দূর করার জন্য ও আবার দোলনকে ডাকলো রান্নাঘর থেকে।  - "এই যে দোলন, এসো একটু এদিকে।" দোলন সামনে এলো। রজত দোলনের দিকে তাকিয়ে বললো, "সিরিজা সন্মন্ধে তুমি তো সবই জানো?" দোলন বললো, "হ্যাঁ।"  - "কিন্তু ইনারা দুজনে সিরিজা সন্মন্ধে যা বলছে, সবই তো মিলে যাচ্ছে। তুমি যখন বলোনি। তখন বললোটা কে?" দোলন ফট করে চেঁচিয়ে উঠে বললো, "ঐ তোমার বন্ধুটাই বলেছে গো, বদমাইশ, ওই সিরিজাকে এখন কব্জা করেছে।" শ্বশুড় মশাই অবাক হয়ে বললো, "বন্ধু মানে কে? ঐ দিবাকর?" রজত দোলনকে ধমক দিয়ে বললো, "তুমি চুপ করো। যা জানো না, কেন শুধু শুধু কথা বলো?" দোলন চুপ করে গেল। রজত এবার ওর শ্বশুড়কে বলতে লাগলো, "দেখুন, আমি চাই না, আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আপনারা বাবা, মেয়েতে অত বেশী মাথা ঘামান। একটা মেয়ে আমার কাছে এসেছিল, যে আমার কাছে ছিল। মেয়েটাকে আমার ভালো লেগে গেছে। এ তো হতেই পারে। তা বলে আপনাদের এত রাগ হবার কিছু নেই। সিরিজা গ্রাম থেকে এসেছে, ওর বাচ্চা আছে, স্বামী আছে। ওসব আমিও জানি। আমি তো জেনেবুঝেই সব করেছি। খামোকা একই কথা বারবার তুলে আপনারা আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছেন? এ বিষয়টা না তুললেই ভালো হয় না? আমি তো আপনার সব কথার উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার যেটা ইচ্ছে সেটা করবো। এখানে আপনারও কিছু বলার নেই। আপনার মেয়েরও কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এখন আপনার মেয়েও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে কি করে বেড়াচ্ছে, আমি কি দেখতে যাচ্ছি? তাহলে আপনারাই বা শুধু শুধু সিরিজার কথা কেন তুলছেন?" হঠাৎ রীতা ঘরের মধ্যে আবার চলে এল। এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়েছিল। ঘরে ঢুকে হঠাৎই নিজের বাবাকে বললো, "বাবা, কেন ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছো? আগুন নিয়ে খেলছে ও। যা খুশি করুক, ওকে করতে দাও না। তোমার অত কি? যাকে বলে কোন লাভ হয় না। তাকে অত বোঝাবার চেষ্টা করতে নেই। গাড্ডায় তো পড়েছে। এবার যখন বেধরক ধোলাই খাবে, কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না।" রীতিমতন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো রজত। বউকে বললো, "তুমি কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো রীতা। বাড়বাড়ির একটা লিমিট আছে।" রীতা বললো, "দাঁড়াও না, দাঁড়াও। লোকটাকে একটু পরে আসতে দাও। তোমার সব তড়পানি বেরিয়ে যাবে একটু পরে।" রজত বললো, "কে আসবে কে? কার কথা বলছো?" রীতা বললো, "এখন বলব কেন? আর একটু অপেক্ষা করো। সব পর্দা ফাঁস হবে একটু পরে।" রজতের শ্বশুড় বললো, "না না এসব ঝেমেলার মধ্যে আমাদের থেকে লাভ নেই। চল চল রীতা। আমরা বরং চলে যাই। ওর ঝেমেলা ওই মেটাবে।" রীতা বললো, "আমি তো তখন থেকেই বলছি চলো। খামোকা একটা ফালতু লোকের সাথে মুখ লাগাতে গেলে কেন তুমি? চলো বাড়ীতে যাবো, আমার অনেক কাজ আছে।" বাপ, মেয়ে দুজনেই এবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মুখটা কাচুমুচু করে রজত বসে আছে। কে আসবে? কার কথা বলে চলে গেল, রজত কিছুই বুঝতে পারছে না। সকালবেলা দিনটাই যেন খুব বাজে ভাবে শুরু হল। এসবের মধ্যেও দিবাকর যদি ফোনটা অন্তত ধরত, তাহলে নয় স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু ও যে দেখছি, বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এটা একটা রহস্য। বাপ মেয়ে সিরিজার সন্মন্ধে এত কথা জানার কারণটা কিছুতেই ও ধরতে পারছে না। দোলন একটু ন্যাকামো করে, রজতকে বললো, "দেখেছো তো? সিরিজা তোমার কত বড় বোঝা। সাধে কি বলেছিলাম? তোমাকে এখন বিপদে ফেলে দিয়ে কায়দা করে এখান থেকে সরে পড়লো।" রজত বললো, "দোলন, আমার মাথায় কিন্তু এখন রক্ত চড়ে রয়েছে। আমাকে আর রাগিও না।" দোলন চুপ করে গেল। রজত দেখলো, সিরিজাকে এই ব্যাপারটা জানানো দরকার। ও আবার দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করতে লাগলো। দিবাকরের ফোনের সুইচ যথারিতী বন্ধ। সাত সকালে যেন পীরিত হচ্ছে এখন সিরিজাকে নিয়ে। জামাটা গলিয়ে নিয়ে রজত বললো, "না, এখন আমাকে যেতেই হবে।" দোলন বললো, "কোথায়?" রজত বললো, "দিবাকরের বাড়ী যাবো। সিরিজাকে সব জানাতে হবে।" দোলন মুখ ভেঙচে বললো, "এতো কিছু পরেও আবার সেই সিরিজা!" রজত ধমকে বললো, "তুমি চুপ করো। আর আমি না আসা অবধি ঘরে অপেক্ষা করো। কেউ এলে দরজা খুলবে না। আমি ঘন্টা তিনেক পরে আবার চলে আসবো।" দোলনকে ঘরে রেখেই বেরিয়ে গেল রজত। ট্যাক্সি ধরে তাড়াতাড়ি দিবাকরের বাসায় পৌঁছোতে হবে। কাল রাতে দিবাকরের সাথে সিরিজা চলে যাবার পর থেকেই, মনটা উসখুস করছে। এক ঘেয়ে জীবনটা থেকে কাটানোর মুক্তি, বাঁধভাঙা যৌন স্রোতে ভেসে যাওয়ার আনন্দ, সবই যা হয়েছিল সিরিজার আবির্ভাবে, আজ যেন সবাই তাকে নিয়ে হিংসা করছে। তোয়াক্কাহীন জীবন কাটানোর যে স্পর্ধা দেখিয়েছিল রজত, আজ সেখানে মাথা গলাচ্ছে ওর শত্রুরা। রজত সিরিজাকে সারাজীবনের জন্য ভোগ করবে, এখানেই যেন তাদের প্রবল আপত্তি। কেউ চায় না এই আনন্দটুকু ওকে প্রাণভরে নিতে। সে দোলনই হোক, দিবাকরই হোক বা হোক রজতের স্ত্রী আর শ্বশুড় মশাই। নিজস্ব ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে এত চোখ রাঙানি, এও কি সহ্য হয়? সবাই যেন কোনঠাসা করে দিতে চাইছে ওকে। এখন নতুন উপদ্রব কোন এক অজানা শত্রু। যে সব ব্যাপারে লাগিয়েছে রীতা আর ওর বাবাকে। ট্যাক্সিতে যেতে যেতে রজত ভাবছিল, সিরিজাকে তো আগে নিয়ে আসি। তারপরে এ রহস্যের সমাধান করবো। গাড়ীতে যেতে যেতেই ও আবার দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলো। দিবাকর ফোন অফ করে রেখেছে। চোয়াল শক্ত করে রজত মনে মনে বললো, "ফোন অফ করে রেখে তুই কি আমায় ফাঁকি দিতে পারবি দিবাকর? সিরিজাকে পাবার স্বপ্ন তুই ছেড়ে দে। আমি পৌঁছোচ্ছি এখুনি। হাত ধরে টেনে নিয়ে আসবো ওখান থেকে, তুই কিছুই করতে পারবি না।" ট্যাক্সিটা অনেকদূর চলে গেছে। রজতের ফ্ল্যাটে দোলন একা। বসার ঘরে বসে বসে দোলন ভাবছে, সিরিজা যদি ফিরে আসে তাহলে ও আবার কি নাটক শুরু করবে। যাও বা লোকটাকে নিয়ে চটকাচটকি হয়েছিল কাল রাতে, সুযোগের সদ্ব্যবহারটা হতে হতেও পুরো হল না। সাতসকালে বউ আর শ্বশুড় এসে পন্ড করে দিল পুরো দিনটাই। হাতে একটা ম্যাগাজিন তুলে দোলন উল্টে পাল্টে ভেতরের ছবিগুলো সব দেখছে। সদর দরজার কলিংবেলটা হঠাৎই বেজে উঠলো। দোলন ভেতর থেকে চেঁচালো, "কে?" বাইরে থেকে কর্কশ গলায় একজন বললো, "দরজা খোল হারামজাদী, নইলে আমি কিন্তু ভেঙে ঢুকবো।" দোলন ভয় পেয়ে বললো, "কে আপনি?" লোকটা বললো, "আমি সিরিজার স্বামী। দরজা খোল। নইলে লাথী মেরে দরজা আমি ভেঙে দেবো।"
Parent