সিরিজা - একটি উপন্যাস aka রজতের কামলীলা_Written By Lekhak (লেখক) [চ্যাপ্টার ২৩]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/09/aka-written-by-lekhak_91.html

🕰️ Posted on September 8, 2014 by ✍️ Lekhak

📖 5922 words / 27 min read


Parent
সিরিজা - একটি উপন্যাস Written By Lekhak (লেখক) ।। তেইশ ।। সিরিজার বুকে মুখ রেখে রজত ঘুমে আচ্ছন্ন। সিরিজাও তাই। সকাল যে অনেক আগেই হয়ে গেছে, ওরা দুজনের কেউই জানে না। সাতসকালেই দোলন আসবে বলেছিল। আসেনি। রজত, সিরিজার দুজনের কারুরই ঘুম ভাঙেনি। দোলন ভোরবেলা না আসার ফলে আরও কিছুক্ষণ নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর অধিকার পেয়ে গেছে রজত। ওর গভীর নিঃশ্বাসটা পড়ছিল সিরিজার বুকের খাঁজের ওপর। সিরিজার বুক দুটোও নিঃশ্বাসের সাথে তালে মিলিয়ে উঠছিল আর নামছিল। বিছানায় একটু পাশ ফিরে রজতের পিঠের ওপর তখন সিরিজার একটা হাত। রজতের হাতটা ঠিক সিরিজার কোমরের ওপরে। চোখদুটো দুজনেরই বোজা। গভীর নিদ্রায় মগ্ন। ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে শুয়েছিল দুজনে। অ্যালার্ম বেজে গেছে অনেকক্ষণ। কিন্তু ঘড়ি ওদের দুজনকে ঘুম থেকে জাগাতে পারেনি। ঠিক এই মূহূর্তে দোলন যদি এসে পড়ে, তবেই যদি ওদের ঘুম ভাঙে। রাত্রে শোবার ঠিক আগে, আরও একপ্রস্থ সিরিজার শরীরটাকে আদর করেছে রজত। সিরিজা বাধা দেয় নি। রজত বলছিল, "দোলন যতদিন এ বাড়ীতে থাকবে, তোমাকে আদর সোহাগ কিছুই করতে পারবো না দিনের বেলাটায়। যা হবে রাত্রিরে। পাশের ঘরে দোলনের শোবার ব্যাবস্থা করে, এঘরে তুমি আর আমি। আমরা দুজন। তোমাকে আদর করতে না পারলে, আমার যে কি কষ্ট হবে সিরিজা, তোমাকে কি করে আমি বোঝাবো?" রজত ঠিক করে রেখেছিল, দোলন এলে আজই একবার দিবাকরের বাড়ী থেকে ঘুরে আসবে। সিরিজার কথা মতন দিবাকরকে যদি একবার রাজী করানো যায়। তারপর এই দোলনটাকেও রাজী করাতে হবে এবং সময়মত ভাগাতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সিরিজা রাজী হয় নি। বলেছিল, "না, এখনই যেও না। ওকে দুদিন অন্ততঃ এখানে থাকতে দাও। নইলে ও বেঁকে বসতে পারে। তাছাড়া তোমার শ্বশুর মশাই যেভাবে এখানে যাওয়া আসা শুরু করেছে, আমরা দুটো মেয়ে এই বাড়ীতে একা একা থাকলে আরও বিপদ।" রজতের যেন ঝঞ্জাট এর শেষ নেই। এই একটা সমস্যার এখনও কূল কিনারা করতে পারেনি ও নিজেই। শ্বশুর মশাই হঠাৎ এসে দুটো মেয়েকে একসাথে দেখলে যে কি কেলোর কীর্তি ঘটবে তা নিয়ে ও বেশ আতঙ্কিত। সিরিজার শরীরটার সাথে নিজের শরীরটা মিলিয়ে দেবার পর শুধু টেনশনটা কেটে যায়। কথায় বলে যৌনসঙ্গম অনেক দুশ্চিন্তা দূর করে। রজতের বাকী জীবনে সিরিজাই এখন আশা আর ভরসা। দোলনের এখানে থাকার ব্যাপারটা নিয়ে গল্প করতে করতেও ওদের অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। সিরিজা বারবার রজতকে আস্বস্ত করেছে। দোলনকে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। সিরিজাই ঠিক এর একটা উপায় বার করবে। মেয়েটা নাকি খুব কথা বলে। সিরিজাই বলছিল, "বকবকানি একবার শুরু হলে থামতেই চায় না। সিরিজাকে সাথে পেলে ওর বকবকানিটা আরও বাড়বে।" রজত ঠিক করে রেখেছে দোলন যখন সিরিজার সাথে বকবক করবে, তখন ও পাশের ঘরে বসে টিভি দেখবে। দুটো কানে তুলো গুঁজে রাখবে, যাতে মাথা না ধরে। দোলন একটু অন্যমনস্ক হলে, ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও গেলে বা চানে ঢুকলে তখন সিরিজাকে যত পারবে আদর করবে। দিনের বেলার মনস্কামনাটুকু যতটা সম্ভব পূরণ করে নেবে। তক্কে তক্কে থাকতে হবে। সুযোগ এলে, সেটাকে হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই। দোলনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুখটুকুকে মাঝে মধ্যে ভোগ করে না নিলে রজতেরই বা চলবে কি করে? ঠিক চোখ দুটো বোজার সময় রজত বললো, "কাল যদি দোলন একটু বেলা করে আসতো, তাহলেই তো ভালো হতো। তুমি আর আমি, দুজনে বেশ কিছুক্ষণ আরও শুয়ে থাকতে পারতাম। তা না শুধু শুধু ভোর ভোর এসে বিরক্ত করা।" দোলন আসে নি। রজতের ইচ্ছাটাই পূরণ করেছে। সিরিজাকে আরও একটু জড়িয়ে ধরে ঘুমের মধ্যেই ওর বুকের আরও গভীরে মুখ রাখার চেষ্টা করছিল রজত। ঠিক এই সময়ই দোলন এলো ঘুম ভাঙাতে। দরজায় প্রবল জোড়ে কড়া নাড়ল বার দুয়েক। সিরিজা, রজতের দুজনেরই ঘুমটা ভাঙল। বিছানায় বসে বুকের ব্লাউজ লাগাতে লাগাতে সিরিজা বললো, "আসছি দোলন আসছি। দাঁড়া একটু।" বুকের ব্লাউজটা গলিয়ে শায়া আর শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে নিতে যত সময়। দোলনেরও তর সইছে না। আরও একবার কড়া নেড়েছে। সিরিজা রজতকে বললো, "তুমি শুয়ে থাকো। তোমাকে উঠতে হবে না। আমি ওকে ঘরে ঢোকাচ্ছি।" তড়িমড়ি করে ঘুম থেকে উঠেছে। শাড়ীটা ভালো মতন গায়ে জড়িয়ে না নিলে দোলন আবার কি ভাববে? সিরিজা শাড়ীটা জড়িয়ে এগিয়ে গেল দরজা খুলতে। রজত সিরিজার বদলে এবার পাশ বালিশটা জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে থাকলো। দরজায় খুলতেই দোলন সিরিজাকে বললো, "এখনও ঘুম ভাঙেনি তোমার? আমি তো বেলা করেই এলাম। ভাবলাম একটু দেরী করেই যাই। এখনও যে দিব্যি শুয়ে আছ ভাবিনি।" ঘরে ঢুকে দোলন বললো, "দাদাবাবু বুঝি এখনও ঘুমোচ্ছে? আমি এসেছি, এবার বোধহয় ঘুম ভেঙে যাবে।" সিরিজা ওর কথা শুনে ঘাড় নাড়লো। ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে দোলন। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "নাও এবার তোমার পোলাটাকে ধরো, আসল মা'কে দেখতে না পেয়ে বেচারার মন ভালো হচ্ছে না কিছুতেই।" সিরিজা একটু ইতস্তত করছিল। দোলন বললো, "ধরো এটাকে, এটা তো তোমারই বাচ্চা। আসল মা'কে ছেড়ে নকল মায়ের কাছে, আর কতদিন ভালো লাগবে?" সিরিজা দুহাত বাড়ালো। বাচ্চাটাকে নিজের কোল থেকে সিরিজার কোলে দিয়ে দিল দোলন। চোখদুটোকে কাতুমুতু করে বাচ্চাটা সিরিজাকে দেখছে। একটু পরেই ভ্যা করে কান্না জুড়ে দিল। সিরিজা দোলনকে বললো, "এটাকে তুইই ধর। আমার কোলে থাকতে ওর এখন ভালো লাগছে না।" দোলন আবার বাচ্চাটাকে নিয়ে যথারীতি আদর করতে লাগলো। সিরিজাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, "তোমার আপদ মরদটা যখন এসেছিল, খুব চিন্তায় পড়ে গেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে। তুমি নেই, ঘরে তোমার বাচ্চা রয়েছে আমার সাথে। এদিকে আমার স্বামীটাও পালিয়েছে আমাকে ছেড়ে। একা একা ওকে নিয়ে কি যে করি? তার ওপর ঐ শয়তানটা থেকে থেকে খালি এসে আমায় বিরক্ত করছে। ভাগ্যিস এই দুধের শিশুটাকে একবারও দেখতে পায়ে নি। নইলে আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে পালাতো।"  - "তুই কি ওকে ঘরে লুকিয়ে রেখে ছিলিস?"  -- "আমি তো তোমার স্বামীকে ঘরের ভেতরেই ঢুকতে দিই নি। নইলে কি আর ও টের পেত না? বলেছি, সিরিজা ওর বাচ্চা নিয়েই চলে গেছে এখান থেকে। কোথায় গেছে আমি জানি না। ভাগ্যিস ও তখন কেঁদে ওঠেনি। নইলে?" বাচ্চাটার গালে চুমু খেতে লাগলো দোলন। ওকে আদর করতে লাগলো। সিরিজাকে বললো, "তোমার বাপু শখ কম নয়। স্বামীকে ছেড়ে, আমার ঘাড়ে বাচ্চা ফেলে দিয়ে দিব্যি এখানে এসে রয়েছ। দাদাবাবুর সাথে খুব পিড়িত হয়েছে না তোমার?" দোলনের মুখে যেন কিছু আটকায় না। সিরিজা বললো, "আমি তো ভাবিনি, দাদাবাবুর বউ নেই এখানে। এসেছিলাম যখন, তখন থেকেই তো নেই। আমাকে বললো, তুমি থেকে যাও এখানে। একটু ঘরের কাজকর্ম আর রান্নাবান্নাটা করে দিলে আমারই সুবিধা হয়। তাই....."  -- "তাই তুমি থেকে গেলে। দাদাবাবুও সুবিধে হলো, আর তোমারও থাকার একটা জায়গা হলো। আর আমি যে ওদিকে কি জ্বালায় মরছি তুমি জানো?" দোলনের কোলে ফিরে গিয়ে বাচ্চাটার তখন কান্না থেমেছে। ওকে একটু দোল খাওয়াতে খাওয়াতে দোলন বললো, "তোমার বাচ্চাটাকে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম জানো। তুমি যখন এটাকে আমার হাতে তুলে দিলে, খুব আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু সব গন্ডগোল পাকালো আমার স্বামীটা। ওর পছন্দ হয় নি তোমার বাচ্চাটাকে। খালি আমায় বলো তো, তুমি সিরিজার বাচ্চাটাকে মানুষ করার দায়িত্ব নিলে কেন? ও তো আমাদের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে পালালো। আমি যতই বলি, না সিরিজা দেয় নি। আমিই চেয়ে নিয়েছি ওর কাছ থেকে, ততো রাগ দেখাতো আমার ওপরে। বলতাম, আমাদের তো বাচ্চাকাচ্চা হয় নি। তাই দুজনে মিলে এটাকেই মানুষ করি না ক্ষতি কি?" কিন্তু আমার কথায় মন গলতো না ওর। খালি দোষারোপ করতো, আর গালাগালি খিস্তি খেউর করতো মুখে। সেইজন্যই বোধহয় পালিয়ে গেল আমাকে ছেড়ে। সিরিজা দুহাতটা বাড়ালো আবার। দোলন কে বললো, "দে, আমাকে আর একবার দে।" দোলন সিরিজার বাচ্চা সিরিজাকে আবার ফেরত দিল। মুখ নিচু করে সিরিজা এবার ওকে আদর করতে লাগলো। বাচ্চাটা এবার কাঁদলো না। শুধু সিরিজার দিকে চেয়ে থাকল একদৃষ্টে। মায়ের প্রতি যেন অভিমান নেই। দুধের শিশু ও আবার মায়ের পিরিত বুঝবে টাকি?  - "তোর স্বামীটা কোথায় গেল বলতো তোকে ছেড়ে?"  -- "জানি না।"  - "তোর সাথে অশান্তি করতো? রাত বিরেতে বাড়ী ফিরতো?"  -- "তা তো করতই। তলে তলে কারুর সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে কিনা আমিই বা কি করে বুঝবো?"  - "তুই আগে থেকে কিছু বুঝতে পারিস নি?"  -- "কি করে বুঝব? না বললাম তো। নিশ্চয়ই কোনো মাগীর খপ্পরে পড়েছে বোধহয়। জানতে পারলে তো আর আস্ত রাখতুম না।" সিরিজা বাচ্চাটাকে আদর করতে করতেই দোলনকে সান্তনা দিতে লাগলো। বললো, "চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।" দোলন একটু অবাক করে দিয়েই সিরিজাকে বললো, "তুমি আছো, দাদাবাবু আছে। আমার আবার চিম্তা কি? এই যে এখানে আজ থেকে এখানে গ্যাট হয়ে বসলাম, সহজে নড়ছি না এখান থেকে!" সিরিজা একটু ভূরু কূঁচকে দোলনের দিকে তাকালো। দোলন ওর মন রেখে এবার বললো, "তোমার অবশ্য দোষ কিছু আমি দেখি না। যা মদ্য মাতাল স্বামী তোমার। ওরকম স্বামী আমার থাকলে, আমিও তোমার মত ঘর ছেড়ে স্বামী ছেড়ে পালিয়ে আসতুম।" বাচ্চাটা চোখ বুজে এবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে। সিরিজা মুখ নিচু করে ওকে চুমু খেলো। স্নেহের চুম্বন করছে। মায়ের আদরে স্নেহ মমতায় ভরিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। দোলন দূর থেকেই ওকে বললো, "আমি তো বুকের দুধ ওকে খাওয়াতে পারি না। তোমাকে ছেড়েই তো আমার কাছে রয়েছে। কাছে যখন পেয়েছ, একটু বুকের দুধ খাওয়াও না ওকে। বুকের দুধ পেটে পড়লে, তখন দেখবে থাকতে পারবে না তোমাকে ছেড়ে।" সিরিজা বাচ্চাটাকে বুকে ধরে দোলনের কথা মতন ব্লাউজটা খুলতে লাগলো আস্তে আস্তে। বাচ্চাটাকে বুকে ধরে স্তনের বোঁটাটা ঢুকিয়ে দিল ঠোঁটের মধ্যে। ঘুমন্ত অবস্থাতেই বাচ্চাটা চোখ বন্ধ করে মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে। রজতের মত আগ্রাসী নয়। শান্ত, ধীর চিত্তে। যেন কামনার হাহাকার নেই। পাপের পঙ্কিল পরশও নেই। বাচ্চাটাকে বুকে চেপে ধরে স্তন নিঃসৃত করে ভরিয়ে দিচ্ছে সিরিজা। ঠিক মা আর শিশুর চিরন্তন যুগলবন্দী ছবি। রজত ঘরে ঢুকেছে কখন ঘুম থেকে উঠে সিরিজা, দোলন কারুরই খেয়াল নেই। ঘুম চোখে হাঁ করে দেখছে রজত। সিরিজা ব্লাউজের একপাশটা খুলে স্তন বের করে বাচ্চাটাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। বাচ্চার দেখাদেখি ওরও ইচ্ছে করছে কিছুটা। ভাবমূর্তি প্রকাশ পেলেও মুখে কিছু বলতে পারছে না কারন সিরিজার সাথে দোলনও রয়েছে ঐ ঘরের মধ্যেই।  -- "ও দাদাবাবু এসেছেন? ঘুম ভেঙেছে আপনার?" দোলনই প্রথম নজর করলো রজতকে। সিরিজা মুখটা তুলে এবার তাকালো রজতের দিকে। রজতের করুন মুখ দেখে ওর মুখে একটু মুচকি হাসি।  বাচ্চাটাকে বুকে ধরেই বললো, "দোলন এসেছে কিছুক্ষণ আগে। জিজ্ঞেস করছিল দাদাবাবুর ঘুম ভেঙেছে কিনা?" রজত চোখ দুটো হাত দিয়ে রগড়ে আবার সিরিজার দিকে তাকালো। তখনও ওর বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। সিরিজাকে বললো, "ও তো বলেছিলো আরও সকাল সকাল আসবে। দেরী করে এলো?" জবাবটা দিল দোলনই। বললো, "কাল আপনারা দুজন অনেক রাত করে শুয়েছেন, আমি জানি। সেইজন্যই একটু দেরী করে এলুম। এই আর কি।" রজত মনে মনে ভাবল, "আমরা দেরী করে শুয়েছি, সেটা দোলন জানল কি করে? ও কি সিরিজা আর আমার সম্পর্ক নিয়ে কিছু সন্দেহ করছে? মেয়েদের মনে হিংসার অভাব নেই। সিরিজা আমার সাথে বহাল তবিয়তে রয়েছে সেটা ওর সহ্য নাও হতে পারে।" উল্টে ওই দোলনকে বললো, "আমরা তো তোমার জন্য তাড়াতাড়িই শুয়েছি কালকে। তুমি ভোর ভোর আসবে। সিরিজাও বললো, দশটার আগে শুয়ে পড়তে। আমিও তাই শুয়ে পড়লাম। কিন্তু তুমি দেরি করে আসবে, আমিও ভাবিনি।" বাচ্চাটাকে তখনও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে সিরিজা। রজত যেন কিছুই দেখেনি এমন ভাব করে ঢুকে গেল বাথরুমে। দোলনকে বললো, "বসো, আমি চোখ মুখ ধুয়ে আসছি।" সিরিজা দেখছিল দোলনকে। রজতের ফ্ল্যাটটাকে ভালো করে দেখছিল দোলন। রান্নাঘর, বাথরুম, বসার ঘরে চোখ বুলিয়ে দৃষ্টিটা সটান চলে গেল রজতের শোবার ঘরের দিকে। সিরিজাকে বললো, "দাদাবাবু ঐ ঘরে শোয়। আর তুমি?" সিরিজার মুখ থেকে কথা বার করতে চাইছে দোলন। চটপট উত্তর না দিয়ে সিরিজা একটু রয়ে সয়েই বললো, "তোর কি মনে হয়? কোথায় শুই?" দোলনও চালাক কম নয়। সিরিজাকে বললো, "নিশ্চয়ই দাদাবাবুর সাথে?" দোলনকে এবার মোক্ষম জবাবটা দিল সিরিজা। বললো, "তুই শুবি আজ থেকে ও ঘরে, দাদাবাবুর সাথে। আমি না হয় এ ঘরে।" দোলন কিছুটা অপ্রস্তুত। সিরিজার মুখ থেকে এমন মনরাখা কথা শুনেও ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। সাত সকালে রজতের ফ্ল্যাটে এসে ও সিরিজাকে বেশ কোনঠাসা করে দিয়েছে, এই ভেবে কি বলবে সেটাই ভাবছিল। সিরিজা সঙ্গে সঙ্গে বললো, "আমি তো প্রথম দিন এ ফ্ল্যাটে এসে এ ঘরেই শুয়েছিলাম। দাদাবাবু একা একা ও ঘরে শুয়েছিল। দ্বিতীয় দিন দেখলাম, ঘুমের ঘোরে হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করে দিয়েছে তোর দাদাবাবু। আমি এ ঘর থেকে ছুটে গেলাম ও ঘরে। দেখলাম ঘুম ভেঙে প্রচন্ড ঘামছে দরদর করে। আমি চোখে মুখে জল দিলাম। এক গ্লাস জল এনেও খাওয়ালাম। তাও দেখি কেমন যেন হাঁসফাস করছে। বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গেল। তারপরই ধড়াস করে মেঝেতে পড়ে গেল। রাত বিরেতে আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। দাদাবাবু বললো, "বাক্সে ওষুধ আছে, আমাকে এনে দাও।" আমি দিলাম, তাও দেখি চোখ দুটো ওপরের দিকে করে কেমন যেন করছে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আমি মেয়েমানুষ, দাদাবাবুর এই অবস্থায় কি করবো? বুদ্ধি করে দাদাবাবুর এক বন্ধুকে ফোন করলাম। খুব ভালো লোক। নাম দিবাকরদা। উনি এলেন ঐ অতরাত্রেই একেবারে ডাক্তারবাবুকে সাথে নিয়েই। ডাক্তার বাবু সব দেখে বললেন, আসলে উনি মানসিক ভাবে একটা শখ পেয়েছেন। স্ত্রীর জন্য চিন্তা করেই ওনার এমন দশা হয়েছে। বউ যখন নেই তখন রাত্রে একা শুতে দেওয়াটা ঠিক হবে না। ওনার সাথে কেউ শুলে বা কাছাকাছি থাকলে ভালো হয়। তাই আমি তারপর থেকে এঘর থেকে ওঘরে। দাদাবাবুর এখনও রাত বিরেতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়। আমাকে তখন পাশে বসে সেবা শুশ্রষা করতে হয়। এই আর কি।"  -- "হুম।" দোলন মনে মনে বললো, "গল্প বেশ ভালোই ফেঁদেছো! তোমার সত্যি জবাব নেই সিরিজা!" এবার একটু সিরিজাকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্যই বললো, "তাহলে আজ থেকে দাদাবাবুর সেবা শুশ্রষা আমি করবো বলছো?" সিরিজাও ঘাবড়ে যাওয়ার মেয়ে নয়। দোলনকে বললো, "কেন করবি না? আমি তো বলেই দিলাম তোকে। শুধু সারারাত না ঘুমিয়ে তোকে জেগে বসে থাকতে হবে। আমি যতটা কষ্ট করি। তুই যদি করতে পারিস কর। আমার আপত্তির কি আছে?" দোলন চোখ কপালে তুলে বললো, "তুমি সারারাত জেগে বসে থাকো? ঘুমোও কখন তাহলে?"  - "আমি দুপুরবেলাটা ঘুমোই। তোর দাদাবাবু অফিসে চলে যায় তখন। দিনের বেলাটা এই ফ্ল্যাটেতো আমি একাই থাকি। কিছুক্ষণ ঐ টিভিটা চালিয়ে দেখি তারপর ঘুমিয়ে পড়ি। তোর দাদাবাবু অফিস থেকে ফেরে সন্ধেবেলা। তখন চা করে খাওয়াই।" দোলন দেখছে রজত এবার বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বলছে, "সিরিজা এবার চা টা করো। আমরা সবাই মিলে খাই।" বাচ্চাটাকে অনেকক্ষণ ধরে বুকের দুধ খাইয়েছে সিরিজা। দোলনকে বললো, "নে, তুই এবার ছেলেটাকে ধর। আমি চায়ের জলটা বসিয়ে দিয়ে আসি।" রান্নাঘরে ঢুকল সিরিজা। রজত তখন সামনের সোফাটায় বসে পড়েছে। দেখলো দোলন বেশ কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখছে। বেশ চমকে দেবার মতন প্রশ্ন করলো এবার রজতকে। - "দাদাবাবু, তোমার বউ কেন চলে গেল?" যেন সিরিজা ভালো করে তালিম দিয়েছে রজতকে। দোলনকে সেভাবেই বললো, "অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে বোধহয়। আমার মত লোককে আর পছন্দ হল না তাই।"  -- "তুমি বৌদিমনিকে আটকালে না কেন?"  - "আটকালেও ও থাকতো না দোলন। ও সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল।"  -- "কিন্তু আমাকে যে বলেছিল....."  - "কি বলেছিল?" রজতের পিলে চমকে দেবার মত দোলন এবার বলে উঠলো, "আমার কাছে বৌদিমনির ফোন নম্বর আছে। ফোন করবো?" বেশ ভয় পেয়ে গেল রজত। দোলনকে বাধা দিয়ে বললো, "না না, তুমি ফোন করবে কেন? আমিও ওর সাথে আর ঘর করতে চাই না।" হঠাৎই একটু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল দোলন। রজত ওর আশাতে জল ঢেলে দিল। দোলনকে বললো, "তুমিও ভুলেও ফোন করবে না বুঝেছো? আমার ওকে নিয়ে আর কোন মাথাব্যাথা নেই। যে গেছে তাকে নিয়ে আর কষ্ট পেতে চাই না আমি।" ধমকানিতে যা অবস্থা হয়। দোলন একটু সিঁটিয়ে গেল। তবু বললো, "আসলে বৌদিমনিই তো আমাকে কাজের লোকের কথা বলেছিল। সিরিজাকে পেয়ে গেলাম। ওকে বললাম, তুমি বৌদিমনির ফ্ল্যাটে চলে যাও। কিন্তু এখানে এসে দেখছি সব ওলোটপালট হয়ে গেছে।" দোলনকে একটু ঠেস মেরে রজত বললো, "সিরিজা আসাতে তো আমার সুবিধাই হয়েছে। ও না থাকলে আমি ভীষন বিপদে পড়ে যেতাম। রাত্রিবেলায় আমার জন্য ডাক্তার ডাকা। ওষুধ এনে দেওয়া, আমার বন্ধুকে খবর দেওয়া, সব তো সিরিজাই করেছে। তোমার বৌদিমনি তখন কোথায়? আমার তো উপকারই হয়েছে সিরিজা আসাতে।" বাথরুমের ভেতর থেকে সিরিজা আর দোলনের কথাগুলো যে কান খাড়া করে রজত শুনছিল, সেটা দোলনও বুঝতে পারেনি। প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিয়ে রজত এবার বললো, "আমি সব জানি। সিরিজাই আমাকে বলেছে। যে তুমিই নাকি ওকে আমার বাসায় পাঠিয়েছ। তারপর থেকে তোমার কথা আমি প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতাম সিরিজাকে। তোমার কাছে সিরিজার বাচ্চা রয়েছে। সে খবরও আমি সিরিজার কাছ থেকে নিয়েছি। মেয়েটা স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছে তাও আমি জানি। কিন্তু ভাবিনি ঐ মদ্যপ লোকটা আবার এখানে এসে হাজির হবে। শয়তানটাকে তুমি ভাগিয়ে দিয়েছ। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। এখন যতক্ষণ না তোমার স্বামী ফিরে না আসছে, দেখি তোমার জন্য কি ব্যাবস্থা করা যায়?" বাচ্চাটাকে কাঁধের ওপর রেখে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে দোলন বললো, "কেন, আমি তো এখানে থাকবো বলেই এসেছি। তুমিও বললে, সিরিজাও বললো। তাহলে আবার অসুবিধে কি?" রজত মনে মনে বললো, "আমি তো বলিনি। ওটা সিরিজাই বলেছে!" দোলনকে তাও আস্বস্ত করে বললো, "বলবো ছাড়া কি? স্বামী নেই। তুমি একা ঐ বাসায় কি করে থাকবে? ঐ জন্যই তো আমিও মত দিলাম।" রান্নাঘর থেকে চা করে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সিরিজা। রজত বললো, "দোলন তোমার কোন অসুবিধে হবে না। তুমি এখানেই বিনা চিন্তায় থাকো। আমার কাছে সিরিজা যা। তুমিও তাই। সিরিজাকে কাছে রেখেছি বলে, তোমার বিপদে তোমাকেও কাছে রাখতে পারবো না? আমি মানুষটা অত খারাপ নই।" সিরিজা দু-দুটো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রজতের কথা শুনে মুচকী মুচকী হাসছে। রজত বললো, "দাঁড়াও আমি আসছি।" বলে ভেতরের ঘরে গেল একটু মাথার চুলটাকে ঠিক করতে। দোলনের তখন সিরিজা আর রজতকে নিয়ে সন্দেহ বাতিকটা কিছুটা গেছে। বাচ্চাটাকে সোফার ওপর শুইয়ে দিয়ে চায়ের কাপটা সিরিজার হাত থেকে নিয়ে দোলন ওকে বললো, "দাদাবাবু সত্যিই খুব ভালো লোক। তাই না সিরিজা?" সিরিজা খুব ভালোমতনই জানে দোলনকে কিছু বুঝতে না দিতে পারার মতই কথা বলেছে রজত। দুটো তিনটে দিন ওকে ম্যানেজ করে নিলেই সব সমস্যার সমাধান। তারপর দিবাকরদাকে রাজী করিয়ে যদি দোলনকে এখান থেকে স্থানান্তরিত করা যায়। কিন্তু এই মুখপুড়িটা যেভাবে এখানে গ্যাট হয়ে বসেছে, সহজে কি যাবে এখান থেকে? একেবারে গেড়ে বসলে রজতও না শেষ পর্যন্ত ক্ষেপে যায়। তখন তো সিরিজাও মুশকিলে পড়ে যাবে দোলনকে নিয়ে। রজতের চায়ের কাপটা হাতে ধরে সিরিজাও কিছু চিন্তা করছিল মনে মনে। হঠাৎই ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। দোলনকে বললো, "এই, চল না তুই আর আমি দুজনে মিলে তোর বরটাকে খুঁজি।"  -- "তুমি ক্ষেপেছো? সে কোথায় গেছে, তার কোন হদিশ পাবে তুমি? সব চেষ্টাই পন্ড হবে।" সিরিজা বললো, "নিশ্চয়ই ধারেকাছেই কোথাও আছে। নইলে যাবে কোথায়?"  -- "ছাড়ো না ওর কথা। আমি ওকে ভুলে গেছি।" সিরিজা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, দোলন বললো, "তুমি তোমার মরদকে ভুলতে পারো, আর আমি পারি না? সব ব্যাটাছেলে গুলোই তো এক টাইপের। একজন তোমার সারাক্ষণ মদে ডুবে আছে। আর একজন কোথায় গিয়ে মেয়েমানুষে ডুব দিয়েছে। কে জানে?" রজত ঘরে ঢুকে সিরিজার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে দোলনকে বললো, "তুমি বরং আর একটা বিয়ে করে নাও দোলন। সেটাই ভালো হবে।" বাচ্চাটা সোফায় শুয়ে অঘোরে ঘুমোতে শুরু করেছে। অনেক দিন বাদে মায়ের বুকের দুধ পেটে পড়েছে। এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। দোলন ঐ বাচ্চাটার দিকে তাকিয়েই রজতকে বললো, "আমি বিয়ে করতে পারি এক শর্তে। আগে তুমি আবার বিয়ে করো দাদাবাবু। তারপরে তোমার বিয়ে দেখে আমিও করবো।" যেন রজত সিরিজার ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দিয়েছে দোলন। চায়ের কাপটা মুখে ধরে রজত নিজের মনকেই প্রশ্ন করে বসল, "এ আবার কি শর্ত? এতো আচ্ছা ঝ্যামেলায় ফেলে দিয়েছে মেয়েটা। সেই থেকে খালি ট্যাড়া ট্যাড়া কথা বলছে। আমার তো একদিনেই নাভিশ্বাস উঠে যাবে একে নিয়ে।" সিরিজা দোলনকে শায়েস্তা করার জন্য বললো, "তোর দাদাবাবু কিন্তু আর বিয়ে করবে না। শেষ পর্যন্ত তোকেই পস্তাতে হবে। তুই আর একবার ভেবে দেখ দোলন।" দোলনও সঙ্গে সঙ্গে বলটা সিরিজার কোর্টে ফেলে দিয়ে বললো, "তাহলে তুমিই বিয়েটা করো কাউকে। তারপর না হয় আমি করছি।" একেবারে পাল্লা দিয়ে লড়াই করছে দোলন। সিরিজার চালাকির কাছে ধরা দিতে ও মোটেই রাজী নয়। বোঝা যাচ্ছে সিরিজা আর রজতকে পাকে ফেলার জন্য দোলন ভালোভাবেই তৈরী। এতক্ষণ ধরে সিরিজা আর রজত যে গল্পগুলো শুনিয়েছে দোলনকে তার কোনটাই বিশ্বাস করে নি ও। মনগড়া কথাগুলোর কোনটাই প্রভাব ফেলেনি দোলনের মনে। সিরিজাকে একটু অপ্রস্তুতে ফেলে দিয়ে ও এবার দেখছিল সিরিজা কি বলে? সিরিজা কিছুই বললো না। শুধু একবার তাকাল রজতের দিকে। দোলনের কথা শুনে রজতের চোয়ালগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছিল রজত এখনই দোলনকে সহ্য করতে পারছে না মনে মনে। পাছে রজত রেগেমেগে কিছু বলে না দেয় পরিস্থিতিটা সামাল দেবার জন্য ও বললো, "আমার বিয়ে নিয়ে তো মাথাব্যাথা নেই। তবে তোর দাদাবাবুর জন্য আমার সত্যি কষ্ট হয়।" রজতের এবার পিলে চমকে দিয়ে দোলন বললো, "দাদাবাবু আমার শোবার কোথায় ব্যাবস্থা করেছো? রাত্রে তো সিরিজা তোমার জন্য জেগে বসে থাকে। আমি বাপু রাত জাগতে পারবো না। তবে এই বসার ঘরে ঐ সোফার ওপর শুয়ে কিন্তু আমার ঘুম হবে না। আমরা গরীব ঘরে থাকি। কিন্তু আমাদেরও খাট বিছানা আছে। কিছু যদি মনে না করো, তাহলে তোমার শোবার ঘরেই আমার একটা শোবার ব্যাবস্থা করে দাও না? আমি না হয় তোমার বিছানার একপাশেই শুয়ে থাকব। বলতে পারো রাত্রে তোমার সাথে সিরিজা আমি দুজনেই থাকব। সিরিজা শুধু রাত জেগে তোমার সেবা করবে, আর আমি নাক ডাকিয়ে ঘুমাবো।" রজত পুরো তেলে বেগুনের মতন জ্বলে উঠে সিরিজার দিকে তাকালো। এই মেয়েটা বলে কি? প্রথম দিনই এসে সিরিজার জায়গাটা নিতে চায়? মনে তো হচ্ছে একেবারে পরিকল্পনা করেই এসেছে রজতের এখানে। এখন এটাকে বানচাল করে দেবার কি উপায়? রজতের মুখটা এবার কাচুমুচু হয়ে গেল। সিরিজার কাছে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। কারন এর উত্তর ওর জানা নেই। সিরিজা একটু চোখ টিপে রজতকে আশ্বস্ত করলো। মানে দোলনের কথা শুনে অত ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ও ইচ্ছে করেই রজতকে পরীক্ষা করছে। ঘর ছেড়ে এই ফ্ল্যাটে যখন এসে পড়েছে তখন সবুর করা ছাড়া কোন উপায় নেই। দোলনের চালাকিতে এখন সহজে ভয় পেলে চলবে না বুদ্ধি করেই এর মোকাবিলা করতে হবে। কাপের চা টা শেষ করতে করতে রজত তখনকার মতন চুপ করে গেল। দোলন বললো, "দাদাবাবু, আমি এখন একটু চানে ঢুকব। তোমাদের নিশ্চয়ই চানটান হয় নি। আমার আবার সকাল সকাল চান করে নেওয়া অভ্যেস। তা গামছাটামছা আছে নাকি? আমি তো কিছু নিয়ে আসিনি।" দোলনকে বাথরু্মের দরজাটা দেখিয়ে সিরিজা বললো, "গামছা থাকবে না কেন? সব ঐ ভেতরেই আছে। তোর কিছু চিন্তা করার নেই।" সোফা থেকে উঠে একটু পাছা বেঁকিয়ে ঢং করে বাথরুমে চানে ঢুকলো দোলন। ও চানে ঢোকা মাত্রই রজত এবার সিরিজাকে নিয়ে পড়লো। শোবার ঘরে ঢুকে সিরিজাকে জাপটে ধরে পাগলের মতন ওর বুকে মুখ ঘষতে লাগলো রজত। সিরিজা বললো, "অ্যাই অ্যাই। দোলনকে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই। ও এক্ষুনি আবার বেরিয়ে আসতে পারে।" রজত বললো, "আমার কিন্তু এই বেয়াদপীপনাটা আর সহ্য হচ্ছে না সিরিজা। ও কি মনে করেছে এখানে এসে? তখন থেকে আমাদের দুজনকে ঠেস মেরে কথা বলে যাচ্ছে। একেবারে গায়ে পড়া ভাব। প্রথম প্রথম আপনি বলে কথা বলছিল আমার সাথে। এখন আবার তুমি তুমি করে কথা বলছে। আমি কিন্তু তোমার মুখের দিকে চেয়ে ওকে কিছু বলছি না সিরিজা। সব সহ্য করে যাচ্ছি, নইলে কখন বার করে দিতুম।" সিরিজা রজতকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো, "ক্ষেপেছো তুমি? সব রাগটা গিয়ে তখন আমার ওপর পড়বে। ওদিকে আমার মাতাল বরটাকে সব বলে দিয়ে ও আমাকে শায়েস্তা করবে। আর ওদিকে তোমার বউকে ফোন করে তোমাকে জব্দ করবে। এখন অত রাগলে চলবে না।" রজত ভেবে দেখলো সিরিজা কথাটা ভুল বলেনি। সিরিজাকে বললো, "তার মানে দোলনের হাতে তো এখন অনেক ক্ষমতা?" সিরিজা বললো, "হ্যাঁ, বলছি তো তাই।" মুখ কাচুমুচু করে একটু ছেলেমানুষির মতন করতে লাগলো রজত। সিরিজাকে বললো, "তুমি ওকে আসতে বললে কেন? না এলেই তো ভালো হত। এসেই কেমন বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে প্রথম দিন। এখনই ঘাড়ে চেপে বসেছে, এরপরে কি হবে?" রজতের যেন তর সইছিল না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে সিরিজাকে বললো, "আমি এক্ষুনি ফোন লাগাচ্ছি দিবাকরকে। ঐ মেয়েটার একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে।" সিরিজা বললো, "আমার মনে হয় ফোনে দিবাকরদাকে না বলে, দিবাকরদার বাসায় গিয়ে ব্যাপারটা বললেই তো ভালো হয়। দিবাকরদার ওখানে গিয়ে তুমি ঠিক গুছিয়ে বলতে পারবে।" রজত বললো, "তা ঠিক। তবে ওকে একবার ফোন করে অন্তত জানিয়ে দিই যে আমি আসছি।" সিরিজা ঘাড় নাড়লো। রজত দিবাকরকে লাইন মিলিয়ে দুতিনবার ধরার চেষ্টা করলো ফোনে। অথচ দেখলো ফোন বেজে যাচ্ছে, কিন্তু দিবাকর ফোন ধরছে না। সিরিজাকে বললো, "এর আবার কি হল? ফোন রেখে কোথায় গেল? বেজেই যাচ্ছে ধরছে না।" বাইরের ঘরের সোফাটায় বসে দিবাকরকে ফোনে ধরার জন্য আবার ট্রাই করতে লাগলো রজত। সিরিজা তখন শোবার ঘরের বিছানার চাদরটা ঠিক করছে। একটু পরেই চান সেরে বাথরুম থেকে বেরোল দোলন। তাকাবো না তাকাবো করেও দোলনের দিকে চোখ ফেরাতে বাধ্য হল রজত। চান সেরে ভিজে কাপড় গায়ে দিয়েই বেরিয়েছে বাথরুম থেকে। সিরিজার মতন বৃহৎ স্তনাধিকারিনী না হলেও দোলনের সুন্দর বক্ষযুগল ভিজে কাপড়ের আড়ালেও দেখা যাচ্ছে। এমন নারীকে দেখলে কামভাব জাগ্রত হয় ঠিকই। কিন্তু সেই কামকে চাগিয়ে রাখতে হলে আবার সেই নারীর ওপরেই পুরুষকে দিওয়ানা বনে যেতে হবে। রজতের এই মূহূর্তে দোলনের ওপর দিওয়ানা বনে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই আপাতত নেই। দোলনকে এক ঝলক গায়ে, ভিজে কাপড় জড়ানো অবস্থায় দেখে নিয়েই আবার চোখদুটোকে ঘুরিয়ে নিল রজত। ভাবখানা এমন, অত সহজে আমাকে বশ করার চেষ্টা কোরো না দোলন। তোমার মায়ায় কোন মতেই আমি নিজেকে জড়াচ্ছি না। দোলন ঐ অবস্থায় শোবার ঘরের ভেতরে গেল। রজত দেখলো দিবাকর এখনও ওর ফোন ধরছে না। কি যে ব্যাপার হল কিছুই ও বুঝে উঠতে পারছে না। ভেতরের ঘরে ওরা দুজনে আবার নিজেদের মধ্যে বকবক শুরু করে দিয়েছে। রজত সোফায় বসে এবার একটা সিগারেট ধরালো। খেয়াল করলো দোলন সিরিজাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছে। রজতের ব্যাপারেই যেন কিছু জানতে চাইছে সিরিজার কাছ থেকে। দোলন ঘরে ঢুকেই সিরিজাকে বললো, "আমি যখন চান করছিলাম, দাদাবাবু কিছু বলছিল আমার কথা?" সিরিজা বললো, "কেন কি বলবে?"  -- "ঐ যে দুষ্টু মেয়ে আমি। এখানে আসার পর থেকেই আমি তোমাদের ঝ্যামেলায় ফেলছি।" বলেই হাসতে লাগলো সিরিজার দিকে তাকিয়ে। সিরিজা উল্টে বললো, "না তো, কিছু বলেনি তো? আমাকে তো বলছিল, দোলন খুব ভালো মেয়ে। তোর সন্মন্ধে খুব ভালো ধারনা দাদাবাবুর। আমাকে বললো, দেখো ও তো তোমার খুব উপকারই করেছে। এখন ও যখন বিপদে পড়েছে, তখন আমাদেরও বিপদ থেকে ওকে বাঁচানো উচিৎ।" সিরিজার মুখ থেকে রজতের কথা শুনে দোলনের যতটা বিশ্বাস হল, তার থেকেও নিজের ওপরই ধিক্কারটা এল বেশি। ওকে বললো, "আমি বোধহয় তোমার মত হতেই পারলেই ভালো হত। স্বামী আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগেই আমি ওকে ছেড়ে পালিয়ে আসতাম। যেমনটি তুমি করেছো। এই বাড়ীতে তুমি দাদাবাবুর দয়ায় ঠাই পেয়েছ। আমিও যদি ওকে আগেই ছেড়ে দিয়ে তোমার মত দাদাবাবুর ফ্ল্যাটে চলে আসতাম, তাহলে দাদাবাবুর কাছে তোমার জায়গাটা হয়তো আমিই নিতাম।" সিরিজা বুঝতে পারলো, কাল থেকে দোলন যেভাবে মুখে ফুলঝুড়ি ছোটাচ্ছে, সব পরিকল্পনা ভেস্তে না যায়। ও সিরিজাকে মনে মনে ভীষন হিংসা করছে। নইলে একই কথার পুনারাবৃত্তি। রজত না শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়ে ওর মুখের ওপর কিছু বলে দেয়। একূল ওকূল দুকূলই যাবে। অবাধ যৌনজীবনের আনন্দটাই যাবে মাটি হয়ে। দোলনকে বললো, "তুই কিছু চিন্তা করিস না। তোর একটা ব্যাবস্থা আমি শিগগীরই করছি।" ঘরের মধ্যে নগ্ন হয়েই কাপড় ছাড়তে লাগলো দোলন। ভিজে কাপড়টা একপাশে ফেলে দিয়ে সিরিজাকে বললো, "একটা শাড়ী দাও না পরি।" সিরিজা বললো, "এভাবে কাপড় ছাড়িস না দোলন। তোর দাদাবাবুর চোখ পড়লে খারাপ ভাববে।" হাসতে হাসতে দোলন বললো, "আহা ন্যাকা। তুমি যেন ছাড়ো না আবার?"  - "আমি কি ঘরে ছাড়ি নাকি?"  -- "কোথায় ছাড়ো তাহলে?"  - "আমি তো বাথরুমে ছাড়ি।"  -- "বাথরুমে? হা হা হা।" জোরে হা হা করে হাসতে লাগলো দোলন। সিরিজার ওর হাসি দেখে ভীষন অস্বস্তি হতে লাগলো। রাগের চোটে দোলনের মুখের ওপর নিজের পুরোনো শাড়ীটা ছুঁড়ে দিয়ে ও ঘর থেকে বেরিয়ে এল। বাইরের ঘরে বসে রজত তখনও দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সিরিজা আসতেই ও বললো, "সিরিজা, দিবাকরকে কিছুতেই পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ফোন রেখে দিয়ে ও কোথাও গেছে। নইলে আমার ফোন ধরবে না কেন?" দোলনের ব্যাপারে সিরিজা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, রজত বললো, "আমাকে বলতে হবে না আমি সব শুনেছি। কি আর করবে? ঝ্যামেলা যখন বাড়ীত ডেকে এনেছ, তখন পোয়াও। এছাড়া তো কোন গতি নেই। আমি কি আর সাধে বলেছি? ও মেয়ে তোমাকে আমাকে দুজনের কাউকেই স্বস্তিতে থাকতে দেবে না এখন থেকে।" সিরিজা বললো, "তুমি দিবাকরদার বাড়ী যাবে না?"  -- "কি করে যাবো? ফোনই তো ধরছে না। তারপরে যদি বাড়ী গিয়ে না পাই?" সিরিজা কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বললো, "এক কাজ করলে হয় না?" রজত বেশ কৌতূহল আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞাসা করলো, "কি কাজ?"  - "দোলনকে বলে দিই, তোমার শ্বশুড়মশাই আর তোমার বউ এসেছিল কালকে। আবার আসতে পারে যখন তখন। তোকে এখানে দেখলে মুশকিল হবে। দাদাবাবুর বউ তোকে চেনে। এখানে তোকে দেখলে খারাপ ভাবতে পারে। তার চেয়ে দাদাবাবু তোকে তার বন্ধুর বাড়ী রেখে আসুক কয়েকদিনের জন্য। তুইও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবি ওখানে।" সব শুনে রজত বললো, "ব্যাপারটা তো সেই একই হল সিরিজা। সেই তো দিবাকরকে রাজী করানোর ব্যাপার। ওকে ফোনে পেলে তবে তো? তাছাড়া তোমার দোলন রানী আবার কি ইচ্ছা পোষণ করে দেখো। সে তো থেকে থেকেই এখন কথা দিয়ে হুল ফোটাচ্ছে শরীরে। আমার মনে হয় নিজে না গিয়ে শেষ পর্যন্ত তোমাকেই যেতে বলবে দিবাকরের বাসায়।" ঘরে ঢুকে দোলন বললো, "তোমরা দুজনে কোথায় আমার যাবার কথা বলছো গো? কারুর বাড়ীতে?" একটু ভ্যাবাচাকা খেয়েই রজত সিরিজার দিকে তাকালো। দোলন একেবারে রজত আর সিরিজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রজত দেখলো সিরিজারই একটা শাড়ী পড়েছে দোলন। বেশ মোহময়ী হওয়ার চেষ্টা করছে সিরিজার মতন। এখনই এমন অবস্থা, এরপরে তাহলে কি হবে? স্বামী পালিয়ে যাওয়া সিরিজারই মতন গ্রামের একটা মেয়ে, মুখে কোনো হতাশার ছাপ নেই। যেন নতুন কোন দাদাবাবু জুটে যাওয়াতে বেশ স্বস্তি বোধ করছে মনে মনে।  -- "তোমরা কি আমাকে কোথাও ভাগানোর মতলব করছো?" দোলন বেশ চোখ পাকিয়ে বললো। সিরিজা বললো, "না তো। তুই ভুল শুনেছিস।"  -- "তাহলে কার কথা বলছো?"  - "তোর দাদাবাবু বন্ধুর কথা বলছিল। ফোনে পাচ্ছে না তাই।" দোলন রজতের ঠিক উল্টোদিকে সোফাটায় বসে বললো, "ও আচ্ছা আচ্ছা। তাই? তা দাদাবাবুর আজকে অফিস নেই?" রজত একটু বিরক্তি চোখেই তাকাল দোলনের দিকে। বললো, "না নেই। আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। তোমাদের দুজনের সাথে গল্প করবো বলে। দেখছ না আমার বন্ধুকেও লাইন মেলাচ্ছি, ওর ওখানে যাবো বলে। কিন্তু ওকে পাচ্ছি না কিছুতেই।" সামনের সোফাটায় বসে দোলনের দৃষ্টি তখন রজতেরই দিকেই। দাঁড়িয়ে থাকা সিরিজাকেও গ্রাহ্য করছে না। হঠাৎই ব্লাউজের ভেতর থেকে বুকের খাঁজটাকে সামান্য উন্মুক্ত করে রজতের সেখানে চোখ ফেরানোর চেষ্টা করছে। দৃশ্যমান খাঁজটা রজতের একবার নজরে পড়েছে ঠিকই। কিন্তু মজা লুটে নেবার জন্য উদগ্রীব না হয়ে ও বরং সিরিজার দিকেই তাকাচ্ছে বেশি। কারন সিরিজাও যদি ঘাড় ঘুরিয়ে দোলনের ঐ রকম সকম একবার লক্ষ্য করে। সিরিজা জীবনে আসার পর থেকে সেই মেয়েমানুষের বুকের দিকে তাকানোর লোলুপ দৃষ্টিটা আর নেই। রজত আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে। এখন সিরিজার জায়গা ওর জীবনে আর কেউ নিতে পারবে না। সে দোলই হোক বা রেশমী হোক। একজনকে তো দিবাকরের সাথে জুড়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। আর এই মেয়েটিকে যে কার সাথে জুড়ে দেওয়া যায়, তাই নিয়েই ভেবেচিন্তে মাথা আরও খারাপ হচ্ছে। প্রায় কান্ডজ্ঞানহীন হয়েই দোলন এবার শাড়ী সরিয়ে বুকের ব্লাউজের একটা হুক লাগাতে লাগলো রজতের সামনে। যেন ঘর থেকে শাড়ী পড়ে আসার সময় ব্লাউজের হুক লাগাতে ভুলে গেছে। এইসব যৌনকামনামাখা আবেদন ফুটিয়ে তোলা কিসের জন্য? যৌনপ্ররোচক ভঙ্গীটা যে ওকে উত্তেজিত করার জন্যই সেটা রজতের বুঝতে বাকী রইলো না। ও বেশ সতর্ক হল। বুঝলো, মেয়েটা সিরিজাকে যথেষ্টই বেগ দেবে এবার থেকে। পেটে পেটে যার এমন দুষ্টু বুদ্ধি রয়েছে, কোনদিন পুরো ব্লাউজটাই না খুলে দাঁড়িয়ে পড়ে রজতের সামনে। সিরিজা খেয়াল করেনি দোলনের কান্ডকারখানা। রজতক বললো, "আজ কিন্তু ঘরে কোন বাজার নেই। সুতরাং বাজার থেকে শাকসব্জী, মাছ মাংস কিনে আনলে ভালো হয়। দোলনও বললো, হ্যাঁ কতদিন তোমার হাতের রান্না খাইনি। তুমি তো ভালো রাঁধতে পারো আমি জানি।" রজত আর একবার তাকানোর চেষ্টা করছিল দোলনের দিকে। ওকে দোলন বললো, "আমিও কিন্তু ভালো রান্না জানি। তোমাকে রেঁধে খাওয়াতে পারি। তবে সিরিজার মত অত ভালো নয়।" রজত মনে মনে বললো, "এ বাড়ীতে আসার পর থেকে আর সিরিজার রান্না সেরকম ভাবে খেলাম কোথায়? দুদিন তো হোটেলের খাবার খেয়েই আমাদের চলে গেল। আজ নয় তুমিই রান্নাটা করো, দুষ্টু মেয়ে।" সিরিজা বাজারের থলেটা রজতের হাতে দিয়ে বললো, "বাজারটা তাহলে করে এনে দাও। আজ নয় দোলনই রান্না করবে।" মুখ ভেংচে দোলন বললো, "না না, আজ নয়। আজ নয়। আমি অন্যদিন করবো। রান্নাটা বরং তুমিই করো আজকে। আমি বরং দাদাবাবুর সাথে বসে গল্প করবো আজকে। সময়টা বেশ ভালোই কাটবে।" জামা প্যান্ট গলিয়ে বাজার করবে বলে বেরোতেই যাচ্ছিলো রজত। এমন সময় দিবাকরের ফোনটা এল ওর মোবাইলে। রজত ধরামাত্রই দিবাকর বললো, "সরি। বাথরুমে ছিলাম। তোমার ফোন ধরতে পারিনি। তাই করলাম তোমাকে। বলো কি বলছো? ফোন করেছিলে কেন? কিছু খবর আছে নাকি?" রজত ফোনে দিবাকরকে বললো, "দাঁড়াও, দাঁড়াও। আমি এখন বাজারে যাচ্ছি, বাইরে বেরিয়েই তোমার সাথে কথা বলছি।" সিরিজা, দোলন দুজনেই রজতের সামনে রয়েছে। এই অবস্থায় দিবাকরকে কিছু বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। রজত থলেটা একহাতে নিয়ে অন্যহাতে মোবাইলটা কানে ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। রাস্তায় বেরিয়েই দিবাকরকে বললো, "খুব বিপদে পড়েছি। ঐ জন্যই ফোন করেছিলাম তোমাকে।" দিবাকর বললো, "কেন কি হল আবার?" রজত একটু কারচুপি করে বললো, "আরে..... সিরিজার গ্রাম থেকে একটা মেয়ে চলে এসেছে এখানে। বলা নেই কওয়া নেই। সিরিজা আর আমি ওকে নিয়ে এখন হিমশিম খাচ্ছি। তুমি এ বিপদ থেকে এখন আমায় উদ্ধার করো।" দিবাকর একটু অবাক হয়েই বললো, "আমি আবার কিভাবে উপকার করবো?" রজত স্মরন করিয়ে দিল দিবাকরকে। বললো, "তোমার মনে নেই? তুমি থাকতে শ্বশুড় আর বউ এসেছিল এ বাড়ীতে? আবার যদি আসে? মেয়েটা জানে আমি সিরিজাকে ভালোবাসি। আমার বউকে দেখতে পারলে মুশকিল হয়ে যাবে। ওকে এখান থেকে বিদায় করতে পারছি না।" দিবাকর একটু হেসে বললো, "গ্রাম থেকে যখন এসেছে, তখন আবার গ্রামেই পাঠিয়ে দাও না। তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।" রজত একটু বিরক্ত হয়েই বললো, "এখনই কি করে পাঠাবো? সবে তো আজই এসেছে। দু তিনদিন না গেলে ওকে ভাগাতে পারছি না।" দিবাকর বললো, "তা আমাকে কি করতে বলছো?" রজত বললো, "আমি বলছিলাম, যদি ওকে তোমার ওখানে দুতিনদিনের জন্য পাঠিয়ে দিই? তোমার অসুবিধে আছে?" একটু ভেবে দিবাকর বললো, "তা অসুবিধে কেন হবে? তোমার জন্য আমি তো সবসময়ই আছি। তবে তোমার সাথে থেকে থেকে এখন আমি অনেকটা তোমার মতই হয়ে গেছি। বউকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিরিজার সাথে প্রেম করছো, সিরিজা যখন সব মেনেই নিয়েছে তখন ঐ মেয়েটাকেই নিয়েই বা তোমার এত ভয় কিসের? গ্রামের মেয়ে বলেই তাকে মাথায় করে রাখতে হবে নাকি? ওকে বলে দাও না, তোমার সিরিজা ছাড়াও বউ আছে একটা। সে যদি ও বাড়ীতে আবার আসে, ঐ গ্রামের মেয়ে যেন বেশি ছটফট না করে। ব্যাস্ তাহলেই তো হল।" রজত যেন কিছুতেই বোঝাতে পারছে না দিবাকরকে। বললো, "তুমি বুঝতে পারছো না, ব্যাপারটা তা নয়। আসল ব্যাপারটা অন্যখানে।" দিবাকর একটু ঠাট্টার ছলেই বললো, "আমি সব বুঝি। নতুন মেয়ে দেখে আবার যদি তোমার আসক্তি জেগে যায়, তাই চোখের আড়াল থেকে দূর করতে চাইছো। আমি জানি সিরিজাকে তুমি ঠকাবে না। ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে সিরিজার সাথে একটু একাত্ম হয়ে যেতে চাইছো। অন্য কেউ ঘরে থাকলে কি আর নিরিবিলিতে প্রেম করা সম্ভব? আমি সব বুঝি।" রজত মনে মনে বললো, "তুমি ছাই বোঝো। ও মেয়ে এখন সিরিজার দেখাদেখি আমার সাথেই ভিড়তে চাইছে। সে আর কি করে বোঝাবো তোমাকে? ঘাড় থেকে নামলেই তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।" রজতকে অবাক করে দিবাকর একটা দারুন কথা বললো এবার। বেশ একটু গম্ভীর ভাবেই বললো, "আমার কোন আপত্তি নেই। তবে রেশমিকে নিয়ে তুমি আর সিরিজা যেভাবে এত খাটাখাটনি করছো। শেষ পর্যন্ত তোমাদের খাটনি জলে চলে গেলে আমি কিন্তু তোমারই পথ ধরবো।" রজত অবাক হয়ে বললো, "মানে?" দিবাকর বললো, "তুমি যেমন গ্রামের মেয়ে ধরে নিয়ে এসেছ। তেমনি আমিও ঐ গ্রামের মেয়েটাকে পটিয়ে নেব। তারপর ওটাকেই বিয়ে করবো।" ফোনটা কানে ধরে বেশ হাসছিল রজত। দিবাকরকে বললো, "তোমার বেশ পরিবর্তন হয়েছে দিবাকর। আগে এমন কথা তোমার মুখ দিয়ে কোনদিন শুনিনি।" ওকে আরও অবাক করে দিবাকর বললো, "কেমন দেখতে গো মেয়েটাকে? সিরিজার মতন? নাকি অন্যরকম?" রজত এবার একটু ধমকের স্বরেই দিবাকরকে বললো, "আমি বাজার থেকে ফিরেই সিরিজাকে সব বলছি, যে তুমি এখন রেশমিকে ভুলে কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলছো, ঐ তখন বকা দেবে তোমায়। তোমার গ্রামের মেয়ের প্রতি পীড়িত সব আমি বার করছি।" ফোনে দুজনেই হাসতে লাগলো। রজত দিবাকরকে বললো, "এসো না আজ সন্ধেবেলা, একটু জমিয়ে আড্ডা হবে আবার আগের মতন।" দিবাকর ফোন ছাড়ার আগে বললো, "আসছি তাহলে। তোমার নতুন অতিথিকে গিয়ে একবার দেখতে হবে, কেমন? গ্রামের মেয়ের প্রতি আগ্রহ আমারও বেশ বেড়ে গেছে তোমায় দেখে। একবার গিয়েই দেখিনা মেয়েটা কেমন। তারপর না হয় ভেবে চিন্তে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। রেশমি তো রইলো মাথায়। একেও একবার চাক্ষুস দেখে নিই। অসুবিধা তো কিছু নেই?" দিবাকরের সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে রজত বললো, "এও কিন্তু বিবাহিতা, সেটা কিন্তু মাথায় রেখ।" রজতের কথা শুনে দিবাকর একটু দমে গেল। বললো, "বিবাহিতা? কি ব্যাপার কি বলো তো? সব বিয়ে করা মেয়েগুলো লাইন দিয়ে যাচ্ছে এক এক করে তোমার বাড়ীতে। এ তো বিবাহিত মেয়েদের হাট বসেছে দেখছি তোমার ফ্ল্যাটে। ধন্য রজত ধন্য। তোমার বউ যে কেন তোমায় ছেড়ে চলে গেল। খুব ভুল করলো। আমার তো কপালে একটাই জুটল না। আর তোমার দু-দুটো?" রজত বললো, "রাখো তো তোমার ইয়ার্কী। এসব ফাজলামি ছাড়ো। বিকেলে এসো। আমি অপেক্ষা করবো।" বাজার থেকে মাছ আর তরকারী কিনে কিছুক্ষণ বাদেই ফ্ল্যাটে ফিরল রজত। বাজারের থলে একহাতে নিয়ে আরেক হাতে কলিংবেল টিপতেই, দরজা খুলে সামনে এসে দাড়াল দোলন। রজতের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, "আমাকে ওটা দাও, আমি ভেতরে রেখে আসছি।" রজত থলেটা ওর হাতে দিয়ে বললো, "সিরিজা কোথায়? ওকে দেখতে পাচ্ছি না।" ফিক ফিক করে হেসে দোলন বললো, "সিরিজা নেই। চলে গেছে।"  -- "চলে গেছে!" রজত অবাক হয়ে চোখমুখ লাল করে ফেললো। দোলনকে বললো, "চলে গেছে মানে?" দোলন বললো, "কেন আমি তো রয়েছি। তোমার কি চাই বলো না?" রজত বেশ রেগে গিয়েই এবার বললো, "ইয়ার্কী মেরো না আমার সঙ্গে? সিরিজা কোথায় গেছে বলো?" দোলন তখনও হাসছিল। রজতকে বললো, "সিরিজার জন্য তোমার খুব দরদ? তাই না দাদাবাবু। আমি যেই বললাম নেই। অমনি তুমি উতলা হয়ে পড়লে। আর রাগ দেখাচ্ছ আমার ওপর। কেন আমি কি দোষ করলাম?" শোবার ঘরের ভেতরটা একবার দেখে নিয়ে রজত বললো, "আচ্ছা মুশকিল তো? আমি যাবার আগেই যে মেয়েটা ছিল, আর আমি আসা মাত্রই সে হাওয়া হয়ে গেল? কোথায় গেল এখন? সেটাই বলো না আমাকে।" সোফার ওপর বসে হেসে গড়িয়ে পড়ে দোলন বললো, "বুঝেছি বুঝেছি, আর রাগ দেখাতে হবে না আমাকে। ও ঘরেই আছে।"  - "কোথায়?"  -- "বাথরুমে।" দোলন খুব হাসতে লাগলো। রজত বুঝলো, আসলে বাথরুমের দরজাটা যে ভেতর থেকে লাগানো রয়েছে। সেটা ও বুঝেই উঠতে পারেনি। মেয়েটা খুব মজা নিচ্ছে এখন রজতের উতলা হওয়া দেখে। ওকে ইচ্ছে করেই বলেছে দোলন, যাতে রজত টেনশনে পড়ে যায়। বাচ্চাটা শোবার ঘরে খাটের ওপর শুয়ে ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎ একটু কেঁদে ওঠাতে দোলন এবার ভেতরের ঘরে গেল বাচ্চাটার কান্না রুখতে। রজত একটা সিগারেট ধরিয়ে সোফার ওপর বসল। মনে মনে বললো, "দাঁড়াও না! দিবাকর আসুক। তারপর তোমার মজা আমি দেখাচ্ছি। সিরিজাকে নিয়ে হিংসা আর আমাকে নিয়ে তোমার ফাজলামি, সব বার করে দেব আজ সন্ধেবেলা। শুধু দিবাকরের এসে যাওয়াটা দরকার।" বাচ্চাটার কান্না তখনও থামছে না। রজত দেখলো দোলন ওকে আবার ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাচ্চাটাকে বুকে নিয়ে ঘুমপাড়ানি গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। একটু অবাক হয়েই এবার ও দোলনকে দেখতে লাগলো একদৃষ্টে। সিরিজার ওপর যার এত হিংসে। কিন্তু বাচ্চাটার ওপর থেকে এখনও মায়া চলে যায়নি দোলনের। ও যেন সেই মায়ামমতা দিয়েই বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। হয়তো পাপ নেই শরীরে। শুধু রজতকে পরীক্ষা করে দেখছে, এই ফ্ল্যাটের চার দেওয়ালের মধ্যে সিরিজার মত ওকেও রজত কিছু করে বসে কিনা। চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত
Parent