সিরিজা - একটি উপন্যাস aka রজতের কামলীলা_Written By Lekhak (লেখক) [চ্যাপ্টার ১৬]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/09/aka-written-by-lekhak_11.html

🕰️ Posted on September 8, 2014 by ✍️ Lekhak

📖 2985 words / 14 min read


Parent
সিরিজা - একটি উপন্যাস Written By Lekhak (লেখক) ।। ষোলো ।। দিবাকরের মনে হচ্ছিল এই মূহূর্তে রজতের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে চলে গেলেই বোধহয় ভালো হতো। যা জোর ধাক্কা দিয়েছে সিরিজা। এরপরে এখানে থাকার কোনো মানে হয় না। কি ভুল করেছিলো কাল নেশার ঘোরে রজতের ঘরে উঁকি মেরে। সব রিয়াকশন্ কালকের ঐ উজবুকের মতন কাজ করা থেকেই হচ্ছে। খারাপ কাজ করে কারুর কাছে জোর করে ভালো হওয়া যায় না। এটা ওর আগে বোঝা উচিত ছিল। মেয়েমানুষ বস্তুটাই এমনি। সব মারামারি কাটাকাটি ঐ নারীদেহর জন্য। রজত যেভাবে সিরিজাকে নিয়ে ক্ষেপেছে শেষ পর্যন্ত দিবাকরের সাথেই ওর জন্য না হাতাহাতি করে বসে, আশ্চর্যের তাহলে আর কিছু থাকবে না। মনটা বেশ খারাপ হয়ে ওর তখন কথা বলার ইচ্ছাটাই চলেগেছে। ইতিমধ্যে সিরিজা কখন ওর পাশে এসে বসেছে ও খেয়ালই করেনি।  - "দিবাকরদা, একটু তাকান আমার দিকে।" দিবাকর মনে মনে ভাবছে এবার যদি আবার নাটক শুরু করে সিরিজা, সোজা সোফা ছেড়ে উঠে সটান বাড়ীর দিকে রওনা দেবে। সিরিজার মায়াজালে জড়িয়ে পড়তে আর ও রাজী নয়। অনেক হয়েছে! এবার এটার শেষ হওয়া দরকার। আজকের রাত্রিরটা শুধু বন্ধুর উপকার করবে। তারপর কাল থেকে ওর ছুটি। রজত আর সিরিজার ব্যাপারে মাথাও ঘামাবে না আর পাও মারাবে না এদিকে। সে রজত যতই ওকে কাকুতি মিনতি করুক। সিরিজাকে নিয়ে ঝ্যামেলা পোয়ানোর দায়িত্ব রজতের। ওটা দিবাকরের নয়।  - "আমি একটা কথা বলতে চাই দিবাকরদা। একটু শুনবেন আমার কথা?" কথা শোনা মানেই তো আবার নতুন করে ফ্যাসাদে পড়া। মনটা বেশ বিষিয়ে গেছে। দিবাকর সিরিজার দিকে তাকাচ্ছিলোও না কথাও বসছিল না। সিরিজা শুধু বলতে চেষ্টা করলো, "রজত আর আপনার....." দিবাকর সঙ্গে সঙ্গে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো, "ছাড়ো না এই প্রসঙ্গটা। আমি আর কথা বলতে চাই না।" অবুঝ মন সিরিজাকে বুঝতেও চাইছে না। ওর কথা শুনতেও চাইছে না। তেতো হয়ে গেছে পরিস্থিতিটা। এখন সিরিজা যতই মিষ্টি কথা বলুক, ওর তাতে মন ভরবে না। কিন্তু নারী হচ্ছে এমনই এক বস্তু। যাকে বোঝার সাধ্য কার। ক্ষণিক আচরণেই সিরিজাকে বুঝে যাবে দিবাকর, এমন ভাগ্য করে ও বোধহয় জন্মায় নি। কিন্তু সেই মূহূর্তে স্বয়ং ভাগ্যদেবতা বা ভাগ্যদেবী বোধহয় ওর ওপর প্রসন্ন হলেন। সিরিজা পাশে বসেই ওর গালটা দুহাতে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চকাম করে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে একটা চুমু খেয়ে বসলো। চুমুটা এমনই আচমকা, যে দিবাকর সিরিজার হঠাৎ এই আচরণে মাথামুন্ডু কিছুই বুঝে পেলো না। ওর এতে কোনো ঝাঁকুনি এলো না। বরং মনে মনে ভাবলো, "আমি খেতে চাইলেই আপত্তি। আর নিজে যখন মনে করছে, গাল ধরে একেবারে সজোরে চুমু খাচ্ছে। কি ভেবেছে কি মেয়েটা? আমার কি কোনো মান ইজ্জত নেই? না এটা আবার নতুন কোনো খেলা শুরু হলো?" সিরিজা ওকে অবাক করে আবার ওর ঠোঁটে চুমু খেতে যাচ্ছিলো। দিবাকর কিন্তু এবার ওর ঠোঁটটা সরিয়ে নিলো। হঠাৎ এমন আচরণ অবাক করে দেওয়ার মতনই। তবুও সিরিজার অত সুন্দর চুমুটা দিবাকরের মনে কোনো প্রভাব ফেললো না। বেশ বিরক্তি স্বরেই ও বলে উঠলো, "এটা কি হচ্ছে সিরিজা? তুমি হঠাৎ চুমু খেলে আমাকে? ব্যাপারটা বোধগম্য হলো না আমার কাছে।"  - "বারে, আপনিই তো চুমু খেতে চাইলেন?"  -- "সেটার মধ্যে তো তোমার শর্ত ছিলো। তাহলে এখন কেন? হঠাৎ এভাবে?"  - "কি শর্ত?"  -- "সব জেনেও এমন ভাব করছো যেন কিছুই জানো না। তুমিই তো বললে রজতের সামনে তোমাকে চুমু খেতে হবে। তাহলে এখন কেন?"  - "আপনি তো সে শর্ত পূরণ করতে রাজী নন।"  -- "কখনই সেটা সম্ভব নয়। তোমাকে তো বলেই দিলাম। রজতের সাথে আমি কোনো ঝামেলা পাকাতে রাজী নই।" দিবাকরকে এবার পুরো হতবাক করে দিয়ে সিরিজা বললো, "আপনাকে পরীক্ষা করছিলাম। দেখছিলাম আপনি কতটা মন থেকে তৈরী আছেন।"  -- "মানে?"  - "মানে হলো, আপনি আমার কাছে একটা প্রস্তাব রেখেছিলেন, আমি আপনার প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছি। আর আমি একটা অনুরোধ রেখেছিলাম, সেটা আপনি মানেননি। এখন মানা না মানাটা আপনার ব্যাপার। আমাকে তো আর কিছু বলতে পারবেন না। আমি আমার কাজ করে দিয়েছি।" দিবাকর পুরো আকাশ থেকে পড়লো। ওর মনে হলো এই মেয়েকে বুঝতে বোধহয় ওর জন্ম জন্ম লেগে যাবে। এক জন্ম কেন, দশ জন্মেও এ নারীকে বোঝা খুব কঠিন। দিবাকর তুলনায় অনেক শিশু। সিরিজা অনেক পোড় খাওয়া নারী। রজতের কপালে বেশ ভালোই রেখা লেখা ছিল। নইলে এমন..... দিবাকরের খুব কাছে ঘেঁসে আবার ওর গালটা ধরে সিরিজা শুধু বলে উঠলো, "আপনাকে শুধু একটা অনুরোধ। যদি কোনোদিন আমার শর্তটা মানতে নাও পারেন। আমার এই চুমু খাওয়াটা রজতের কাছে কোনো্দিন গল্প করবেন না। ভুলেও না। আমি শুধু এটা আপনার মন রাখার জন্য করেছি। আর কিছুই নয়।" দিবাকরকে ছেড়ে দিয়ে সিরিজা উঠে চলে গেলো। যাবার আগে বললো, "ও আসার টাইম হতে চললো। আমি বরং আপনার জন্য আর এক চাপ কা করে আনি। তারপর স্নানটা সেরে নেবেন। আমিও করবো। আমাদের নিয়ে কোথায় যেন ও যাবে বলছিলো। আসার আগে তৈরী হতে হবে। আপনি একটু বসুন, আমি এক্ষুনি আসছি।" ঐটুকু সময়ের মধ্যে দিবাকরের মনে অনেকগুলো চিন্তাধারা একসাথে ঘুরপাক খেতে লাগলো। কয়েকটা বেশ বড়সড় প্রশ্নচিহ্নও রেখে দিলো ওর মনে। সিরিজা যা করে গেল আর যা বলে গেল এটাকে নিয়ে ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। এর মধ্যে কোনটা যে আসল সত্যি সেটাই এখন বিচার্য বিষয়। আগামী দিনগুলোতে কোনদিকে ঘটনা বাঁক নেবে কেউ বোধহয় আগে থেকে বলতে পারবে না। চিন্তায় চিন্তায় ওর মনটা আবার আগের মতন ছটফট করতে শুরু করলো। নিজেকে নিয়ে এই প্রথম উদিগ্ন হয়ে ও ভাবলো-বেশ জাঁতাকলে পড়ে গেছে দিবাকর। এবার এর থেকে বেরোনো এবার খুব মুশকিল। কি যে হবে শেষ পর্যন্ত ভগবান কে জানে? চুমু খাওয়ার মধ্যে যেন অনেক মানে লুকিয়ে আছে। এক হতে পারে, সিরিজা যা বলে গেলো সেটাই হয়তো ঠিক। এর মধ্যে কোনো ভণিতা নেই। দিবাকরের মন রাখার জন্যই ও ওটা করেছে। দুই-চুমু খেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলে দিবাকরের মনটা গলিয়ে দিল সিরিজা। যাতে রাতে ওর বাসায় যাওয়ার কোনো বাধা না থাকে। তিন-রজত যদি ভবিষ্যতে আরো বড় কোনো ঝামেলায় পড়ে তার জন্য আগাম পথটা পরিষ্কার রাখলো সিরিজা। যাতে দিবাকরকে সঙ্গী করে নিতে অসুবিধা না হয়। চার-সাহসটা জুগিয়ে দিল দিবাকরের মনে। ইচ্ছে থাকলেও বন্ধুপ্রীতি ওকে বার বার ঠকিয়েছে জীবনে। সেরকম ভাবে নারীসঙ্গ বলতে গেলে একেবারেই পায়েনি দিবাকর। এবার সিরিজার জন্য ও যদি ময়দানে নামে। পাঁচ-রজতের জন্য আর বোধহয় মন পড়ে নেই সিরিজার। এখন ওর মনে শুধু দিবাকরই আর দিবাকর। দিবাকরকে মনে ধরেছে সত্যি সত্যি। কিন্তু ওকে বুঝতে দিচ্ছে না। অনেকটা প্রেম প্রেম খেলার মতো খেলছে। এর মধ্যে কোনটা আসলে ঠিক। বলা খুব শক্ত। একটা সিগারেট ধরিয়ে দিবাকর মনে মনে বললো, "এবার মনে হয় আমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।" সিরিজা রান্নাঘরে দিবাকরের জন্য চায়ের জল বসিয়ে শোবার ঘরে ঢুকেছে। দিবাকর দশ মিনিট হলো এসব হাবিজাবি চিন্তা করে মাথা খারাপ করছিল। ওর তখন মনে প্রাণে একটাই ইচ্ছা যাই হোক, শেষ পর্যন্ত সবই যেন ঠিকঠাক হয়। কেউ কাউকে ঠকাবে না। সব যদি স্বাভাবিক রীতি মেনে হয় তাহলে আর চিন্তার কোনো ব্যাপার থাকবে না। সুড়সুড় করে সিরিজা এসে ওর গলায় ঢলে পড়বে এটাও ঠিক নয়। রজতের কপালের ওপর এখন সবকিছু নির্ভর করছে। দিবাকর মনে প্রাণে রজতের কোন ক্ষতি হোক সেটাও চাইছে না। সারাজীবন সিরিজার চুমুটাকেই যদি বহন করে চলতে হয় ক্ষতি কিছু নেই। অনেক কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত একটা চুমু তো পাওয়া গেছে। আর কি চাই? ও দেখলো সিরিজা একটু পরে শোবার ঘর থেকে বেরোলো কিন্তু দিবাকরের সব কল্পনা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ওকে একটা মারাত্মক প্রশ্ন করে বসলো। উত্তরটা দেবার আগে দিবাকর এমন অপ্রস্তুতে পড়ে গেলো যে কি বলবে না বলবে এইভেবে রীতিমতন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। সিরিজা ওকে বললো, "দিবাকরদা, রাত্রে আপনার বাসায়, আপনি কি আমার সাথে শোবেন? না আলাদা শোবার কোনো ব্যাবস্থা আছে?" দিবাকরের মনে আবার একটা প্রশ্ন জাগলো, হঠাৎ এমন কথা জিজ্ঞাসা করার মানে কি? শোবার ব্যাবস্থা যেমন আছে সেরকমই হবে। অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারলে ভালো। নইলে? একসাথে শুতে যদি আপত্তি, তখন মুখেই বলে দিক না। অত হেঁয়ালির কি আছে? ও বললো, "আলাদা শোয়ার তো ব্যাবস্থা নেই। আমার ঘরে একটাই খাট। তবে তুমি যদি বল, আমি মাটিতে বিছানা করে শুতে পারি।"  - "না না মাটিতে বিছানা করবেন কি? আপনি আমার পাশেই শোবেন।" খুব কাছে এসে দিবাকরের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, "একটু আগেই তো দুজনে একসাথে শুয়েছিলাম ওঘরে। তাহলে আর অসুবিধার কি আছে? আপনার সাথে আজ থেকে একসাথে শুতে আমার কোনো অসুবিধে নেই।" আজ থেকে মানে? এতো এক রাত্রিতে শোওয়ার গল্প। রোজ রোজ শোবার ব্যাপারটা হচ্ছে কোথায়? দিবাকর মনে মনে ভাবলো সিরিজা মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে ওকে বোঝা খুব মুশকিল হয়ে যায়। চায়ের জলটা রান্নাঘরে ফুটছে। সিরিজা বললো, "দাঁড়ান, আমি চা টা নিয়ে আসি। তারপর আপনার সাথে অনেক কথা আছে।" কোমরটা দোলাতে দোলাতে সিরিজা যখন রান্নাঘরে ঢুকলো, দিবাকর ওকে পেছন থেকে দেখছিলো। একটু আগে ওর ঠোঁটে সিরিজা চুমু খেয়েছে। অথচ ও এখন কত স্বাভাবিক। এসব যেন কোনো ব্যাপারই না ওর কাছে। গ্রামের মেয়ে হয়েও ও তুলনায় অনেক অ্যাডভান্স। সেই তুলনায় দিবাকর শহূরে হয়েও সিরিজার থেকে অনেক পিছিয়ে। মনে মনে দিবাকর একবার ভাবলো, রহস্য কিন্তু একটা থেকেই যাচ্ছে। সিরিজা এখনো সেই রহস্যটা উন্মোচণ হতে দিচ্ছে না। এর শেষ কোথায় এটাও ওকে ভালোভাবে দেখতে হবে। মনে মনে ঠিক করলো, যা ঘটে গেছে ঠিকই আছে। এরপর থেকে ওকে সিরিজার কাছে স্বাভাবিকই হতে হবে। স্বাভাবিক না হলে এ রহস্যের কূলকিনারা ও কোনোদিন করতে পারবে না। দিবাকরের মনের মধ্যে থেকে যাওয়া রহস্যের কিছুটা উন্মোচন হলো আর কিছু পরেই। তার আগে সিরিজা চা টা কাপে করে দিবাকরের জন্য রান্নাঘর থেকে নিয়ে এলো। ওর হাতে দিয়ে দিবাকরের পাশেই বসলো সিরিজা। চা এর কাপটা মুখে ধরে দিবাকর বললো, "তুমি বলছিলে চানে যাবে? রজতের তো আসার টাইম হয়ে গেলো।"  - "যাবো যাবো। তাড়া কিসের আছে। কেন আপনি যাবেন?"  -- "আমি?"  - "হ্যাঁ। আপনি।"  -- "তুমি যদি আগে যাও, তাহলে আমি বরং পরে......"  - "আমার যাবার এখন তাড়া নেই। চুপ করে বসুন তাহলে। দুজনে একসাথে মিলে একটু গল্প করি।" চায়ের কাপটা দ্বিতীয়বার মুখে দেবার সময় রজতের দাঁতে একটু ঠুকে গেলো কাপের মাথাটা। সিরিজা ওর দিকে এক নয়নে তাকিয়ে বললো, "আপনি একটু আগে কেমন ছিলেন আর এখন কেমন হয়ে গেছেন।"  -- "কেন? আমি তো ঠিকই আছি।"  - "ঠিক আছি বললে হবে? আপনার তো হাত কাঁপছে।"  -- "কই কোথায়?" সিরিজা দিবাকরের চায়ের কাপ শুদ্ধু হাতটা ধরে বললো, "কাপটা টেবিলে নামান। নামান না বলছি।" দিবাকর সঙ্গে সঙ্গে নামালো।  - "হ্যাঁ, এবার আমার দিকে তাকান" দিবাকর সিরিজার কথামতন তাকালো।  - "হ্যাঁ, এবার আমার দিকে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।" দিবাকর সিরিজাকে বোঝাতে চাইছিলো ও সহজই আছে। সিরিজার চোখের দিকে চোখ রেখেই বললো, "হ্যাঁ, বলো কি বলছো?"  - "আমি একটা কথা বলতে চাই দিবাকরদা।"  -- "কি বলো?"  - "খুব মন থেকে বলছি। এর আবার অন্য কোনো মানে ধরে নেবেন না।"  -- "ঠিক আছে বল। আমি শুনছি।" চায়ের কাপটা আবার মুখে ধরে সিরিজার কথাগুলো শুনতে লাগলো দিবাকর। সিরিজা বললো, "আপনি যে মেয়েটির কথা বলছিলেন না তখন?"  -- "কোন মেয়ে?"  - "ঐ যে তখন বলছিলেন। একজন এসেছিলো....."  -- "কে?"  - "নামটা তো আপনিই জানেন।" দিবাকর মনে মনে বললো, "রেশমী?" মুখে স্বাভাবিকভাবে বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ কি হয়েছে বলো?"  - "সেকী আমার থেকে সুন্দর?" সিরিজার থেকে সুন্দর আর কিছু আছে নাকি? দিবাকর জবাবে বললো, "তোমার সাথে কারুর তুলনা হয়?"  - "আমার মন রাখার জন্য বলছেন?"  -- "না না সিরিজা, তুমি সতিই সুন্দর। আমি সত্যি বলছি। তোমাকে দেখলে যে কেউ....." দিবাকর দেখলো সিরিজা ওর দিকে তাকিয়ে ওর প্রশংসা শুনছে। নিজেকে সতর্ক করে ও রেশমীকেও খাটো করলো না। বললো, "তবে রেশমীও খুব সুন্দরী ছিলো।"  - "ওকে আবার ফিরিয়ে আনা যায় না?" যেন অসম্ভবকে সম্ভব করার কথা বলছে সিরিজা। তবুও সিরিজার কথায় কেমন যেন নেতিয়ে থাকা দিবাকর এবার একটু চনমনে হয়ে উঠলো। কার জন্য ফিরিয়ে আনতে বলছে সিরিজা? দিবাকর কিছু বলার আগেই সিরিজা এবার যেন এক অন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বসলো। ও দিবাকরকে বললো, "রজতের জন্য আবার ওকে ফিরিয়ে আনা যায় না?" দিবাকর অবাক হয়ে বললো, "রজতের জন্য?"  - "হ্যাঁ ওর জন্য।"  -- "তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে। রজত তোমাকে ছেড়ে রেশমির কাছে যাবে? ও মরে যাবে, তবু যাবে না।"  - "ধরুন যদি যায়?" দিবাকর আবার ভাবলো সিরিজা হেঁয়ালি শুরু করেছে। ওকে আরেক প্রস্থ অবাক করে সিরিজা বললো, "আমি কিন্তু আগেই বলেছি, যা বলেছি মন থেকে বলছি।"  -- "তুমি যা বলছো, সেটা একেবারেই অসম্ভব। আর তাছাড়া রেশমি এখন কোথায় রয়েছে তাই তো জানি না। ওর মোবাইল নম্বরও তো পাল্টে গেছে।"  - "বাড়ী চেনেন না?"  -- "বাড়ী? চিনতাম। আমিই ওর বাড়ী একবার গেছি একবার। কিন্তু ও ওখানে এখন থাকে না। বাসা পাল্টে ফেলেছে।"  - "দেখুন না তবু একবার চেষ্টা করে।" চায়ের কাপটা মুখে নিয়ে পুরো শেষ করতে পারছিলো না দিবাকর। সিরিজা একি কথা বলছে? ও নিজের কথা একেবারেও চিন্তা করছে না। অবাক চোখে সিরিজাকে দেখছিলো দিবাকর। হতবাক হয়ে সিরিজাকে বললো, "কিন্তু তোমার কি হবে সিরিজা?"  - "আমার কথা ছাড়ুন। আমি যেখান থেকে এসেছি, সেখানেই চলে যাবো। আমার আবার কি?" এই প্রথম সুযোগের সদব্যাবহারের ব্যাপারটা মাথায় একদম রাখলো না দিবাকর। নিজের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ওর সিরিজার প্রতি মায়াই হলো বেশী। সিরিজাকে স্বান্তনা দেবার জন্য নিজেই অপরাধী হয়ে গেলো। বললো, "এর জন্য যত দোষ আমার। সব আমার জন্যই হয়েছে। আমি এসব প্রসঙ্গ তু্লে রজতের থেকে তোমার মনটা বিষিয়ে দিয়েছি। এর জন্য আমি নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবো না।" বলেই ধ্যাত করে মুখটা নীচু করে ফেললো।  - "আপনি কোনো অন্যায় করেননি দিবাকরদা। আপনি ঠিক কাজই করেছেন। আমার প্রতি আপনার একটা দূর্বলতা তৈরী হয়েছিলো বলেই আপনি রাগে আমাকে পুরোনো কথা সব ফাঁস করে দিয়েছেন। এই দূর্বলতা তৈরী না হলে আপনি হয়তো বলতেনই না। এসব আমি জানতেও পারতাম না। কিন্তু এখন এটাও জানি রজতের জন্য আপনি স্বার্থত্যাগ করতেও রাজী আছেন। বলুন আমি ঠিক বলছি কিনা? আপনি চান না ওর আর আমার সম্পর্কটা সত্যিই ভেঙে যাক।" দিবাকর অবাক হয়ে শুনছে ওর কথা। সিরিজা শেষবারের মতন বললো, "রেশমি কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। তাহলে ঐ মেয়েটাও খুশী হবে।"  -- "কিন্তু সেটা তো খুবই শক্ত ব্যাপার।"  - "কিচ্ছু শক্ত না। আমি বলছি সব সোজা।" বলেই শোবার ঘরে উঠে চলে গেলো সিরিজা। দিবাকর তখনো বুঝে উঠতে পারছে না কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আফসোসে ওর মনটাও কি রকম অন্যরকম হয়ে গেছে। বারবার বলছে, "এ আমি কি করলাম? এভাবে সিরিজাকে পেতে চাইলাম আমি? এ যেন আমার নিজের প্রতিই ঘেন্না হচ্ছে। এমন বোকার মতন কাজটা আমি কেন করলাম?" চুপচাপ এরপর থ মেরে বসেছিলো দিবাকর। সিরিজা শোবার ঘরে সেই যে ঢুকেছে আর বেরোচ্ছে না ঘর থেকে। ওর আবার কি হলো কে জানে? শেষবারের মতন সিরিজাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজী করতেই হবে। দরকার হলে রেশমীকে খোঁজার জন্য জান লাগিয়ে দেবে দিবাকর। কিন্তু সেটা নিতান্তই যদি দরকার হয়, শুধু মাত্র নিজের জন্য। রজতের জন্য যেন কিছুতেই নয়। সিরিজা আর রজতের সম্পর্কে ও কিছুতেই ভাঙন ধরাতে দেবে না। মরীয়া চেষ্টায় দিবাকর শেষবারের মতন উদ্যোগী হয়ে পা বাড়ালো শোবার ঘরের দিকে। দেখলো সিরিজা বিছানার উপরই বসে আছে। কিন্তু মুখটা অন্য দিকে ঘোরানো। দিবাকর ঘরে ঢুকতেই সিরিজা মুখ ঘুরিয়ে ওর দিকেই তাকালো। তাকানোর মধ্যে একটা দূংখ ছিলো। মনমরা ভাবও ছিলো। ক্ষোভটা ফেটে উঠছিলো ওর চোখে মুখে। ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছি না দিবাকর। কিছু বলতে গিয়ে ওর জিভে যেন কথা আটকে গেলো। শুধু একবারই অতি কষ্ট করে সিরিজাকে বলার চেষ্টা করলো, "সিরিজা..... আমি বলছিলাম....." সিরিজা মুখটা নীচু করে নিয়েছে। দিবাকর চেষ্টা করছে ওর থুতনীতে হাত দিয়ে মুখটা তুলে দৃষ্টিটা ওর দিকেই ফেরানোর।  -- "আমি বলছিলাম কি..... শোনোনা একবার আমার কথা....." সিরিজার মনটাকে ঠিক করার জন্য এবার ও সিরিজার পাশেই বসে পড়লো। বিছানাতে সিরিজার পাশে। থুতনীতে হাত রাখার পরও সিরিজা মুখ তুলছিল না। খুব নরম স্বরে দিবাকর ওকে বললো, "তোমার কষ্টটা আমি বুঝি। আর নিজেকে কষ্ট দিও না সিরিজা। আমি একবার যে ভুল করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে দাও। তুমি এরকম কোরো না সিরিজা। আমি রজতের কাছে তাহলে খুব পাপী হয়ে যাবো।" সিরিজাকে এবার একটু হাত ধরে ওর মন ফেরানোর চেষ্টা করলো দিবাকর। সিরিজার মাথাটা ওর হাতের টানে দিবাকরের বুকের ওপর চলে এলো। মাথা নীচু করে ওকে দেখে মনে হবে যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কিন্তু ও বড় শক্ত মেয়ে। ওর চোখে জল নেই। দিবাকর তবু ভাবলো ওর বুকে মাথা রেখে সান্তনার আশ্রয় খুঁজছে সিরিজা। ও সিরিজার পিঠটা হাত দিয়ে ধরতে গিয়েও থমকে গেলো। মুখে শুধু বললো, "আমি আছি তো। তুমি চিন্তা করছো কেন? দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভুলটা তো আমার সিরিজা। একবার যে ভুল করেছি, দ্বিতীয়বার আর সে ভুল আমি করবো না।" মাথাটা তখন দিবাকরের বুকের ওপর থেকে তুলে মুখটা ওপরের দিকে করেছে সিরিজা। একেবারে দিবাকরের মুখের থেকে এক ইঞ্চি দূরত্বে। দিবাকর ওকে দেখছে। সিরিজাও ওকে দেখছে। দিবাকর দেখছে একভাবে সিরিজা দেখছে আর এক ভাবে। দুজনের দেখার মধ্যে কোনো মিল নেই। সিরিজা যেন দিবাকরের থেকে সান্তনার চেয়েও বড় কিছু পেতে চাইছে। ওর তখন দিবাকরকে আপনি করে সন্মোধনের রকমটাই পাল্টে ফেলে কেমন তুমি তুমি তে চলে এসেছে!  - "কি বলছো দিবাকরদা? এরপরেও আবার দ্বিতীয় ভুল?"  -- "মানে?"  - "মানে তু্মি কি কিছুই বোঝ না? অন্তত আমার জন্য একবার বোঝার চেষ্টা কর।" দিবাকর তখনো বুঝতে পারছে না মানে। সিরিজা আচম্বিতে ওর ঠোঁট ছুঁয়ে ফেলেছে ঠোঁট দিয়ে। চুমু দিয়ে রাঙিয়ে দিতে শুরু করেছে দিবাকরের ঠোঁটটাকে। দিবাকর ঠোঁট ছাড়াতে চেষ্টা করেও পারছে না। একি হচ্ছে? সিরিজা ওকে এমন আবদ্ধ করে ফেলেছে কেন? কি করবে তাহলে রজত এখন? শেষ পর্যন্ত রেশমিকে যদি না পাওয়া যায় তাহলে? তাহলে তো সিরিজাও নয় রেশমিও নয়। এখন কি করবে দিবাকর? সিরিজা পাগলের মতন ওর ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরে চুষতে আরম্ভ করেছে। দিবাকর কাতর হয়ে সিরিজাকে অনুরোধ করছে, "সিরিজা এমন কোরো না। রজত আমাকে ভুল বুঝবে।" কিন্তু সিরিজা ওর কথা শুনছে না। এদিকে সদর দরজাতেও বেল বাজতে শুরু করে দিয়েছে। রজত এসে গেছে। মনে হয় বাইরে থেকে ডাকছে। সিরিজা তবুও দিবাকরের ঠোঁট ছাড়ছে না। কোনরকমে ধাক্কা দিয়ে দিবাকর চেষ্টা করলো সিরিজাকে ওর থেকে দূরে সরিয়ে দেবার। ওর তখন থরথর করে কাঁপছে সারা গা টা। সিরিজার ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁটটাকে মুক্ত করে নিয়েছে ও। রাগ উঠে গেছে চরমে। এর আগে এমন ভাবে দিবাকরকে রাগতে সিরিজা কখনও দেখেনি। বিছানার ওপর নিজের ঠোঁট দুটোকে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে সিরিজা তবু ওকে দেখছিল। দিবাকর ক্ষেপে গেছে মারাত্মক ভাবে। রাগতে রাগতে ও সিরিজাকে দুষতে লাগলো সাংঘাতিক ভাবে।  -- "কি ভেবেছ তুমি? ভেবেছ বারবার আমাকে চুমু খেয়ে অবশ করে দেবে? শোনো সিরিজা, এইভাবে চুমু দিয়ে তুমি আমাকে টলাতে পারবে না। আমাকে দূর্বল করার চেষ্টা কোরো না। আমি সব ফাঁস করে দেব রজতের কাছে। বলে দেব তুমি কি করতে চেয়েছ আমার সাথে। আমি নিজে খারাপ হব তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু রজতের কাছ থেকেও তুমি পার পাবে না। ও ছাড়বে না তোমাকে। ব্যাচারী এত ভালোবেসেছে তোমাকে। তাকে কেন ঠকাতে চাইছো? তোমার কি একটুও মায়ামমতা হচ্ছে না ওর প্রতি। এসব কি শুরু করেছো তুমি?" কলিংবেলটা আবার আরেকবার বেজে উঠলো বেশ জোরে। সিরিজা ভ্রুক্ষেপ করছে না। দিবাকরও ওকে ভালো করে কথা না শুনিয়ে ঘর ছেড়ে যেতে পারছে না। ওর রাগ তখনও ফেটে পড়ছিল শরীর থেকে। সিরিজাকে রীতিমতন ভৎর্সনা করতে ছাড়ছে না ও।  -- "জেনে রাখ, তোমার এই চুমু কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না আমার মনে। আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাতেই অনড় থাকব। তোমার যদি রজতকে পছন্দ না হয় তাহলে তাকে নিয়ে তুমি কি করবে না করবে সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমাকে অযথা টানাটানি কোরো না। এসবের মধ্যে আমি নিজেকে কোনোদিন জড়াব না। আমার শেষকথা তোমাকে বলে দিলাম সিরিজা। যা করেছো এর পুনরাবৃত্তি যেন কোনোদিন আর না হয়।" বেলটা আবার যেই বেজে উঠলো দিবাকর চেঁচিয়ে বললো, "আসছি আসছি রজত। একটু ওয়েট কর।" রজতকে দরজা খুলেই বলবে - "আমি বাথরুমে ছিলাম। আর সিরিজা বোধহয় শোবার ঘরে রয়েছে। তাই দরজা খুলতে দেরী হয়ে গেল।" নিজের ঠোঁটের ওপর আঙুল তুলে সিরিজাকে সাবধান করে দিয়ে বললো, "আমি দরজা খুলতে যাচ্ছি। রজত এসেছে। তুমি স্বাভাবিক হয়ে নাও। ও যেন কিছু বুঝতে না পারে।" দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত
Parent