পরিবর্তন_Written By mblanc [প্রথম পর্ব - ১.৭ এক বৈজ্ঞানিকের চিতা]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2015/11/written-by-mblanc_47.html

🕰️ Posted on November 9, 2015 by ✍️ mblanc

📖 1190 words / 5 min read


Parent
পরিবর্তন Written By mblanc প্রথম পর্ব  ।। ১.৭ ।। এক বৈজ্ঞানিকের চিতা কীভাবে নেমে এলাম, কীভাবে ফিরে এলাম জানি না। ঘোরের মধ্যে ছিলাম, হঠাৎ হুঁশ হতে ইতিউতি চেয়ে দেখি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঘড়িতে দেখি পাঁচটা বেজে দশ। এতোটা রাস্তা হেঁটেই এসেছি তবে? বড় তেষ্টা পেয়েছে। অনু....? যাক, যা গেছে তা যাক। একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্টেডি করলাম। আমার একটা প্রফেশনাল ইমেজ রাখা জরুরী। কোথায় যেন শুনেছিলাম - টু বি সাকসেসফুল, লুক সাকসেসফুল। গটগট করে ঢুকে গেলাম অফিসের ভেতরে। দীপালি কি একটা যেন বলল। কান না দিয়ে চলে এলাম ল্যাবে। ছেলেমেয়েরা সব কাজে ঢিলে দিয়েছে, তিনজোড়া শুকসারি তিনটে কোনায় গল্প জুড়েছে - একটা জোড়া অবশ্যই সুজাতা-পিনাকী। আমাকে দেখে সব হড়বড় করে নিজের নিজের ডেস্কে ফিরে গেল।  - "অ্যাটেনশন এভরিওয়ান!" যতটা প্রফেশনাল গলাটা করতে চেয়েছিলাম, কিছুই হল না - দুর্বল শোনাল।  - "আজকের মত এখানেই গুটিয়ে ফেলো। আমার কিছু নতুন ফর্মুলা টেস্ট করার আছে, সেজন্য ল্যাব ফাঁকা চাই। আবার কাল সকালে দেখা হবে, গুড ইভনিং!" ধীরে ধীরে ল্যাব খালি হতে লাগল। সু-পি জোড়া হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে থাকতে চাইছিল, কিন্তু জোর করে তাড়ালাম। কারণ আজকের গবেষণায় শিক্ষা কিছু নেই, বরং কুশিক্ষা আছে। আমার পরের স্টেপ ঠিক করা হয়ে গেছে; এই বিশেষ টেস্ট-এর জন্যে আমার ফাঁকা ঘর চাই - একদম ফাঁকা! এখন বসে আছি আমার ডেন-এ। আমার সামনে দুটো টেস্টটিউব। বামে সবজেটে দুধের মতো ফর্মুলা-৪৮ - আমাদের "হার্বাল ভায়াগ্রা"; আর ডাইনে স্বচ্ছ নীল একটা তরল, ফর্মুলা বি-১১। এটার কাজ হওয়া উচিত মানুষের যৌন হরমোনগুলোর চরিত্র একটু-আধটু পাল্টানো আর হরমোন ক্ষরণকারী গ্ল্যান্ডগুলোকে শক্ত করা। করা তো অনেক কিছুই উচিত, কিন্তু মানুষের ওপর পরীক্ষা না করলে কীভাবে বুঝব কাজ করছে কী না? এখানে শিম্পাঞ্জী অবধি পাই নি। এখনো পারমিট পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু হাতে আর একমাস! কে এমন ভলান্টিয়ার আছে, অজানা-অচেনা দুটো তরল নির্দ্ধিধায় গলায় ঢেলে দেবে বিজ্ঞানের স্বার্থে? এমন কেউ, যার আর কিছুই হারানোর নেই। যেমন আমি। কী আছে আমার ভবিষ্যতের থেকে আশা করার? আমার জীবনের কাজ সময়ের অভাবে আর ব্যুরোক্র্যাসির ফাঁসে পড়ে নষ্ট হতে বসেছে। আমার বন্ধু বলে এমন কেউ নেই যে আমাকে ল্যাং মারবার চেষ্টা করবে না। আমার স্ত্রীকে এতোটাই ইগনোর করেছি যে পুরুষজাতের ওপরেই তার বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে। কী হাতিঘোড়া করলাম এজন্মে তা হলে? এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি যেটা এমনিতেই যাদের কোনো সংযম নেই তাদের আরো হেল্প করবে? যাদের খাড়া করার জন্যই ওষুধ লাগে তাদের সুখের কাবাবের মাঝে রেস্পনসিবিলিটির হাড্ডি না পড়ার ব্যাবস্থা করেছি ও করছি এখনও? এই আমার লাইফ? এমন লাইফ থাকার চেয়ে না থাকা, এমনকি কোমায় থাকাও ভালো! আমি কি অপ্রকৃতিস্থ? হা হা হা। আমার লাইফে কোনটা প্রাকৃতিক, ব্রাদার? হাত বাড়িয়ে কফি মেশিনের পাশ থেকে একটা কাপ তুলে নিলাম। এই মুহুর্তে আমার চাইতে যোগ্য টেস্ট সাবজেক্ট আর নেই। কাপটা ধোয়া নেই। একমুহুর্তের জন্য ইতঃস্তত করলাম.... তারপর হাসি পেলো। রবিঠাকুরের সেই একটা কবিতা আছে না, অমুকে জনম যার ইয়েতে ভয় কি তার? শান্তভাবে ফর্মুলা-৪৮-টা কাপে ঢাললাম। তারপর বি-১১। একটা চামচে নিয়ে নাড়তে থাকলাম। ভাল করে না ফেটালে টেস্ট হবে না যে..... অনু-মনুর মুখ, ওপরে-নীচে, ভেসে উঠল চোখের সামনে। জেনুইন ভালবাসায় দুজোড়া চোখ ভেসে যাচ্ছে। এমনভাবে ভাল মেয়েরাই বাসতে পারে। সাদা কাপে ফিরোজা রঙের তরলটায় ফেনা কাটছে। কিছু একটা গ্যাস বেরচ্ছে, কিন্তু কোন গন্ধ নেই। সরি অনু। সরি তোমার গোপন প্রেম লুকিয়ে দেখার জন্য। সরি তোমার লাইফটা নষ্ট করার জন্য। সরি ফর এভরিথিং। একফোঁটা নোনতা জল আমার গাল থেকে টপ করে পড়ল কাপের মধ্যে। সরি দীপালি, সুজাতা, পিনাকী, দেবব্রত, রাকেশ, প্রিয়াঙ্কা, অনুরাধা, অভিজিত, নাজমা। তোমাদের প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পারলাম না। সরি। চিয়ার্স! এক চুমুক মুখে দিতেই ওয়াক তুলে কাপটা নামিয়ে রাখতে হল। শালার বোধহয় শুয়োরের পেচ্ছাপও এর চেয়ে ভাল খেতে। কি করা যায়? কাপটার দিকে তাকাতেও ঘেন্না লাগছে, এত বিশ্রী স্বাদ মালটার। হাত বাড়িয়ে র‍্যাক থেকে সুগারফ্রী-র ডিব্বাটা পাড়লাম। মাসপাঁচেক হল আমার হাই সুগার দেখা দেওয়ায় আমাকে চা-কফিতে কৃত্রিম চিনি খেতে হয়। ভাল লাগে না, কিন্তু কী আর করা যাবে। ওয়েল, আজ ভাল লাগবে, কিছুটা হলেও। অকাতরে ডিব্বা খালি করে ঢেলে দিলাম কাপে। সামান্য কয়েকটাই ছিল। ভাল করে না ফেটালে টেস্ট হবে না যে.... ঠিক ঠিক। ফেটাই ভাল করে। এখন মনে পড়ল - ঐ কথাটা অনু বলত, যখন আমি চা দিতে দেরি হলে বিরক্ত হতাম। এই দেখো অনু, আজ আমি ভালোভাবে মিক্স করব। একটি দানা পড়ে থাকবে না, দেখো। গুলতে গুলতে তরলটার মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। জিনিসটা ক্রমেই স্বচ্ছ হয়ে আসছে। দুধের মতো থেকে জলের মতো হয়ে আসছে। আর রং-ও পালটে যাচ্ছে - ফিরোজা থেকে আকাশী, আকাশী থেকে হাল্কা সবুজ, কচি কলাপাতি রঙ, হলদে.... কী জিনিস মেশালাম রে ভাই? হাত বাড়িয়ে সুগারফ্রী-র ডিব্বাটা নিয়ে গায়ে লেখা ইনগ্রেডিয়েন্ট গুলো দেখলাম। হুমম.... ল্যাকটোজ, অ্যাস্পারটেম, সোডিয়াম ক্রোজকারমেলস, ম্যাগনেসিয়াম স্টিয়ারেট, ম্যাগনেসিয়াম.... আমার কোন আইডিয়া নেই এতোগুলো জটিল রাসায়নিক একসাথে আমার ফর্মুলায় পড়লে কী হতে পারে। নিকুচি করেছে, মিষ্টি হলেই হল। কিছু পরে, যখন আর কোন চেঞ্জ হচ্ছে না, তখন ভাল করে দেখলাম কাপের ভিতরে। তরলটা এখন স্বচ্ছ, গাঢ় কমলা রঙের। কেমন যেন শ্যাম্পুর মত দেখতে, কিন্তু জলের মত পাতলা। আলোর নীচে ধরলে ভেতরে ভাসমান দু-একটা দানার মতো কী যেন চিকচিক করছে - আজকার কিছু কিছু জেল টুথপেষ্টে যেমন করে। কোন গন্ধ নেই। চিয়ার্স, অনু। চিয়ার্স এভরিবডি! গুডবাই! নাক টিপে ধরে ঢকঢক করে গিলে নিলাম কাপের পুরোটাই। স্বাদ? খারাপ কিছু লাগল না, তবে ভালও লাগেনি। মিষ্টিও নয়। চেয়ারে হেলান দিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে বসলাম। কতক্ষণ লাগবে কিছু এফেক্ট হতে, তাও জানি নে। যতক্ষণ লাগে লাগুক, আমার এখন অফুরন্ত সময়। গরম লাগছে। এসিটা একেবারে নামিয়ে দিয়েছি, আমার মুখে সোজা লাগছে ঠাণ্ডা বাতাসটা। তবু গরম লাগছে। বেশ গরম। ইন ফ্যাক্ট, ল্যাবের দেওয়াল গুলো গরমে লালচে হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে। সবকিছুই গরমে কমলা হয়ে উঠছে। আমার দরদর করে ঘাম দিচ্ছে। মাথার ভেতরটা কেমন করছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চারিদিকের সবকিছু গরম হয়ে লাল-কমলা আলো ছড়াচ্ছে, আর তাতে আমার চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। হৃৎপিণ্ডটা দুম-দুম করে চলছে, মনে হয় যেন পাঁজর ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে। আমি আর বসে থাকতে পারছি না - কিন্তু উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথা ঘুরে টাল খেয়ে পড়ে গেলাম। হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকলাম ব্লাস্ট ফার্নেসের মেঝেতে। দেখলাম প্লাস্টিকের চেয়ারগুলো গলে তরল হয়ে গেলো। গলে যাচ্ছে - গলে গলে পড়ে যাচ্ছে সবকিছু। স্টিল, কংক্রীট, টেবিলের কাঠ - না পুড়ে সব কিছুই গলে লাভা হয়ে যাচ্ছে। এই গোটা শহর - কংক্রীটের জঙ্গল গলে পড়ছে, আর তার মাঝ দিয়ে লাভার নদী বয়ে যাচ্ছে। সেই নদীতে ভাসছি আমি, যাচ্ছি কোন অচিন দেশের অগ্নিসমুদ্রে। সেই নদীতে স্নান করছে তিনটি মেয়ে। অনু-মনু-রাণু। আগুনের তৈরী দেহ তাদের, আগুনের হাত-পা, আগুনের চোখ-মুখ, আগুনের যৌনাঙ্গ। আর আগুনের মতোই জ্বালাময় সৌন্দর্য তাদের। অগ্নিকন্যারা খেলা করছে লাভায়, ছিটোচ্ছে, ডুব দিচ্ছে। জলকেলি? না না, লাভাকেলি। জড়িয়ে ধরছে একে অপরকে, চুমো খাচ্ছে গভীর ভালোবাসায়। মুখে, গালে, ঘাড়ে, বুকে, স্তনে, পেটে, যৌনাঙ্গে। আগুনের হলকা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে তারা, গলে গলে মিশে যাচ্ছে একে অপরের মধ্যে। আশ্চর্য, আমি ওদের ভালোবাসা বুঝতে পারছি। অনুভব করতে পারছি ওদের তীব্র সুখ। দিগন্তজোড়া লেলিহান শিখার গর্জনের মধ্যেও ওদের রমণশ্বাসের শব্দ আসছে কানে। সুখে দগ্ধ হচ্ছি আমি, লাভার নদী তো ঠাণ্ডা। মাথার ওপরে লালচে আকাশের কমলা তারাগুলোও গলে গলে উল্কা হয়ে পড়ছে। তিন অগ্নিকন্যা অসম্ভব সাদা শিখায় জ্বলে উঠে চরম শীৎকার ছাড়ল, আমি কেঁপে উঠলাম থরথর করে অন্তিম পুলকে। আমি ভিসুভিয়াস, মাইলের পর মাইল উৎক্ষেপ করলাম আমার জ্বলন্ত পৌরুষ। ভেঙ্গে যাচ্ছি আমি, টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছি চারদিকে। আঃ, ঠাণ্ডা হল ভেতরটা এতক্ষণে। ইন ফ্যাক্ট, এবার জুড়িয়ে আসছে সবকিছু। জুড়িয়ে আসছি আমি, আমার টুকরোরা। ঠাণ্ডা হচ্ছে পৃথিবী। কমে আসছে আলো, কুয়াশার মতো অন্ধকার ধীরে ধীরে জমাট বাঁধছে। তিনটি নগ্ন নারীদেহ অঘোরে ঘুমোচ্ছে জমাট বাঁধা লাভানদীর ঠিক মাঝখানে। ত্রিভুজ আকারে শুয়েছে তারা, একের মাথা অন্যের রমণাঙ্গ ঢেকে। নিঝুম রাতের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমোয় অনু-মনু-রাণু। এখন সব আঁধার, সব ঠাণ্ডা, সব শান্ত। আআহহহ.... আমারও ঘুম পাচ্ছে। ঘুম..... প্রথম পর্ব সমাপ্ত
Parent