পরিবর্তন_Written By mblanc [প্রথম পর্ব - ১.৪ গুপ্তকথা]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2015/11/written-by-mblanc_4.html

🕰️ Posted on November 9, 2015 by ✍️ mblanc

📖 715 words / 3 min read


Parent
পরিবর্তন Written By mblanc প্রথম পর্ব  ।। ১.৪ ।। গুপ্তকথা কিছুতেই কাজে মন বসছিল না। ইতঃস্তত করে শেষ পর্যন্ত সুনন্দাদির নাম্বারটাই বের করে কল করলাম।  - "কীরে দীপু? এতদিন পরে মনে পড়ল? আমাদের তো ভুলেই গেছিলি!"  - "ভেরি সরি দিদি! কাজের ফাঁকে টাইম করে উঠতে পারি নি। সব ভাল তো?"  - "বলব কেন? এখানে এসে দেখে যা না।"  - "সে যাব'খন। ইয়ে, দিদি, একটা জিনিস জিগ্যেসা করবার ছিল...."  - "হ্যাঁ বল?" কি বলি? দিদি, আমার বউএর কি বয়ফ্রেন্ড আছে? কেমন লাগবে?  - "ইয়ে, মানে, অনুর ব্যাপারে একটা কথা ছিল।" কথাটা একটু সাজিয়ে নেবার জন্যে থামলাম।  - "আবার ঝগড়া করেছিস বুঝি? এই এক তোদের জ্বালা বাপু। ঝগড়া করিস তোরা আর মানাতে হয় আমাকে!"  - "না না, ঝগড়া নয়, আসলে...."  - "অ, বুঝেচি। মেয়েলি ব্যাপার কিছু?"  - "না, তাও নয়। আমি ভাবছিলাম কি যে, ও তো তোমাকে সবকিছু বলে, না কি?" সুনন্দাদি একটু চুপ করে রইল। "না, সবকিছু বোধহয় বলে না। কিন্তু কথাটা কী, ভেঙ্গে বল।"  - "ওর কি ইদানিং বেশ কিছু নতুন বন্ধু-টন্ধু হয়েছে?" ওপারে একটা নিশ্বাস পড়ার শব্দ হল, তার পর সব চুপচাপ কিছুক্ষণ।  - "সুনন্দাদি? ... হ্যালো?"  - "শোন দীপু। তোকে আমি নিজের ভাইয়ের মত ভালবাসি - " সুনন্দাদির এ গলা আমি চিনি না - "তাই লুকোছাপা না করে তোকে এটা পরিস্কার বলে দেওয়া আমার কর্তব্য মনে করি। গত সপ্তাহের সোমবার না মঙ্গলবার, আমি বেলা দেড়টা-দুটো নাগাদ ভবানীপুরে, জগুবাজার বাসস্টপে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার বাস আসতে উঠবার জন্যে এগিয়েছি, দেখি ঠিক তার পেছনের বাসটা থেকে তোর বৌ নামছে। আমি ডাকলাম, সে তাকাল কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি উলটো দিকে হাঁটা দিল। আমার বাসটা পালাচ্ছিল তাই, না হলে আমি আবার ডাকতাম, পিছু ধাওয়া করতাম কিছুটা। আশ্চর্যের কথা হল এই যে আমি পরে যখন ওকে ফোন করে ব্যাপারটা জিজ্ঞেসা করলাম তখন ও কুললি হেসে উড়িয়ে দিল, বলল কিনা জগুবাজারে জীবনে কখনো যায় নি! অথচ আমি জানি আমার ভুল হয় নি, কারন ও আমার ডাক শুনে ঘুরে তাকিয়েছিল। আমি আর তখন ব্যাপারটা নিয়ে জল ঘোলা করতে যাই নি, কিন্তু আজকে যখন তুই ঐ কথা জিজ্ঞেসা করছিস, আমি দুই আর দুয়ে চার করতে বাধ্য হচ্ছি। হ্যাঁ, আমি মনে করি ওর নতুন 'বন্ধু' হয়েছে, আর আমি মনে করি তুই একটু শক্ত হয়ে কিছু একটা কর সে বিষয়ে!" সুনন্দাদি হাঁপাচ্ছে। কখনো ওকে আমি এতগুলো কথা একসাথে বলতে শুনিনি। এই টোনে তো কখনই নয়।  - "কিছু একটা কর, দীপু। না হলে তোর লাইফটাও আমার মত নিঃসার হয়ে যাবে। কাছের মানুষদের কখনো এভাবে আলগা ছেড়ে দিতে নেই! তুই কি চাস তোরও ডিভোর্স হয়ে যাক আমার মতো?" আমি চিরকালই একটু ইমোশনাল ছিলাম। এখনও আমার গলা ধরে এল - একদিনে এতকিছু একসাথে ওভারডোজ হয়ে যাচ্ছে। "কি করব আমি? কোথায় খুঁজব তার লাভারকে? ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তো হয় আমাকে মাথার ডাক্তার দেখাতে বলবে, না হয় বলবে বেশ করেছি। তার চেয়ে যা হয় হোক, আমার কিচ্ছু জানার দরকার নেই। ত-তোমাকে ফোন করে ভুল করেছি। সরি। বাই।"  - "দীপু শোন, ভাই-" এবারেও আমিই কেটে দিয়েছি। চুপচাপ বসে রইলাম কিছুক্ষন। অভিমান করে বললেও, আমার কথাগুলো যুক্তিসঙ্গত। কীভাবে জানব অনুর বন্ধুটি কে? অনুর সাথে কথা বলার সত্যি মানে হয় না। ওর সাথে শেষ কবে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছি মনে নেই। আর ভবানীপুর তো বিরাট জায়গা, আমি কি দোরে দোরে ফেরিওয়ালার মতো ডাক দিয়ে ঘুরব, বৌ.... বৌ.... আমার বৌ আছো কোন ঘরে.... বৌ.... বৌ.... কচি বৌ.... এতো দুঃখেও হাসি পেল। হাসতে যাচ্ছি, দরজায় টোকা। "কাম ইন।" পিনাকী ঢুকে এল। "স্যার, জেনিংসের রিপোর্টটা।"  - "বাহ, এর মধ্যেই হয়ে গেল?"  - "একচুয়ালি তেমন কিছু খোঁজাখুঁজি করতে হয় নি, স্যার। ঐ ভদ্রলোকের নিজেরই একটা ওয়েবসাইট আছে, সেটা ফলো করতেই সব পেয়ে গেলাম।"  - "তাই, বেশ বেশ - কি বললে?!!" পিনাকীকে একটু কনফিয়ুজড দেখাল। "বললাম যে প্রোফেসর জেনিংসের ওয়েবসাইটটা ফলো করতেই সব তথ্য বেরিয়ে গেল। .... স্যার? .... আমি এখন যাই?"  - "অ্যাঁ? ও হ্যাঁ, যাও। থ্যাঙ্কস।" পিনাকী আরো কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল। দরজাটা বন্ধ হতেই আমি ঝটপট নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলতে থাকলাম। অফ কোর্স, ফলো, ফলো, ফলো! আর আমি কিনা নিজেকে সায়েন্টিস্ট বলি, এই সামান্য জিনিসটা মাথায় এল না! অনুর লাভারকে খুঁজে বার করা তো খুবই সোজা। আমি জানি অনু মোটামুটি কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। সুতরাং, সুনন্দাদির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আর মোটামুটি একঘণ্টা বাদে অনুকে জগুবাজার বাস স্টপে দেখতে পাওয়া উচিত। আমার অফিস থেকে জগুবাজার যেতে লাগে দশ-পনের মিনিট। বাকিটা তো ডিটেকটিভ সিরিয়াল! বাইরে বেরোবার আগে দীপালির অগ্নিদৃষ্টিতে ডানদিকটা ঝলসে গেল। মনে মনে বললাম - সরি ডার্লিং, এ আমার জীবন নিয়ে প্রশ্ন, আর অন্য কারোর মরণ নিয়ে। চুলোয় যাক চাকরি, আমি আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব।
Parent