পাপ কাম ভালোবাসা_Written By pinuram [পঞ্চবিংশ পর্ব (চ্যাপ্টার ১১ - চ্যাপ্টার ১৩)]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/08/written-by-pinuram_12.html

🕰️ Posted on August 21, 2014 by ✍️ pinuram

📖 7216 words / 33 min read


Parent
পাপ কাম ভালোবাসা Written By pinuram পঞ্চবিংশ পর্ব (#11) মেহেকে অনুপমার গালে বুকে হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, "সত্যি বলছি কোন মেয়ের সাথে এই খেলায় এমন সুখ পাবো ভাবিনি।" অনুপমা ওর যোনির চেরায় আঙুল বুলিয়ে আদর করে বলে, "এবারে আমার মিস্টার তোমাকে একটু আদর করতে চায়।" মেহেক দেবায়নের দিকে তাকাতেই দেখেতে পায় ওর বিশাল লিঙ্গ ফুলে তালগাছের মতন হয়ে গেছে। সেই দেখে মেহেক চটুল হেসে বলে, "না গো অনুপমা, তোমার আঙুল ওই দৈত্যের চেয়ে অনেক ভালো। তুমি আমার যোনি নিয়ে যথেচ্ছ খেলে যাও কিন্তু ওই দৈত্যকে দেখে একটু কেমন লাগছে।" দেবায়ন হেসে বলে, "উম্মম আমার সেক্সি মিষ্টি মেহেক। চিন্তা নেই আমার বৌ সাথেই আছে, তোমার কষ্ট হলে ও ঠিক জানে কি ভাবে তোমার কষ্টের লাঘব করিয়ে দেবে।" মেহেক তর্জনী নাড়িয়ে মনমোহক এক হাসি দিয়ে দেবায়নকে কাছে ডাকে, "সত্যি বলছি কত লিঙ্গ নিলাম এই যোনির মধ্যে। কিন্তু তোমার বউয়ের দুই আঙুল আর ওর চুম্বন পেষণে এক অন্য আনন্দ পেলাম।" দেবায়ন লিঙ্গ নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "তাহলে কি আমার লিঙ্গ তোমার যোনির রসে মাখামাখি করতে পারবে না।" অনুপমা মেহেকের যোনি কেশের মধ্যে নখের আঁচর কেটে উত্যক্ত করে দেবায়নকে বলে, "তোর জন্য এই রসে টইটম্বুর মাল টাকে তৈরি করলাম এবারে চলে আয়।" দেবায়ন হাতের মদের গ্লাস শেষ করে, লিঙ্গ মুঠির মধ্যে ধরে নাড়াতে নাড়াতে বিছানার দিকে অগ্রসর হয়। অনুপমা মেহেকের পায়ের মাঝের কুঞ্চিত কালো কেশের মধ্যে নখের আঁচর কেটে ওকে আদর করে। মেহেক চোখ খুলে মিচকি হেসে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন বিছানার পাশে এসে দুই নারীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। অনুপমা গলা বাড়িয়ে দেয় আর দেবায়ন ওর গালে, ঠোঁট কয়েকটা গভীর চুমু খায়, সেই সাথে ওর স্তনের ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়। দেবায়ন মেহেকের দুই মেলে ধরা জানুর ওপরে হাত দিয়ে বিছনার শেষ প্রান্তের দিকে টেনে ধরে। মেহেক দুই পা মেলে ধরে এগিয়ে যায় আর দেবায়ন নিজের জানুসন্ধি মেহেকের জানুসন্ধির সাথে মিলিয়ে দেয়। বজ্র কঠিন লিঙ্গ চেপে যায় কালো কেশে ঢাকা রেশমি জঙ্গলের সাথে আর তাঁর নিচে লুকিয়ে থাকা যোনি চেরার সাথে। লিঙ্গের দীর্ঘ বরাবর চেপে যায় যোনির চেরা বরাবর। যোনি পাপড়ি চেরা থেকে বেড়িয়ে লিঙ্গের গরম ত্বকের ওপরে চুমু খায়। যোনি ওপরে লিঙ্গের চাপ অনুভব করতেই মেহেকে নড়ে চড়ে ওঠে। মিহি কণ্ঠে বলে, "তোমার লিঙ্গ কি গরম গো।" দেবায়ন কোমর নাচিয়ে যোনির চেরা বরাবর লিঙ্গ ঘষে মেহেককে উত্তেজিত করে বলে, "এবার তোমাকে আদর করে করে সঙ্গম করব।" অনুপমা মেহেকের দুটি স্তন আর স্তনের বোঁটা চটকাতে চটকাতে বলে, "তোমার সাথে খেলার সময়েই বুঝেছিলাম যে তোমার যোনিতে অনেক কুরকুরি। আজকে আমার মিস্টার তোমার সব জ্বালা মিটিয়ে দেবে।" মেহেক হাত বাড়িয়ে দেবায়নের চওড়া ছাতির ওপরে আঙুল মেলে আঁচড় কেটে আহ্বানের সুরে বলে, "উম্মম্ম দেবায়ন তোমার লিঙ্গের ছোঁয়া পেয়েই আমি পাগল হয়ে গেছি।একবার আমার যোনির ভেতরে ঢুকলে কি হবে সেটাই ভাবছি।" দেবায়ন মেহেকের শরীরের ওপরে ঝুঁকে পরে ওর মুখ আঁজলা করে ধরে। প্রথমে কপালে তারপরে গালে ঠোঁটে গলায় চুমু খায়। দুই হাতে দুই নরম তালের মতন বড় বড় স্তন জোড়া মুঠির মধ্যে নিয়ে পিষে দেয়। ওইদিকে কোমর নাড়িয়ে যোনির চেরা বরাবর লিঙ্গ ঘষে দেয়। লিঙ্গের লাল মাথা বারেবারে যোনির উপরি ভাগের ভগাঙ্কুরে ডলে যায় আর মেহেকের কামত্তেজনা শতগুন বেড়ে ওঠে। মেহেক মৃদু কণ্ঠে বলে, "একবার তোমার বৌ আমাকে উত্যক্ত করে আর এখন তুমি আমাকে উত্যক্ত করছ। প্লিস আমার ভেতরে তোমার ওই বিশাল লিঙ্গ ঢুকিয়ে আমাকে শেষ করে দাও।" অনুপমা দেবায়নের গালে আলতো চাটি মেরে বলে, "এই কুত্তা, মেহেক গরম থাকতে থাকতে লাগিয়ে দে। ওর স্তন আর ওর শরীর নিয়ে আমি খেলছি। তুই ওর যোনির গরম আগে ঠাণ্ডা কর। অনেকক্ষণ থেকে কাটা মাছের মতন ছটফট করছে।" দেবায়ন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেহেকের যোনি দেশে হাত দিয়ে আদর করে দেখে যে যোনি একদম রসে ভিজে গেছে। হাতের মুঠির মধ্যে লিঙ্গ ধরে যোনি গুহার মুখে স্থাপিত করে। লিঙ্গের বিশাল লাল মাথা যোনি পাপড়ি ছুঁয়ে থাকে। একটু সামনের দিকে কোমর ঠেলে দিতেই অনায়াসে লিঙ্গ শিক্ত যোনির মধ্যে ঢুকে যায়। বহু সঙ্গমে পরিচিত যোনি একটা বিশাল লিঙ্গ নিজের ভেতরে ধারন করে কেঁপে ওঠে। নগ্ন লিঙ্গ যোনির দেয়াল ভেদ করে কিছুটা ঢুকে যায়। মেহেকের দুই চোখ আধা খোলা, ঠোঁট আধা খোলা, চেহারায় মাখা কামনার তীব্র রঙ। ফিসফিস করে দেবায়নকে বলে, "দেবায়ন তোমার লিঙ্গ ভীষণ কঠিন আর ভীষণ বড়। আমার ভেতর পুড়িয়ে দিল, প্লিজ আমার ভেতরে একটু ধরে থাকো, আমি তোমার ওই বিশাল লিঙ্গ নিজের ভেতরে অনুভব করতে চাই।" মেহেক দুই পাশে জানু ছড়িয়ে দেয় আর দেবায়ন এক প্রবল চাপে আমূল লিঙ্গ ওর শিক্ত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। সম্পূর্ণ লিঙ্গ প্রবেশ করতেই মেহেক চোখ বুজে, ঠোঁট চেপে আঁক করে ওঠে। ওর শ্বাস ফুলে ফেঁপে ওঠে। শীৎকার করে ওঠে কামার্ত রমণী, "এই শয়তান ছেলে, তুমি কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও? উম্মম্ম বাবা গো কি গরম, উফফফ, অনুপমা তোমার মিস্টার আমাকে মেরে ফেলল গো।" দেবায়ন মিচকি হেসে ওর ওপরে ঝুঁকে পরে আমূল লিঙ্গ চেপে ধরে থাকে। অনুপমা বুঝতে পারে যে দেবায়নের লিঙ্গের মাথা সোজা মেহেকের যোনির শেষ প্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে। অনুপমা হেসে মেহেকের মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়। মেহেকের কপালে ঘাম দিতে শুরু করে, দুই হাতে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে থাকে আর দেবায়নের লিঙ্গের সম্পূর্ণ দীর্ঘ নিজের ভেতরে উপভোগ করে। দেবায়ন ধীরে ধীরে কোমর পেছনে টেনে লিঙ্গের অর্ধেক, মেহেকের ভিজে চুপচুপে যোনির ভেতর থেকে টেনে বের করে।একহাতে মেহেকের নরম তুলতুলে স্তন চেপে ধরে আর পরক্ষনে এক জোর ধাক্কায় পুনরায়লিঙ্গ গেঁথে দেয় মেহেকের সিক্ত যোনিরমধ্যে। প্রথমে ধিমে তালে তারপরে তীব্র তালে শুরু হয়ে যোনি মন্থন। বারেবারে লিঙ্গের চাপে মেহেক ককিয়ে ওঠে আর কামঘন শীৎকারে ঘর ভরিয়ে দেয়, "উম্মম্মম...... ইসসস...... উম্মম্ম...... আহহহহ...... উম্মম্মম" ইত্যাদি। অনুপমা দেবায়নকে আদেশের সুরে বলে, "সোনা ওর যোনি ফাটিয়ে সঙ্গম কর। মেহেকের নরম তুলতুলে শরীর নিঙরে পিষে সব রস চুষে নাও। ওর যোনির ভেতর থেকে রসে বন্যা বইয়ে দাও।" মেহেককে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে মেহেকের সব শীৎকার গিলে নেয় অনুপমা। প্রচন্ড যৌনক্ষুধায় দেবায়নপাগল হয়ে যায়।মেহেকের যোনিরমধ্যে কামলালসার ক্ষুধার্তহায়নার মতন মন্থন শুরু করে দেয়।লম্বা লম্বা প্রবল জোরে লিঙ্গে ঠেলে ঢুকিয়ে মন্থন করে আর সেই সাথে দুই নরম তুলতুলে স্তন জোড়া ডলে পিষে একাকার করে দেয়।একবার অনুপমার হাত লাগে স্তনের ওপরে একবার দেবায়নের। দুই নরম স্তন, চারখানা হাতের আক্রমনে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। চরম কামোত্তেজনায়দেবায়ন গোঙাতে শুরু করে আর সেই তালে মেহেক "ইসসস...... উম্মম্মম...... উফফফফ......" করে শীৎকার করতে থাকে। পাছা উঁচিয়ে দেবায়নের লিঙ্গের সাথে প্রতি মন্থনে তাল দেয় মেহেক। ঘামে ভিজে দুই শরীরের মিলনে থপথপ আওয়াজে ঘর ভরে ওঠে। তিনজনের মিলিত শীৎকারে, ঘামের গন্ধে, কামের গন্ধে ঘর ভরে ওঠে। মনে হয় যেন ওরা সময়ের শুরু থেকেই সঙ্গমে রত। দেবায়ন সোজা হয়ে মেহেকের পায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে মন্থনে রত হয়। মেহেক দুই পায়ে দেবায়নের কোমর জড়িয়ে ধরে আর পাছা উঁচিয়ে দেবায়নের মন্থনরে সাথে তাল মেলায়। কিছুপরে মেহেকের শরীর অনুপমার আলিঙ্গনে বাঁধা পরে টানটান হয়ে যায়। দুহাতে নিজের স্তন চেপে ধরে মেহেক তীব্র শীৎকার করে ওঠে, "উহহহহহ...... আমার আসছে...... ফেটে গেল...... অনুপমা আমাকে চেপে ধর...... ইউসসসস...... উম্মম্ম...... আআআআআ...... চেপে ধর...... ওরে...... আরও জোরে...... ইসসসস...... আমি শেষ এবারে...... দেবায়ন......" দেবায়ন এক জোর ধাক্কা মেরে আমূল লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিল মেহেকের পিচ্ছিল যোনির শেষ প্রান্তে। মেহেক ককিয়ে উঠল কঠিন লিঙ্গের প্রবল ধাক্কা খেয়ে, সারা শরীর অবশ হয়ে এল মেহেকের। প্রচন্ড লালসার উত্তেজনায় দেবায়নের শরীর কাঁপতে শুরু করে, সাথে সাথে মেহেকের নরম সাপের মতন কমনীয় দেহপল্লব কাঁপতে শুরু করে। রসালো যোনিরসিক্ত দেয়াল দেবায়নের বিশাল লিঙ্গের চারপাশে পিচ্ছিল একটা প্রলেপের মতন কামড়ে ধরে। মেহেকের যোনি পেশি প্রচন্ড আঁটো মনে হয়, এই যেন দেবায়নের লিঙ্গ কামড়ে ছিঁড়ে নেবে গোড়া থেকে! প্রচন্ড কাম উত্তেজনার চরম শিখরে পৌঁছে যায় মেহেক। কামরস তিরতির করে বেড়িয়ে এল মেহেকের যোনির ভেতর থেকে, ভিজিয়ে দিল দেবায়নের কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ। মেহেকেরউষ্ণ যোনিরস কেশ চুইয়ে পাছার চেরা বেয়ে বিছানা ভিজিয়ে দেয়। প্রচন্ড কামোত্তেজনায় অনুপমা মেহেকের গলা চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেয়। মেহেক, অনুপমার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে, আর অনুপমা মেহেককে দুহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে। দেবায়ন ঝুঁকে পরে অনুপমার গালে কামড় বসিয়ে দেয়। দেবায়নের লিঙ্গ ফুঁসতে শুরু করে, বীর্যপাত আসন্ন, অণ্ডকোষে আগুন লেগে যায়। মেহেকের যোনির পেশি কামড়ে ধরে থাকে গরম কঠিন লিঙ্গ। বেশ কয়েকবার দীর্ঘ কয়েকটা ধাক্কা দেওয়ার পরে লিঙ্গ পুরো টেনে বার করে নিয়ে আসে মেহেকের সিক্ত যোনির ভেতর থেকে, কিছুক্ষণ বাইরে রেখে শেষবারের মতন এক ধাক্কায় ঢুকিয়ে দেয় বিশাল লিঙ্গ। দেবায়ন গুঙ্গিয়ে ওঠে, "মেহেক ডারলিং...... আমার হয়ে যাবে।" মেহেক কোনোরকমে ককিয়ে কিছু বলতে চেতস আকরে কিন্তু অনুপমা ওকে চেপে ধরে বলে, "মেহেকের রসালো যোনি ভাসিয়ে দে তোর বীর্যে। ওর সারা শরীর তোর বীর্যে মাখামাখি হয়ে যাক।" "আআআআ......" করে ওঠে দেবায়ন তারপরে অনুপমার আর মেহেকের মিলিত দেহের ওপরে আছড়ে পরে। সারা শরীর টানটান হয়ে যায় আর উষ্ণ প্রস্রবনের মতন ঝলকে ঝলকে বীর্য বেড়িয়ে এসে মেহেকের যোনি গহ্বর ভরিয়ে দেয়। বারেবারে মেহেক কেঁপে কেঁপে ওঠে অনুপমার গভীর আলিঙ্গনে বাঁধা পরে। রাগরস আর কামরস মিশে এক মিশ্রিত তরল মেহেকের যোনি গুহা ভরিয়ে বাইরে চুইয়ে পড়ে। বীর্য পতনের পরে দেবায়নের লিঙ্গ কিঞ্চিত শিথিল হয়ে আসে। মেহেকের সিক্ত রসালো যোনিরমধ্যে বেশ কিছুক্ষণ নরম লিঙ্গ গেঁথে রাখার পরে আলতো করে টান দিয়ে বের করে আনে। মেহেকের মিষ্টি রসালো যোনি যেন ওর লিঙ্গ ছাড়তেই চায় না। লিঙ্গ টেনে বের করে আনতেই, মেহেক একটু কেঁপে ওঠে। ঠাণ্ডা হাওয়া দেবায়নের গরম ভেজা লিঙ্গের ওপরে বয়ে যায়, এক অদ্ভুত অনুভুতি সারা শরীরে খেলে যায়। মেহেক আর অনুপমা জড়াজড়ি করে দেবায়নের দিকে পরিতৃপ্তির হাসি মাখা চেহারা নিয়ে তাকায়। দেবায়ন ঝুঁকে মেহেকের গালে গাল ঘষে কানে কানে বলে, "সেক্সি মেহেক, তোমার যোনিতে এখন অনেক রস বাকি আছে। সারা রাত তোমার সাথে সঙ্গমের খেলা খেলতে ইচ্ছে করছে। এই একবারেই এত রস ঝরিয়ে কেলিয়ে পড়লে কি করে হবে বেবি?" মেহেক ফিসফিস করে বলে, "শেষ পর্যন্ত আমার যোনির ভেতরে বীর্য ফেলেই দিলে? জানো এর মধ্যে আমি মনে হয় তিন বার রস ঝরিয়ে দিয়েছি। আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে অনেকক্ষণ আদর করে, কিন্তু এতক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।" অনুপমার সামনেই মেহেককে আদর করে ওরনরম তুলতুলে স্তনের ওপরে আলতো চাটি মেরে বলে, "বেবি, মিষ্টি মেহেক। সত্যি বলছি তোমাকে একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।" অনুপমা দেবায়নের চুলের মুঠি ধরে নাড়িয়ে দিয়ে বলে, "কুত্তা শালা, পাশে বৌ বসে তাও, অন্যের যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে রয়েছে! তোর বউয়ের যোনির জ্বালা কে মেটাবে?" দেবায়ন হেসে দেয় অনুপমার কথা শুনে। মেহেকের যোনির ভেতরে দুই আঙুল ঢুকিয়ে কিছুটা মিশ্রিত তরল আঙ্গুলে মাখিয়ে বের করে আনে আর অনুপমার ঠোঁটের কাছে নিয়ে যায়। অনুপমা ঠোঁট খুলে ওর আঙুল চেটে দুই শরীরের মিশ্রিত রস চুষে নেয়। তারপরে মেহেকের ঠোঁটের ওপরে ঝুঁকে ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে যোনি রস আর কাম রস মিশিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। মেহেকে অনুপমার ঠোঁট থেকে বীর্য আর যোনি রসের মিশ্রণ চুষে নেয়। মেহেক সেই রস চুষে বলে, "উম্মম্মম্ম তোমরা দুইজনে দারুন সেক্সি।" মেহেক হাত পা ছড়িয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকে আর অনুপমা ওকে জড়িয়ে ওর পাশে বসে থাকে। কালো কুঞ্চিত যোনি কেশ সাদা হয়ে গেছে বীর্যের মাখামাখিতে। অনুপমা চটুল হেসে মেহেককে জিজ্ঞেস করে, "কি বেবি, কেমন লাগলো আমার মিস্টার কে?" মেহেক নাক কুঁচকে মজা করে হেসে বলে, "সো সো লাগলো, এমন কিছু নয়।" অনুপমা দাঁত খিচিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "মাল মিথ্যে বলার জায়গা পাও না! সঙ্গমের সময় তো কোঁত কোঁত করে পাছা উঁচিয়ে যোনি চেপে আদর খাচ্ছিলে!" খিলখিল করে হেসে ফেলে মেহেক, উঠে বসে দেবায়নের গালে একটা ভিজে রসালো চুমু খেয়ে বলে, "না গো, মনে হল যেন একটা টর্নেডো বয়ে গেল আমার ওপর দিয়ে। তোমার মিস্টার অন্য ধাতুর।" দেবায়নের শিথিল লিঙ্গ হাতের মুঠোর মধ্যে নাড়িয়ে দিয়ে বলে, "বাপ রে, নরম হওয়ার পরেও এত বড়।" সাথে সাথে অনুপমাও দেবায়নের লিঙ্গ মুঠির মধ্যে ধরে নাড়িয়ে বলে, "কিরে কুত্তা, বউয়ের যোনিতে এখনো জ্বালা কছে কিন্তু। মেহেকের যোনিতে সব বীর্য ঢালিসনি তো?" দেবায়ন হেসে দুই নারীর যোনির চেরায় আঙ্গুল বুলিয়ে আদর করে বলে, "আমার অণ্ডকোষে এখন অনেক বীর্য বাকি আছে। তোমাদের দুইজনকে সারা রাত ধরে সঙ্গম করতে পারি।" মেহেক মিউ মিউ করে ওঠে, "আমি একদম ক্লান্ত হয়ে গেছি দেবায়ন। এবারে তোমরা দুইজনে সঙ্গম করো, আমি চললাম শুতে।" অনুপমা অবাক হয়ে বলে, "এত তাড়াতাড়ি?" মেহেক ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, "বেবি, আমার ছেলেটা একা রুমে ঘুমিয়ে আছে।" তিন নর নারী জড়াজড়ি করে কিছুক্ষণ শুয়ে রতিখেলার শেষ অনুভূতি টুকু সারা অঙ্গে মাখিয়ে নেয়। দেবায়ন মেহেকের সারা অঙ্গে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয় আর মেহেক চুপচাপ ওদের দুই জনের দিকে নিস্পলক চেয়ে থাকে। দেবায়ন উঠে বসে দুই রমণীকে প্রশ্ন করে, "এক একটা ড্রিঙ্কস হয়ে যাবে নাকি? একটা করে কিন্তু গ্লাস বাকি আছে।" অনুপমা আর মেহেক দুইজনেই সমস্বরে বলে ওঠে, "হ্যাঁ হ্যাঁ ক্ষতি নেই।" অনুপমা আর মেহেকের হাতে ভদকার গ্লাস ধরিয়ে নিজে একটা হুইস্কির গ্লাস নিয়ে ওদের মাঝে বসে পরে। মাঝ খানে অনুপমা, একপাশে মেহেক অন্য পাশে দেবায়ন। মেহেকের চোখ হঠাৎ ছল ছল করে ওঠে, গ্লাস উঁচু করে হেসে বলে, "চিয়ার্স আমার মুক্তির জন্য।" অনুপমা ওকে জড়িয়ে গালে চুমু খেয়ে বলে, "চিয়ার্স এক ভালো বান্ধবীর জন্য।" দেবায়ন হাত বাড়িয়ে মেহেকের গালে ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে বলে, "চিয়ার্স এতো সুন্দর একটা ভালোবাসার খেলার জন্য।" গ্লাস শেষে, মেহেক নিজের জামা কাপড় পরে বিদায় জানায়। অনুপমা স্লিপ গায়ে চড়িয়ে নেয় আর দেবায়ন একটা তোয়ালে কোমরে জড়িয়ে নেয়। মেহেকের দুই চোখ ছলছল করে ওঠে। হঠাৎ করে মেহেক অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে ভাবাবেগে বলে, "তোমাদের কি বলে ধন্যবাদ জানাবো জানি না। তোমাদের সাথে হয়তো আর কোনদিন দেখা হবে না আমার। যেখানেই থাকি উপরওয়ালার কাছে সর্বদা প্রার্থনা করব যে তোমাদের জুটি অটুট থাকুক।" দেবায়ন আর অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, "মেহেক, সত্যি বলতে কি জানো আমরা এখানে এসেছিলাম হোটেল কিনতে। এখানে এসে তোমাকে মুক্তি দিতে পেরে নিজেদের বড় ভালো লাগছে।" মেহেক ওদেরকে বলে যে মান্ডি গিয়ে ওর বান্ধবীর বাড়ির ঠিকানা আর বাড়ির ফোন নাম্বার পাঠিয়ে দেবে। মেহেকে বেড়িয়ে যাবার পরে দেবায়ন আবার একবার হোটেলের কাগজ খুলে দেখে নেয়। ভালো করে একবার পড়ে দেখে সব লাইন তারপরে ব্যাগে ঢুকিয়ে অনুপমার পাশে শুয়ে পড়ে। অনুপমা আগে থেকেই এত আদর আর চটকা চটকিতে উত্তেজিত হয়েছিল। নরম শরীরে উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেতেই আবার ওর কাম পিপাসু প্রান জেগে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে দেবায়ন ওর প্রেমিকাকে নিচে ফেলে সঙ্গমে রত হয়। বিকেলে একবার অনুপমার সাথে মিলিত হয়েছিল আবার মেহেকের যোনির ভেতরে বীর্য ঢেলেছে। এবারে দেবায়নের লিঙ্গের কঠিনতা কমতে আর বীর্য স্খলন হতে অনেক দেরি হয়। প্রচন্ড সঙ্গম ক্রীড়ায় রত হয়ে বারে বারে প্রেয়সীকে চূড়ান্ত সুখের অধরা চুড়ায় নিয়ে যায় আর বারে বারে আছড়ে দেয় অনাবিল সুখের সাগর তীরে। পরের দিন আর মেহেকের দেখা পায় না। ফ্রন্ট ডেস্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে মেহেক খুব ভোরবেলা ওর ছেলে নিয়ে বেড়িয়ে গেছে। এবারে পালা, ঘুড়ির প্যাঁচের, এবারে ওদের যেতে হবে উটি। দুপুরের পরেই যাত্রা শুরু করে। পুনে থেকে মুম্বাই হয়ে কোয়েম্বাটুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বিকেল হয়ে যায়। আগে থেকেই গাড়ি বলা ছিল এয়ারপোর্টে। প্লেন থেকে নেমে গাড়ি করে সোজা উটি চলে যায়। পারিজাতের হোটেলে না উঠে অন্য একটা হোটেলে ওঠে। পুনে থেকে যাত্রা শুরু করার আগেই পারিজাতকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল ওদের আসার কথা। পঞ্চবিংশ পর্ব (#12) রাতে উটি পৌঁছে মিস্টার সেনকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে পুনের হোটেল এক প্রকার সম্পূর্ণ ওদের হাতে চলে এসেছে। মিস্টার সেন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন কি ভাবে দেবায়ন এই দুঃসাধ্য কাজ সম্ভব করতে পেরেছে। অনুপমা ওর কাছ থেকে ফোন নিয়ে ওর বাবাকে জানায় যে কোলকাতা ফিরে সবিস্তারে সব কিছু জানিয়ে দেবে। ইতিমধ্যে দু’বার মিস্টার পারিজাতের ফোন চলে আসে ওদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। পারিজাত ব্যাবসাদার মানুষ হলেও মনের দিক থেকে দিলিপ বাবু আর মিস্টার রজতের মতন অতটা কুটিল মস্তিষ্কের ব্যাক্তি নয়। পরের দিন দুপুরের পরেই দেবায়ন আর অনুপমা, পারিজাত বাবুর হোটেলে পৌঁছে যায়। মিস্টার সেন এই হোটেলের পঁচিশ শতাংশের মালিক তাই মাঝে মাঝে মিস্টার সেন এসে ঘুরে যান, তদারকি করে যান। এর আগেও মিস্টার সেনের সাথে একবার এখানে এসেছিল দেবায়ন, তবে অনুপমার জন্য উটি ভ্রমন প্রথম বার। মিস্টার পারিজাত, বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, মাথায় কাঁচা পাকা চুল, চোখে চশমা, চেহারায় এক আময়িক হাসি হাসি ভাব। পারিজাত বাবু অনুপমাকে দেখে বেশ খুশি হন। পারিজাত বাবু অনুপমার সাথে বাড়ির গল্পে মেতে ওঠে, ছেলে মেয়ের গল্পে মেতে ওঠে। পারিজাত বাবুর হাসি হাসি চেহারা দেখে অনুপমা একটু গলে যায়। দেবায়নকে একপাশে টেনে বলে যে এর সাথে চটুল পদ্ধতি না করে সোজা কোন উপায়ে হোটেলের কথা বলতে। দেবায়ন হেসে বলে, "দ্যাখ পুচ্চি, পুনেতে রজতের সাথে যেটা আমরা করেছি সেটা তুই কুটিল চাল বলতে পারিস। কিন্তু এখানে আমি যা করছি সেটা ব্যাবসার মারপ্যাঁচ। দয়া করে এখানে মাথা ঘামাস না, প্লিস সোনা এই ডিল আমাকে করতে দে।" ড্রিঙ্কসের গ্লাস হাতে তুলে পারিজাত বাবু দেবায়নকে প্রশ্ন করে, "এইতো কিছু দিন আগেই মিস্টার সেন এলেন। এর মধ্যেই আবার তুমি ঘুরতে এলে?" দেবায়ন হেসে পারিজাতকে বলে, "এই এমনি এলাম। গত কোয়ার্টারে বেশ ভালো আয় হয়েছে আর এখন গরমের ছুটির মরশুম। তাই বর্তমান কোয়ার্টারে আয় কেমন হচ্ছে সেটা একবার দেখতে এলাম।" পারিজাত বাবু মৃদু হেসে কথা ঘুরিয়ে বলে, "হ্যাঁ উটি ভালো জায়গা। মিস সেনের মনে হয় এই প্রথম উটি আসা।" অনুপমা মাথা নাড়িয়ে বলে "হ্যাঁ।" পারিজাত বাবু ওকে বলে, "তাহলে ভালো কথা। আজ রাতের ডিনার আমার বাড়িতে, তারপরে কাল উটি ঘুরে বেড়াও দুইজনে।" দেবায়ন অত সহজে ভোলার মানুষ নয় তাই পাল্টা হেসে বলে, "আমন্ত্রন নিশ্চয় রক্ষা করব মিস্টার পারিজাত। কিন্তু একবার এই কোয়াটারের ব্যালেন্স সিটটা আর মান্থলি রিপোর্টটা দেখতে পেলে বড় ভালো হয়।" পারিজাত বাবু একটু ফাঁপড়ে পরে যায় তাও পাক্কা ব্যাবসাদারের মতন উত্তর দেয়, "মিস্টার বসাক, যেমন মানুষের আসা যাওয়া লেগেই থাকে সেই মতন টাকার আসা যাওয়া লেগে থাকে। এখনো তো কোয়ার্টার শেষ হয়নি, শেষ হলেই আমি মিস্টার সেনকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব।" দেবায়ন পারিজাত বাবুর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, "তাহলে এবারে আসল কথায় আসি মিস্টার পারিজাত।" দেবায়নের গম্ভির কণ্ঠস্বর শুনে পারিজাত বাবু একটু নড়েচড়ে বসে। দেবায়ন ওকে বলে, "দেখুন মিস্টার পারিজাত। সেন আঙ্কেল কেন এসেছিলেন সেটা আমাদের অজানা নয়। আমি আজকে সেই কথা নিয়েই এসেছি।" দেবায়নের মুখে হোটেলের কথা শুনে পারিজাত বাবুর মুখের আদল বদলে যায়। আময়িক চেহারা একটু ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। চশমা নামিয়ে টেবিলের ওপরে ঝুঁকে দেবায়নকে বলে, "মিস সেন আছেন তাই তোমাকে অনুরোধ করছি যে এই সব ব্যাবসার কথা আমরা পরে আলোচনা করবো। এখন উটি ঘুরে দেখো।" অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার পারিজাত বাবুর দিকে তাকায়। পারিজাত বাবু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "আরে মিস সেন, তুমি দেখি এখনো এই কাবাব টা খেলেই না। খেয়ে দেখো, খাশ লাখনউয়ের গেলাটি কাবাব।" অনুপমা পারিজাত বাবুর কথায় একটু হেসে একটা কাবাব তুলে নেয়। দেবায়নের মৃদু হেসে পারিজাত বাবুকে বলে, "মিস্টার পারিজাত, মিস সেন শুধু মাত্র সেন কাকুর মেয়ে নয়। ও আমার হবু সহধর্মিণী, সুতরাং ওর সামনে এই বিষয়ে আলোচনা করলে কিছু হবে না।" পারিজাত বাবু চেয়ারে হেলান দিয়ে মুখের কাছে দুই হাত জড়ো করে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "তাহলে কি চাও মিস্টার বসাক? আমি আমার কথা আগেই মিস্টার সেনকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন আমি হোটেল বিক্রি করতে রাজি নই।" দেবায়ন জবাব দেয়, "মিস্টার পারিজাত, গত কোয়ার্টারে নেট প্রফিট হয়েছে পাঁচ কোটি আর এই কোয়ার্টারে এখন পর্যন্ত আয় হয়েছে এক কোটি। ঠিক কি না?" পারিজাত বাবু ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, "তুমি এত খবর জানলে কি করে?" দেবায়ন জবাব দেয়, "পঁচিশ শতাংশের মালিকানা আমাদের কাছে। একাউন্টস যখন তখন চাইলেই আশা করি দেখতে পারি সেই অধিকার আমাদের আছে।" পারিজাত বাবু চুপ করে থাকেন। দেবায়ন বলে চলে, "এই এক কোটি থেকে মাইনে দিয়ে, খাবারের বিল, ইলেকট্রিক বিল, ট্যাক্স ইত্যাদি মিটিয়ে এবারে কত হাতে থাকবে? দশ লাখের মতন হয়তো হাতে থাকবে আর নব্বুই লাখ বেড়িয়ে যাবে। তাহলে এই কোয়ার্টারে আমি পাচ্ছি মাত্র আড়াই লাখ টাকা। এত কমে কেন সন্তুষ্ট হবো একবার বলেন?" এই কথা শুনে পারিজাত বাবুর চাহনি কঠিন হয়ে যায়, "ব্যাবসায় ওঠা নামা হতেই পারে মিস্টার বসাক।" দেবায়ন দমবার পাত্র নয়, "হ্যাঁ ব্যাবসা মানেই ওঠা নামা। আজকে আমি রাজা কালকে আমি ফকির। কিন্তু ঢোকার সময়ে দেখলাম যে এই ছুটির মরশুমে হোটেল অনেক খালি। কি কারন জানতে পারি কি?" পারিজাত বাবু বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন, "কি চাও খুলে বল।" দেবায়ন বলে, "শুধু মাত্র আপনার ত্রিশ শতাংশ কিনতে চাই। আমাদের অফার ত্রিশ কোটি টাকা।" পারিজাত বাবু, "মিস্টার সেন কে আমি আগেই বলেছি যে এই হোটেল আমি এখন বিক্রি করব না।" দেবায়ন তির্যক হেসে বলে, "বেশ ভালো কথা মিস্টার পারিজাত। আজ আমি চলে যাচ্ছি। এই কোয়ার্টারের মিটিঙে সেন কাকুকে পাঠিয়ে দেব কিন্তু তার পরের মিটিংয়ে আমি নিজে আসব। আর তখন সবার সামনে আপনার হোটেলের ভ্যালু আর হোটেলের আয় ব্যায় নিয়ে আলোচনা করব। সেই মিটিঙে আপনার ফাইন্যান্স ম্যানেজার, এইচ আর ম্যানেজার, রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সবাই থাকবে। ভেবে দেখুন ওদের সামনে যখন আমি এই নিয়ে কথা বলব তখন আপনি কি বলবেন। ওরা সবাই চুপ থাকবে, কারন ওরা মাইনে পায় মিস্টার পারিজাত। ওদের মাইনে প্রতি বছর বাড়ে কিন্তু আমাদের টাকা কোন বছর বারে কোন বছরে কমে আসে। কিন্তু তাই বলে এক কোটি থেকে এক ধাক্কায় আড়াই লাখ? ধাক্কাটা খুব বেশি হয়ে গেল না মিস্টার পারিজাত? একবার ওদের একটু কম মাইনে দিয়ে দেখুন, দেখবেন ওরা কেমন আপনার দিকে তেড়ে আসে।" অপমান আর বদনামের ভয়ে পারিজাত বাবু গুমরে ওঠেন, "সবার সামনে অপমান? ঠিক সহ্য করতে পারছি না মিস্টার বসাক। মিস্টার সেনের সাথে এতদিনের পরিচয়, আর তুমি তাঁর মান এইরকম ভাবে রাখলে?" দেবায়ন বুক ভরা শ্বাস নিয়ে বলে, "মিস্টার পারিজাত, আপনি আমার থেকে অনেক বড়, আমি আপনাকে অপমান করতে চাই না। তাই শুধু অনুরোধ করছি যে হোটেলের মালিকানা বিক্রি করে দিন। আমি রীতিমত টাকা দিয়ে কিনতে চাই, দাম কম দিচ্ছি না। ভালোই টাকা দিচ্ছি।" পারিজাত বাবু বলে, "ত্রিশ কোটি টাকা? জানো এই হোটেলের বর্তমান দর কত?" দেবায়ন বলে, "হ্যাঁ জানি। এই হোটেলের বর্তমান ভ্যালু দেড়শো কোটি টাকা, কিন্তু যে হোটেল চলে না তার দাম কত হতে পারে মিস্টার পারিজাত? এই কোয়ার্টারে এই অবস্থা, এর পরে বর্ষা কাল, কোন টুরিস্ট এখানে আসবে না, তখন দাম আরও পড়ে যাবে।" পারিজাত বাবু কোণঠাসা হয়ে যায়, "মিস্টার বসাক, পঞ্চাশ কোটির নিচে কি করে ডিল করি?" দেবায়ন বলে, "ত্রিশ কোটি ঠিক দাম দিচ্ছি মিস্টার পারিজাত।" দেবায়নের কথাবার্তা শুনে পারিজাত বাবু ভাবনায় পড়ে যায়। বেশ খানিকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বলেন, "তোমাকে ত্রিশ শতাংশ দিয়ে দিলে আমার কাছে কি থাকবে? শুধু মাত্র পনেরো শতাংশ? জানোই তো যে বাকি কুড়ি শতাংশ আমার শালীর নামে লেখা।" দেবায়ন হেসে ফেলে, "ওকে বুঝিয়ে ওঠার দায়িত্ব আপনার।" পারিজাত বাবু বলে, "আচ্ছা একটা কথা বল। মানছি যে আমার হোটেলের আয় হঠাৎ কমে গেছে, কিন্তু তোমার হাতে পড়লে তুমি কি ভাবে হোটেলের আয় বাড়িয়ে দেবে?" দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, "মিস্টার পারিজাত, এই গতকাল আমি পুনেতে একটা ফোর স্টার প্রপার্টি কিনেছি, দেড়শো কোটি টাকার ডিল করে এসেছি। সেন কাকুর মুখে নিশ্চয় শুনেছেন যে আমাদের আরও তিনটে হোটেল আছে। সব মিলিয়ে একটা চেইন হোটেল দাঁড় করাতে চাই। নিজেদের কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে, কোন হোটেলের কন্সট্রাকশান করতে হলে নিজেদের কোম্পানি দিয়েই করাব।" অনুপমার দিকে দেখিয়ে বলে, "আমার মিসেস নতুন একটা সফটওয়্যার কোম্পানি খুলেছে। এই হোটেল চেইনগুলো আমরা এক সাথে বেঁধে দিতে চাই। তাতে লাভ আছে, কোন হোটেল বেশি আয় করল, কোনটা কম। টাকা ঘুরাতে পারবো এই খান থেকে ওইখানে।" নিরুপায় পারিজাত বাবু শেষ পর্যন্ত হেসে ফেলেন, "মিস্টার বসাক তুমি একদম তৈরি হয়েই এসেছ দেখছি।" দেবায়ন হাত বাড়িয়ে দেয় পারিজাত বাবুর দিকে, "হ্যাঁ এক প্রকার। তাহলে কি রাতের ডিনার আপনার বাড়িতে না কোন রেস্টুরেন্টে করতে হবে?" পারিজাত বাবু অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "না না মিস সেন প্রথম বার এসেছে, ডিনার আমার বাড়িতেই হবে। কি খেতে চাও বলো।" অনুপমা হেসে বলে, "আপনি যা খাওয়াতে চাইবেন। আমরা অতিথি।" পারিজাত বাবু বলে, "বেশ ঠিক আছে। একদম খাস দক্ষিণ ভারতের রাজার খাবার খাওয়াব।" তারপরে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, "আচ্ছা একটা কথা বল। নিজের এত বড় হোটেল থাকতে বাইরের হোটেলে কেন থাকতে গেলে? এটা কি ঠিক করলে?" দেবায়ন হেসে ফেলে, "তখন জানতাম না যে ডিনার আপনার বাড়িতে হবে তাই......" বলেই পারিজাত বাবুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। পারিজাত বাবু দেবায়ন সাথে হাত মেলায়। দেবায়ন ওর হাতে হোটেলের ফাইল তুলে দেয়। পারিজাত বাবু ফাইল খুলে চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে যায়, "এখানে তো লেখা পঁয়ত্রিশ কোটি, তাহলে তুমি ত্রিশ কেন বলছিলে?" দেবায়ন হেসে ফেলে, "ব্যাবসাদারের মন, দরদাম না করলে কি আর মন ভরে মিস্টার পারিজাত। আপনাকে ঠকিয়ে কি লাভ আছে আমার বলুন। রিতিমত বাজার দর দিয়েই হোটেল কিনব।" পারিজাত বাবু, অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "তোমার মিস্টার ভবিষ্যতে অনেক ওপরে উঠবে। তার কারন একটাই, ও হৃদয় দিয়ে ব্যাবসা করে, বাকি আমরা মাথা দিয়ে ব্যাবসা করি তাই সামনের লোককে ঠকাতে চেষ্টা করি।" দেবায়ন বলে, "কেন মিছে লজ্জা দিচ্ছেন মিস্টার পারিজাত। আপনার কাছ থেকে আর সেন কাকুর কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে।" পারিজাত বাবু হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, "হ্যাঁ সেটা বুঝতেই পারছি আর তাই এবারে মিস্টার সেন নিজে না এসে তোমাকে পাঠিয়েছে। যাই হোক, ওই হোটেল থেকে চেক আউট করে নাও এখুনি। সোজা আমার বাড়িতে চল। আমি কিন্তু কোন কথা শুনতে চাই না মিস্টার বসাক।" অনুপমা আব্দারের সুরে দেবায়নকে বাংলায় বলে, "হ্যাঁরে এত করে বলছে চল।" দেবায়ন প্রতি উত্তরে বলে, "হ্যাঁ চল। ডিল ঠিকঠাক হয়ে গেছে এবারে কোন চিন্তা নেই।" পারিজাত বাবুর সাথে ওরা দুইজনে হোটেল থেকে বেড়িয়ে আসে। দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে হোটেল ঘুরিয়ে দেখায়। উটির নামকরা হোটেলের মধ্যে এটা অন্যতম। দুটো রেস্টুরেন্ট, দুটো ব্যাঙ্কুয়েট, পাঁচ তলা উঁচু বিশাল হোটেল। হোটেলের মালিকানা পেয়ে দুইজনেই বেশ উৎসাহিত। হোটেলের ম্যানেজার, রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার আরও অন্য ম্যানেজারদের সাথে কথা বলে দেবায়ন। মিস্টার পারিজাত জানায় যে আগামী কোয়ার্টার শেষে, বোর্ড মিটিংয়ে হোটেলের হাত বদলের কথা সবাইকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেবেন, আর সেই সাথে ওদের সবাইকে আমন্ত্রন জানান। অনুপমা হাসি মুখে আমন্ত্রন স্বীকার করে। অন্য হোটেল থেকে চেক আউট করে ওরা পারিজাত বাবুর বাড়ি পৌঁছায়। পারিজাত বাবুর বাড়ি উটি থেকে একটু দুরে একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, চা বাগানের পাশে। সামনে বিশাল লন, পেছনে ছোটো ছোটো সবুজ পাহাড়। এই মনোরম দৃশ্য কোলকাতায় দুর্লভ। পারিজাত বাবুর স্ত্রী, সুনন্দা ওদের বেশ আদর আপ্যায়ন করেন। ধনী হলেও তাঁর স্ত্রীর আচরন খুব আময়িক। রাতের বেলা ভুরি ভোজ সম্পন্ন করে পারিজাত বাবুর বাড়িতেই রাত কাটায়। রাতেই মিস্টার পারিজাত হোটেলের কাগজে স্বাক্ষর করে দেন আর বলেন যে তার শালীর সাথে নিজেই বোঝাপড়া করে নেবেন। দেবায়ন কথা দেয় যে তাঁর মুন্নারের হোটেলের ব্যাপারে দেবায়ন সাহায্য করবে। পরদিন সকালে পারিজাত বাবুর গাড়ি ওদের কে কোয়েম্বাটুর পৌঁছে দেয়। এর পরে যাত্রা ব্যাঙ্গালোর। মিস্টার দিলিপ কঠিন লোক, কিন্তু এইখানে ওদের কে খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। ফ্লাইটে ওঠার আগে, কার্তিকেয়নকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে, এক মাস পর থেকে আবার লোক নিযুক্ত শুরু করতে। ব্যাঙ্গালোর নেমেই দেবায়ন, দিলিপ বাবুকে ফোন করে জানায় ওদের আসার কথা। ওদের পৌঁছানোর কথা শুনেই বিরক্ত হয়ে যান দিলিপ বাবু। ফোনেই দেবায়নকে কড়া কথা শুনিয়ে জানিয়ে দেয় যে গত বার মিস্টার সেনকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে হোটেলের শেয়ার তিনি বিক্রি করতে নারাজ। মিস্টার সেন অনেকদিনের চেনা তাই ভালো ভাবেই গত বার তাকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু বারেবারে ওনাকে এই ভাবে বিরক্ত করলে তিনি মিস্টার সেনের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেবেন। অনুপমার অনুরোধে দেবায়ন চুপ করে দিলিপ বাবুর কড়া কণ্ঠের জবাব শুনে যায়। গলার স্বর জড়ানো, তাই থেকে বুঝে যায় যে দিলিপ বাবু বর্তমানে নেশায় চুড়। দেবায়ন জানায় তার সাথে আগামী কাল একবার দেখা করতে চায়। দিলিপ বাবু জানিয়ে দেয় যে সকালে হোটেলে এসে দেখা করতে। দেবায়ন চিন্তায় পড়ে যায়, কি ভাবে এই হোটেলের ডিল করা যায়। বেশ বড় থ্রি স্টার হোটেল, শহরের একদম মাঝখানে। এটা ছাড়াও দিলিপ বাবুর আরো একটা হোটেলে আছে ব্যাঙ্গালোরে আর সেটাও থ্রি স্টার। ব্যাঙ্গালোর বর্তমানে ভারতের অন্যতম ব্যাস্ত শহর, তথ্য প্রযুক্তির শহর আর প্রচুর লোকের আনাগোনা। এইখানে মাঝামাঝি হোটেল গুলো বেশি চলে আর তাই দিলিপ বাবু হোটেল হাত ছাড়া করতে চায় না। পরের দিন সকালে দেবায়ন আর অনুপমা, হোটেলে পৌঁছে যায়। অনুপমা দেবায়নকে অনুরোধ করে মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য আর যা কিছু কথা সব অনুপমা বলবে। পশ্চিমী আধুনিক পোশাক ছেড়ে অনুপমা একটা সুন্দর তুঁতে রঙের সালোয়ার কামিজ পরে। ওর অনুরোধে দেবায়ন সুট ছেড়ে সাধারন জিন্সের প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরে। হাতে কোন রকমের কাগজ ফাইল নেয় না, খালি হাতেই হোটেলে ঢোকে। এর আগেও একবার মিস্টার সেনের সাথে হোটেল দেখতে এসছিল দেবায়ন। দেবায়নকে ঢুকতে দেখে সবাই নড়েচড়ে বসে। ফ্রন্ট ডেস্কের মেয়েটা নমস্কার জানায়। অনুপমা ওকে বলে যে মিস্টার দিলিপের সাথে দেখা করতে এসেছে। রিসেপ্সানিস্ট ওদেরকে কিছুক্ষণ বসতে বলে। দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে, লোকজনের আনাগোনা দেখেই বোঝা যায় হোটেল একদম ঠাসা। অনুপমা ওর হাত চেপে ধরে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমার হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায় বুকের অস্থিরতা কিছুটা লাঘব হয়। কিছুক্ষণ পরে রিসেপ্সানিস্ট ওদের কে দিলিপ বাবুর কেবিনে নিয়ে যায়। অনুপমা দিলিপ বাবুকে দেখে হাত জোর করে নমস্কার জানায়। দিলিপ বাবুর বয়স চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মাঝামাঝি, দেখেই বোঝা যায় যে এক কালে বেশ সুপুরুষ এবং ফর্সা ছিলেন। বর্তমানে গায়ের রঙ তামাটে হয়ে গেছে। মদ খেয়ে মোটা হয়ে গেছেন, গলার নিচে, চোখের কোলে এবং পেটে চর্বি জমে গেছে। শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেন না, ঘন ঘন সিগারেট টানেন। ওনার কেবিন ধোঁয়াটে হয়ে গেছে সিগারেটের ধোঁয়ায় আর নাকে পোড়া গন্ধ ভেসে আসে। অনুপমার দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় তাও নিজেকে সামলে নেয়। দিলিপ বাবু লোলুপ দৃষ্টিতে অনুপমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ক্ষুধার্ত চাহনি ভরে জরিপ করে। অনুপমার মনে হয় যেন ওকে নগ্ন করে সারা অঙ্গে হাত বুলিয়ে মেপে নিচ্ছে। দিলিপ বাবুর লোলুপ দৃষ্টি দেখে দেবায়নের শরীরের রক্ত ক্রোধে টগবগ করে ফুটতে শুরু করে। তাও অনুপমা ঠোঁটে হাসি নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে অনুরোধ জানায়। দিলিপ বাবু পানপরাগ খাওয়া দেঁতো হাসি দিয়ে দেবায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে হাত মেলায়, "কেমন আছো মিস্টার বসাক?" দেবায়ন হাত মিলিয়ে অনুপমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, "মিস অনুপমা সেন, মিস্টার সেনের একমাত্র কন্যে।" নিজের সাথে অনুপমার সম্পর্ক গোপন করে যায় অনুপমার অনুরোধেই। দিলিপ বাবু ওদের বসতে বলে সোজাসুজি হোটেলের কথায় চলে আসে, "মিস্টার সেন কে আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি যে হোটেল আমি এখন বিক্রি করব না। মিস্টার সেন আমার অনেকদিনের বন্ধু, সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কে আমি চিড় ধরাতে চাই না।" অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, "না না, মিস্টার দিলিপ, আসলে কি জানেন, ভাবলাম বাবার প্রপার্টি গুলো একবার ঘুরে দেখে আসি।" অনুপমার গলা শুনে দিলিপ বাবু দেঁতো হেসে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয় নিশ্চয়। এই হোটেল তোমার বাবার বটে, কেন দেখতে আসবে না, নিশ্চয় আসবে।" অনুপমা এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলে, "তাহলে একটু হোটেলটা ঘুরে দেখি।" দিলিপ বাবু ফোন তুলে কাউকে ডাকতে যায় কিন্তু অনুপমা বাধা দিয়ে বলে, "আপনি যদি সাথে আসেন তাহলে কি খুব ক্ষতি হবে?" দিলিপ বাবু যেন হাতে মোয়া পেয়ে গেছে এমন একটা হাসি দিয়ে গলে পড়ে বলে, "না না মিস সেন একদম না। তোমার মতন সুন্দরীকে আমি হোটেল ঘুরিয়ে দেখাব, এটা আমার ভাগ্য।" অনুপমা আর দিলিপ বাবু উঠে দাঁড়ায়, একটু পেছনে দেবায়ন। রুম থেকে বের হতেই হোটেলের সব স্টাফ ওদের দিকে তাকায়। দেবায়ন ওদের কিছুটা পেছন থেকে অনুসরণ করে। দিলিপ বাবু ওদের কে রেস্টুরেন্ট দেখায়, বার দেখায়, বিভিন্ন ধরনের রুমের ব্যাপারে জানায়। অনুপমা দিলিপ বাবুকে জিজ্ঞেস করে, "আপনার মিসেস কি করে মিস্টার দিলিপ?" দিলিপ বাবু তির্যক হেসে বলে, "দুধ খেতে হলে কি আর গাই কিনতে হয় মিস সেন? আমি বিয়ে করিনি মিস সেন।" অনুপমা প্রশ্ন করে, "কেন করেন নি? আপনি একজন ধনী সুপুরুষ ব্যাক্তি।" দিলিপ বাবুর কোন পুরাতন জায়গায় খোঁচা লাগে আর সেই জায়গা অনুপমা আর দেবায়নের অজানা নয়। তাও দিলিপ বাবু দেঁতো হাসি হেসে বলে, "আরে তুমি দেখি আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছো। ছাড়ো না ওই সব কথা। হোটেল দেখো, বার দেখো।" অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে জিজ্ঞেস করে, "বলুন না দিলিপ বাবু, আপনি কেন বিয়ে করেন নি?" অনুপমার উষ্ণ নরম হাতের ছোঁয়ায় হটাত করে যেন দিলিপ বাবুর মন উদাস হয়ে যায়। একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে। নিচের ঠোঁট কামড়ে মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "জীবনে টাকা কামাতে কামাতে ঠিক জীবন সাথী পেলাম না তাই আর বিয়ে করা হল না।" অনুপমা হেসে ওর হাত ধরে বলে, "আপনার কত বয়স হয়েছে যে আপনি এখন আর বিয়ে করতে পারবেন না? আপনি চাইলেই আপনার বাড়ির সামনে লম্বা লাইন লেগে যাবে।" ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে দিলিপ বাবু উত্তর দেয়, "হ্যাঁ মিস সেন, জানি। সত্যি কথা বলতে কি জানো বাড়ির সামনে...... ছাড়ো অইসব কথা......" কথাটা বলতে বাধা পায় দিলিপ বাবু আর তাঁর কারন অনুপমা দেবায়নের অজানা নয় যে কাদের লাইন লাগে রোজ রাতে। পঞ্চবিংশ পর্ব (#13) অনুপমা বলে, "চলুন একটু আপনার রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।" রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই সবাই একপায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। হোটেলের দুই মালিক একসাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। দেবায়ন আর অনুপমা টেবিলের একপাশে বসে আর দিলিপ বাবু ওদের সামনে বসে। দিলিপ বাবু খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা জানায় যে ওরা খেতে আসেনি, আসলে দিলিপ বাবুর রুমের সিগারেটের ধোঁয়াতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিলো, তাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। অনুপমার কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে দিলিপ বাবু। হাসতে হাসতে ওর পেট ফেটে যাবার জোগাড়, টেবিল চাপড়ে বলে, এই কথা ওকে কেউ আজ পর্যন্ত বলেনি। সবাই চোখ বুজে নাক বুজে ওর রুমের সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ সহ্য করে নেয়। দিলিপ বাবু বলে, "সত্যি বলতে বিগত পনেরো বছরে হাসতে ভুলে গেছি আমি।" তারপরে ওদের অবাক করে বলে, "আমি সব জানি মিস্টার বসাক। মিস অনুপমা সেন আপনার বাগদত্তা আমি জানি।" দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। এমন সময়ে দিলিপ বাবুর ফোনে কারুর ফোন আসে। দিলিপ বাবু ফোন ধরে বলেন, "না জেসমিন আজকে নয়। আজকে রাতে আমি একটু ব্যাস্ত থাকব। আরে না না...... অন্য কেউ নয়...... তোমার সাথে পরে কথা বলব...... আরে না না...... রাজিব কে বলে দেব তোমার টাকা দিয়ে দেবে......" ওর কথাবার্তা শুনে বুঝে গেল যে রাতে জেসমিন নামে একটা মেয়ের আসার কথা ছিল ওর বাড়িতে। কিন্তু কি কারনে তাকে কাটিয়ে দিল সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না ওরা। দিলিপ বাবু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, "আজ রাতে কি করছ তোমরা?" দেবায়ন বলে, "কিছুই নয়। অনুপমাকে নিয়ে একটু শহর দেখব তারপরে কালকে বাড়ি ফিরব।" দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত ধরে বলে, "সত্যি বলতে অনেকদিন পরে আজকে একটু মন কেমন লাগছে। প্লিস আজ রাতে আমার বাড়িতে এসো, একসাথে ডিনার করব।" অনুপমা হেসে বলে, "ঠিক আছে রাতে আপনার বাড়িতে আসবো।" আরও বেশ কিছুক্ষণ দিলিপ বাবুর সঙ্গে বসে ওরা হোটেলে ফিরে যায়। হোটেলে ফিরে দেবায়ন কিঞ্চিত সংশয় ব্যাক্ত করে অনুপমার কাছে, কিন্তু অনুপমা ওকে আশ্বস্ত করে বলে যে দিলিপ বাবু রাতে তাঁর মনের কথা খুলে বলবে আর সেই সময়ে অনুপমা ওকে মুসৌরি ঘুরতে যাওয়ার কথা বলবে। দেখা যাক মুসৌরি বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে দিলিপ বাবু কি উত্তর দেন। রাতে ওদের নিতে গাড়ি পৌঁছে যায়। গাড়ি করে দিলিপ বাবুর বাড়িতে পৌঁছায়। বেশ বড়সড় একতলা বাড়ি, দুটো সবসময়ের চাকর, ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ থাকে না বাড়িতে। বসার ঘরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দিলিপ বাবু। সকালের সেই লোলুপ চোখের চাহনি আর তাঁর চেহারায় নেই। ওদের দেখে আময়িক হেসে অভ্যর্থনা জানায়। বাড়ির চাকর এসে ওদের সামনে খাদ্য পানীয় রেখে চলে যায়। অনুপমা আর দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। বিশাল বড়লোক, তাই অনেক রকমের জিনিস পত্রে শোকেস ঠাসা। বাড়ির পরিচালনা চাকরদের হাতেই বলা চলে। দেবায়ন দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, "আপনি একাই থাকেন এত বড় বাড়িতে?" দিলিপ বাবু বলেন, "হ্যাঁ, একাই থাকি।" দেবায়ন বলে, "আপনার বাবা মা ভাই বোন?" দিলিপ বাবু বলেন, "বাবা মা অনেকদিন আগেই স্বর্গে চলে গেছেন আর ভাই হায়দ্রাবাদে থাকে।" অনুপমা বলে, "আপনার একা থাকতে ভালো লাগে? মানে মাঝ মাঝে কি মনে হয় না যে সাথে কেউ থাকলে বড় ভালো হত?" দিলিপ বাবু কাষ্ঠ হেসে বলেন, "হ্যাঁ মন চায় আর সেটা মাঝে মাঝে পুষিয়ে যায়।" কথাটার তাৎপর্য দুইজনেই বুঝতে পারে। কিছুপরে দিলিপবাবু ওদের মদের কথা জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় যে হুইস্কি তে ওর কোন অসুবিধা নেই, অনুপমা মদ খাওয়ার কথা মানা করে দেয়। দিলিপ বাবু চাকরকে ডেকে হুইস্কি আনতে বলে। অনুপমা একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "আপনি কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলেন না।" দিলিপ বাবু পালটে প্রশ্ন করেন, "কি কথা?" অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, "আপনি কেন বিয়ে করেন নি।" দিলিপ বাবু বললেন, "কি হবে জেনে আমার কথা। এই তোমাদের দেখে বড় ভাল লাগছে এই শান্তি।" অনুপমা আব্দার করে চেপে ধরে, "বলুন না প্লিস, কেন বিয়ে করলেন না। কেউ কি আপনাকে আঘাত দিয়েছে যে সেই আঘাত থেকে আর উঠতে পারলেন না আর......" গুমরে ওঠেন দিলিপ বাবু, "না...... কেউ আমাকে আঘাত করেনি। না ও আমাকে আঘাত করতেই পারে না।" দেবায়ন দিলিপ বাবুর হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, "নাম কি তাঁর?" দিলিপ বাবু মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছলছল চোখে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কেন আমার অতীত জানতে চাইছ তোমরা?" অনুপমা ওর হাতের উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে বলে, "আপনার ওই চোখের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। আপনি এত মদ খান কাউকে ভুলে থাকার জন্য। কেন নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছেন? একবার কাউকে মনের কথা খুলে বলুন দেখবেন মন অনেক হাল্কা হয়ে যাবে।" এক ঢোকে হাতের গ্লাস শেষ করে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে দিলিপ বাবু। হাত কাঁপতে শুরু করে দেয়, চোখের কোল একটু ছলকে ওঠে। দেবায়ন ওর হাতের চাপ বাড়িয়ে দিলিপ বাবুর মনে বল যোগায়। দিলিপ বাবু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে পকেট থেকে পার্স বের করে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি অনুপমার হাতে দেয়। ছবিটা দেখিয়ে বলেন, "কণিকা আমার প্রথম আর অন্তিম ভালোবাসা......" কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, কণ্ঠ স্বর কেঁপে ওঠে, "কণিকার সাথে দেখা হয়েছিল কলেজে পড়ার সময়ে। বড় মিষ্টি মেয়ে, ওর চোখ দুটো আমাকে বড় টানত। কিন্তু ওরা নিচু জাতের ছিল মানে সিডুল কাস্ট আর আমরা ব্রাহ্মণ আর বিশাল বড়োলোক। কণিকার বাবা সামান্য সরকারি কেরানি আর আমার বাবা বিশাল ব্যাবসাদার। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি আমাদের প্রেমের মাঝে চলে আসে। আমি বাবার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না। আমার বাবা কণিকার বাড়িতে গিয়ে ওর বাবাকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করে আর তারপরে কনিকারা এই শহর ছেড়ে চলে যায়। তারপরে আমি প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কোনদিন বিয়ে করব না। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি কণিকাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম। খুঁজে খুঁজে হায়দ্রাবাদ পৌঁছে জানতে পারলাম যে কণিকার বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেকে ধিক্কার দিলাম যে সময় মতন নিজের প্রেমকে বাঁচাতে পারিনি বলে। তাই আর বিয়ে করা হল না, এই বুকে আর কাউকে রাখতে নারাজ, মিস সেন। তাই নিজেকে সবসময়ে মদে ডুবিয়ে রাখি।" অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে বলে, "আপনি আমাদের সাথে ঘুরতে যাবেন?" অনুপমার কথা শুনে চমকে ওঠে দিলিপ বাবু, একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে তাকায়, "কি বলছ তুমি? কোথায় বেড়াতে যাবো?" দেবায়ন বলে, "মুসৌরি বেড়াতে যাবেন আমাদের সাথে?" দিলিপ বাবু প্রশ্ন করে, "এত জায়গা থাকতে হটাত মুসৌরি কেন?" দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, "খুব সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা জায়গা তাই। এই দুই বছর আগে আমরা মুসৌরি বেড়াতে গিয়েছিলাম।" দিলিপ বাবুর মনে সন্দেহ হয় তাও হেসে জিজ্ঞেস করেন, "তোমরা ঠিক কি চাও বলো তো? তোমাদের ঠিক সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। মুসৌরি নিয়ে গিয়ে কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও?" অনুপমা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, "একবার আমাদের বিশ্বাস করে দেখুন।" দিলিপ বাবু প্রশ্ন করেন, "ঠিক আছে, কবে যেতে হবে মুসৌরি?" দেবায়ন উত্তরে বলে, "কালকেই আমরা বেড়িয়ে পড়ি।" ঠিক হয় যে আগামী কাল দিল্লী হয়ে মুসৌরির পৌঁছাবে। দিলিপ বাবু সঙ্গে সঙ্গে ওদের টুর অপারেটর কে বলে প্লেনের টিকিট, দিল্লী থেকে মুসৌরি যাবার জন্য গাড়ি, হোটেল বুকিং ইত্যাদি সেরে ফেলেন। সবকিছু হয়ে যাবার পরে রাতে হোটেলে ফিরে দেবায়ন সংশয় ব্যাক্ত করে। অনুপমা বলে মুসৌরি গিয়ে যা হবার দেখা যাবে, দেবায়নের সংশয় অবান্তর নয় সেটা ভালো ভাবেই জানে। কস্তূরী ওদের কণিকার স্কুলের ফোন নাম্বার বাড়ির ঠিকানা ইতাদ্যি দিয়েছিল। পরেরদিন ভোরের প্লেন ধরে দিল্লী পৌঁছে যান তিনজনে। দিল্লী থেকে গাড়ি করে মুসউরি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের রাত হয়ে যায়। সারা রাস্তা দিলিপ বাবু বেশ চিন্তিত থাকেন আর বারেবারে দেবায়নকে প্রশ্ন করে হঠাৎ এই ঘুরতে আসার জন্য। দেবায়ন ওকে জানায় যে পরের দিন ওরা মুসৌরি ঘুরে বেড়াবে তারপরের দিন ওরা ধনোল্টি বেড়াতে যাবে। বেড়াবার প্লান শুনেও আশ্বস্ত হতে পারেন না দিলিপ বাবু। পাহাড় বরাবর অনুপমাকে টেনেছে, দেশে বিদেশের নানা পাহাড়ি জায়গায় বাবা মায়ের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু এই বারের ঘুরতে আসা ঠিক অন্যবারের মতন নয়। এই বারে ওরা এসেছে দুই পুরানো প্রেমিক প্রেমিকাকে মেলানর জন্য যদিও তাঁর পেছনে ওদের অভসন্ধি অন্য কিছু পাওয়ার। দেবায়ন একটু বিরক্ত হয় এতকিছু করার পরেও যদি হোটেলের মালিকানা স্বত্তা হাতে না আসে তাহলে কি হবে, কিন্তু অনুপমার হাসিমুখ দেখে চুপ করে যায়। অনুপমার মাথায় ওই হোটেল, ব্যাবসা টাকা পয়সা নেই, ওর একটাই লক্ষ্য কণিকা আর দিলিপ বাবুর মিলন। সকালে উঠেই অনুপমা আগে কণিকার স্কুলে ফোন করে জেনে নেয় ওদের ছুটি কখন হয়। সেই মতন সারাদিন মুসৌরি ঘুরে বিকেলের দিকে গাড়ি নিয়ে ঠিক স্কুলের সামনে পৌঁছে যায়। দিলিপ বাবু অবাক হয়ে ওদের প্রশ্ন করে যে ওরা কেন ওকে স্কুলে এনেছে। স্কুলের ছুটি হতেই অনুপমার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে একবার কণিকার ছবি মনে এঁকে নিতে চেষ্টা করে। দিলিপ বাবুর কাছে দেখা ছবির সাথে কস্তূরী দেওয়া ছবির মুখের আদলে মিল থাকলেও কণিকা অনেক বদলে গেছে। দেবায়ন বারেবারে ঘড়ির দিকে তাকায় আর স্কুলের গেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুপরে কণিকা স্কুলের গেট থেকে বেড়িয়ে আসে। দেবায়ন দিলিপ বাবুর কাঁধে হাত রেখে স্কুলের গেটের দিকে তাকাতে বলে। স্কুলের গেটের দিকে তাকাতেই দিলিপ বাবু থমকে যান, কাকে দেখছে, নিজেকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না। ঋজু কঠিন স্বভাবের মানুষটা শেষ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। অবাক হয়ে দেবায়নের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে। ওই দিকে অনুপমা কণিকার দিকে এগিয়ে যায়। অনুপমা কণিকার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, "আপনি নিশ্চয় মিস কণিকা?" অনুপমাকে দেখে কণিকা চিনতে পারে না। কণিকা মাথা নাড়িয়ে "হ্যাঁ" বলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অনুপমার দিকে। অনুপমা ওকে আঙুল দিয়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা দিলিপ বাবু আর দেবায়নের দিকে দেখায়। পনেরো বছর পরে দিলিপ বাবুকে দেখে কণিকা থমকে যায়। হটাত মনে হয় যেন স্বপ্ন দেখছে, মাথা ধরে টলে পড়ে। কিন্তু তাঁর আগেই দিলিপ বাবু দৌড়ে এসে কনিকাকে ধরে ফেলে। কণিকা জল ভরা চোখ মেলে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে দিলিপ বাবুর মুখের দিকে। সময় যেন ওদের চারপাশে দাঁড়িয়ে যায়। কণিকা নিথর হয়ে দিলিপ বাবুর মুখের দিকে চেয়ে থাকে অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ, কণিকা ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, "তুমি আমাকে খুঁজে পেলে কি করে?" দিলিপ বাবুর কণ্ঠ স্বর জড়িয়ে আসে, "কেমন আছো তুমি, কণিকা?" নিজের নাম শুনে, কণিকা চোখ বন্ধ করে নেয়। অনুপমার ওর মুখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারে যে এতদিন পরে দিলিপ বাবুর কণ্ঠ স্বর শুনে নিজেকে সামলাতে পারছেন না।  কণিকা ধরা গলায় উত্তর দেয়, "ভালো আছি।" এতদিন পরে পুরানো প্রেমিকাকে দেখে দিলিপ বাবু কি বলবেন কিছু ভেবে পান না। কিছু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে কণিকা, অনুপমাদের পরিচয় জানতে চায়। দিলিপ বাবু ওদের পরিচয় দেন, কিন্তু কি ভাবে অনুপমা ওদের খুঁজে পেয়েছে সেটা দিলিপ বাবুর জানা নেই। অনুপমা আর দেবায়ন, ওদের অদুরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ দিলিপ বাবু আর কণিকা নিজেদের মধ্যে কিছু কথাবার্তা বলে তারপরে কণিকা ওদের সবাইকে বাড়িতে আসতে নিমন্ত্রন জানায়। কণিকার পুত্র প্রেমজিতের স্কুলের ছুটি আগেই হয়ে গেছিল, তাই ওরা পৌঁছানোর আগেই সে বাড়িতে ছিল। বাড়ি পৌঁছে কণিকা, বাকিদের সাথে প্রেমজিতের পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রেমজিত, মুসৌরির এক স্কুলে পরে, এখানেই বড় হয়েছে। কণিকার বাড়ি একটা বাগানে ঘেরা এক তলা বাড়ি, দুটো ঘর একটা বসার ঘর, ছোটো হলেও খুব সুন্দর। সামনে বাগান, পেছনে সবুজে ঢাকা পাহাড় দেখে অনুপমা দেবায়নকে নিজের মনের ইচ্ছে ব্যাক্ত করে জানায় যে ভবিষ্যতে এমন একটা বাড়ি চাই ওর। সেই শুনে দেবায়ন একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ডালহৌসি অথবা সোলাং উপত্যকায় যেখানে ওদের রিসোরট আছে সেখানে ইচ্ছে হলেই থেকে আসতে পারে। রাতের খাওয়ার পরে দিলিপ বাবু জানান যে কনিকাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে। কণিকা জানিয়ে দেন যে এই বয়সে দ্বিতীয় বার বিয়ে করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় আর ছেলেও অনেক বড় হয়ে গেছে। বিগত দিনের কথা জিজ্ঞেস করাতে জানা যায় যে, দিলিপ বাবুর পিতা কণিকার বাবাকে অপমান করে আর তারপরে তারা সবাই ব্যাঙ্গালোর ছেড়ে অন্য এক শহরে চলে যায়। সেখানে কলেজের পড়াশুনা শেষ করে কণিকা আর তারপরেই তার বিয়ে হয়ে যায়। তাঁর স্বামী সেই সময়ে দেরাদুনে ন্যাশানাল ডিফেন্স একাডেমিতে চাকরি করতেন। বিয়ের ছয় বছর পরেই এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। তারপরে কণিকা আর ব্যাঙ্গালোর ফিরে যায় নি, মুসৌরিতে একটা মিশনারি স্কুলে চাকরি নিয়ে এখানেই থেকে গেছে। অনুপমা আর দেবায়ন কনিকাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করে যে এক ধাক্কায় কোনদিন কারুর জীবন শেষ হয়ে যায় না। কণিকা বলেন যে তাঁর ছেলে এখন ক্লাস ফোরে পড়ে, সে যদি প্রশ্ন করে এই নতুন ভদ্রলোক কে, তাহলে কি জবাব দেবে কণিকা? এতদিন পড়ে হঠাৎ করে এসে হাত চাইলেই হয় না। ছেলের ইচ্ছে তাঁর চাহিদা সেটাই বর্তমানে কণিকার কাছে সব থেকে প্রধান তাই কণিকা মুসৌরি ছেড়ে যেতে নারাজ। অনুপমা আর দেবায়ন, দিলিপ বাবুকে বুঝিয়ে বলে যে তাকে আরও বেশ কিছুদিন কণিকার সাথে মুসোউরিতে থেকে যেতে আর প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা করতে। দিলিপ বাবুও কণিকার মনের অবস্থা অনুধাবন করেন। দুই দিনে ছোটো প্রেমজিতের চোখে অনেক প্রশ্ন, কে এই ভদ্রলোক, একে আগে কোনদিন দেখেনি, কেন ওর মায়ের সাথে এত হৃদ্যতা ইত্যাদি। ওর চোখের চাহনি দেখে দিলিপ বাবু থেকে যেতে রাজি হয়ে যান আর সেই সাথে কণিকার মন গলে যায়। কনিকাও চাইছিল যাতে দিলিপ বাবু কয়েক দিন ওদের সাথে থাকুক, প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা করলে পরস্পরকে জানতে বুঝতে সুবিধে হবে। সময় মতন কণিকা পুত্রকে বুঝিয়ে উঠতে পারবেন তাঁর মনের ইচ্ছে। এই দুই দিনে অনুপমা আর দেবায়ন হোটেলেই ছিল কিন্তু দিলিপ বাবু প্রথম দিন হোটেলে থাকার পরে কণিকার বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। দেবায়ন যে কাজে এসেছিল সেটা আর তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব হল না, তাই সেই বিষয়ে একটু চিন্তিত কিন্তু অনুপমা একপ্রকার খুশি। পনেরো বছর পড়ে দিলিপ বাবু তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে সেটা দেখেই অনুপমা খুশি। ফিরে আসার আগের দিন রাতে কণিকার বাড়িতে রাতের খাবার সময়ে সবাই একসাথে বসে। কণিকা অনুপমাকে প্রশ্ন করে, "তোমরা এত খবর কোথা থেকে পেলে সত্যি বলো তো?" অনুপমা কথা ঘুরিয়ে, কনিকাকে শেষ অনুরোধ করে, "আপনি দিলিপ বাবুর সাথে ফিরে চলুন ব্যাঙ্গালোর।" কণিকা একবার একটু দুরে বসা প্রেমজিতের দিকে দেখে আর একবার দিলিপ বাবুর মুখের দিকে তাকায়। শেষ পর্যন্ত হেসে বলেন, "দিলিপ যখন এত কষ্ট করে আমাকে খুঁজে বের করেছে তাহলে না ফিরে আর স্বস্তি নেই। তবে আমার কিছু সময়ের দরকার, মানে প্রেমজিতকে বুঝিয়ে রাজি করান। বর্তমানে ওকে বড় করা ওকে মানুষ করা আমার প্রধান উদ্দেশ্য।" দিলিপ বাবু কণিকার হাতের ওপরে হাত রেখে আশ্বস্ত করার কণ্ঠে বলেন, "এবারে আর কোন উদ্দেশ্য তোমার একার হতে পারে না কণিকা। একবার যখন রাজি হয়েছ, তাহলে আমরা দুইজনে মিলে মিশে প্রেমজিতকে বড় করব। আমি জানি আমাদের দুইজনের পক্ষেই একটু বেশি কষ্টকর, তাই আমি কিছুদিনের জন্য এখানে থেকে যাবো তোমাদের সাথে। প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা না করলে ও আমাকে কি ভাবে আপন করে নেবে?" স্বস্তির শ্বাস নেয় অনুপমা। খাওয়া শেষে দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত চেপে ধরে বলেন, "তোমাদের এই উপকার কি ভাবে পূরণ করব আমি ভেবে পাচ্ছি না।" অনুপমা চোখ টিপে ইশারা করে দেবায়নকে। অনুপমার সেই চোরা ইশারা দিলিপ বাবু দেখে ফেলে হেসে দেন। দিলিপ বাবু বলেন, "তোমরা সত্যি অনেক দুষ্টু, অনেক শয়তান। প্রথম যেদিন এসেছিলে সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম যে তোমরা এমনি এমনি আসোনি। কিন্তু তারপরে এই কয়দিনে যা ঘটিয়ে দিলে আমার জীবনে, আমার সব অঙ্ক ভুল হয়ে গেল। আমি জানি তোমরা কি চাও। চিন্তা নেই মিস্টার বসাক, তুমি আমাকে যা দিয়েছ তার বদলে আমার সব কিছু তোমার পায়ে লুটিয়ে দিলেও এই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। আমি ব্যাঙ্গালোর ফিরি, তারপরে তোমাদের একদিন ডাকবো।" অনুপমার মাথায় হাত রেখে বলে, "আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি তুমি দীর্ঘজীবী হও, মানুষের মন জয় করো। টাকা পয়সা রোজগারের শত কোটি পন্থা আছে, কিন্তু মানুষের মন জয় করার একটাই পন্থা, সেটা ভালোবাসা। কোনদিন কোন রকমের কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে একবার খবর দিও। আমি তোমাদের পাশে এসে দাঁড়াবো, আমার এই প্রান তোমাদের কাছে ঋণী।" এরপরে অনুপমা আর দেবায়ন কোলকাতা ফিরে আসে পালা, তিলোত্তমা কোলকাতার বুকে। ***** পঞ্চবিংশ পর্ব সমাপ্ত ***** click here
Parent