নিষিদ্ধ ভালবাসা_Written By pinuram [৫ম খন্ড (কনে বিদায়)]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/01/written-by-pinuram_300.html

🕰️ Posted on January 2, 2014 by ✍️ pinuram

📖 955 words / 4 min read


Parent
নিষিদ্ধ ভালবাসা Written By pinuram কনে বিদায় (#01) শীতকালের কুয়াশা মাখা সকাল, নব ঊষাকে অভ্যর্থনা জানাল পৃথিবী, এক নতুন দিনের যাত্রার সুচনা। এক নতুন দিনের আগমন, নতুন ভালোবাসার, নব প্রত্যাশার। বুকের মধ্যে ভরে নেই বিশুদ্ধ শীতল বাতাস, সারা শরীরে জেগে ওঠে এক নতুন দিগন্তের আশার আলো। বঙ্গালার গ্রাম, বাতাসে শিশির আর নতুন ঘাসের ঘ্রান ভেসে আসছে নাকে। সেই আঘ্রাণ আমার মনের গভীরে এক অনাবিল আনন্দের ছাপ ফেলে চলে যায়। বাড়ির লোকজন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। পরী আমায় ছেড়ে আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সুমন্ত মামা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি সারা রাত কোথায় ছিলাম। তার উত্তরে আমি জানিয়ে দিলাম যে আমি বিয়ের প্যান্ডালে সারা রাত বসে ছিলাম। আমার কথা শুনে হেসে বললেন যে মুখ হাত ধুতে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে কনে বিদায়ের পালা। নতুন বউ নিয়ে আমরা বসিরহাট ফিরে যাবো। আমি হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি চুপ করে, আমার পরীর দেখা নাই। ইতিমধ্যে কনের বাড়ির একজন আমায় প্রাতরাশ দিয়ে যায়। আমি একটা চেয়ার টেনে খেতে বসে যাই। ঠিক সেই সময়ে মাথার পেছনে কেউ চাঁটি মারে।  আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি পরী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। চোখ মুখ ধুয়ে একদম তরতাজা দেখাচ্ছে ওকে, চেহারায় ক্লান্তির নাম গন্ধ নেই। যেন শিশিরের বারীধারে সদ্যস্নাত এক পদ্মফুল আমার সন্মুখে দণ্ডায়মান। ঠোঁটে লেগে আছে সুর ঝঙ্কারের ন্যায় এক মিষ্টি হাসি, চোখে সেই দুষ্টুমির ছাপ।  "আমাকে না দিয়েই খেতে বসে গেলে?" একটু যেন বকে দিল আমাকে।  "আমি কি করে জানবো তুমি কোথায়? তোমার তো দেখা নেই।"  "কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারতে তুমি। সেটা না করে দিব্যি একা একা খেয়ে নিলে।"  "ঠিক আছে বকাবকি না করে আমার সাথে খেতে বসে যাও।"  খাওয়ার পাট চুকিয়ে দিয়ে, পরী আবার বাড়ির মধ্যে ঢুকে পরে। কনে বিদায়ের ক্ষণ নিকটে আসছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের সব থেকে হৃদয় বিদারক ক্ষণ। বাড়ির সবার চোখে জল। আমি ঘড়ি দেখলাম, দশটা বাজে, কান্নাকাটি কনে বিদায়, হতে আর ঘন্টা দু’য়েক লেগে যাবে। কিছুক্ষণ পরেই নববিবাহিতা বধু তার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে, নতুন জীবনে পা রাখবে। তার নতুন সংসার অপেক্ষা করছে। সাথে সাথে কান্নার রোল জাগে বাড়ির লোকেদের মধ্যে। আমি এক কোনায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি।  এমন সময়, আমার বাঁ হাতে কেউ চাপ দেয়। ঘুরে তাকিয়ে দেখি, পরী আমার বাঁ হাত চেপে ধরে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে। সুন্দর কালো চোখ দুটি টলমল করছে, আমার হাত দু’হাতে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে নিজের অশ্রু সংবরণ করতে প্রানপন প্রয়াস করে চলেছে। আমার কাঁধের পেছনে ঘন ঘন নাক ঘসে চলে, আমি ওর ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ শুনতে পাই।  আমি ওকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করি "কাঁদছ কেন? তোমার নতুন বউদি তো তোমার বাড়িতেই যাচ্ছে।"  চোখ মুছে আমার কানে কানে বলে "মেয়েদের দুঃখ তুমি বুঝবে না অভি।" আমি ওকে বাঁ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরি স্বান্তনা দেওয়ার জন্য। ওর গায়ে আমার শাল জড়ানো, সেটা কাছছাড়া করেনি পরী। কনে বিদায় (#02) দু খানা গাড়ি আমাদের বসিরহাট পৌঁছে দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে। পরী আমার কানে কানে বলল "আমি সুব্রতদা আর বউদির সাথে গাড়িতে ফিরব, তুমি অন্য গাড়িতে ফিরবে। আমরা একসাথে ফিরলে লোকে কিছু মনে করতে পারে।" বুদ্ধিমতী রমণী, ভেবে দেখলাম যে ঠিক বলেছে ও। এই দিনের আলোয় যদি কেউ আমাদের একত্রে দেখে ফেলে তাহলে জটিল সমস্যার উদয় হবে। আমাদের দু’জনার সম্পর্ক যে বিতর্কিত।  ঠিক কাঁটায় কাঁটায় বারো’টার সময়ে গাড়ি ছাড়ল। বাড়ি পৌঁছতে ঘন্টা তিন চার লাগবে। আমি গাড়ির সামনের সিটে বসে, পেছনের সিটে সুব্রত মামার দুই বন্ধু বসে। দু’জনে বেশ গল্প করছিল, আমি ওদের কথায় বিশেষ কান দিচ্ছিলাম না, চুপ করে বসে জানালার বাইরে দু’পাশের গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। এমন সময়ে কারুর এক’জনার মুখে শুচিস্মিতার নাম শুনে কান খাড়া হয়ে যায়। এক’জন বলল "শুচিস্মিতা কাল রাতে কেমন যেন অন্য রকম ছিল?" অপর জন "হ্যাঁ ঠিক বলেছিস, আমিও সেটা দেখেছিলাম, কেমন যেন আনমনা ছিল রাতের বেলা। ওর মতন দুরন্ত চুলবুলি মেয়ে, যে কিনা এক সেকেন্ডের জন্য চুপ করে থাকতে পারে না, সে কিনা চুপচাপ?" "হ্যাঁ আমিও সেটাই ভাবছিলাম যে কি হল মেয়েটার।" "আমি কি করে জানবো?" ইতিমধ্যে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করে "তুমি উলুপি দির ছেলে?" আমি মাথা নাড়িয়ে জবাব দেই "হ্যাঁ" আমার বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, এই বুঝি ধরা পরে গেছি আমি, কেউ হয়তো আমাদের একসাথে দেখে ফেলেছে।  "তোমার মা আমাদের স্কুলের টিচার ছিলেন। খুব কড়া ম্যাডাম তোমার মা।" আমি হেসে ফেলি "ভায়া, বাড়ি তেও মা সমান কড়া।" আমার কথা শুনে ওর দু’জনে হেসে ফেলে। "তার মানে সুব্রত তোমার সম্পর্কের মামা হন?" "হ্যাঁ। মা সুব্রত মামাদের চেয়ে অনেক বড়, অনেক বয়সের ডিফারেন্স।" আমি তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, যাক বাবা কিছু দেখেনি ওরা না হলে কেলেংকারি কান্ড হয়ে যেত। "তো শুচিস্মিতা তোমার দুর সম্পর্কের মাসি হন?" মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম "হ্যাঁ" ওদের মধ্যে এক’জন আমাকে সিগারেট অফার করে "তুমি নিশ্চয় কলেজে পড়, সিগারেট চলে তো? আরে লজ্জা পেয়ো না, আমরা তোমার দাদার মতন যদিও সুব্রতর বন্ধু তবুও আমাদের দাদা বলে ডেক কেননা আমাদের মধ্যে বয়সের সেরকম ডিফারেন্স নেই।" আমি মাথা নেড়ে জানিয়ে দেই যে আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।  "আরে কি বলছ? আমি কাল রাতে রাস্তায় তোমাকে সিগারেট খেতে দেখেছি?" আমি ভাবলাম, মেরেছে রে, আমাদের কি একসাথে দেখে ফেলেছে? আমি বললাম "আরে না না, আমি কাল রাতেই সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।" হেসে ফেলে দু’জনেই "কেন, বিয়ে বাড়িতে কাউকে মনে ধরেছে নাকি? কেউ তো নিশ্চয় বলেছে সিগারেট ছাড়তে।" এক’জন আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি মদ্যপান করি কিনা, আমি জানিয়ে দিলাম যে সেটা মাই এখন ছাড়িনি। আমরা সবাই হেসে উঠলাম, আমি আর জানালাম যে ভদকা আর রাম আমার চলে। ওরা জানাল যে রাতের বেলায় একজনের বাড়িতে মদ্যপানের আয়োজন করা হয়েছে, আমাকে নিমন্ত্রন জানাল, আর জানাল যে সুব্রত আসবে। আমি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম যে আমি যাবো ওদের পার্টিতে। আমাদের কথাবার্তা এগিয়ে চলে ঠিক গাড়ির মতন। কথায় কথায় জানতে পারলাম যে এক’জনের নাম সমীর অন্য জনের নাম মৃগাঙ্ক, দু’জনের বয়স আটাশ বছর। দু’জনেই সরকারি চাকুরিরত, দু’জনেই অবিবাহিত। কনের নাম মৈথিলী, কথায় কথায় জানতে পারলাম যে সুব্রত আর মৈথিলীর প্রেম বিবাহ, তবে দেখেশুনে দেওয়া হয়েছে। মৈথিলীর বয়স প্রায় শুচিস্মিতার মতন। দু’জনের দেখা হয়েছিল কোন এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে, সেই থেকে প্রেম। তারপরে বড়দা, মানে সুমন্ত মামা, মেয়ের বাড়ির সাথে কথা বলে বিয়ের ঠিকঠাক করেন।  আমি মনে মনে বললাম যে এই বিয়েতে আমি আমার স্বপ্নের রমণীকে খুঁজে পেয়েছি, আমার হৃদয়সঙ্গিনী, পরী। click here
Parent