কাজল নদী_Written By Tumi_je_amar [দ্বিতীয় পরিচ্ছদ – আলোর ঝলক (চ্যাপ্টার ০৯ - চ্যাপ্টার ১৬)]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2015/10/written-by-tumijeamar_81.html

🕰️ Posted on October 31, 2015 by ✍️ Tumi_je_amar

📖 3402 words / 15 min read


Parent
কাজল নদী Written By Tumi_je_amar দ্বিতীয় পরিচ্ছদ – আলোর ঝলক (#০৯) মানসীর জীবন একই ভাবে কেটে যায়। কলেজের তথাকথিত বন্ধুরা একই ভাবে থাকে। মানসী এখন আর কারো সাথে বেশী কথা বলে না। মাঝে মাঝে শুধু ওর কস্তূরীর সাথে কথা হয়।  কস্তূরী মোটামুটি পয়সাওয়ালা ঘরের মেয়ে। ওর মা নেই, বাবার কাছে মানুষ। মা অনেক ছোটো বেলায় চলে গিয়েছেন। ওর বয়স প্রায় কুড়ি হলেও চেহারা ১২ বছরের মত। একদম রোগা, তার মধ্যে ছোট্ট দুটো বুক। খুব সুন্দর গায়ের রঙ। বাবা ওকে রোজ মাছ, মাংস, কাজু বাদাম, আলমন্ড সব কিছু খাওয়ায়। কিন্তু কস্তূরীর গায়ে মাংস লাগে না। কস্তূরীকেও প্রায় কোন ছেলেই পাত্তা দেয় না। একদিন কস্তূরী আর মানসী গল্প করছিল। কস্তূরী – দেখ তোর ফিগার আছে কিন্তু গায়ের রঙ নেই মানসী – তাতে কি হয়েছে ? কস্তূরী – আর আমার গায়ের রঙ আছে কিন্তু কোন ফিগার নেই। মানসী – আমার গায়ে একটা রঙ আছে আর তোরও কিছু না কিছু ফিগার আছে। কস্তূরী – কিন্তু আমাদের যা যা আছে, মানে যে কম্বিনেশনে আছে সেটা ছেলেদের পছন্দ নয়। মানসী – নয় তো কি যায় আসে। কস্তূরী – কিচ্ছু যায় আসে না ! তুই কি বস্তু দিয়ে তৈরি ? মানসী – আমি এই সব ছেলেদের আমার যোগ্য হিসাবে গণ্যই করি না। কস্তূরী – তবে তুই কোন ছেলেদের পছন্দ করিস ? মানসী – আমি স্বপনকে ভালবাসি, মানে স্বপনের মত ছেলে পছন্দ করি। কস্তূরী – কে এই স্বপন ? মানসী – আমার খুড়তুতো বোন নেহার বয়ফ্রেন্ড। দু বছর পরে বিয়ে করবে।  কস্তূরী – তোর বোনের বয়ফ্রেন্ড তো তোর কি ? মানসী – তুই স্বপন কে দেখিস নি। ওর সাথে কথা বললে তুইও ওর প্রেমে পরে যাবি। কস্তূরী – কি এমন রাজপুত্রের মত চেহারা স্বপনের ? মানসী – ওর চেহারা এমন কিছু নয়। বেশ ফর্সা, কিন্তু একটু ভুঁড়ি আছে। লম্বাও বেশী না। কস্তূরী – তবে কেন প্রেমে পড়বো ? মানসী – তুইও তো আকাট ছেলে গুলোর মত কথা বলছিস। স্বপন কোন মেয়ের মধ্যে গায়ের রঙ বা ফিগার দেখে না। ও বন্ধু ঠিক করে মন দেখে। কস্তূরী – তাই আবার হয় না কি ? মন আবার কি করে দেখে ! মানসী কস্তূরীকে বলে ওর স্বপনের সাথে যে দুবার দেখা হয়েছিল তার কথা। স্বপন ওকে জড়িয়ে ধরলে ওর মনে যে আলোড়ন উঠে ছিল তার কথা।  মানসী – তুই আমার বোনকে দেখিস নি  কস্তূরী – কোন বোন ? নেহা ? না না ওকে কখনও দেখিনি। মানসী – না আমি বলছি আমার বোন শ্রেয়সীর কথা। কস্তূরী – না ওকেও দেখিনি। কেন কি হয়েছে ? মানসী – আমার বোনের গায়ের রঙ আমার মতই আর ফিগার তোর মত। কস্তূরী – বাপরে, ওকে কোন ছেলে পছন্দ করবে ! মানসী – তার ওপর শ্রেয়সী নিজেকে হেমামালিনি মনে করে। কস্তূরী – তো কি হয়েছে ? মানসী – সেই স্বপন শ্রেয়সীর সাথে যে ভাবে কথা বলে বা ওর আবদার মেনে নেয়, তুই দেখলে অবাক হয়ে যাবি।  কস্তূরী – আমি তো শুনেই প্রেমে পরে যাচ্ছি। আমার সাথে একবার আলাপ করিয়ে দে প্লীজ। মানসী – স্বপন নেহাকে প্রানের থেকে বেশী ভালবাসে। ও নেহা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে কোন খারাপ ভাবে তাকাবেই না। কস্তূরী – না না আমিও খারাপ ভাবে কিছু চাইছি না। আমি শুধু একবার ওইরকম ছেলেকে দেখতে চাই। মানসী – স্বপন রাঁচিতে থাকে। মাসে একবার কলকাতায় আসে। ওর বাবা, মা আর নেহাকে দেখতে। এইবার আসলে আমি বলব।  সেই সময় টেলিফোন কম থাকলেও, মানসী আর নিহারিকা দুজনের ঘরেই ফোন ছিল। মানসী নিহারিকার সাথে কথা বলে স্বপনের পরের বারের আসার দিন শুনে নেয়। আর দুজনে মিলে বেলুর মঠে যাবার প্ল্যান করে। (#১০) পরের মাসে স্বপন কলকাতায় এলে নিহারিকা ওকে নিয়ে বেলুর মঠে যায়। দুজনে গঙ্গার ধারে বসে কথা বলছিল তখন আগের প্ল্যান অনুযায়ী মানসীও কস্তূরীকে নিয়ে ওখানে ওদের সাথে দেখা করে।  স্বপন – আমার কি ভাগ্য যে এখানে আমার বন্ধুর সাথে দেখা। মানসী – কেমন আছ স্বপন ? স্বপন – আমি খুব ভাল, তুমি বা তোমরা কেমন আছ ? মানসী – আমরাও ভাল আছি। আর দেখো এ হচ্ছে কস্তূরী, আমার সাথে আমার ক্লাসে পড়ে।  স্বপন – আমি স্বপন, মানসীর বন্ধু। স্বপন হাত বাড়িয়ে দেয় কস্তূরীর দিকে। কস্তূরী একটু ইতস্তত করে হাত মেলায়। স্বপন – তোমাকে আমি বারবি বলে ডাকবো। কস্তূরী – বারবি ? সেটা আবার কিরকম নাম ! আর কেনই বা আমাকে বারবি বলবেন ? স্বপন – বারবি হল পৃথিবীর সব থেকে বিখ্যাত পুতুলের নাম। কস্তূরী – পুতুলের আবার এইরকম নাম হয় নাকি ! স্বপন – আমেরিকায় হয়। ১৯৫৯ সাল থেকে বারবি বিক্রি হয়। এখন ভারতেও পাওয়া যায়। আমি বা তুমি যখন ছোটো ছিলাম তখন এইসব ছিল না। কস্তূরী – তো আমার নাম বারবি কেন দেবেন ? স্বপন – আমার সাথে কেউ ‘আপনি’ করে কথা বললে আমি তার বন্ধু হই না। কস্তূরী – ঠিক আছে ‘তুমি’ করেই বলব তোমাকে। স্বপন – বারবির চেহারা একদম তোমার মত। বারবির গায়ের রঙ তোমার মত আর ফিগারও তোমার মত। দুনিয়ার বেশীর ভাগ ইয়ং মেয়ে তোমার মত চেহারা পাওার জন্য তপস্যা করে। কস্তূরী – তাই ! স্বপন – হ্যাঁ গো তাই। আর আমি রাঙা দিদির কাছে শুনেছি তুমি মোটা হতে পারছ না বলে তোমার খুব দুঃখ। কস্তূরী – তোমার কাছে লুকাব না। সত্যি স্বপন দা, আমার খুব খারাপ লাগে।  স্বপন – কি খারাপ লাগে ? কস্তূরী – সব ছেলেরাই আমাকে আর মানসীকে দেখে নাক সিটকায়। ওর রঙ নেই নলে আর আমার চেহারা নেই বলে।  স্বপন – সেটা ওই ছেলেদের সমস্যা, তোমাদের মত বন্ধু মিস করছে। তোমার কি যায় আসে ? কস্তূরী – আমাদের কোন বন্ধু নেই স্বপন – সে কারোরই নেই। যে সব ছেলে মেয়ে রঙ বা ফিগার দেখে বন্ধুত্ব করে তারা আসলে বন্ধুত্বর মানেই জানে না। তারা সুবিধাবাদী, ফোকটে যা পাওয়া যায় সেটা নেবার জন্য বন্ধুত্বের ভান করে।  কস্তূরী – তবে বন্ধু কি করে পাব ? স্বপন – তোমাকে ভগবান যেটা দেন নি সেটা নিয়ে দুঃখ না করে যা যা দিয়েছেন সেটা নিয়ে আনন্দ করো। কিছু জিনিস বা কোয়ালিটি আমরা চেষ্টা করে অর্জন করতে পারি, সেটার চেষ্টা করো। যেটা অর্জন করা যায় না সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই। কস্তূরী – কি অর্জন করা যায় আর কি অর্জন করা যায় না ? স্বপন – গায়ের রঙ অর্জন করা যায় না। ফিগার কিছুটা যায় কিন্তু হাইট অর্জন করা যায় না। লেখাপড়া অর্জন করা যায়, বন্ধু অর্জন করা যায়, বাবা মা অর্জন করা যায় না।  নিহারিকা – এত সিরিয়াস আলোচনা করছে কেন তোমরা ? কস্তূরী – না না ঠিক আছে, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাইছিলাম এই কথাগুলো শোনার জন্যই। স্বপন – তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাইছিলে ? জানতাম না তো ! নিহারিকা – আমি তোমাকে বলিনি। রাঙা দি আমাকে বলেছিল। তাই আমি এখানে তোমার সাথে আসার প্ল্যান করেছিলাম। স্বপন – আমার বৌ টা বড় দুষ্টু মানসী – ও এখনও তোমার বৌ হয় নি স্বপন – আমার কাছে নিহারিকা প্রথম দিন থেকেই আমার বৌ। সামাজিক স্বীকৃতির অপেক্ষা করছি শুধু। কস্তূরী – কি ভাল গো তুমি ! স্বপন – কি ভাল দেখলে বারবি ? মানসী – তুমি বুঝবে না তোমার কি ভাল গুণ আছে স্বপন – তোমরা বুঝতে পার ? মানসী – না হলে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করি ? স্বপন – নিহারিকা বোঝে না গো নিহারিকা – না বুঝি না, এমনি এমনি তোমার সাথে থাকি ! স্বপন – আমার সাথে থাকো কিন্তু এখনও আমাকে একটাও হামি খেতে দাও নি নিহারিকা – সেসব সামাজিক স্বীকৃতির পরে হবে স্বপন – সেইজন্যেই তো বলি যে তুমি এখনও আমাকে পুরো বিশ্বাস করো না নিহারিকা – বিশ্বাস করি, কিন্তু ভয় লাগে মানসী – নেহা তোর এটা উচিত নয়, স্বপন তোকে এত ভালবাসে আর তুই কিনা ওর থেকে দূরে থাকিস ! নিহারিকা – এইসব কথা পরে হবে, এখন অন্য কিছু বল। (#১১) আমাদের গল্প মানসীকে নিয়ে। তাই আমরা স্বপন আর নিহারিকার জীবনে কি ভাবে কি হয়েছিল বা ওরা কবে চুমু খেয়েছিল তার মধ্যে যাব না। সেদিন ওরা চারজনে আরও অনেকক্ষণ গল্প করে। কস্তূরীও স্বপনের বন্ধু হয়ে যায়। সেদিন বেলুর মঠ থেকে ফেরার পরে মানসী আর কস্তূরী অনেক সময় চুপ করে থাকে। স্বপন ওদের কে Positive Thinking আর Positive Attitude-এর কথা বলেছিল। ওরা সেটা নিয়ে কিছু কথা বলে।  কস্তূরী – সত্যি রে আমরা যা নেই সেটা নিয়েই বেশী ব্যস্ত, যা আছে সেটা দেখি না মানসী – স্বপনের সাথে চেনা হবার পর থেকে আমি সেটা দেখতে শুরু করেছি কস্তূরী – চল আজ থেকে আমরা আর দুঃখ করবা না। আমাদের যা আছে তা আরও কিভাবে ভাল করা যায় সেই চেষ্টা করবো। মানসী – ঠিক আছে। কাল আমি তোর কি কি গুণ আছে সেটা বলব। আর তুই আমার গুনের কথা বলবি। কস্তূরী – তথাকথিত দোষের কথা একটুও বলব না বা চিন্তা করবো না।  ওরা দুজনেই নিজেদেরকে বদলিয়ে নেবার চেষ্টা করে। নিজেকে বদলাবো ভাবলেই বদলানো অতো সহজ নয়। দুজনেই আস্তে আস্তে ওদের পুরানো বন্ধুদের থেকে দূরে সরে আসে। কিছু ছেলে মেয়ে খুঁজে পায় যারা ওদের মত করেই চিন্তা করে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম। জীবন চলতে থাকে।  আগেই বলেছি কস্তূরী একটু পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে। ও বাবাকে বলে তিনটে বারবি পুতুল কেনে। বাব্র কাছে জিদ করে সেই পুতুলের মত ড্রেস বানায়। ওর বাবা একটু আপত্তি করছিল কিন্তু কস্তূরী ওর পিসিকে বলে সব ম্যানেজ করে। ওর পিসি ওর বাবাকে বোঝায় যে মেয়েটার শরীরে আছেটা কি যে দেখা যাবে ! নিউ মার্কেটের দর্জিদের কাছ থেকে কস্তূরীর নতুন ড্রেস বানানো হয়। কস্তূরী যেদিন প্রথম সেই ড্রেস পড়ে কলেজে আছে ছেলেদের মধ্যে হৈচৈ লেগে যায়। কিন্তু কস্তূরী বা মানসী তাতে পাত্তা দেয় না। (#১২) মানসী কস্তূরীকে জিজ্ঞাসা করে ওর ওইরকম ড্রেস পড়ার কারন। কস্তূরী বলে যে ও যে বারবি পুতুলগুলো কিনেছে তাতে পুতুল গুলো যা পড়ে আছে, খুব সেক্সি দেখাচ্ছে। তাই ও ওইরকম ড্রেস বানিয়েছে। আর ওই ড্রেস পড়ে ওকে অনেক সেক্সি দেখাচ্ছে।  কস্তূরী – দেখ এই জামায় আমার ছোটো বুক দুটোও বেশ ফুটে উঠেছে। মানসী – তুই কি এই রকম শরীর দেখানো জামা পড়বি ? কস্তূরী – দেখ এই জামায় আমার বুকের দুই শতাংশও দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে তাতে সব ছেলেরা তাকিয়ে আছে, আরও কি আছে যদি দেখা যায় মানসী – কিন্তু আমার এটা পছন্দ নয় কস্তূরী – তুই আর আমি বন্ধু, কিন্তু তা বলে আমাদের চাওয়া পাওয়ার ইচ্ছা এক হবে তার কোন মানে নেই। তাই না ? মানসী – সেটা হয়তো ঠিক কস্তূরী – আমি সব সময় চাইতাম ছেলেগুলো আমার পেছনে মৌমাছির মত ভন ভন করে ঘুরুক। এতদিন ওরা আমাকে দেখত না, তাই আমি ওদের পেছন পেছন ঘুরতাম। স্বপনদার দেখানো রাস্তায় আমি বুঝে গেছি আমাকে কি করতে হবে।  মানসী – তোর যা ইচ্ছা কর। কিন্তু আমি তোর মতো করব না। কস্তূরী চাইত সেক্সি দেখাতে। ওর শরীর বাঙালি হিসাবে সেক্সি ছিল না। ও হীনমন্যতায় ভুগত। কিন্তু এখন ও ঠিক রাস্তা পেয়ে গিয়েছিলো। অনেকেই হয়তো ওর এই ইচ্ছাটাকে অনৈতিক বা অশালীন বলবে। তথাপি সেই আদিকাল থেকেই মেয়েরা সুন্দর করে সাজতেই ভালবাসে। সেটাকে কেউ অশালীন বলে না। মেয়েদের সাজের একমাত্র কারণই হল ছেলেদের আকর্ষণ করা। অনেক নারীবাদী মহিলা হয়তো এই কথা মেনে নেবে না। কিন্তু যে মেয়ে সেজে গুজে বাইরে বেড়িয়েছে তাকে জিজ্ঞাসা করলে ওর সাজের আর কোন যুক্তি সঙ্গত কারন দেখাতে পারবে না। আগেকার দিনের গৃহবধূরা সারাদিনের কাজের পর সাজগোজ করত। ওরা সাজের পড়ে বাইরে যেত না। ওদের সাজের কারন ছিল দিনের শেষে ওদের স্বামীরা বাড়ি ফিরে যেন ওদের পছন্দ করে। সেখানেও সাজের উদ্দেশ্য একই। একটা মেয়ে বা মহিলা শাড়ি ব্লাউজ পড়ে বেড়িয়েছে, ব্লাউজের নিচে আর শাড়ীর ওপরে প্রায় দশ ইঞ্চি জায়গা উন্মুক্ত, তাও সেটা ভদ্র পোশাক। আর একটা মেয়ে সব ঢাকা পোশাক পড়েছে শুধু ০.০০২ ইঞ্চি বুকের খাঁজ দেখা যাচ্ছে – সেটা অশালীন পোশাক। ৯০ শতাংশ স্বচ্ছ শাড়ী দিয়ে তরমুজের মত বুক নামে মাত্র ঢাকা – সেটা সভ্য পোশাক। ঢিলে চুড়িদারের ওপর ওড়না না নিলে সেটা অশালীন পোশাক। বাঙালি সমাজের সভ্য পোশাকের সংজ্ঞা বোঝা ভীষণ কঠিন।  ছেলেরাও যে পোশাক পড়ে তার একমাত্র উদ্দেশ্য যেন মেয়েরা ওকে হি-ম্যান আর স্মার্ট ভাবে। তাই কস্তূরী যা করেছে সমাজের কাছে ঠিক না হলেও, ওর নিজের কাছে একদম সঠিক ছিল। ওর উদ্দেশ্যও সফল হয়। কলেজে যে সব ছেলেরা ওর দিকে তাকিয়েও দেখত না, তারাই এখন সবসময় ওর সামনে পেছনে ঘুর ঘুর করে। কিন্তু কস্তূরী কাউকেই সেরকম পাত্তা দেয় না। মাঝে মাঝে দুস্টুমি করে ছেলেদের সামনে ঝুঁকে পড়ত। ঘরের জানাল থেকে একটা রুটির টুকরো বাইরে ছুঁড়ে দিলে যেমন অনেকগুলো কাক ঝাপিয়ে পড়ে, সেইরকম কস্তূরী ঝুঁকে পড়লেই দশ পনেরোটা ছেলে হামলিয়ে পড়ত। কিন্ত কস্তূরী ঝুঁকে পড়লেও প্রায় কিছুই দেখা যেত না। আর কস্তূরীও দশ সেকেন্ডের বেশী ওইভাবে থাকতো না। মুচকি হেসে উঠে ওখান থেকে চলে যেত। (#১৩) মানসী কস্তূরীর খেলা দেখত, উপভোগ করত। নিজে কিছু করার সাহস ছিল না। আর ও ওইভাবে ছেলেদের আকৃষ্ট করতেও চাইত না। ও চাইত যে ছেলে ওর মন দেখে এগিয়ে আসবে তাকেই বন্ধু বলে মেনে নেবে। কিন্তু মানসীর দুর্ভাগ্য যে কোন ছেলেই ওর গায়ের কালো রঙের কাল্পনিক(virtual) প্রাচীর ভেদ করে কাছে আসতেই চাইল না। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল মানসীর সে নিয়ে কোন আক্ষেপও ছিল না।  প্রায় তিন চার মাস পড়ে মানসী আর কস্তূরী, স্বপন আর নেহার সাথে দেখা করে। সেদিন ওরা চিড়িয়াখানায় যায়। কস্তূরীকে দেখেই স্বপন প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে। কস্তূরী কোন দ্বিধা না করেই স্বপনকে জড়িয়ে ধরে।  স্বপন – আমি একি দেখছি ! কস্তূরী – কেন স্বপনদা কি হল  স্বপন – তুমি তো পুরো পুরি বারবি ডল লাগছ ! কস্তূরী – আমার এখনকার প্রায় সব পোশাকই বারবির স্টাইলেই বানানো। মানসী স্বপনকে বলে কস্তূরীর পরিবর্তনের কথা। স্বপন আর নেহাও হেঁসে ওঠে কস্তূরীর কাণ্ড কারখানা শুনে।  স্বপন – কিন্তু বারবি তুমি এইভাবে সঠিক বন্ধু কি ভাবে খুঁজে পাবে? কস্তূরী – যে ভাবে তোমাকে পেয়েছি, সেই ভাবেই পাব। স্বপন – আমি তো তোমার সাথে বারবি ডলের পোশাক দেখে বন্ধুত্ব করিনি কস্তূরী – সেটাই তো বলছি। যে ছেলে আমাকে এই পোশাকেও দেখে আমার বুকের দিকে না তাকিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে সেই আমার বন্ধু হবে। স্বপন – কিন্তু আমি যে একটু একটু তোমার বুকের দিকে তাকাচ্ছি ! কস্তূরী – তুমি আমার দিকে যে ভাবেই তাকাও না কেন, বন্ধুই থাকবে নেহা – কেন কেন, স্বপনের বেলায় তোমার নিয়ম আলাদা কেন ? কস্তূরী – নেহা স্বপন দা আমাকে আমার আসল রূপে দেখে বন্ধু করেছে। তাই স্বপনদার কথা আলাদা। মানসী – আজ স্বপন তোকে দেখে আমার কথা ভুলেই গেছে ! স্বপন – না গো রাঙা দিদি তোমাকে কখনো কি ভুলতে পারি! স্বপনের খেয়াল হয় সেদিন দেখা হবার পর থেকে ও শুধু কস্তূরীকে নিয়েই কথা বলেছে। স্বপন সেই মুহূর্তে কিছুই বলে না। নেহা বলে চিড়িয়া খানায় এসেছে যখন, তখন একটু বাঘ ভাল্লুক দেখা উচিত। স্বপন বলে যে আগে আইসক্রিম খাবে। নেহা কোন কিছু না বলে আইসক্রিম কিনতে চলে যায়। মানসী – হটাৎ তোমার আইসক্রিম খাবার ইচ্ছা হল যে ! স্বপন – দেখো আমি জীবনের প্রথম আইসক্রিম খেয়ে ছিলাম এই চিড়িয়াখানায়। কস্তূরী – তাই ? কেন তোমাদের পাড়ায় বা স্কুলের সামনে আইসক্রিম পাওয়া যেত না ! স্বপন – আমি গ্রামের ছেলে। আমাদের গ্রামের চারিদিকে ৫ বা ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও কারেন্ট ছিল না। আইসক্রিম কোথা থেকে পাব ?  মানসী – আর নেহাও সেটা জানে, তাই না ! স্বপন – নিহারিকা আমার প্রায় সব কিছুই জানে। আমি চিড়িয়া খানায় এলেই আগে আইসক্রিম খাই। (#১৪) আইসক্রিম খাবার পড়ে ওরা জীব জন্তু দেখতে শুরু করে। স্বপন মানসীর হাত ধরে। মানসীও প্রথমে খেয়াল করে না। কিছুক্ষন ঘোড়ার পরে সেটা বুঝতে পেরে স্বপনের হাত ছেড়ে দিতে চায়। স্বপন – কেন আমার হাত ধরতে ভাল লাগছে না ? মানসী – না না তা না স্বপন – তবে হাত ছেড়ে দিতে চাইছ কেন ? মানসী – নেহার সামনে আমি তোমার হাত ধরলে নেহার খারাপ লাগবে নিহারিকা – না রে আমি খারাপ ভেবে নেব না। একটা বন্ধু আরেকটা বন্ধুর হাত ধরতেই পারে। স্বপন মানসীর হাত ছেড়ে দিয়ে ওর কাঁধের ওপর দিয়ে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে। মানসীর বাহু স্বপনের বুকের ওপর। মানসী স্বপনের হৃদপিণ্ডের ধুক পুক অনুভব করে। একটু লজ্জা লাগলেও ও নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে না। নিজেকে স্বপনের বুকের ওপর ছেড়ে দেয়। স্বপন ওকে জড়িয়ে ধরে একটু চলার পরে অনুভব করে মানসী কেমন যেন অসার ভাবে চলছে। ও ঘুরে দাঁড়িয়ে মানসীকে ছেড়ে দিতেই, মানসী বেসামাল হয়ে পরে যেতে যায়। স্বপন কোন কিছু না ভেবে মানসীকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। মানসী স্বপনের বুকের মধ্যে মাথা রেখে হারিয়ে যেতে চায়। স্বপন আস্তে করে মানসীকে বসিয়ে দেয়। পাশে নিজে বসে ওর মাথা নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে নেয়। নিহারিকা জলের বোতল থেকে জল নিয়ে মানসীর মুখে চোখে ছিটিয়ে দেয়। কস্তূরী বোঝে মানসীর কি হয়েছে তাই ও কিছুই করে না, শুধু দেখে যায়।  কিছু পরে মানসী স্বাভাবিক হয়। লাফিয়ে উঠে পরে স্বপনের কোল থেকে। চুপ চাপ বসে থাকে। নিহারিকা জিজ্ঞাসা করে ওর কি হয়েছিল। মানসী কোন উত্তর দেয় না। স্বপন ওর হাত ধরে পাল্ স্ দেখার জন্যে। মানসী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। নিহারিকা – কি হয়েছে তোর রাঙা দি ! মানসী – আমি খুব খারাপ মেয়ে নিহারিকা – কে বলল তুই খারাপ মেয়ে ? স্বপন কিছু বলেছে নাকি ? মানসী – স্বপন কিছু বলেনি। ও কেন কিছু বলবে আমাকে! নিহারিকা – তবে কাঁদছিস কেন ? মানসী কিছু না বলে ফোঁপাতে থাকে। এতক্ষনে স্বপন বুঝতে পারে মানসীর অসার হবার কারন আর কাঁদার কারন। ওর মনে পড়ে প্রথম দিনও মানসী অসার হয়ে গিয়েছিলো। স্বপন ধীরে ধীরে মানসীর মাথা নিজের বুকে টেনে নেয়। মানসীও কিছু না বলে ওর বুকে মাথা রাখে। নিহারিকা কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলে স্বপন ওকে ইসারাতে চুপ করতে বলে। কস্তূরী নিহারিকাকে ডেকে ওখান থেকে উঠে যায়। (#১৫) কস্তূরী নিহারিকাকে বোঝায় মানসীর মানসিক দ্বন্দের কথা। নিহারিকার কাছে এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। নিহারিকা একবার ভাবে স্বপন কি চায়। ও ভাবে স্বপন যদি মানসীকে বিয়ে করতে চায় তবে ও ওদের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াবে। পরমুহূর্তে চিন্তা করে স্বপন মানসীকে বন্ধু হিসাবেই দেখে, মানসীর ভালবাসা একতরফা। ও ঠিক করে এটা নিয়ে পরে স্বপনের সাথে আলোচনা করতে হবে। আগে দেখা যাক স্বপন কি করে এই অবস্থায়। ওদিকে মানসী একটু ধাতস্থ হবার পরে স্বপনের বুক থেকে উঠে পরে।  স্বপন – রাঙা দিদি তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই না ? মানসী – আমি জানি তুমি নেহাকে ভালোবাসো। তুমি আমাকে বন্ধুর মতো ভালোবাসো। স্বপন – তবে ? মানসী – যেদিন তুমি আমার দিকে প্রথম বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে সেদিনই তোমাকে ভালবাসেছি। ভালবাসা কোন বাধা, বিপত্তি, সম্পর্ক, বর্তমান, ভবিষ্যৎ কিছুই মানে না। আমি জানি তুমি আর নেহা একে অন্যকে ভীষণ ভালোবাসো। কিন্তু আমার মন কে সামলাতেই পারি না। স্বপন – কিন্তু আমি তো তোমাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন ভাবে নিতে পারবো না গো দিদি। মানসী – আমি চাইও না তুমি নেহাকে ছেড়ে আমাকে ভালোবাসো। স্বপন – তবে আমার কাছে এলেই তুমি ওইরকম নিস্তেজ হয়ে পড় কেন ? মানসী – আমার মনকে অনেক করে বুঝিয়েছি যে তুমি আমার বন্ধু। কিন্তু এই পোড়ার শরীর সেটা বুঝতে চায় না। যেই তুমি আমাকে জড়িয়ে ধর আমার শরীরে শিহরন শুরু হয়ে যায়। তখন আর থাকতে পারি না। স্বপন – এতো বড় সমস্যায় ফেললে দিদি আমাকে মানসী – তুমি প্লীজ আমাকে দিদি বল না স্বপন – আমি সব সময় তোমাকে দিদি বলেই ডাকবো। সেটা তোমার পক্ষেও ভাল হবে। মানসী – হয়তো তাই স্বপন – তোমার কি আমার বুকে আসলে ভাল লাগে ? মানসী – লজ্জা দিও না আমাকে  স্বপন – না না সত্যি বল মানসী – ভীষণ ভাল লাগে। স্বপন – তবে এস আমার বুকে, আমি নিহারিকাকে বুঝিয়ে দেব মানসী – কি বোঝাবে ? স্বপন – ওকে যাই বোঝাই, তুমি আমার বুকে মাথা রেখে নিজের মন আর শরীর কে বলে যাও যে স্বপন শুধুই তোমার বন্ধু। (#১৬) স্বপন আবার মানসীকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নেয়। ততক্ষনে নিহারিকা আর কস্তূরী ফিরে আসে। নিহারিকাকে দেখে মানসী উঠে বসতে যায়। নিহারিকা ওকে বাধা দেয় আর ওর পাশে গিয়ে বসে। মানসী – নেহা আমি ভীষণ খারাপ মেয়ে, বোনের প্রেমিকের দিকে চোখ দিয়েছি। নিহারিকা – রাঙা দি এই ভাবে কথা বলবি না মানসী – স্বপন তোকেই ভালবাসে। নিহারিকা – আমি সেটা ভাল করেই জানি মানসী – কিন্তু আমি কি করবো বুঝতে পারি না নিহারিকা – তোকে কিছু করতে হবে না। স্বপনের বুকে মাথা রেখে আদর খা। মানসী – যাঃ তাই হয় নাকি নিহারিকা – এখন তো আদর খা, পরে দেখা যাবে কি হবে। ওরা চারজনে বসে অনেক গল্প করে। চিড়িয়াখানা দেখার কথা আর কারো মনেই থাকে না। স্বপন নিহারিকাকে বলে ওর আর মানসীর মধ্যে কি কি কথা হয়েছে। নিহারিকা মানসীকে বলে যে ওর স্বপনের বুকে বা কোলে মাথা রেখে যত খুশী আদর খেতে পারে। ও স্বপন আর ওর রাঙাদি দুজনকেই ভালবাসে। তাই ওরা দুজন কিছু করলে ও কিছুই মনে করবেনা। স্বপন বুঝতে পারে ওর মানসীর সাথে বেশী দেখা করা টা ঠিক হবে না। কিন্তু সে নিয়ে ও মানসী বা নিহারিকাকে কিছুই বলে না।  স্বপন ভাবে যে ওর আর নিহারিকার মধ্যের প্রেম মানসীর সামনে বেশী করে বোঝাতে হবে। স্বপন – জানো রাঙা দিদি তোমার নেহা সেদিন আমাকে হামি খেতে দিয়েছে কস্তূরী – কোথায় হামি খেয়েছ ? স্বপন – ওদের বাড়ির ছাদে কস্তূরী – আরে সেই কোথায় না, ওর শরীরের কোথায় চুমু খেলে ? স্বপন – আপাতত ঠোঁটে চুমু খেয়েছি, আর কোথাও চুমু খাবার অনুমতি দেয়নি নিহারিকা – আরও চাই ? স্বপন – চাই তো নিহারিকা – সেসব বিয়ের পরে স্বপন – আমিও এখন চাইছি না শেষ বিকালে ওরা উঠে পড়ে চিড়িয়াখানা থেকে। ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফেরে। আগে নিহারিকার বাড়ি তাই স্বপন আগে ওকেই পৌঁছে দেয়। মানসী আর কস্তূরী ওখান থেকে একা একাই চলে যেতে চাইছিল। কিন্তু নিহারিকা বলে স্বপন ওদের বাড়ির ওপর দিয়েই যাবে। আর স্বপন যদি মানসীদের পৌঁছে দেয় ও কিছু মনেই করবে না। বরঞ্চ পৌঁছে না দিলেই রাগ করবে। মানসীদের বাড়ির কাছে পৌঁছালে মানসী মেন রোডেই নামিয়ে দিতে বলে। ও চাইছিল না সেদিন স্বপন ওদের বাড়ি যাক। মানসীরা নেমে গেলে স্বপন কস্তূরী আর মানসী দুজনকেই জড়িয়ে ধরে। আর মানসীর ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়। কস্তূরী – এটা ভাল করলে না স্বপন – কেন ? মানসীর ভাল লাগে নি ? মানসী – যাঃ কস্তূরী – আমি কেন বাদ যাব ? স্বপন – এর পরের দিন তুমি কস্তূরী – না গো এমনি বলছি। আমি আমাকে চুমু খাবার ছেলে ঠিক খুঁজে পেয়ে যাব। দ্বিতীয় পরিচ্ছদ সমাপ্ত
Parent