কাজল নদী_Written By Tumi_je_amar [ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায় (চ্যাপ্টার ০১ - চ্যাপ্টার ০৭)]
কাজল নদী
Written By Tumi_je_amar
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায়
(#০১)
আমরা সবাই সুখী হতে চাই। তবে সবার সুখের মাপকাঠি এক নয়। কেউ ভালবাসায় সুখ পায়। কেউ রাজা হয়ে সুখ পায়। কেউ ভালবাসার জন্যে ত্যাগ করে সুখ পায় আবার কেউ ভালবাসা ছিনিয়ে নিয়ে সুখ পায়। কেউ চুরি করে সুখ পায় আবার কেউ অন্যের জন্য জীবন দিয়ে সুখ পায়। যে যাই বলুক আসলে আমরা সবাই স্বার্থপর। আমরা যা করি নিজের সুখের জন্যেই করি।
যে ভালবাসা ছিনিয়ে নেয় সে শুধু নিজেই সুখ পায়। আর যে ভালবাসার জন্যে ত্যাগ করে সে পৃথিবীর চোখে হয়ত দুঃখ পায়, কিন্তু আসলে সেও ত্যাগ করে সুখ পায়। তবে তার নিজের সুখের সাথে সাথে অন্যরাও সুখী হয়। এই গল্পের মানসী ত্যাগ করে সুখ পায়। নিজের আসল সুখ বা স্বাচ্ছন্দের কথা একটুও ভাবে না। অন্য সবাই সুখী হলেই মানসী খুশী।
স্বপন নিজে সুখে থাকতে চায়। অন্যকেও সুখে থাকতে দিতে চায়। কিন্তু অন্যের সুখের জন্যে কোন ত্যাগ করতে রাজী নয়। ও সবাইকে সাহায্য করে বা করতে চায় কিন্তু নিজের প্রয়োজন বাঁচিয়ে। বড়দার সুখ শুধু টাকায়। সে নিজের উপার্জনের টাকা হোক বা অন্যের থেকে ম্যানেজ করে নেওয়া টাকাই হোক। ওনার লক্ষ্য টাকা ওনার ব্যাঙ্ক আকাউন্টে থাকবে আর তার জন্যে যা করার দরকার উনি করবেন।
ভাস্কর এখনও সুখ নিয়ে সেইরকম ভাবে চিন্তাই করেনি। মানসীর সাথে ভালবাসা বা চেনাশোনা হবার আগে ওর জীবন কালীপূজার ছুঁচো বাজির মত ছিল। ছুঁচো বাজিতে আগুন দিলে সেটা যেদিকে খুশী ধাওয়া করে। রকেট বাজির মত একটা নির্দিষ্ট দিকে যায় না। এতদিন ভাস্করের জীবনও তাই ছিল।
মানসী আবার আগের জীবনে ফিরে যায়। সকালে স্কুল, দুপুরের পর থেকে বিউটি পার্লার। একই গতানুগতিক জীবন। পার্লার এখন বেশ ভাল ভাবেই চলে। অনেক রেগুলার কাস্টমার আছে। বিয়ের মরশুমে বেশ কিছু বউ সাজানোর কাজও পায়। পার্লারের সেই প্রথম চারটে মেয়ের দু জন ছেড়ে চলে গেছে। তাদের জায়গায় নতুন মেয়ে যোগ দিয়েছে। পার্লারে মেয়েদের নাম সেই অলকা, নয়নিকা, বর্ণিকা আর লতিকাই আছে। গ্রাহকের কাছে সেগুলো শুধুই নাম। কিন্তু পারলারে সেই নামগুলো প্রকৃতপক্ষে ওদের ডেসিগনেশন হয়ে গেছে।
কিছুদিন হল দীপ্তি মাঝে মাঝে পার্লারে আসে। ও এখানে হিসাব রাখতে শুরু করেছে। প্রতিদিন কত আয় হচ্ছে আর খরচ হচ্ছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখে। দীপ্তি আসার পরে প্রথম মাসে দেখে সবার মাইনে আর পার্লার চালানর খরচ করার পরে প্রায় ১১ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। মানসী বড়দার কাছ থেকে মাসে মাত্র এক হাজার টাকা নেয়। বাকি টাকা তবে বড়দার কাছেই জমে। মানসী এবার বুঝতে পারে ওর বড়দাকে। তবু ওর সাহস হয়না বড়দাকে কিছু বলার। দীপ্তি আর লেখা দুজনেই ওদের রাঙ্গাদিকে বার বার বলে পার্লারের আয়ের টাকা ওর নিজের আকাউন্টে রাখতে। বলি বলি করে মানসী কোনদিনই সেই কথা বড়দাকে বলতে পারে না।
(#০২)
মানসী একদিন দুপুরে পার্লারে ঢুকতে যাবে, দেখে বাইরে ভাস্কর দাঁড়িয়ে। মানসী ওকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। ও পার্লারে না ঢুকে অন্য দিকে হাঁটতে থাকে। ভাস্কর একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায়। একটু দাঁড়িয়ে ভাবে কি করা উচিত। তারপর মানসীকে ফলো করতে শুরু করে। মানসী বেশ কিছুটা গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে ভাস্কর ওর পেছন পেছন আসছে। বেলঘরিয়া ফিডার রোডের একদিকে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে মানসী দাঁড়ায়। ভাস্করও একটু পরে ওখানে পৌঁছে যায়।
মানসী – তুমি এখানে কেন এসেছ ?
ভাস্কর – এখানে না আসলে তোমার সাথে দেখা করবো কি করে ?
মানসী – স্বপনের বাড়িতে পড়াতে যাও না ?
ভাস্কর – না পড়ানো ছেড়ে দিয়েছি।
মানসী – কেন ছাড়লে ?
ভাস্কর – ওখানে গেলেই তোমার কথা মনে পড়ে। আর তোমাকে না দেখে আমার মদ খেতে ইচ্ছা হয়। তাই স্বপন দাকে বুঝিয়েই পড়ানো ছেড়েছি।
মানসী – তবে এখন কি করছ ?
ভাস্কর – একটু কোন বসার জায়গা নেই এখানে ? এইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কত কথা বলবো ?
মানসী – চলো আজ ওই চায়ের দোকানটাতে বসি।
একটা রাস্তার ধারের সাধারন চায়ের দোকানে গিয়ে বসে। দোকানে এক বুড়ি মাসি বসেছিল। সে ওদের যতক্ষন খুশী বসতে বলে, কিন্তু বিকাল চারটের মধ্যে উঠেও যেতে বলে। কারন সেই সময় ওখানের একটা কারখানার শিফট বদল হয় আর অনেক লোক চা খেতে আসে।
ভাস্কর মানসীর হাত ধরে বসে। মানসী মাসীকে বিস্কুট আর চা দিতে বলে। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে চুপ চাপ বসে থাকে। মিনিট দশেক পরে মাসী চা এনে ওদের পাশে রাখে।
মাসী – ও বাবারা চা খেয়ে নাও। এই রকম শুধু দেখলে কি হবে ?
ভাস্কর – হ্যাঁ মাসী চা খাচ্ছি।
মাসী – তা বাবা বয়েস তো হল, বিয়ে করে নিলেই পারো।
ভাস্কর – মাসী অনেক সমস্যা আছে।
মাসী – সে তোমরা জান তোমাদের সমস্যা
মানসী – কি করলে এই কিছু দিন ? কিভাবে দৌড়ানোর প্ল্যান করছ ?
ভাস্কর – যত চেনাশোনা লোক ছিল সবার সাথেই দেখা করেছি। আর তাতে একটা জিনিস বুঝেছি বয়েস চল্লিশ পেড়িয়ে গেলে তোমার যাই যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা থাকনা কেন চাকরি পাবে না।
মানসী – তবে কি করবে ?
ভাস্কর – ব্যবসা করতে গেলেও যে পুঁজি চাই সেটা আমার নেই।
মানসী – কেউ লোণ দেবে না ?
ভাস্কর – সে চেষ্টাও করেছি। ব্যাঙ্ক আমাকে লোণ দেবে না। বন্ধুরাও দেবে না। আসলে জান একটা ছেলে যখন বিপদে পরে তার কোন বন্ধু থাকে না।
মানসী – আমি তো আছি তোমার সাথে
ভাস্কর – সেই জন্যেই তো আবার দৌড়ানোর চেষ্টা করছি।
মানসী – কিসের ব্যবসা করার কথা ভাবছিলে ?
ভাস্কর – ক্যাটারিং – এর ব্যবসা করার কথা ভেবেছিলাম।
মানসী – হটাত এই ব্যবসার কথা মাথায় এল কেন ?
ভাস্কর – আমার জীবনে এখন তুমি ছাড়া আর একজনই আছে যে কিছু ভাল বুদ্ধি দিতে পারে।
মানসী – কে সে ?
ভাস্কর – কেন স্বপনদা
মানসী – ও তাই বলো।
ভাস্কর – একদিন স্বপনদার সাথে অনেকক্ষণ আলোচনা করলাম। তারপর ঠিক করলাম যদি পারি তবে নিজের ক্যটারিং চালু করবো।
মানসী – কিন্তু এখন কি ভাবে চালাবে ?
ভাস্কর – সেটাও একটা সমস্যা
মানসী – তুমি ভাব কি করা যায়। আমিও ভাবি আমি কি করতে পারি।
ভাস্কর – আমরা রোজ এখানে আড়াইটার সময় দেখা করবো।
মানসী – রোজ আসলে আমার পার্লারের ক্ষতি হবে। আমরা সপ্তাহে দুদিন এখানে দেখা করবো।
ভাস্কর – ঠিক আছে, আমি আবার পরশু দিন আসবো আর তার পরে প্রতি সোম আর শুক্রবার আমরা দেখা করবো।
মানসী – একটা শর্ত আছে
ভাস্কর – কি ?
মানসী – একদম মদ খাবে না
ভাস্কর – আমাকে চুমু খেতে দাও, তবে মদ খাবো না
মানসী – এখানে এই খোলা রাস্তায় ?
ভাস্কর – কেউ তো নেই এখানে
মানসী – মাসী আছে যে
মাসী – আমি দেখছি না। তোমরা তাড়াতাড়ি চুমু খেয়ে নাও।
ভাস্কর মানসীকে চুমু খেয়ে দু মিনিট জড়িয়ে ধরে থাকে। তারপর চলে যায়। মানসীও পার্লারে ফিরে যায়। ওর মনে খুশী, আনন্দ, চিন্তা, দুঃখ, টেনশন সব কটা অনুভুতি এক সাথে এসে হাজির হয়।
(#০৩)
এর মধ্যে সৃজা গ্রাজুয়েশন পুরো করে। মানসী খুশীতে আটখানা। ভেবে পায় না কি করবে। সেদিন বড়দাকে বলে ও বাজারে যাবে। সৃজা যা যা খেতে ভালবাসে সব কেনে। স্কুলে যায় না। সারাদিন সৃজার জন্যে রান্না করে। দুপুরে নিজের হাতে করে সৃজাকে খাইয়ে পার্লারে যায়। পার্লারে সেদিন যত গ্রাহক এসেছিল সবাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। সব গ্রাহক একই প্রশ্ন করে।
গ্রাহক – কিসের জন্যে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন ?
মানসী – আমার মেয়ে বি.এ. পাস করেছে তাই
গ্রাহক – আপনার তো বিয়েই হয়নি
মানসী – আমার দাদার মেয়ে, কিন্তু বৌদি মারা যাবার পর থেকে আমিই বড় করেছি। তাই ও আমারও মেয়ে।
পরের রবিবার সৃজার পাস করার খুশীতে একটা ছোট পার্টি আয়োজন করা হয়। বড়দাই সব খরচ করেন। বড়দার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বাকি সবার চাপে পড়ে করতে হয়। বড়দার সব বোনের ফ্যামিলি নিমন্ত্রিত ছিল। স্বপন আর নিহারিকাও গিয়েছিল। সবাই একসাথে বসে হই হই করে গল্প শুরু করে।
এর মধ্যে শ্রেয়সী আর শ্যামলের একটা ছেলে হয়েছে। বাচ্চারা সবাই অন্য ঘরে ছিল। আর বড়দা তখনও এসে পৌঁছান নি, কোন একটা মিটিঙে গিয়েছেন। সবাই মন খুলে ইয়ারকি করছিল। মানসীর আরেক দিদির বর ছিলেন শ্রদ্ধা জামাইবাবু। খুব রসিক মানুষ।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – শ্রেয়সী তোমার বাচ্চা হলে কি খাওয়াতে ?
শ্রেয়সী – কেন দুধ খেত
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তোমার দুধ না গরুর দুধ ?
শ্রেয়সী – এটা আবার কি রকম প্রশ্ন ? সব বাচ্চা যা খায় আমার ছেলেও তাই খেত।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – না তোমার কাছে তো দুধ রাখার বেশী জায়গা নেই, ছেলের পেট ভরত ?
শ্যামল – হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা ট্যাঙ্ক দেখতে ছোট হলে কি হবে ভেতরে জায়গা আছে।
শ্রেয়সী – জামাইবাবুর ঘরের ট্যাঙ্ক যেন অনেক বড় !
মানসী – তোমরা সবাই এই বাচ্চা মেয়েটার সামনে কি গল্প শুরু করলে ?
স্বপন – বাচ্চা মেয়ে আবার কে ?
মানসী – ওই যে তোমার কোলে বসে আছে, সৃজা।
স্বপন – একটা মেয়ে ১৮ বছর বয়েস হয়ে গেছে, বি. এ. পাস করে গেছে, তাও কি করে বাচ্চা থাকে !
মানসী – বাচ্চা নয় তো তোমার কোলে বসে কেন ?
সৃজা – আমি আমার পিসের কোলে সারা জীবন বসব। আমি বাচ্চা বেলাতে বসেছি, এখন বসি আর বুড়ি হয়ে গেলেও বসবো। তোমার কি ? হিংসা হচ্ছে ?
মানসী – আমার কেন হিংসা হবে !
সৃজা – তুমি কি ভেবেছ আমি কিছু বুঝি না ?
স্বপন – আমরা সবাই মেনে নিচ্ছি তুমি বড় হয়ে গেছ।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – সেদিন দীপ্তি কি করেছে জান ?
দীপ্তি – আমি আবার কি করলাম ?
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তোমাদের বাস স্ট্যান্ডের সামনেই তো আমার অফিস। সেদিন দুপুরবেলা দেখি দীপ্তি এসে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়ালো। তখন ওখানে শুধু আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল, আর কেউ ছিল না। ছেলেটা দীপ্তিকে বলে যে বৌদি আপনি খুব সুন্দর দেখতে। দীপ্তি বলে তোমার বাড়িতে মা বোন নেই, আমার পেছনে কেন লাগছ। ছেলেটা বলে বাড়িতে আজ মা আর বোন দুজনেই নেই। দীপ্তি বলে তবে আর এখানে সময় নষ্ট করছ কেন, তোমার বাড়িতেই চলো।
দীপ্তি – জামাইবাবু মতেই ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। সেদিন ওই ছেলেটা একটা বাড়ির ডিরেকসন জানতে চেয়েছিল।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – তাতে ওর সাথে যেতে কেন হবে ?
দীপ্তি – একটা বাচ্চা ছেলে, মাসির বাড়ি খুঁজে পাচ্ছিল না। আর আমি যা বলছিলাম সেটাও বুঝতে পারছিল না, তাই একটু দেখিয়ে দিতে গিয়েছিলাম।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – এখন তুমি রাস্তা দেখাতে গিয়েছিলে না অন্য কিছু দেখা দেখি করতে গিয়েছিলে সেটা আমরা কি করে জানব।
স্বপন – দীপ্তি ফিরে আসার পড়ে আপনার চেক করা উচিত ছিল।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – আমার তো আর সেই লাইসেন্স নেই ভাই। থাকলে কবেই চেক করে নিতাম।
লেখা – আপনি চেয়ে দেখুন না, দীপ্তি কিছু মনে করবে না।
দীপ্তি – তোমরা সবাই মিলে আমার পেছনে কেন লেগেছ ?
স্বপন – তোমার পেছন টা সব থেকে সুন্দর দেখতে তাই।
দীপ্তি – আমি আপনাদের কার সাথে কথা বলবো না।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – শুধু পেছন টা দেখিয়ো তবেই হবে।
(#০৪)
সৃজা – আমি না তোমাদের এই গল্পটা ঠিক বুঝলাম না
স্বপন – আগের টা বুঝেছিলি ?
সৃজা – হ্যাঁআআআ, সেতো শ্রেপির একদম সমান তাই।
স্বপন – তুই এখনও পুরো বড় হসনি।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – না রে তুই বড় হয়ে গিয়েছিস, এবার তোর বিয়ে দিতে হবে। বিয়ে হলেই পরের গল্পটা বুঝতে পারবি।
স্বপন – এটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন।
সৃজা – আমি রাঙ্গাপির বিয়ের আগে বিয়ে করবোই না।
স্বপন – সৃজা তোমার কোন ছেলে পছন্দের আছে ?
সৃজা – না পিসে সে আর পেলাম কই। আমার পছন্দের মত মানুষ ভগবান এক পিসই বানিয়েছেন, আর সেটা অনেক আগেই দখল হয়ে গেছে।
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – সে আবার কে ?
সৃজা - এই যে আমার স্বপন পিসে। আমার ঠিক এইরকম একটা ছেলে চাই, তবে বিয়ে করবো।
মানসী – আমরা সবাই তোর পছন্দের ছেলে খুজে দেব
সৃজা – তুমি পারবে না।
মানসী – কেন পারবো না !
সৃজা – তুমি নিজের জন্যেই পেলে না, তো আমার জন্যে !
মানসী – আমি তোর জন্যে সব করতে পারি।
স্বপন – সৃজা এভাবে কথা বলে না। রাঙ্গাদিদি তোমার মায়ের মতন, আর মা মেয়ের জন্যে সব পারে। মা কে দুঃখ দেবে না।
সৃজা – না মানে আমি এমনি বলছিলাম।
সৃজা স্বপনের কোল থেকে উঠে গিয়ে মানসীর কোলে বসে আর ওকে জড়িয়ে ধরে রাখে। এমন সময় বড়দা ফিরে আসেন।
বড়দা – কি গল্প হচ্ছে ?
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – সৃজা বিয়ে দেবার কথা হচ্ছে
সৃজা – বাবা আমি রাঙ্গাপির বিয়ের আগে বিয়ে করবো না
বড়দা – সেসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না
সৃজা – কেন চিন্তা করবো না ?
বড়দা – আমিও ঠিক করেছি তোমার এবার বিয়ে দিয়ে দেব
মানসী – হ্যাঁ দাদা ওর একটা ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও।
বড়দা – আমার ছেলে দেখা হয়ে গেছে। আমি আর শ্রদ্ধা গিয়ে দেখে এসেছি।
মানসী – তাই ? কি আনন্দের কথা। জামাইবাবু আমাদের বলেন নি কেন ?
শ্রদ্ধা জামাইবাবু – এই তো বড়দা বলে দিলেন।
এর পড়ে আড্ডা আর সেই ভাবে হয় না। একটু সিরিয়াস হয়ে যায়। বড়দা আবার বলেন যে একটা ছেলে মোটামুটি পছন্দ করেছেন। শ্যামবাজারের কাছে একটা কলেজের ভূগোলের প্রোফেসর, নাম মানব। পরের রবিবার মানবরা সৃজাকে দেখতে আসবে।
সৃজা – পিসে তুমি আসবে কিন্তু। তোমার পছন্দ না হলে ওই মানব হোক বা দানব হোক, আমি বিয়ে করবো না।
বড়দা – হ্যাঁ হ্যাঁ সেতো বটেই। স্বপনকে তো আসতেই হবে।
পরের রবিবার মানব আসে সৃজাকে দেখতে। মানব আর ওর বাবা মা সবারই মেয়ে পছন্দ হয়। স্বপন আসেনি সেদিন। স্বপনের মনে হয়েছিল বড়দা চান না ও থাকুক এর মধ্যে। মেয়ের কথায় আসতে বলেছিলেন। সৃজা একটু কিন্তু কিন্তু করছিল। কিন্তু বড়দার ডিসিসনের ওপর বেশী কথা বলতে পারেনি।
একটা শুভ দিন দেখে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। বিয়েও হয়ে যায়। বিয়েতে স্বপন আর নিহারিকা গিয়েছিল। মানব ছেলেটাও বেশ ভাল ছেলে। বেশ ভদ্র আর অমায়িক ছেলে। ওদের বিয়ের মাস তিনেক পড়ে স্বপন আর নিহারিকা ওদের বাড়ি যায়। সৃজা আর মানব সুখেই সংসার করছে।
(#০৫)
এবার দেখি মানসী আর ভাস্কর কি করছে।
এখন মানসী সপ্তাহে দুদিন ভাস্করের সাথে দেখা করে। সুখ দুঃখের কথা বলে। ভাস্কর অনেক চেষ্টা করে বনহুগলীতে একটা মিষ্টির দোকানে একটা কাজ জোগাড় করেছে। সেই কাজটা ও বেশ অভাবনীয় ভাবেই পেয়েছে। ভাস্করের বাড়ি উল্টোডাঙ্গায়। মানসীর সাথে বেলঘরিয়ায় দেখা করে দমদম চিরিয়ামোড় পর্যন্ত হেঁটে আসতো আর ওখান থেকে বাসে ফিরত। তাতে বাসের একটা মিনিমাম ভাড়ার টিকিট নিলেই হত। একদিন ওর শরীরটা একটু খারাপ ছিল, সকাল থেকে সেরকম কিছু খাওয়াও হয় নি। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বনহুগলীতে একটা মিষ্টির দোকানের সামনের বেঞ্চে বসে পড়ে। একদম ঝিমিয়ে বসে ছিল।
কিছু পড়ে ওই দোকানের মালিক ওকে দেখেন। উনি একটা ছেলেকে বলে ওকে একটু জল দিতে। ভাস্কর জল খেয়ে একটু ধাতস্থ হলে দোকানের মালিক ওকে জিজ্ঞাসা করেন ওর কি হয়েছে। ভাস্কর বুঝতে পারে না ঠিক কি বলবে। উনি বলেন কিছু খেতে কারন ওনার মনে হচ্ছিল ভাস্করের খিদে পেয়েছে। ভাস্কর আর থাকতে না পেড়ে বলেই দেয় যে সকাল থেকে প্রায় কিছুই খায় নি। দোকানের মালিক ভূষণ বাবু একটু দয়ালু মানুষ। উনি জোর করেই ভাস্করকে দুটো মিষ্টি খাওয়ান।
তারপর কথায় কথায় জানতে পারেন ভাস্করের অবস্থা আর এটাও জানতে পারেন যে ভাস্করের বাবা ওনার বন্ধু ছিলেন। তারপর সেই ভূষণ বাবু ওনার দোকানে কাজ দেন। উনি বলেন যে মাইনে বেশী দিতে পারবেন না । ওনার বয়েস হয়েছে সব সময় দোকানে থাকতে পারেন না। ভাস্কর যদি বিশ্বাস আর ভরসার মর্যাদা রাখতে পারে তবে উনি কিছু সময় বিশ্রাম নিতে পারেন। তারপর দিন থেকেই ভাস্কর ওই কালিকা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে কাজ করতে শুরু করে।
শুরুতেই ভাস্কর বলে দেয় যে সোম আর শুক্র বার ওর দুপুরের বিশেষ কাজের কথা। তাই শুধু ওই দুদিন ভূষণ বাবুকে দুপুরে দোকানে বসতে হবে। বাকি দিনগুলো ভাস্কর দেখাশোনা করবে। ভূষণ বাবু জিজ্ঞাসা করেন না ভাস্করের বিশেষ কাজটি কি।
পরদিন দুপুরেই ভাস্কর মানসীর পার্লারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মানসী এসে ওকে দেখে অবাক হয়। কোন কথা না বলে দুজনেই ওদের সেই মাসীর চায়ের দোকানে চলে যায়। ওখানে পৌঁছেই ভাস্কর মানসী জড়িয়ে ধরে প্রায় কোলে তুলে নেয়। মানসী ‘কি হল’, ‘কি হল’ বলে ওকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ভাস্কর থামে না। একটু পড়ে ভাস্কর মানসীকে কোল থেকে নামিয়ে আগের দিনের সব কথা বলে।
মানসী – ভাল খবরের কথা পড়ে শুনছি। আগে বলো তুমি কালকে কিছু না খেয়ে ছিলে সেটা আমার কাছে লুকিয়ে ছিলে কেন ?
ভাস্কর – তোমাকে বলতে চাইছিলাম না
মানসী – কেন শুনি ? আমার কি তোমার ওপর এটুকু অধিকার নেই !
ভাস্কর – না না তা কেন। আমি কতদিন ধরে শুধুই তোমার।
মানসী – তবে বাবুর এতো লজ্জা কিসের !
ভাস্কর – আমি জানি তুমি আমাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসো। আর তাই তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।
মানসী – আমাকে বললে আমার কষ্ট হত না। বরং তোমাকে কিছু খাইয়ে দিতাম।
ভাস্কর – তুমি খাইয়ে দিলে আমার শরীর খারাপ লাগত না, আর ওই দোকানেও বসতাম না। এই কাজ পাওয়াও হত না।
মানসী – সে যাই হোক, আজ বল আমার কাছে এইরকম কিছু আর লুকাবে না।
ভাস্কর – এই তোমার বুকে হাত রেখে বলছি আর কোন দিন কিছু লুকাব না।
মানসী – ঠিক আছে। এবার ওখানে কাজ মন দিয়ে করবে। কোন পাগলামো করবে না।
চায়ের দোকানের মাসী এই কয়দিন দুজনকে দেখছেন। উনি শুনে শুনে ওদের দুজনের সব কথাই জেনে গিয়েছেন। কখন যেন উনিও এই যৌবন পেড়িয়ে আসা প্রেমিক প্রেমিকাকে ভালবেসে ফেলেছেন।
মাসী – আজ আমি তোমাদের খাওয়াবো।
মানসী – কেন মাসী ?
মাসী – আমি তোমাদের এতদিন ধরে দেখছি। তোমাদের দেখে ভাবি আমাদের সমাজ কি ভাবে ভাল ভাল ছেলে মেয়েদের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে। আর আমি জীবন দিয়ে ছেলেকে মানুষ করলাম। সে এখন আমাদের ছেড়ে দিল্লিতে গিয়ে কাজ করে। আমাকে দেখা তো দুরের কথা, আমাকে নিয়ে ভাবেও না।
ভাস্কর – মাসী আপনার বাড়িতে আর কে আছে ?
মাসী – যতদিন তোমাদের মেসোমশায় বেঁচে ছিলেন, ওনার পেনসনে আমাদের চলে যেত। উনি চলে যাবার পড়ে পাড়ার ছেলেরা আমাকে এই চায়ের দোকান করে দিয়েছে। তাই বেঁচে আছি।
মাসী ওদের দুজনকে ডিমের অমলেট আর চা করে খাওয়ান। সেদিন অনেক বলাতেও কোন দাম নেন না। মানসী আর ভাস্কর একটু গল্প করে যে যার জায়গায় ফিরে যায়। আমাদের সমাজে এখনও ভূষণ বাবু আর মাসীর মত মানুষেরা আছেন বলেই এখনও আমরা বেঁচে আছি। না হলে বড়দা আর মাসীর ছেলের মত লোকেদের জন্যে আমরাও ডাইনোসরের মত বিলুপ্ত প্রজাতি হয়ে যেতাম। “অভাগা যেদিকে যায়, সমুদ্র শুকায়ে যায়” প্রবাদ বাক্যটা আসলে সত্যি নয়।
(#০৬)
মানসী মানসিক ভাবে আগের থেকে অনেক ভাল আছে। ওর মনে হয় যেন ওর জীবন ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু ভেবে পায় না বড়দাকে ভাস্করের সাথে বিয়েতে কি ভাবে রাজী করাবে। একটা নতুন চিন্তা এসেছে ওর মাথায় কি ভাবে ভাস্করের ক্যাটারিং – এর ব্যবসা শুরু করানো যায়। প্রতি সোমবার আর শুক্রবার দুজনে দেখা হয়। কথা বলে, ভবিষ্যতের চিন্তা করে। কিন্তু শুধু কথাই হয় কোন সমাধান আর খুঁজে পায় না।
এক শুক্রবারে মানসী ফিডার রোড যাবার একটু পরেই দীপ্তি পার্লারে আসে। ওর সেদিন পার্লারে আসার কথা ছিল না। সাধারণত দীপ্তি দুপুর বেলা একটু ঘুমায়, সেদিন ঘুম আসছিল না আর তাই ভাবে একটু রাঙ্গাদির সাথে গল্প করবে। পার্লারে এসে দেখে রাঙ্গাদি নেই। পার্লারের মেয়েরা বলে যে মানসী কোথাও গিয়েছে।
দীপ্তি – বাড়ি থেকে বলে আসে পার্লার যাচ্ছি, কিন্তু এখানে আসেনি। কোথায় গেল ?
বর্ণিকা – মানসী দিদি প্রতি সোমবার আর শুক্রবার দেরি করেই আসেন
দীপ্তি – কখন আসেন ?
বর্ণিকা – চারটের পরে
দীপ্তি – ঠিক আছে
বর্ণিকা – কোন সমস্যা আছে ?
দীপ্তি – না না ঠিক আছে।
দীপ্তি মুখে ঠিক আছে বললেও মনে ভাবে ওর রাঙ্গাদির হলটা কি! রোজ দুটোর সময় বাড়ি থেকে বেরোয় কিন্তু সপ্তাহে দুদিন পার্লারে দেরি করে আসে। ও কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ফিরে যায়। রাত্রে মানসী ফিরলেও কিছু বলে না।
পরের রবিবার সকালে স্বপন আর নিহারিকা ওদের বাড়ি আসে। স্বপন দুই বা তিন মাসে একবার জেঠিমা, মানে মানসীর মায়ের সাথে দেখা করতে আসে, আর দুপুরে মানসী পার্লারে যায় তাই সকালেই আসে। আর সেই সাথে মানসীর সাথেও দেখা হয়ে যায়। সেদিন জেঠিমার সাথে দেখা করে মানসীর ঘরে যায়। দীপ্তিও সেখানে বসে ছিল।
দীপ্তি – কি স্বপন দা আপনি তো শুধু মা আর রাঙ্গাদির সাথেই দেখা করেন। আমরাও যে আছি সেটা মনে রাখুন।
স্বপন – তোমার সাথে দিনের বেলায় দেখা করে তো কোন লাভ নেই আর রাত্রে আসা হয় না
দীপ্তি – ইচ্ছা থাকলে সবই হয়
স্বপন – সকালবেলাতেই তোমাদের নেহাকে চুদেছি, এখন আর তোমার সাথে করতে পারবো না
দীপ্তি – আমাকে দেখলে কি আপনার একটা কাজের কথাই মনে পরে ?
স্বপন – তা নয়, কিন্তু তোমাকে দেখলেই ইচ্ছা করে
মানসী – তোমাদের দুজনের কি আর কোন কথা নেই !
স্বপন – যার সাথে যেটা ভাল লাগে
দীপ্তি – স্বপন দা আপনার নাকের ফুটোয় চুল বেরিয়ে আছে
স্বপন – আমার নাকের ফুটো খোলা তাই দেখতে পারছ, তোমাদের ফুটো ঢাকা, কত চুল আছে কে জানে
দীপ্তি – আমারটায় চুল নেই, কেটে ফেলেছি।
স্বপন – কে কেটে দিল ?
দীপ্তি – পার্লারের অলকাকে ম্যানেজ করেছি
মানসী – তুই পার্লারে এই সব করেছিস ?
দীপ্তি – অলকা বেশ ভাল কামিয়ে দেয়, একা একা অতো ভাল করা যায় না।
মানসী – দেখ পার্লার আমার লক্ষ্মীর জায়গা, পুজার জায়গা। আর কোনদিন অইসব করতে পার্লারে যাবি না।
স্বপন – তা ঠিক দীপ্তি। তুমি অলকাকে বাড়িতে ডেকে তোমার গুদ সাজিও। পার্লারে গিয়ে করবে না।
এরপর মানসী একটু বাইরে গেলে দীপ্তি ওকে জিজ্ঞাসা করে মানসীর দুপুরের অনুপস্থিতি নিয়ে। স্বপন সবই জানত। কারন একদিন ভাস্কর ওকে গিয়ে সব কিছুই বলে এসেছিল। তবু স্বপন দীপ্তিকে সেসব কিছু বলে না।
স্বপন – আমি জানিনা গো
দীপ্তি – রাঙ্গাদি তোমাকে না বলে তো কিছু করবে না
স্বপন – এবার অনেকদিন পরে এলাম। আর রাঙ্গাদির ঘরে তুমি বসেছিলা। আমার সাথে একা একা কথা আর হল কোথায় ?
দীপ্তি – সেটাও ঠিক
স্বপন – তুমি এক কাজ কর, সোমবার রাঙ্গাদির পেছন পেছন যাও আর দেখো কোথায় যায়।
দীপ্তি – এটা বেশ ভাল বুদ্ধি দিয়েছ। কিন্তু তার পর তোমাকে জানাব কি ভাবে ?
স্বপন – কোন একটা বাহানা করে আমাদের বাড়ি এসো। তোমার কাছে শুনেও নেব আর তোমার সাথে আর একবার নুঙ্কু নুঙ্কু খেলাও হবে।
দীপ্তি – নেহা থাকবে তো
স্বপন – ও থাকবে তো কি হয়েছে ! ওকেও সাথে নিয়ে নেব।
দীপ্তি – যাঃ তুমিও ভীষণ বাজে ছেলে।
স্বপন – সে যাই হোক, তুমি কবে আসবে ?
দীপ্তি – আমি সোমবার রাঙ্গাদিকে দেখি। তারপর কোন জায়গা থেকে তোমাকে অফিসে ফোন করে দেব।
স্বপন – একটা কথা মনে রেখ
দীপ্তি – কি ?
স্বপন – নুঙ্কু খেলার থেকে রাঙ্গাদির সমস্যার হাল খুঁজে বের করা আমাদের বড় কাজ।
দীপ্তি – আমার কাছেও তাই।
(#০৭)
নিহারিকা আর মানসী একসাথে ফিরে আসে।
দীপ্তি – এবার আমি যাই
নিহারিকা – আমার বরের সাথে প্রেম করা হয়ে গেল ?
দীপ্তি – তোমার বরের সাথে দিনের বেলা বেশী মজা আসে না
নিহারিকা – আরেক দিন করবে নাকি ?
দীপ্তি – যাঃ তোমরা দুজনেই বহুত বাজে
দীপ্তি পালিয়ে যায়। মানসী স্বপনকে ভাস্করের সাথে যা যা হয়েছে সব জানায়।
স্বপন – অনেক কাকতালীয় ভাবে সব হয়ে গেল
মানসী – তা ঠিক
নিহারিকা – এগুলো সে হিসাবে কাকতালীয়ও নয়
মানসী – কেন ?
নিহারিকা – এগুলো ভগবানের নিজের প্ল্যান, আমাদের দিয়ে করিয়ে নেয়। রামপ্রসাদের গান আছে না ‘তোমার কর্ম তুমি কর মা, লোকে ভাবে করি আমি’। সব ওই ওপরওয়ালার ইচ্ছা।
মানসী – তুইও অনেক কিছু শিখে গেছিস !
নিহারিকা – তোর বন্ধুর সাথে এতদিন আছি আর কিছুই শিখবো না !
মানসী – আমি সত্যি খুব ভাগ্যবান যে তোর মত বোন পেয়েছি
নিহারিকা – আর তোর বন্ধু ?
মানসী – তোর কাছ থেকেই তো আমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধুকে পেয়েছি।
নিহারিকা – এবার ভাস্করের দিকে বেশী মন দে
মানসী – আমার মন ওর দিকেও আছে। কিন্তু আমি জানি ভাস্করও আমাকে স্বপনের থেকে বেশী ভালবাসতে পারবে না।
স্বপন – কিন্তু তুমি ওকেই বেশী ভালবাসবে
নিহারিকা – স্বপন যতই তোর বন্ধু হোক না কেন, এখন থেকে তোর প্রতিমুহূর্তে ভাস্কর তোর সাথে থাকবে। তাই অকেই বেশী ভালবাসবি। ভাস্করের আর কেউ নেই। ও তোকে ছাড়া কিছু জানে না।
মানসী – তোকে বলেছে ?
নিহারিকা – যেদিন ভাস্কর স্বপনকে সব বলতে গিয়েছিল সেদিন আমার সাথেও অনেক কথা হয়েছিল।
মানসী – আমিও ভাস্করকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারি না।
এরপর স্বপন আর নিহারিকা সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করে। মানসীদের বাড়িতে রবিবারের ব্রেকফাস্ট বেশ অন্যরকমের। গোটা গোটা সবজি দিয়ে বানানো খিচুড়ি। স্বপনের রবিবার সকালে ওদের বাড়ি যাবার আরেকটা কারন হল ওই খিচুড়ি খাওয়া।