কাজল নদী_Written By Tumi_je_amar [পঞ্চম পরিচ্ছদ – মরুভুমি আর মরীচিকা (চ্যাপ্টার ২৫ - চ্যাপ্টার ৩১)]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2015/10/written-by-tumijeamar_65.html

🕰️ Posted on October 31, 2015 by ✍️ Tumi_je_amar

📖 4382 words / 20 min read


Parent
কাজল নদী Written By Tumi_je_amar পঞ্চম পরিচ্ছদ – মরুভুমি আর মরীচিকা (#২৫) ভাস্করের পড়ানো হয়ে গেলে স্বপন ওকে জিজ্ঞাসা করে ও এক ঘণ্টা সময় দিতে পারবে কি না।  ভাস্কর – হ্যাঁ আজ আমার কোন জায়গায় যাবার নেই, কি করতে হবে বলুন। স্বপন – সেইরকম কিছু নয়, এখন আমাকে আর তোমার বৌদিকে মেয়ের জন্য একটু এক ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। রাঙ্গাদি একা ছেলেটাকে নিয়ে বাড়ীতে থাকবে। নিহারিকা – তাই আমরা ভাবছিলাম তুমি যদি একটু এখানে বসতে পারো ভাস্কর – হ্যাঁ হ্যাঁ আমার রাঙ্গাদির সাথে বসে গল্প করতে কোন আপত্তি নেই মানসী – রাঙ্গাদি বললে আমি কথা বলব না নিহারিকা – সেটা তোরা ঠিক কর কি ভাবে কথা বলবি। স্বপন নিহারিকা আর মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। ভাস্কর আর মানসী দুজনে চুপ চাপ বসে থাকে। তারপর দুজনেই একসাথে কিছু বলতে যায়। আবার দুজনেই থেমে যায়। ভাস্কর – মেয়েদের অধিকার আগে, তাই আপনি বলুন কি বলছিলেন মানসী – না আপনি বলুন ভাস্কর – আমার সাথে বসে থাকা মনে হয় আপনার পছন্দ নয় মানসী – কেউ আমাকে ‘আপনি’ করে কথা বলছে আমি সেটায় অভ্যস্থ নই ভাস্কর – তবে কি করা উচিত ? মানসী – আমাকে নাম ধরে তুমি করে কথা বলুন ভাস্কর – না মানসী তুমিও যদি আমাকে ‘তুমি’ করে কথা বল তবেই রাজী আছি। মানসী – আমারও ‘আপনি’ করে কথা বলতে ভালো লাগে না ভাস্কর – তুমি এতো ভালো মেয়ে কিন্তু বিয়ে করো নি কেন ? মানসী – ভালো মেয়ের সংজ্ঞা কি ভাস্কর ? ভাস্কর – এই একটা জিনিসের কোন সংজ্ঞা নেই। এটা সবাই নিজের মনে ঠিক করে। মানসী – ঠিক বুঝলাম না ভাস্কর – একটা চোরের কাছে যে ভালো চুরি করতে পারে বা যে পুলিশ ওকে ধরে ছেড়ে দেয়, তারা ভালো মানুষ। মানসী – তার মানে তুমি বলতে চাইছ আমি চোর ভাস্কর – আমাকে পুরো বলতে দাও। একজন সাধারণ লোকের কাছে যে পুরোহিত পুজো দেবার জন্য ওকে সময় দেয় তিনি ভালো পুরোহিত। একজন ভিখারির কাছে যে অনেক ভিক্ষা দেয় সে ভালো লোক।  মানসী – বুঝলাম, কিন্তু আমাকে এর মধ্যে কোনটা মনে হল ? ভাস্কর – এর মধ্যে কোনটাই নয়। আমরা একটা মেয়ের মধ্যে যে ব্যবহার, যে শালীনতা আশা করি, তুমি তাই। সেই জন্যেই তুমি ভালো মেয়ে। মানসী – তবে আমরা বন্ধু হতে পারি ? ভাস্কর – তুমি তো জানলে না আমি ভালো ছেলে কিনা ? মানসী – আমি আর ভালো ছেলে খুঁজি না। তথাকথিত ভালো ছেলে দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে গেছি। ভাস্কর – তবে কি আমাকে খারাপ ছেলে মনে হচ্ছে। মানসী – আমি চিন্তাই করছি না তুমি ভালো না খারাপ। আমার ভালো লেগেছে তাই বলছি বন্ধু হবে কি না ? ভাস্কর – তোমার আমাকে ভালো লেগেছে ? ঘরের দরজা খোলাই ছিল। পাশের বাড়ির বৌদি ঢুকে জিজ্ঞাসা করেন নিহারিকা কোথায়। আর বসে পড়েন ওদের সাথে গল্প করতে। (#২৬) সেই বৌদি কিছুক্ষন উলটো পাল্টা কথা বলে আর পরে আসবে বলে চলে যায়। মানসী আর ভাস্কর আবার চুপ চাপ বসে থাকে। ওদের মধ্যে যে গল্প বাধা পরে গেছে সেটা আর শুরু হয় না। তারপর স্বপন আর নিহারিকা ফিরে আসে। স্বপন ভাস্করকে অনেক ধন্যবাদ দেয় ওর সময় দেবার জন্যে। একটু পরে স্বপন অফিস চলে যায়। নিহারিকা দেখে ওদের দুজনের জন্য যে ধোকলা রেখে গিয়েছিলো সেগুলো পড়েই আছে।  সারাদিন মানসী আর নিহারিকা বাড়িতেই থাকে। বিকাল চারটে নাগাদ ওরা দুজনে চা খাচ্ছিল তখন কলিং বেল বাজে। নিহারিকা দরজা খুলে দেখে ভাস্কর দাঁড়িয়ে। নিহারিকা – কি ব্যাপার হটাত ! ভাস্কর – বৌদি একটু আপনার সাথে কথা বলব নিহারিকা – এসো এসো ভেতর এসে বস আগে। ভাস্কর ভেতরে এসে বসলে দু মিনিটের মধ্যে নিহারিকা চা করে এনে দেয়।  নিহারিকা – বল ভাই কি খবর  ভাস্কর – সকালে মানসীর সাথে কথা বলছিলাম তখন পাশের বাড়ির এক বৌদি এসে যাওয়ায় সে কথা আর বলা হয়নি। নিহারিকা – সে কথা গুলো কালকে বললেই বা কি হত ! ভাস্কর – না বৌদি আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। মানসী – আমি গিয়ে টিভি দেখি ভাস্কর – না না তোমার সামনে বলতে কোন অসুবিধা নেই। মানসী – তাও একটু টিভি দেখি। মানসী ভেতরে চলে যায়। ভাস্কর – বৌদি আমার মানসীকে খুব ভালো লাগছে নিহারিকা – ভালো কথা ভাস্কর – কিন্তু আগে এগোতে সাহস পাচ্ছি না নিহারিকা – কেন সাহস পাচ্ছো না ? ভাস্কর – আমার কোন স্থায়ী ইনকাম নেই, বিয়ে তো দুরের কথা, বিয়ের কথা ভাবতেও ভয় লাগে। নিহারিকা – এতে আমি কি করতে পারি বল ভাস্কর – না মানে আমি একটু কিছু করতে পারলেই মানসীকে বিয়ে করতে চাই নিহারিকা – হটাত তোমার এই ইচ্ছা হল কেন ? আর কেনই বা আমার রাঙ্গাদিকে পছন্দ হল ? ভাস্কর – দেখুন বৌদি আমার কোন আয় নেই বলে কোন মেয়েই আমার সাথে কথা বলে না। আলাপ হতেই যখন জানতে পারে আমি বেকার, চলে যায়। আমিও আর কথা বলতে সাহস পাই না। একমাত্র মানসীই আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে।  নিহারিকা – দেখো তুমি আর রাঙ্গাদি একটু বাইরে ঘুরে আসো। কথা বল, তারপর দেখি কি করা যায়।  ভাস্কর – মানসীকে আমার সাথে বাইরে যেতে দেবেন ? নিহারিকা - রাঙ্গাদি কি বাচ্চা মেয়ে নাকি যে কোথাও যেতে কারো অনুমতি লাগবে ? ভাস্কর – মানসী কি যাবে আমার সাথে ? নিহারিকা ডাকে ওর রাঙ্গাদি কে আর বলে ভাস্কর ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায়।  মানসী – এখানে বসেই তো কথা বলতে পারে। আমিতো বুঝতে পাড়ছি কি বলতে চায় ভাস্কর – বুঝতে পাড়ছ ? মানসী – এখনও কি কচি খুকি আছি যে একটা ছেলে আমার সাথে কথা বলতে চায় তার কারন বুঝতে পারবো না !  নিহারিকা – সেই কথাগুলো চার দেওয়ালের মধ্যে না হয়ে খোলা আকাশের নিচে হলে বেশী ভালো লাগবে মানসী – কোথায় যাব ? এখানে যাবার জায়গা কোথায় ? নিহারিকা – কোন জায়গা নেই বলেই তো যেতে বলছি। রুবি হসপিটালের পাশ দিয়ে চলে যা অনেক বড় ফাঁকা মাঠ আসবে। তার চার পাশে অনেক ছোটো ছোটো জলা জমি আছে। তাতে অনেক পাখি আসে। ভালো লাগবে।  (ওই মাঠে এখন URBANA হাউসিং, কোলকাতার সব থেকে দামী ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে। চার পাশের জলা জায়গা বিভিন্ন দালালরা বাড়ি বানাবার জন্যে বেআইনি ভাবে মাটি ফেলে বন্ধ করে দিয়েছে। সেই পাখি গুলো কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে) (#২৭) নিহারিকা আর ভাস্কর ঘুরতে যায়। ভাস্কর – আমার তোমাকে খুব ভালো লেগেছে মানসী – আমার মতো কালো কুৎসিত মেয়েকে ভালো কি করে লাগলো ! ভাস্কর – আমি আগেই বলেছি আমি গায়ের রঙ দেখি না মানসী – তাও ভাস্কর – তোমার কি আমাকে একটুও ভালো লাগে ? মানসী – ভালো না লাগলে তোমার ডাকে সাড়া দেই ! ভাস্কর – আমি যদি তোমার সাথে হাত ধরে হাঁটতে চাই তবে কি তুমি রাগ করবে ? মানসী – তুমি যদি আমার হাত না ধর তাতে রাগ করবো দুজনে হাত ধরে এগিয়ে যায় মাঠের দিকে। তখন ওই রাস্তায় লোক খুব কম চলা ফেরা করত। মানসী খেয়াল করে যে দু এক জন যাচ্ছে তারা সবাই ওদেরকে তাকিয়ে দেখছে। মানসী অবাক হয়ে যায়। কারন এতদিন ও একা একা কত জায়গায় যায়। কেউ কোনদিন এক মুহূর্তের জন্যেও ওর দিকে তাকায় না। কিন্তু সেদিন ওর মনে হল সবাই ওকে দেখার জন্যেই রাস্তায় বেড়িয়েছে।  ভাস্কর – কি হল, চুপ করে কেন ? মানসী ওকে বলে ও এতক্ষন কি খেয়াল করছিলো। ভাস্কর – সেটা আমিও খেয়াল করছি। এতদিন আমাকে কোন মেয়ে তাকিয়ে দেখে নি। আজ অনেকেই দেখছে। মানসী – আসলে এই পৃথিবীতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একসাথে থাকাটাই নিয়ম। তাই সবাই দেখছে ভাস্কর – ভগবান ছেলে মেয়ে বানিয়েছেন সেই কথা মাথায় রেখে। আমরা এতদিন একা একা রাস্তা চলে অপরাধ করেছি। মানসী – কিন্তু সেই অপরাধ আমাদের ইচ্ছাকৃত নয় ভাস্কর – আমি যদি আমার লক্ষ্য খুঁজে না বেড় করতে পারি সেটা আমার অক্ষমতা। মানসী – আমার মনে একটা কথা এসেছে সেটা বলি ? ভাস্কর – অনুমতি কেন চাইছ ? মানসী – তোমার হয়তো ভালো নাও লাগতে পারে ভাস্কর – আরে মনে এসেছে যখন বলেই ফেলো মানসী – আমরা দুজনেই অবহেলিত। আমাকে ছেলেরা দেখে না আমি কালো বলে। সেই কলেজ জীবন থেকে দেখে আসছি। আর তোমাকে দেখে না তুমি বেকার বলে। তাই আমরা দুজনে এতো কাছাকাছি আসতে পেড়েছি।  ভাস্কর – এতে ভালো না লাগার বা রাগ করার কিছু নেই। এটা পুরো সত্যি কথা।  মানসী – সেই ছোটবেলায় একটা গল্পে পড়েছিলাম এক অন্ধ আর এক খোঁড়া এক সাথে কি ভাবে বেঁচে উঠেছিল।  ভাস্কর – সমাজের চোখে আমি অন্ধ আর তুমি খোঁড়া। তাই আমরা একসাথে পথ চললে সবাই অবাক হয়ে দেখছে।  মানসী – কিন্তু আসলে তো আমরা অন্ধ বা খোঁড়া নই। ভাস্কর – সে তো আমি বললাম সমাজের চোখে। আমাদের নিজেদের কাছে আমরা স্বাভাবিক মানুষ। মানসী – তা ঠিক। সমাজ আমাকে কালো বলে অবহেলা করে গেল। কালো বলে আর সবার সাথে পথ চলতে পারলাম না, তাই আমি খোঁড়া। ভাস্কর – আর আমি কর্মজীবনের রাজনীতির লড়াইয়ে হেরে গেলাম। আমি পৃথিবীটাকে অনেক সরল ভেবেছিলাম। আশেপাশের সহকর্মী আর সংসারের কুটিলতা দেখতে পেলাম না। তাই আমি অন্ধ। মানসী – আজকের পরে আমরা দেখিয়ে দেব এই অন্ধ আর খোঁড়া একসাথে কি কি করতে পারে।  সেদিন ওরা কিছু পড়েই বাড়ি ফিরে যায়। ভাস্কর মানসীকে পৌঁছাতে গেলে নিহারিকা ওকে ধোকলা খাইয়ে বাড়ি পাঠায়। রাত্রে মানসী স্বপনকে সব কথা বলে। স্বপন খুব খুশী হয়। স্বপন – এতো দিনে আমার রাঙ্গাদি বড় হল মানসী – বড় হয়েছি কিনা জানিনা শুধু আমার মনে হচ্ছে একটা রাস্তা খুঁজে পেয়েছি। স্বপন – তুমি যে অন্ধ আর খোঁড়ার গল্প বললে, সেটাকে ম্যানেজমেন্টের ভাষায় “পরিপূরক পারদর্শিতা” বা “Complementary Skill” বলে। একটা টীমে বিভিন্ন কাজে পারদর্শী সদস্য রাখা হয়। মানসী – হ্যাঁ, একটা ফুটবল দলে সবাই ফরোয়ার্ড বা সবাই গোলকিপার নয়। স্বপন – কিন্তু আমরা বিয়ে করার সময় সেটা খেয়াল রাখি না। ডাক্তার সব সময় ডাক্তারকেই বিয়ে করতে চায়। বেশীর ভাগ ছেলে মেয়েই একই রকমের সাথী খোঁজে। আসলে স্বামী আর স্ত্রী যদি বিভিন্ন পেশার হয় সেটা বেশী ভালো হয়। মানসী – ওইসব ছাড়ো। এখন বল আমি কি করব। স্বপন – তুমি গিয়ে ভাস্করকে হামি খাও। মানসী – যাঃ ইয়ার্কি করো না  স্বপন – তুমি যা ভালো মনে হয় তাই করো। আমি সব সময়েই তোমার সাথে আছি। মানসী – বড়দাকে কি বলব ? স্বপন – যা সত্যি তাই বলবে। মানসী – বড়দাকে আমি বলতে পারবো না স্বপন – সে আমি কথা শুরু করে দেব। আগে তোমাকে সব বলতে হবে। মানসী – আচ্ছা। ওই সপ্তাহের বাকি দিনগুলো রোজ দুজনে একসাথে বেড়াতে বেড় হয়। ওরা কিশোর কিশোরীর মতো প্রেম করে। ওদের মধ্যে যা কথা হয় সেগুলো লিখলে ওদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা হবে। তাই সেসব আর লিখছি না। স্বপন একদিন গিয়ে বড়দার সাথে দেখা করে সব জানায়। বড়দা বলেন উনি শনিবার বিকালে এসে ভাস্করের সাথে কথা বলবেন।  মানসী আর ভাস্করের প্রেম হয়তো চিরাচরিত প্রেমের ভাষায় প্রেম নয়। বন্যার জলে ভেসে যাওয়া দুই অসহায় প্রাণী যেমন একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করে, সেইরকমই ওরা দুজনেও জীবন স্রোতে ভেসে যেতে যেতে একে অন্যের আশ্রয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছিল। ওদের কাছে তথাকথিত প্রেমের পরিভাষার কোন মুল্য ছিল না। তবুও এটা প্রেম। ওদের একে অন্যকে না দেখতে পেলে মন কাঁদত না। কিন্তু তাও যখন সামনা সামনি আসতো ওদের মনে খুশীর হাওয়া বয়ে যেত। মান্না দের সেই গানটা এই রকম ছেলে মেয়েদের জন্যেই লেখা হয়েছিল। আমার না যদি থাকে সুখ তোমার আছে তুমি তা দেবে তোমার গন্ধ হারা ফুল আমার কাছে সুরভি নেবে এরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম জীবনে যা গৌরবো হয় মনের নেই পরাজয় চোখের স্মৃতির মনিদীপ মনের আলোয় কভু কি নিভে এরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম দুজনেই দুজনাতে মুগ্ধ দুজনের বুকে কত সুন্দর দুজনের গীতালির ছন্দে তন্ময় দুজনের অন্তর এর কাছে স্বর্গ সুধার বেশী আছে মুল্য কি আর আমার দেবতা সেও তাই প্রেমের কাঙ্গাল পেয়েছি ভেবে এরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম (#২৮) শনিবার বড়দা যথাসময়ে স্বপনের বাড়ি আসেন। এসেই উনি ভাস্করের সম্পরকে সব খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন।  স্বপন – দেখুন বড়দা আমি ভাস্করকে চিনি। ওর বাড়ি নিয়ে প্রায় কিছুই জানি না। বড়দা – তবে তুমি ওদের বিয়ে দিতে কেন চাইছ ? স্বপন – ওর বাড়িতে সুধু ওর মা আছেন। ওর বাবা বেশ কিছু বছর আগে মারা গিয়েছেন। সেই সময় ভাস্করকে দুবাই ছেড়ে ফিরে আসতে হয়। বড়দা – ভাস্কর দুবাইয়ে কি করত ? মানসী – ও একটা গাড়ির ডিলার আলামুল্লাহ কোম্পানিতে আকাউন্টেসে কাজ করত। বড়দা – তোমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিনি। তোমাকে যখন জিজ্ঞাসা করবো তখন উত্তর দেবে। স্বপন – বড়দা বিয়েটা মানসীর বড়দা – তাতে কি হয়েছে ? আমি আর তুমি ত সেই কথাই বলছি। ও শুধু চুপচাপ শুনে যাক।  স্বপন – ভাস্কর দুবাইয়ে যা চাকুরি করত তাতে খুব বেশি টাকা পয়সা জমাতে পারেনি। ফলে দেশে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই সব টাকা ফুড়িয়ে যায় । বড়দা – এখন ওদের চলে কি ভাবে ? স্বপন – অদের বাড়িটা ওর বাবার বানানো। দুটো ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। সেই ভাড়ার পয়সা আর যখন যা কাজ পায় তাই করে। বড়দা – তবে বিয়ে করে বউ কে কি খাওয়াবে ? স্বপন – সে মানসীরও কিছু ইনকাম আছে। বড়দা – বৌয়ের পয়সায় সংসার চালাবে ? স্বপন – ক্ষতিটাই বা কি তাতে ? বড়দা – এটা আমার কাছে ভাল লাগছে না স্বপন – বড়দা আপনি বিয়ে করছেন না। রাঙ্গাদির বিয়ের কথা হচ্ছে। তাই আপনার ভাল লাগা বা না লাগার থেকে রাঙ্গাদির ভাল লাগার গুরুত্ব অনেক বেশি।  বড়দা – শুধু ভাল লাগা দিয়ে বিয়ে হয় না।  স্বপন – আর কি চাই ? বড়দা – তুমি মাঝে মাঝে ছেলে মানুসের মত কথা বল। একটা ছেলের বংশের কথা কিছু জানি না। ওর কোন ইনকাম নেই আর ওর সাথে বোনের বিয়ে দেব ! স্বপন – আপনাদের কি বংশ মহিমা আছে ? বড়দা – কি বলতে চাইছ তুমি ? স্বপন – বড়দা রাগ করবেন না। আপনি একটা সরকারি কেরানী। আপনার বাবার কাগজের ব্যবসা ছিল। তার আগে আপনার পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশে চাষবাস করে দিন কাটাতেন। এর মধ্যে বিশাল কিছু মহান ঘটনা নেই। আর আমার মনে হয় ভাস্করের বংশ এর থেকে খুব বেশি আলাদা হবে না। বড়দা – কিন্তু ছেলেটা বেকার। স্বপন – আপনার যখন বিয়ে হয় তখন আপনারা সবাই মিলে দুটো ঘরে ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আপনি ১৮৫ টাকা মাইনে পেতেন। তাও সুলগ্না বৌদির বাবা আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। বড়দা – সে উনি জ্ঞানী মানুষ, আমাকে দেখে বুঝেছিলেন আমার কি ক্ষমতা। স্বপন – আপনাদের বাড়ি সুলগ্না বৌদির বাবার বানানো। কিন্তু ভাস্করের বাড়ি ওর বাবার বানানো। বড়দা – তাতে কি হল ? স্বপন – তাতে এই হল যে ভাস্করের সাথে রাঙ্গাদির বিয়ে দেওয়া যায়। বড়দা – আমার মত নেই। স্বপন – শ্রেয়সীর যার সাথে বিয়ে দিয়েছেন তার থেকে ভাস্কর অনেক ভাল ছেলে। বড়দা – ঠিক আছে, ভাস্কর আসুক ওর সাথে কথা বলে দেখি। স্বপন – বড়দা আমি দুঃখিত, অনেক আজে বাজে কথা খারাপ ভাবে বলেছি আপনাকে। আমার আপনাদের ছোট করার কোন উদ্দেশ্য নেই। বড়দা – স্বপন আমি তোমার কথায় রাগ করি না। তুমি যা বলেছ সেসব ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমার মাথা সেটা মেনে নিলেও মন মানছে না। মানসী – কিন্তু দাদা আমি চাই ভাস্করকে বিয়ে করতে। বড়দা – তুমি কি বোঝ ? তুমি ভাবছ যে তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। কিন্তু যতই বড় হও না কেন আমার থেকে বড় হতে পারবে না। (#২৯) নিহারিকা চা জলখাবার দেয়। বড়দা খুশী মনে সেসব খেতে থাকেন। এর মধ্যেই ভাস্কর চলে আসে। স্বপন ভাস্কর আর বড়দার আলাপ করিয়ে দেয়।  বড়দা – ভাস্কর তুমি আমার বোন কে বিয়ে করতে চাও ? ভাস্কর – হ্যাঁ দাদা বড়দা – কেন চাও ? ভাস্কর – ভাল লেগেছে তাই বড়দা – তোমার তো কোন নিশ্চিত আয় নেই। কি ভাবে খাওয়াবে ? ভাস্কর – সে আমরা দুজনে সব করে নিতে পারবো বড়দা – তোমরা দুজনে ? তুমি একা পারবে না ? ভাস্কর – এই মুহূর্তে একা সামলানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু আমি বলছি আর দু বছরের মধ্যে আমি ঠিক সেই ক্ষমতা অর্জন করবো। বড়দা – এত দিন কেন পারনি ভাস্কর – এতদিন জীবনের কোন লক্ষ্যই ছিল না। আর সামনে কোন লক্ষ্য না থাকলে কেউ দৌড়ায় না। বড়দা – তুমি বলছ যে সব ছেলেই বিয়ের পড়ে দৌড়ানো শুরু করে ! ভাস্কর – না না সবাই তা নয়। কিন্তু আমি পারিনি সেটা আমার অক্ষমতা বড়দা – এইসব কথা তুমি বলেছ মানসীকে ? ভাস্কর – এর থেকে অনেক বেশি বলেছি। আমি কিছুই লুকাইনি মানসীর কাছে। আসলে আমি বিয়ে করতেও চাইনি। মানসী ভরসা দেওয়াতেই বিয়ে করতে চাই।  বড়দা এবার মানসীকে আলাদা ডেকে নিয়ে গেলেন।  বড়দা – তুই কি হিসাবে এই ছেলেটাকে বিয়ে করার জন্য পছন্দ করলি ? মানসী – আমার ভাস্করকে খারাপ লাগেনি বড়দা – খারাপ লাগেনি বুঝলাম, কিন্তু ভাল কেন লাগল ? মানসী – দাদা এটা ভাল বা খারাপ লাগার জন্যে নয়। এটা বেঁচে থাকার জন্যে। বড়দা – আমরা কি তোমাকে খুব কষ্টে রেখেছি ! তুমি কি আমাদের সাথে বেঁচে থাকবে না ? মানসী – দাদা এই ভাবে তোমাদের বোঝা হয়ে কতদিন থাকবো ? বড়দা – আমরা কেউ কি তোমাকে বোঝা বলেছি ? মানসী – তোমরা কেউ আমাকে বোঝা বলবে না। আমি তোমাদের সাথে খুব ভালই আছি। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন ? বড়দা – কিন্তু তাই বলে আমি তোমাকে যার তার সাথে বিয়ে দিতে পারি না। মানসী – বড়দা, ভাস্করকে আমি চিনেছি। ওর সাথে খারাপ থাকবো না। বড়দা – আমি যদি বিয়ে দিতে রাজি না হই ? মানসী – তোমার অমতে বিয়ে করবো না। বড়দা ফিরে এসে স্বপন কে বললেন যে উনি এই বিয়েতে রাজি নন। স্বপন – কেন বড়দা ? বড়দা – দেখো এতদিন আমি জানতাম যে তুমি মানসীর খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি তুমি এই রকম সম্বন্ধ নিয়ে আসবে আমার বোনের জন্য।  ভাস্কর – দাদা আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই বড়দা – রাখ তোমার উদ্দেশ্য। একটা সাদা সিধে মেয়ে দেখে তোমার মনে হয়েছে পটিয়ে নিতে পারবে। তুমি জান যে তোমার মত অকর্মণ্য আর অপদার্থ ছেলেকে কোন মেয়েই পছন্দ করবে না। তাই আমার এই সরল বোনকে বোকা বানিয়েছ। কিন্তু তুমি জানতে না যে ওর একটা দাদা আছে। আমি তোমার মত ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে দেব না। স্বপন – বড়দা আপনার বোনের বিয়ে দেওয়া নিয়ে আমি জোর করতে পারি না বড়দা – স্বপন আমি তোমার সাথে এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না। ভাস্কর – দাদা আপনার বোন আমার সাথে অসুখী হবে না। বড়দা – রাখ তোমার সুখ। তুমি ভাল থাকার বোঝো কি ? তুমি কি ভেবেছ আমি বুঝিনা তুমি কি জন্যে মানসীকে বিয়ে করতে চাইছ ? তোমার আসল উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেছি। ভাস্কর – আপনি যা ভাবছেন তা নয় বড়দা – আমি তোমাদের মত ছেলেদের বেশ চিনি। আমার বোনের সাথে কি করতে চাও আমি বুঝি না ? শরীরের গরম ঠাণ্ডা হয়ে গেলেই ওকে ছেড়ে চলে যাবে। ভাস্কর – দাদা আপনি এইভাবে আমাকে বলতে পারেন না বড়দা – রাখ তোমার কথা বলা। আমি তোমার নোংরা উদ্দেশ্য মেটানোর জন্য আমার বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দেব না। এরপর আর অনেক কথা হয়। কিন্তু বড়দা ওনার সিদ্ধান্ত বদলান না। স্বপন পরিস্কার বুঝতে পারে বড়দা আসলে বোনের বিয়েই দিতে চান না। মানসীর বিয়ে হয়ে গেলে অই বিউটি পার্লারের সব ইনকাম মানসী নিয়ে যাবে। বড়দার কাছে কিছুই আসবে না। সুতরাং বিয়ে না দেওয়াই ভাল। মুখে বলছিলেন বোনকে নিয়ে খুব চিন্তিত। কিন্তু আসলে বোনের পয়সা নিয়ে বেশী চিন্তিত। বোনের থেকে বোনের পয়সার গুরুত্ব অনেক বেশী। তাই বোনের বিয়ে দেবার কোন মানেই হয়না। তার জন্য স্বপনের রুড কথা গুলোও হজম করে নিলেন। কারন উনি বুঝতে পারছিলেন স্বপনের সাথে তর্ক করলে স্বপন থামবে না, বরং আরও গণ্ডগোল বেশী হবে। মানসীও ৪০ বছরের অভ্যেস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ৪০ বছর ধরে বাবা আর দাদার আজ্ঞাবাহিনি হয়ে জীবন কাটিয়েছে। সেই জায়গা থেকে নিজে সিদ্ধান্ত নেবার সাহস পায় নি।  স্বপন জোর করতে চাইছিল কিন্তু নিহারিকা ওকে নিষেধ করে। আর স্বপন দেখে মানসী নিজেই যখন বড়দার বিরুদ্ধে জেতে সাহস পাচ্ছে না, তখন জোর করে বিয়ে দেবার ফল ভাল নাও হতে পারে। তাই সেস পর্যন্ত বিয়ে আর হয় না। বড়দা বাড়ি ফিরে যান। উনি ভেবেছিলেন মানসীকেও সাথে নিয়ে যাবেন কিন্তু মানসীর মনের অবস্থা দেখে ওকে স্বপনের কাছে আরও দুদিন থেকে যেতে বলেন। পরদিন রবিবার। ভোর পাঁচটার সময় ভাস্কর এসে স্বপনের বাড়ির দরজা জরে নক করতে থাকে। (#৩০) আগের রাতে মানসী সারারাত ঘুমায়নি। অনেকক্ষণ স্বপনের সাথে কথা বলেছে। মানসী কিছুতেই বুঝতে পারে না বড়দা ওর বিয়ে কেন দিতে চায় না। স্বপন ওকে বোঝায় যে বড়দা মানসীর পার্লারের আয় ছাড়তে চায় না। মানসীর একবার স্বপনের কথাই সত্যি মনে হয়। কিন্তু তারপরেই সেটা মেনে নিতে মন চায় না। ওর কাছে বা ওদের বাড়ির সবার কাছে বড়দা দেবতুল্য মানুষ। সব সময় উনি ওদেরকে রক্ষা করে এসেছেন। ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না বড়দা এত নিচু মনের হতে পারে।  রাতের খাবার পরে নিহারিকা বেশী ক্ষন জেগে থাকতে পারে না। তাই ও ছেলে মেয়ের কাছে ঘুমিয়ে পড়ে। মানসী আর স্বপন অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলে। একসময় স্বপনও ঘুমিয়ে যায়। মানসী সারারাত জেগে জেগে ওর জীবন আর সেই জীবনে বড়দার ভুমিকার কথা ভেবে যায়। কিছু ঘটনায় ওর স্বপনের কথাই সত্যি মনে হয়। আবার ভাবে এই বড়দা না থাকলে ওরা কি করত। এই চিন্তা করতে করতে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে যায়। হটাত দরজায় নক করার শব্দে মানসীর কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সকাল পাঁচটা বাজে। দরজার নকের শব্দ একটু একটু করে বাড়তে থাকে। মানসী একবার ভাবে স্বপনকে ডাকবে। কিন্তু তারপর আর ডাকে না। আস্তে করে উঠে যায়, দরজার আইহোল দিয়ে দেখে ভাস্কর দাঁড়িয়ে। ততক্ষনে ভাস্কর দমা দম বাড়ি মারছে দরজায়। মানসী আর কিছু না ভেবে দরজা খুলে দেয়।  ভাস্কর টলতে টলতে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ে। মানসীও উদ্বিগ্ন হয়ে ওর পাশে গিয়ে বসে। ভাস্কর জড়িয়ে জড়িয়ে কথা বলছিল। ভাস্কর – আমার পাশে বস না, খারাপ হয়ে যাবে মানসী – এ কথা কেন বলছ ? ভাস্কর – এ কথা আমি কখন বললাম, এতো তোমার রাজপুত্র দাদা বললেন। আমি খারাপ ছেলে, দু দিন তোমাকে ভোগ করে পালিয়ে যাবো। কোথায় গেল তোমার সেই মহান দাদা ? মানসী – দাদা বাড়ি ফিরে গেছে ভাস্কর – তুমি এখানে কি করছ ? আমাকে জ্বালাতে এসেছিলে, আর থাকার কি দরকার ? মানসী – দেখো ভাস্কর আমার কোন ইচ্ছে ছিল না তোমাকে দুঃখ দেবার। কিন্তু আমি দাদার অমতে কিছু করতেও পারবো না। ভাস্কর – দাদার অমতে কিছু করতে পারবে না তো আমার পেছনে লেগেছিলে কেন ? মানসী – আমি তোমার পেছনে কবে লাগলাম! এটা তো দুজনেরই বাঁচার চেষ্টা ছিল। ভাস্কর – তুমি তো বেঁচে থাকবে। কিন্তু আমি মরে যেতে যেতে তোমাকে দেখে ভেবেছিলাম বেঁচে যাব। কিন্তু তুমি মরিচিকা হয়েই থেকে গেলে। আমি পিপাসায় মরে যাবো। মানসী ভাস্করকে জড়িয়ে ধরে।  মানসী – এইরকম কথা বোলো না। আমিও সে ভাবে বেঁচে থাকবো না। ভাস্কর – কোথায় গেল তোমার ওই বোকাচোদা স্বপন ? মানসী – স্বপনকে গালাগালি দেবে না ভাস্কর – কেন দেব না ? ওই শালা শুয়োরের বাচ্চার জন্যেই এই অবস্থা আমাদের। মানসী – স্বপন আমাদের বাঁচানোর চেষ্টাই করেছিল ভাস্কর – কে বলেছিল ওকে এই বালের চেষ্টা করতে ? ডাকো স্বপনকে, শালার গাঁড় মেরে বৃন্দাবন না দেখালে আমার শান্তি হচ্ছে না।  মানসী – কেন আজে বাজে কথা বলছ ? ভাস্কর – কেন বলবো না ? ওর জন্যেই এই অবস্থা। আর তোমার দাদা বলে কিনা আমি তোমাকে দুদিন চুদে পালিয়ে যাবো। বল আমি কি তোমাকে চোদার জন্যে ভালবেসেছি ? মানসী – ছি ছি কি সব কথা বলছ ? ভাস্কর – আমি তোমাকে ভালবেসেছি মানসী। আমি তোমাকে একদিনও চুদতে চাইনা। শুধু তুমি আমার সাথে থাকো, আমি বেঁচে যাবো। মানসী – আমি তোমার সাথেই আছি। ভাস্কর – কোথায় আছো আমার সাথে !  মানসী – আমি জেখানেই থাকি না কেন, আমার মন তোমার সাথেই আছে ভাস্কর – তুমি সামনে না থাকলে তোমার মন দিয়ে আমি কি বাল ছিঁড়ব ? মানসী – ভাস্কর, তুমি মদ খেয়ে আছো, এখন বাড়ি যাও। গিয়ে বিশ্রাম নাও। আমরা পরে কথা বলবো। ভাস্কর – যখন দুঃখে আমার গাঁড় ফেটে যায় তখন একমাত্র মদ খেয়েই ঠিক থাকি। কিন্তু বাল কাল সারারাত মদ খেয়েও শান্তি পাইনি। তাই এই ভোরবেলা তোমার কাছে এসেছি। মানসী – তুমি মদ খেলে আমি তোমাকে ভালবাসবো না, ভাস্কর – তুমি সাথে থাকলে কোন শালা মদ খাবে ? তুমি থাকলে মদ খাবার দরকার হবে না। মানসী – আমি আছি তোমার সাথে। একটু সময় দাও, আমি তোমার কাছেই ফিরে আসবো। (#৩১) রাত্রে মানসী শুধু একটা হাতকাটা নাইটি পড়ে শুয়েছিল। ভেতরে কোন অন্তর্বাস ছিল না। মানসী যখন ভাস্করকে জড়িয়ে ধরে তখন ওর বুকের অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। ভাস্কর ওর বুকে মুখ গুজে দেয়। মানসীও কোন দ্বিধা না করে ওকে বুকে একটা ছোট বাচ্চার মত আশ্রয় দেয়। এতক্ষনের কথার মধ্যে দুজনের কেউই খেয়াল করেনি যে মানসীর নাইটি পুরো খুলে গেছে। মানসী ভাস্করকে নিজের বুকে আরও চেপে ধরে। ভাস্কর মানসীর দুই বুক ধরে মুখ গুঁজে চুপচাপ বসে থাকে।  স্বপনের ঘুম অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। ও চুপচাপ মানসী আর ভাস্করের কথা শুনছিল। ইচ্ছা করেই ও ওদের সামনে আসেনি বা ওদের ভালবাসায় বাধা দেয়নি। ভাস্করকে মানসীর খোলা বুকে মুখ গুজতে দেখে স্বপন চলে যায়। স্বপন ফ্রেস হয়ে প্রায় আধঘণ্টা পরে মানসী আর ভাস্করের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে।  ভাস্কর তখনও একই ভাবে বসেছিল। মানসী স্বপনকে দেখে একটু লজ্জা পায়। ও ভাস্করকে উঠিয়ে বুক ঢাকতে চায়। ভাস্কর চোখ না খুলেই বলে, “তোমার এই সুন্দর বুক থেকে আমাকে কেন সড়াতে চাইছ?” মানসী – স্বপন দেখছে আমাদের ভাস্কর – দেখুক গিয়ে মানসী – আমার জামা তুমি পুরো খুলে দিয়েছ। স্বপনের সামনে এভাবে থাকতে আমার লজ্জা লাগছে।  ভাস্কর হটাত সম্বিৎ ফিরে পায়। মানসীর বুক থেকে মুখ তুলে সোজা হয়ে বসে। মানসীর নাইটি তুলে ওকে ঢেকে দেয়।  স্বপন – ভাস্কর চা খাও ভাস্কর – স্বপনদা আমাকে ক্ষমা করে দিন স্বপন – তুমি কি করেছ যে তোমাকে ক্ষমা করবো ! ভাস্কর – সকালে নেশার ঘোরে আপনাকে অনেক গালাগালি দিয়েছি। আর তারপর এখন মানসীর সাথে এইভাবে ছিলাম। এই দুটো কারনেই ক্ষমা চাইছি। স্বপন – ভাস্কর তুমি কিছু অন্যায় করোনি। আমি বুঝি তুমি কেন আমাকে গালাগালি দিয়েছিলে। আমি রাগ করিনি ভাই। ভাস্কর – আমার মানসীর সাথে এই বসা উচিত হয়নি। স্বপন – আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের বাধা দিতে পারতাম। কিন্তু আমি কিছুই বলিনি। শুধু শুধু নিজেকে দোষী কেন ভাবছ ? রাঙ্গাদিও কোন বাধা দেয়নি। আর ভালবাসায় এটুকু সেক্স থাকতেই পারে। ভাস্কর – দেখুন স্বপনদা আমি মানসীকে সেক্সের জন্যে ভালবাসিনা স্বপন – সে আমি জানি। এখন চা খেয়ে বাড়ি যাও। আর মদ খেও না। ভাস্কর – আমার মানসী বা মদ – দুটোর একটা চাই। স্বপন – এই দেবদাসের মত কথা বোলো না। এখনকার দিনে দেবদাস হওয়া মানে হেরে যাওয়া।  ভাস্কর – তবে কি করবো ? স্বপন – তুমি বড়দাকে বলেছ লক্ষ্য থাকলে তুমি দৌড়াতে পারো। এখন তোমার সামনে লক্ষ্য আছে। দৌড়াতে শুরু করো।  ভাস্কর – মানসী আর আপনি সাথে থাকলে আমি ঠিক দৌড়াতে পারবো। স্বপন – এখন বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নাও, কাল থেকে দৌড়াতে শুরু কোর।  ভাস্কর – দাদা কাল থেকে কিছু শুরু করা যায় না। এতদিন আমি ‘কাল’ ‘কাল’ করেই বেকার হয়ে গেছি। মানসীর সঙ্গ পেয়েছি। আপনার সাপোর্ট পেয়েছি। আর কোন বিশ্রাম দরকার নেই। আমি আজ থেকেই দৌড়াবো। স্বপন – ঠিক আছে যাও। আমার শুভেচ্ছা থাকল তোমাদের জন্যে। ভাস্কর উঠে দাঁড়ায়। মানসীও সাথে উঠে দাঁড়ায়। ভাস্কর যাবার আগে মানসীকে কাছে টেনে নেয়।  মানসী – এই স্বপনের সামনে কি করছ ? ভাস্কর – স্বপনদা আমি মানসীকে চুমু খেলে কোন অন্যায় হবে ? স্বপন – আমি ভেতরে যাচ্ছি। তোমার মানসীকে তুমি যা ইচ্ছা করো।  স্বপন ভেতরে চলে যায়। মানসী – স্বপন যা খুশী করতে বলেছে মানে তুমি যা খুশী করবে তা নয়। ভাস্কর – না গো। আমি শুধু তোমায় একটা চুমু খাবো।  ভালবাসায় একটু তো বাধা পড়বেই। আমাদের দেশে খুব কম ভালবাসাই কোন বাধা বিঘ্ন ছাড়া সফল হয়েছে। যে ভালবাসা সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বেশীরভাগ সময় সেই ভালবাসা আরও সহজেই ভেঙ্গে যায়। আমরা কেউ খারাপ দিন না দেখলে ভাল দিনের মহত্ব বুঝতে পারি না। চোখের জলে মন না ধুলে ভালবাসাকে বোঝা যায় না। যে একটু চোখের জল দেখেই পালিয়ে যেতে চায় সে আসলে ভালবাসে না। কাঁটা ছাড়া গোলাপ টেবিল সাজানোয় ভাল লাগে কিন্তু জীবনে সাফল্য আনে না।  ক’ ফোটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালবাসবে পথের কাঁটায় পায়ে রক্ত না ঝড়ালে কি করে এখানে তুমি আসবে কটা রাত কাটিয়েছো জেগে স্বপ্নের মিথ্যে আবেগে কি এমন দুঃখ কে সয়েছ যে তুমি এতো সহজেই হাসবে মানসী সবে এক রাত জেগে কাটিয়েছে। আর ভাস্কর এখনও পথ চলতেই শুরু করেনি। আরও কত রাত ওদের জেগে কাটাতে হবে কে জানে ! ভাস্কর আজ থেকে দৌড়ানো শুরু করছে। শুরু হলে পায়ের রক্ত ঝড়লে বোঝা যাবে ওদের স্বপ্ন সত্যির আবেগ না মিথ্যা আবেগে পূর্ণ ! পঞ্চম পরিচ্ছদ সমাপ্ত
Parent