জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস_Written By Lekhak (লেখক) [১০ম খন্ড (চ্যাপ্টার ২৮ - চ্যাপ্টার ৩০)]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/05/written-by-lekhak_4981.html

🕰️ Posted on May 25, 2014 by ✍️ Lekhak

📖 5053 words / 23 min read


Parent
জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস Written By Lekhak (লেখক) ।।আঠাশ।। আরেকটা দিনের ঘটনাও মনে পড়ছিলো। বিদিশার সাথে আমার প্রেম শুরু হওয়ার পরপরই একদিন কলেজের ক্যান্টিনে শুক্লা আর আমি পাশাপাশি বসে। সেদিন বিদিশা কলেজে আসেনি। শুনেছি, শরীরটা নাকি কাল থেকে ওর খুব খারাপ হয়েছে। সকালে ফোন করে আমাকে বলেছে, "আমি যেতে পারছি না আজকে। তুমি মন খারাপ কোরো না।" শুক্লা চা খাচ্ছিলো, আর বারবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো। ওর চোখে মুখে একটা কৌতূহল। অনেকক্ষণ বাদে, আমার মনের ভাবটাকে বোঝবার জন্য একটা প্রশ্ন করে বসলো।  - "দেব, একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, মনে কিছু করবি না বল?"  -- "কি কথা বল? মনে কেন করবো?"  - "না, আগে তুই আমাকে কথা দে, মনে কিছু করবি না, তাহলেই বলবো।" মনে হল, শুক্লার মনের ভেতরে আমাকে নিয়ে যেন একটা চিন্তা রয়েছে, হঠাৎই কোনো প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে ওর মনে। প্রশ্নটা যে বিদিশাকে নিয়ে সেটা জানতে পারলাম, ও বলার পর।  - "দেব, তুই বিদিশা ছাড়া, আগে কখনো কারুর সাথে প্রেম করেছিস? এই কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে, আর কোনো মেয়ের সাথে ভাব ভালোবাসা হয় নি তোর?"  -- "নারে শুক্লা। সেভাবে দেখতে গেলে, বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম প্রেম। এর আগে সেরকম কোনো সুযোগই হয় নি বলতে পারিস।"  - "তুই তো বিদিশাকে খুব ভালোবাসিস, জানি বিদিশাও তোকে খুব ভালোবাসে। যদি তোদের এই ভালোবাসার তারটা কোনোদিন ছিঁড়ে যায়, কষ্ট পাবি না?"  -- "আমি এসব কথা চিন্তাই করতে পারি না শুক্লা, এসব কখনও হবে না।"  - "না ধর, এমনও তো হতে পারে, বিদিশার বাড়ী থেকে ওর বাবা মা দুজনেই বেঁকে বসলো। তোকে তারা জামাই হিসেবে গ্রহন করতে রাজী হল না। তখন?"  -- "জানি না, সেটা কোনোদিন হবে কি না। তবে ওর বাড়ী থেকে আপত্তি করবে বলে মনে হয় না আমার। আর বিদিশাও ওর বাবা মার কথা শুনবে না। ও কথা দিয়েছে আমাকে। বিদিশাকে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।"  - "দেব, তুই না বড্ড সরল, তুই একটু বেশী রোমান্টিক। আমার তো মনে হয়, বিদিশা যতটা না তোকে ভালোবাসে, তুই তার থেকেও বেশী ওকে ভালোবাসিস।"  -- "হতে পারে, আমি তো কোনদিন, ভালোবাসাটাকে খেলনা বলে ভাবিনি। আমার কাছে ভালোবাসা ঠুনকো নয়। ভালোবাসা কখনও অভিনয় দিয়ে হয় না।"  - "জানিস আমার এক পিসতুতো দিদি আছে, রাঙাদি বলে। আমাকে বলতো, জীবনে প্রথম ভালোবাসা নাকি বড়ই মধুর। কাঁঠালের আঠার মত। লাগলে পড়ে ছাড়তেই চায় না। কিন্তু আস্তে আস্তে ভালোবাসাটা যখন ফিকে হয়ে যায়, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়, তখন সেভাবে কাউকে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না। মানুষের জীবনে দ্বিতীয় প্রেম বলে কিছু নেই, প্রথম ভালোবাসার মধ্যে যে গভীরতা আর আবেগ থাকে, দ্বিতীয় প্রেমে সেই আবেগটাই নাকি আসে না। যদি বিদিশা আর তোর প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকে না থাকে, নতুন করে তুই কাউকে ভালোবাসতে পারবি? সেই আবেগের টান, ব্যাকুলতা তুই দেখাতে পারবি?" শুক্লাকে বললাম, "কেন? একথা বলছিস কেন? আমাকে নিয়ে তোর বুঝি কোনো চিন্তা হয়?"  - "তোকে নিয়ে আমার বড় ভয় হয় দেব। তোর মধ্যে এতো গুন আছে, এতো কোয়ালিটি আছে, অথচ মনে হয় কোনোদিন যদি আঘাতে জর্জরিত হয়ে তোর এই গুনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন তুই কি করবি? কাউকে ভালোবেসে তো আর জীবনকে নষ্ট করে দেওয়া যায় না।"  -- "তুই বড্ড চিন্তা করিস আমাকে নিয়ে। আগে থেকে এতো নেগেটিভ চিন্তা করে নাকি রে বোকা। জীবনের সব কিছুই ভালো হয়। খারাপ বলে এই পৃথিবীতে কিছু নেই।"  - "আমি তোর কথা একটু বেশী চিন্তা করি বলেই তুই আমাকে খারাপ ভাবছিস তাই না?"  -- "কেন? কোনোদিন দেখেছিস, আমি তোকে কখনও খারাপ বলেছি?"  - "আসলে এই কথাগুলো মনে এল, তোকে বললাম, কেন জানিস তো? তুই আমার খুব ভালো বন্ধু। আমি জানি, দেবের কখনও খারাপ হতে পারে না। ও যখন কারুর খারাপ চায় না। ভগবান ওর ক্ষতি করতে পারে না। তবে যদি দেখি, তুই কখনো কষ্ট পাচ্ছিস, আঘাত পাচ্ছিস, তাহলে তোর জন্য আমিও খুব কষ্ট পাবো, এটা জেনে রাখিস।" শুক্লাকে বললাম, "প্রথম প্রথম আমিও ভাবতাম, প্রেম টেম আবার কি? ওতো কিছু সময় নষ্ট। জীবনে প্রেম ভালোবাসার কোনো দাম নেই। কেরিয়ার গড়াটাই মূল লক্ষ্য। কিন্তু বিদিশা আমার ধারণাটাকে পুরো ভেঙে দিল। জানিস তো শুক্লা। কি মেয়ে ও। ওর সাথে যে প্রেম করে, সে বুঝতে পারে। এবার তুই ও একটা প্রেম কর আমার মতন।" শুক্লা বললো, "ওসব প্রেম টেম আমার ধাতে সইবে না বাবা। কলেজে সবাই আমার বন্ধু। যেমন তুই বন্ধু, শুভেন্দু, রনি বন্ধু। সবাই আমার বন্ধু।"  -- "আর সৌগত?"  - "ওর ব্যাপারটা তো আমি ভেবেই উঠতে পারছি না। যাকে আমি বন্ধু হিসেবেই ভাবছি, সে আমাকে তার প্রেমিকা হিসেবে ভাবছে। মনের মিল না হলে কি প্রেম করবো বল দেখি?" আমি বললাম, "আরে একদিনে কি মন মেলে নাকি? প্রেম শুরু কর। আসতে আসতে দেখবি, সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে।" শুক্লা বললো, "আচ্ছা দেব, বিদিশা যে সবসময় আমাকে তোর সাথে কথা বলতে দেখে, ও কিছু বলে না তোকে? কিছু মাইন্ড করে না?"  -- "কেন? মাইন্ড করবে কেন? বিদিশা তো জানে, তুই আমার শুধু বন্ধু। ওর মনে সেরকম কোনো সন্দেহ বা আশঙ্কা নেই।"  - "এই দেব। আমি একদিন বিদিশার সাথে একটু মজা করবো? তুই যদি কিছু মনে না করিস।"  -- "কি?"  - "বিদিশাকে বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম করো, জানো দেব আমার কথা ছাড়া, একপাও নড়চড় হয় না। ওকে যদি আমি বলি তোমার সাথে প্রেম চালিয়ে যেতে, তবেই ও তোমার সাথে দেখা করবে, কথা বলবে, নচেৎ নয়। দেব আমার কথায় ওঠে বসে।" শুক্লাকে বললাম, "তুই বলে দেখতে পারিস। তবে মনে হয় বিদিশা তোর কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ ও বুঝেই যাবে, তুই ওর সাথে ইয়ার্কী মারছিস।"  - "ঠিকই বলেছিস তুই। ও বুঝে যাবে। আমাকে মনে হয় অন্য কিছু বলতে হবে।"  -- "কি বলবি?"  - "বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম শুরু করেছো, জানো দেব আমার সাথেও প্রেম করে।"  -- "ভাগ, কি যাতা বলছিস!"  - "ভয় পেয়ে গেলি? আরে আমি তো ইয়ার্কী মারছি।" ।।উনত্রিশ-১।। কলেজে মিনুর সাথে যেদিন আমার প্রথম চোখাচুখি। ক্যান্টিনে একবার ওর দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, মিনুর দৃষ্টিটা কিরকম বাজে। মিনু আমার প্রতি আকর্ষিত। আমার ফর্সা চেহারা, টিকোলো নাক, গমগমে কন্ঠস্বর মিনুকে তখন এক অমোঘ আকর্ষনের ডাক দিয়েছে। শুভেন্দু এসে একদিন বললো, "এই মিনুটা কি রে? জানে তুই বিদিশার সাথে প্রেম করিস, তাও তোর পেছনে পড়ে আছে। সৌগতকে ধরেছে, তোকে নাকি ওর বোনকে গান শেখাতে হবে। এই অন্যায় আবদারের কোনো মানে হয়? আর সৌগতটাই বা কিরকম? শুধু শুধু মিনুর কথা শুনে তোরও মাথা খারাপ করছে।"  -- "আমি জানি, সৌগত সব আমাকে বলেছে।"  - "আমার তো মিনুকে একটা সস্তা মেয়েছেলে বলেই মনে হয়। কলেজে ঢ্যাড়া পিটিয়ে বেড়াচ্ছে। তোর নামে কিসব বলে বেড়াচ্ছে।"  -- "কি বলেছে মিনু?"  - "তোর গান নাকি ওর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তুই হলি গানের জাদুকর। গান গেয়ে মেয়েদের মন চুরি করার বিদ্যা যে তুই জানিস, আর কেউ জানে না। মিনু তোর জন্য পাগল। সে এখন খাওয়াদাওয়া ভুলে গেছে, সব ভুলে গেছে। সে এখন উন্মাদিনী। শোন দেব, আমার তো মনে হয়, মিনু হল, শয়তানি লোভী মাকড়শা। সহজে নিস্তার দেবে না তোকে। ওর সাথে কথা বলে, তুই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দে। তোর জীবনে বিদিশা ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই। কাউকেই তুই সে জায়গায় বসাতে পারবি না।" পরের দিন মিনুকে ডাকলাম, ক্যান্টিনে। বললাম, "কি ব্যাপার মিনু? কিসব শুনছি?" মিনু যেন কিছুই জানে না, আকাশ থেকে পড়ার মতন ভাব করলো, "আমাকে বললো, কি শুনেছিস? কলেজে মিনু রোজই খবরে। আমাকে নিয়ে রোজই কিছু না কিছু কথা হয়। নতুন কি শুনেছিস সেটা শুনি।"  -- "মিনু আমি চাই না। আমার নাম জড়িয়ে তুই কলেজে কাউকে কিছু বলিস। এটা ঠিক নয়, আমার সন্মন্ধে আর একজন খারাপ ভাবতে পারে।"  - "কে ভাববে তোকে খারাপ? দেব, আমি তোর ফ্যান। কলেজে বাকীরা যেমন তোর গান মুগ্ধের মত শোনে, আমিও তেমন শুনি। তোকে তো বলেছি, বোনটাকে তুই যদি গান শেখাতে রাজী হয়ে যাস, আমি তাহলে ধন্য হয়ে যাবো। তোর কাছে কৃতার্থ থাকবো দেব। এগুলো যারা বলেছে, তারা সব বাড়িয়ে বলেছে। সেরকম কিছু নয়।" চকিতে মিনু সেদিন মনের মধ্যে পাপটা রেখে পাল্টি খেয়ে গেলো। আমি ধরতেও পারলাম না, মিনু হল সুযোগ সন্ধানি। যেদিন সুযোগ পাবে, মোক্ষম চাল দিয়ে ও আমাকে ঘায়েল করবে।  আমি শুয়ে শুয়ে পুরোনো কথা সব চিন্তা করছি, অথচ মনে হলো, কে যেন আমার ভেতরে হাতুরী দিয়ে ঘা পিটছে। দুমদুম করে আওয়াজ করছে। আমার দু'গালে ঠাসঠাস করে দুটো চড় মেরে দিয়ে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে সে, আমার জামার বোতাম ছিড়ে রাগে দূঃখে, চেঁচিয়ে বলছে, ভালোমানুষের অভিনয়? ভালোই পারো তুমি তাই না? এসব গল্প লিখে লোককে বোকা বানাচ্ছো। নিজে ভালো সেজে কখনো মিনুকে খারাপ করছো, কখনো শুক্লাকে খারাপ করছো তুমি কি? আদর্শ প্রেমিক? একটা মেয়েকে ভালোবেসে, শুধু তার কথা ভেবেই জীবনকে অতিবাহিত করে ফেললে। এসব কি বিশ্বাস যোগ্য? আবার সেই মেয়েটাই যখন তোমার জীবনে ফিরে এলো। তার জন্য তোমার দরদ একেবারে উথলে পড়ছে। তাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না। একেবারে সাধুপুরুষ যুধিষ্ঠীর তুমি? সবাই তোমার গল্প পড়ে, তুমি যা বলো, সত্যি কথাটাই তারা ধরে নেয়। সত্যের আড়ালেও যে কিছু থাকে। তাকে গোপণ কেন করো? মিথ্যেবাদী তুমি লেখক। যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। বিদিশা এই জন্যই তোমার জীবনে কোনদিন ফিরবে না। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাবছি, যা লিখেছি, এর মধ্যে তো কোন মিথ্যে নেই। আমি তো কিছুই গোপণ করিনি। আমি তো মিনুর সাথে সেভাবে কোনদিন কিছু করিনি। শুক্লার সাথেও আমার সেভাবে ঘনিষ্ঠতা হয় নি। তাহলে কেন? এভাবে..... হঠাৎই অনুভব করলাম, মা আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। জোরে জোরে আমার গায়ে ঠেলা মারছে। চেঁচিয়ে বলছে, "একি রে দেব? সকাল হয়েছে, ঘুম থেকে ওঠ। আপন মনে কি সব বিড়বিড় করছিস?" ।।উনত্রিশ-২।। মা'র ঠেলা খেয়ে আমি ধড়মড় করে বিছানা ছেড়ে উঠেছি। ঠিক যেভাবে খারাপ স্বপ্ন দেখলে মানুষের মনটা খারাপ হয়ে যায়, মনে হয়, এটা দেখার কি সত্যি কোনো প্রয়োজন ছিল? আমারও ঘুমটা ভাঙার পর, খুব বাজে লাগছিলো। মনে হল, বিদিশাকে নিয়ে কাল বাড়ী ফেরার পর থেকে এতো চিন্তা করেছি, তারই প্রভাব পড়েছে স্বপ্নে। মা'র সাথে কাল বাড়ী ফিরে সেভাবে কথা বলিনি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মা জিজ্ঞাসা করছে, "এতদিন বাদে, তুই শুভেন্দুদের বাড়ীতে গেলি, হঠাৎ ও তোকে নেমতন্ন করলো, কি কারণ সেটা তো বললি না?" মা'র কাছে বিদিশার নামটা মুখ থেকে আবার উচ্চারণ করতে গিয়েও করতে পারলাম না। মনে হল, বিদিশা যখন কাল আবার আমাকে একটা ধাঁধায় ফেলে গেছে, তখন এই নিয়ে কথা তুলে কোনো লাভ নেই, শুধু শুধু মা'রও আবার টেনশন বাড়বে। আগে তো সমস্যার সমাধান হোক। তারপর বিদিশার কথা মা'কে খুলে বলতে অসুবিধে নেই। বিদিশাও আমার কাছ থেকে দুদিন টাইম চেয়েছে। সুতরাং এই দুদিন আমাকেও একটু ধৈর্য রাখতে হবে। মা দেখি আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেবার পর একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মা'কে বললাম, "না মা, এমনি কোনো কারন নয়। তুমি তো জানো, শুভেন্দুটা কি রকম করে আমি গেলে। এতদিন পরে গেছি, না খাইয়ে কি আমাকে ছাড়বে? এত পীড়াপিড়ী করলো, যে আমাকেও শেষপর্যন্ত ওর কথাটা রাখতে হলো।" মা বললো, "আর কি কেউ এসেছিলো?" আমি বললাম, "রনি আর মাধুরী এসেছিলো। আর তো কেউ আসেনি।" আমার দিকে তাকিয়ে মা এমন ভাবে হাসলো, মনে হল, মা যেন সবই জানে। আমাকে বললো, "সারাদিনে বিদিশার নামটা আপন মনে কতবার উচ্চারণ করিস তুই? আর আমি যখন কিছু জিজ্ঞাসা করি, তখন আমার কাছে সব চেপে যাস। কাল যে বিদিশাও ওখানে ছিলো, আমি ভালমতনই জানি তা। তুই ঘুমের ঘোরে বকবক করছিলিস, বিদিশার নামটা বারে বারে উচ্চারণ করছিলিস, আমি সব শুনে নিয়েছি।" আমাকে যেন বিদিশা রোগে পেয়েছে। মা বললো, "জানি না বাপু। কি তুই চাস? তবে শুধু শুধু এভাবে জীবনটা নষ্ট করিস না। ও যদি তোকে এতদিনেও বুঝতে না পারে, তাহলে আর কবে বুঝবে? আমি তো বলবো, আমার ছেলেকে বোঝার জন্য ওকে জন্মজন্মান্তর তপস্যা করতে হবে, তবেই ও তোকে বুঝতে পারবে। তার আগে নয়।" আমি বললাম, "না মা, বিদিশার কোনো দোষ নেই। ওর হয়তো কিছু সমস্যা আছে, যেটা ও খুলে বলছে না। ইচ্ছে থাকলেও ওর বিবেক ওকে বাঁধা দিচ্ছে। আমি অনেক কষ্ট করেছি বলেই, ও নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখছে না। এমনও হতে পারে, সেই সমাধানের পথটাও খুলে গেলো, আর বিদিশাও পুরোপুরি আমার হয়ে গেলো।" মা বললো, "কি সমস্যা? সেটা যতক্ষণ না ও তোকে খুলে না বলছে, তুই কি করে তার সমাধান করবি? ওর যদি সমস্যাটা গুরুতর হয়, তাহলে ওর পক্ষে বলাটা অত সহজ নয়। ও জেনেও তোকে বলবে না। আর যদি সমস্যাটা অল্পতেই সমাধান হয়ে যেতে পারে, তাহলে দেখ, আজই তোকে হয়তো বিদিশা ফোন করবে, সব খুলে বলবে।" মায়ের কথা শুনে আমার মনে হলো, মা হয়তো ঠিকই বলছে। কারণ বিদিশা কাল ট্যাক্সিতে আসতে আসতেও আমাকে ওর সমস্যাটার কথাটা সেভাবে কিছু খুলে বলেনি। আমার কাছে আরো দু তিনদিন বিদিশা টাইম চেয়েছে। এটা যদি গুরুতর কিছু সমস্যা না হত, তাহলেই হয়তো কালকেই বিদিশা সব খুলে বলতো। কি জানি ভাগ্যে আমার কি লেখা আছে। মন খারাপ না করে এবারে আমি অফিসে বেরুবার জন্য তৈরী হতে শুরু করেদিলাম। কাল থেকে কি সুন্দর উপন্যাসটা লিখতে শুরু করেছিলাম। মনে হলো, কালকের এক ঝটকায় গল্পটা কেমন থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আগে কি লিখবো, এখন আর বুঝতে পারছি না। যতক্ষণ বিদিশার রহস্যের উন্মোচন যতক্ষণ না হচ্ছে, আমাকে ঐ কলেজের পুরোনো স্মৃতিগুলোর কথা মনে করেই আরো কিছু পাতা ভরিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া আর কিছু লেখার নেই। সকালে যে শুভেন্দু একটা ফোন করবে, এটা জানাই ছিলো। কিন্তু আমি আরো অবাক হলাম, যখন দেখলাম, শুক্লাও আমাকে পরপর চারটে মিস কল করেছে, সে জায়গায় শুভেন্দু করেছে একটা। অঘোরে ঘুমিয়েছিলাম, এতগুলো মোবাইলে মিস কল হয়েছে আমি টেরই পাইনি। শুভেন্দু একটা মেসেজ ছেড়েছে। "কাল বিদিশা তোকে কিছু বলেছে? জানতে খুব ইচ্ছে করছে। ফ্রি হলে আমাকে একটা ফোন করিস। -শুভেন্দু।" অফিসের জন্য বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়েছি। ট্যাক্সিতে যেতে যেতে শুভেন্দুকে এবারে ফোনটা করলাম। দেখলাম, ওর ফোনটা বিজি বলছে, তার মানে কোনো ক্লায়েন্টের সাথে হয়তো কথা বলছে শুভেন্দু। ঠিক তার পাঁচ মিনিট পরেই শুভেন্দু ঘুরিয়ে ফোনটা করলো আমাকে। আমাকে বললো, "কি ব্যাপার বলতো দেব? একটু আগে বিদিশা আমাকে ফোন করেছিলো, আমাকে বললো, সরি, 'কাল তোদের মুডটা আমি খারাপ করেদিয়েছিলাম। আসলে ওই অবস্থায় আমার তখন কিছু করারও ছিলো না। দেবের কথা ভেবে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হলো, দেবকে এভাবে ঠকানোটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। তাই আমি মনে মনে একটা অন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই মূহূর্তে দেবের বাড়ীতে আমি আর যাচ্ছি না।" ।।উনত্রিশ-৩।। বারবার বিদিশাকে ঘিরে মনের মধ্যে সেই একই হতাশা আর বিষন্নতা। হঠাৎ বিদিশা কেন এমন আচরণ করছে? আমার জীবনটাকে নিয়ে ও কি শুধু খেলতেই চাইছে? আমাকে যদি সে নিজের মনে করে, তাহলে সত্যি কথাটা কেন খুলে বলছে না। কেন বলছে না দেব, আমি তোমার কাছেই আবার ফিরে আসতে চাই। তুমি যদি আমাকে একটু সাহায্য করতে। আমার এই বিপদে তুমি আমার পাশে দাঁড়াতে। আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। তা না বলে..... শুভেন্দুর কথার উত্তরে আমি কি বলবো, কিছু ভেবে পেলাম না। ও শুধু বললো, "কাল বাড়ী ফেরার সময় বিদিশা তোকে কিছু বলেনি? ও কেন হঠাৎ ও রকম হয়ে গেলো। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।" আমি বললাম, "সে তো আমিও বুঝতে পারছি না। আর বিদিশাও সেভাবে আমাকে কিছু বলেনি। শুধু আমার কাছে দুতিনদিন ও সময় চেয়েছে। বললো, আমাকে ও আর ঠকাতে চায় না।" শুভেন্দু বললো, "তুই জোর করলি না কেন? এত কিছু করেও বিদিশার সাথে তোর মিলনটা করিয়ে দিতে পারলাম না। আমার নিজেরই তো খুব খারাপ লাগছে।" শুভেন্দুকে বললাম, "মন খারাপ করিস না শুভেন্দু। হয়তো দু তিনদিন পরেই অজানা কথাগুলো সব জানা হয়ে যাবে। বিদিশার কিসে এত অসুবিধা হচ্ছে, সেটা আমি তুই দুজনেই তখন জানতে পারবো।" জানি শুভেন্দু আমার মনকেও শান্তনা দেবে। ও নিজের থেকে আমার ব্যাপারে চিন্তা করে বেশী। ফোনে বললো, "দেব, নিজের মনকে একটু শক্ত কর। দু তিনদিন বেশী সময় নয়। আশা করি এ রহস্যের জট কাটবে। বিদিশা আবার তোরই হবে। তুই দেখে নিস, আমার মন তাই বলছে।" অফিসে পৌঁছোলাম। নিজের রুমে বসে বিদিশার কথাই শুধু ভাবছি। হঠাৎ ওর পুনরাগমনে নিজের মধ্যে একটা শক্তি ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, সেই কলেজের দিনগুলোর মতই আবার আমার মধ্যে জীবনীশক্তির এতই প্রাচুর্য হঠাৎ যেন ভীষন লাফাতে ইচ্ছে করছে আমার। নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে সবাইকে খুশীর খবরটা দিতে ইচ্ছে করছে। অফিসের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে ইচ্ছে করছে। সবাইকে বলতে ইচ্ছে করছে, যেন যাকে আমি ভালোবাসতাম, সে ঠিক এতদিন বাদে আমার কাছেই ফিরে এসেছে আবার। বিদিশার আগমন, আমাকে সেই তরুন বয়সে ফিরে দিয়েছে। কলেজের দিনগুলোর মতই আবার গাইতে ইচ্ছে করছে, নাচতে ইচ্ছে করছে, আনন্দ করতে ইচ্ছ করছে। আবার পরক্ষণে এটাও মনে হল, সেই উদ্দীপনা এসেও যেন আবার নিভে গেলো। আমি যেন পরিশ্রান্ত হয়ে নিজের সিটের ওপরে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছি। নানা রকম চিন্তা আমার মনকে ঘিরে ধরছে। নিজের জীবনটাকে মনে হচ্ছে একেবারে শূন্য। এই পৃথিবীটাকে মনে হচ্ছে একটা মরুভুমি। এই মূহূর্তে বিদিশার ছায়াটাকে আমি আমার রুমের মধ্যে দেখেছি। ছায়াটা ধীরে ধীরে আমার কাছ থেকে ক্রমশ আবার দূরে সরে যাচ্ছে। আমি স্থির থাকতে না পেরে, বিচলিত হয়ে রুমের মধ্যে পায়চারী শুরু করে দিয়েছি,এমন একটা কঠিন পরিস্থিতি, জীবনের যখন একটা মান খুঁজে পেলাম, তখন আমি আবার একা। ভীষন ভাবে একা। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার পর ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার মতো, বিহ্বল চোখে আমি যখন বাস্তব জীবনের দিকে তাকাই, আমার ঘরের শূন্য দেওয়ালগুলো ছাড়া আমি আর কিছুই দেখতে পারি না। বা অনুভব করতে পারি না। মনে হয় আমার জীবনকে রমনীয় করে তোলার জন্য সত্যি কোনো নারী নেই। নেই কোনো সঙ্গিনী। সবাই যেখানে প্রেম অভিসারে ব্যস্ত। আমাকে সেখানে অবসর সময় কাটানোর জন্য এমন কিছু জায়গা খুঁজতে হয়, যেখানে আশ্রয় না নিলে আমার যেন সময় কাটানোর আর জায়গা নেই। ঐ শুভেন্দুর কথাটাই তখন সত্যি হয়। বিদিশাকে ভালোবেসে জীবনটা নষ্ট করলি তুই। এখন শুধু লেখালেখি, আর গানের চর্চা নিয়েই পড়ে থাকিস তুই। এটাই কি জীবন নাকি? ধূর। এভাবে জীবন কাটানো মানে একেবারেই তা অর্খহীন। অফিসে গিয়ে কাজকর্ম সেভাবে এখনো শুরু করতে পারিনি। চেয়ারে বসে উল্টোপাল্টা এসব ভাবছি, আর চোখটাও অল্প একটু বুজে এসেছে। ঠিক তখনই দেখলাম, মোবাইলটা আবার বাজছে। শুক্লা আবার আমাকে ফোন করেছে। ।।উনত্রিশ-৪।। কাল শুভেন্দু আমাকে শুক্লার ব্যাপারে অনেক কথাই বলেছে। রনি তো বলেই দিয়েছে, ওর ফোন এলে ফোনও ধরবি না তুই। সবাই এখন শুক্লাকে খারাপ চোখে দেখছে। ব্যাচারা শুক্লা। বিদিশার প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়ে সবার চোখে ঘৃনার পাত্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু শুক্লারই বা আমার প্রতি এত আগ্রহ দেখানোর কারণটা কি? বিদিশাকে ও সহ্য করতে পারছে না। বারে বারে আমাকে ও ফোন কল করছে, বাড়ীতে যাবার জন্য বলছে। কই এতদিন তো শুক্লার একবারও আমার কথা মনে পড়েনি? মনে হল এই মূহূর্তে আমার মনে শক্তি জোগানোর বা মনকে শান্তনা দেবার জন্য এমন কাউকে দরকার। শুক্লা সেই ভূমিকাটা কিছুতেই পালন করতে পারবে না। বরঞ্চ ও যদি বিদিশার ব্যাপারে হতাশাজনক আমাকে কিছু বলে দেয়, তাহলে আমি আরো দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ব। ফোনটা ধরলাম না। সুইচটা অফ না করে সাইলেন্ট মোড করে দিলাম। একটার পর একটা ফোন করে যাচ্ছে শুক্লা। ওর ধৈর্য দেখে, আমিও রীতিমতন অবাক হয়ে যাচ্ছি। ভাবছি, হয় মেয়েটা আমার ভালো চাইছে, সত্যিকারের বন্ধু হয়ে এক বন্ধুর উপকার করতে চাইছে, নয়তো সে নিজের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখছে, আমার স্বার্থটাকে নয়। "প্লীজ শুক্লা লিভ মি অ্যালোন। আমাকে একটু একা থাকতে দে। কেন তুই ফোন করে আমাকে বিরক্ত করছিস?" বাড়ী থেকে বেরুবার সময়ও দেখেছি, শুক্লা আমাকে অনেকগুলো কল করেছিল। আবার এখনও করে যাচ্ছে স্পন্টেনিউসালি। যেন আমাকে ক্ষিপ্ত না করে ও এবারে ছাড়বে না। অনেক বিরক্ত হয়েই শেষমেষে ওর ফোনটা ধরলাম। ঠিক করে নিলাম, বিদিশার ব্যাপারে শুক্লা যদি কিছু উচ্চবাচ্য করে প্রথমেই ওকে না করে দেবো, কথাই বলব না হয়তো। ফোনের লাইনটাও কেটে দেবো। ঠিক এই মূহূর্তে আমার মনোভাবটা এমনই কঠোর হওয়া দরকার। নিজেকে দূর্বল করলে চলবে না। বিদিশার প্রতি দুদিন অন্তত আমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে। ফোন ধরলাম, হ্যালোও বললাম। কিন্তু ভেতর থেকে সেই উদ্দীপনাটা এল না। শুক্লা আমাকে অবাক করে প্রথমেই বলল, "দেব, আমি কিন্তু মিনু নই। তুই কিন্তু আমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝছিস। এতবার করে তোকে ফোন করছি, ফোনটা অন্তত ধরবি তো? না শুক্লা বলে, তোর কেউ কোনদিন ছিল না। কলেজে শুভেন্দু, রনি সবাই তোর বন্ধু। আমি তোর কেউ নই।" আমি কোন কথা বলছি না। শুক্লা বলল, "কি হল জবাব দে। কথা বলছিস না কেন?" মনে হল, শুক্লা বোধহয় বিদিশার ব্যাপারে এবার কিছু বলবে। হয়তো কাল শুভেন্দুর বাড়ীতে কি হল, সেটাই জিজ্ঞেস করবে। জানতে চাইবে বিদিশা ওখানে এসেছিল কিনা? আমার সাথে বিদিশার কথা হল কিনা? বিদিশার জন্য আমি যে এখনও কাতর। এই ছটফটে মনটা নিয়ে কোথায় যাই? আমার ভালবাসার গভীরতা বোঝার মত ক্ষমতা যদি শুক্লার থাকতো..... ও বলল, "শোন, তোকে আমি এখন কিছুই বলব না। তুই শুধু আমার অনুরোধটা রাখবি। কাল যখন আসতে পারিস নি। আজ অবশ্যই আমার ফ্ল্যাটে আসবি। তুই না এলে আমি কিন্তু ভীষন দূঃখ পাবো। যতদূর জানি, দেব কাউকে না বলে না। কাউকে ফেরায় না। অন্তত আমার এই অনুরোধটা তুই ফেলিস না। দেব প্লীজ। তোর পায়ে ধরে তোকে রিকোয়েস্ট করছি।" আমি বললাম, "আরে না, না। তুই এতকরে আমাকে রিকোয়েস্ট করছিস কেন বলতো? আমি কি তোকে না বলেছি? কাল তো শুভেন্দুদের বাড়ীতে গিয়েছিলাম বলেই তোর ওখানে যেতে পারিনি। তাই বলে কি আর যাব না কোনদিন? নিশ্চই যাবো।" শুক্লা বলল, "ভাবছিস আমি তোকে বিদিশার ব্যাপারে কিছু বলব। তাই না?" আমি বললাম, "না, না। তা কেন হবে? তুই তো কালকেই....."  - "হ্যাঁ। যা বলেছি। ওটার আর পুনরাবৃত্তি আমি করব না। তোকে আমি কথা দিলাম। বিদিশার ব্যাপারে কিছু বলে, তোর মনকে আমি বিষিয়ে দিতে চাই না। শুক্লা দেবের খুব ভাল বন্ধু হয়েই থাকতে চায়। ব্যাস। আর কিছু নয়। হ্যাপি? বল এবারে আসবি তো?" আমার যেন মনে হল, শুক্লা যেন আমার মনটাকে খুব ভালো করে পড়ে নিয়েছে। বিদিশার ব্যাপারে কিছু বললে, আমি যে ওর বাড়ীতে যেতে আর আগ্রহ দেখাবো না। সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে। শুক্লা ভাল করেই জানে, এতদিন বাদে বিদিশার পুনরাগমন, আমার কাছে একটা অক্সিজেনের মতন। ওর এই ফিরে আসার মধ্যে যতই রহস্য থাক। যতই বিদিশা আমার কাছে একটু সময় চেয়ে নিক, যতই আমার মনের মধ্যে কষ্টটা বয়ে যাক, একটা আশা নিয়ে দুদিন তো আমাকে ধৈর্য রাখতেই হবে। এই সামান্য বোধটুকু যদি আমার মধ্যে না থাকে, তাহলে বিদিশাই বা কি মুখ নিয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে? শুভেন্দুকেই বা কি বলব? রনিকেই বা কি বলব তখন? আমি নিজে থেকেই বিদিশার ফিরে আসাটার দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছি। ওকে চির দিনের জন্য বিদায় জানিয়ে দিয়েছি। একবার মায়ের কথাটা সে সময় খুব মনে হল। মা আমার জন্য খুব ভাবে, কষ্ট পায়। বিদিশাকে অর্জন করে মায়ের মুখেও এবার হাসি ফোটানোটা দরকার। শুক্লাকে বললাম, "যাবো তোর বাড়ী। কবে যেতে হবে বল? অফিস ফেরত একদিন চলে যাব তোর ফ্ল্যাটে।" শুক্লা বলল, "না তুই আজকেই আসবি। আমি আজকেই তোকে আমার এখানে দেখতে চাই।" ওকে বললাম, "আজকেই যাব? তাহলে তো অফিস ফেরত তোর ওখানে যেতে হয়।" শুক্লা বলল, "হ্যাঁ। তোর বাড়ী থেকে তো আর বেশী দূরে নয়। সল্টলেকে আসতে আর কতক্ষণ লাগবে। একটা ট্যাক্সি নিবি। আর ঝটপট চলে আসবি।" আমি বললাম, "খাওয়া দাওয়ার আবার অ্যারেঞ্জ করবি না তো? মাকে কিন্তু কিছু বলে আসিনি। কাল এমনিতেই শুভেন্দুদের বাড়ীতে অনেক খেয়েছি। আজ তোর ওখানে খেলে, মা বহূত চটে যাবে।" শুক্লা বলল, "দেব, তোর আপত্তি থাকলে আমি তোকে জোর করব না। কিন্তু তুই কিন্তু অবশ্যই আসবি। আমাকে আবার ফোন করতে বাধ্য করিস না।" যেন নাছোড়বান্দা এক মেয়ে। কিছুতেই আমাকে না নিয়ে গিয়ে ছাড়বে না। আমিও শেষ পর্ষন্ত শুক্লাকে কথা না দিয়ে থাকতে পারলাম না। ।।ত্রিশ।। অফিস থেকে বেরিয়ে শুক্লার বাড়ীর দিকে যখন আসছিলাম। ট্যাক্সিতে এফএম-এ খুব সুন্দর একটা কিশোর কুমারের গান হচ্ছিল। গানটা আমারও খুব ফেভারিট। হে প্রিয়তমা, আমি তো তোমায়, বিদায় কখনো দেবো না। শুনে মনে হল, সত্যি তাই। বিদিশাকে আমি নিজে থেকে কখনও বিদায় দিতে পারি না, এক সে যদি নিজে থেকে না চায়। আমার মনের মধ্যে আশাটা কিছুটা হলেও এখনো যেন বেঁচে আছে। বিদিশাকে আমি চাই। শেষ পর্যন্ত যে করেই হোক বিদিশাকে আমি ফিরে পেতে চাই। ঠিক তার পরে পরেই কিশোর কুমারের আর একটা গান শুরু হল, গানটা হল, "আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবো না আমি। যারে দিয়েছিলাম, যা কিছু তা আমার চেয়েও দামী। নাম নেবো না আমি।" এবার আমার মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে গেল। ট্যাক্সিওয়ালা বলল, "দাদা এই যে লোকটার গান শুনছেন না? ইনি তো অমর শিল্পী কিশোর কুমার। কিন্তু লোকে বলে ইনি নাকি মরে যাবার আগের দিন পর্যন্ত প্রেমিক ছিলেন। চার চারটে বিয়ে করেছেন, ভালোবাসা ওনার কাছে অফুরন্ত ছিল।" আমি বললাম, "কিশোর কুমার সন্মন্ধে আমি যা জানি, তা আর কেউ জানে না। একসময় কিশোরের গান গেয়েও অনেকের প্রশংসা কুড়িযেছি। লোকটার জীবনে প্রেম অনেক ছিল তাও জানি। কিন্তু লোকটার জীবনে একটা ব্যাথাও ছিল। সেটা বাইরে থেকে ওর পাগলামী দেখে কেউ বুঝতে পারত না। কিশোর কুমার নিজেও এমন ছিলেন, কাউকে বুঝতে দিতেন না।" ঠিক সন্ধে সোয়া সাতটা নাগাদ ট্যাক্সিটা শুক্লার ফ্ল্যাটের নীচে গিয়ে দাঁড়ালো। গাড়ীতে আসতে আসতে এরমধ্যেই শুক্লার ২বার ফোন এসে গেছে আমার মোবাইলে। আমি যে সত্যি আসছি কিনা সেটা ও ফোন করে নিশ্চিত হতে চেয়েছে। যাচাই করে দেখে নিতে চেয়েছে আমি অফিস থেকে বেরিয়েছি কিনা? আমার কাছ থেকে কনফারমেশন পেয়ে থুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে উঠেছে শুক্লা। এতটা আনন্দ পেতে আমি বিদিশাকেও কোনদিন দেখিনি। আমি ট্যাক্সি থেকে নামলাম। ভাড়া মিটিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। এসেছি তো ঠিক জায়গায়। কিন্তু বাড়ীর নম্বরটা খুঁজে পাচ্ছি না। সল্ট লেকে এই এক অসুবিধে। প্রথমবার এলে বাড়ী খুঁজে নিতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়। অ্যাড্রেস জানার জন্য এলাকার কোনো লোক পেয়ে গেলে সুবিধে। নচেৎ একবার এমাথা থেকে ওমাথা, নয়তো এ গলি ও গলি ঘোরাটাই শুধু সার। শুক্লা বলেছে, সাদা রংয়ের চারতলা বাড়ী। প্রতিটা ফ্লোরে দুটো করে ফ্ল্যাট। দ্বোতলায় উঠে পেছন দিকের ফ্ল্যাটটাই শুক্লাদের অর্থাৎ শুক্লার। আমার অসুবিধে হয় বাড়ী খুঁজতে তাহলে ওকে মোবাইলে ফোন করতে। কপাল ভালো দুটো বাড়ী পরেই ওই চারতলা সাদা বাড়ীটা দেখতে পেয়ে গেলাম। শুক্লাকেও আর ফোন করতে হল না। যখন ওর ফ্ল্যাটের দিকে এগোতে লাগলাম, মনের ভেতরে শুক্লাকে নিয়ে জমে থাকা সন্দেহগুলো আসতে আসতে দূর হতে লাগল। মনে হল, শুক্লা আমাকে কিছুই সেরকম বলেনি। বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে হঠাৎই প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কের সূচনা। শুক্লা সেরকম তো কিছুই আভাস দেয় নি। অথচ শুভেন্দু আর রনি ওকে সন্দেহ করছে, আসলে বিদিশার প্রতি শুক্লার এই বিদ্বেশ মনোভাব, শুভেন্দু আর রনিকে এতটা চটিয়ে দিয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। দু তিন ঘন্টা শুক্লার সাথে জমিয়ে গল্প করব, এই উদ্দেশ্য নিয়েই ওর ফ্ল্যাটের কলিংবেল টিপছি। মনে হল, কে যেন আমার কানে কানে বলে দিল, "আবার তুমি ভুল করতে চলেছ দেব। সবাইকে এত অন্ধ বিশ্বাস করো তুমি? ওকি তোমায় এমনি এমনি ডেকেছে এখানে? নিশ্চই কোনো উদ্দেশ্য আছে। মিনুকে বিশ্বাস করে তুমি যে ভুলটা করেছ, আবার শুক্লাকেও বিশ্বাস করে দ্বিতীয়বার ওই ভুলটা কোরো না। দেব তুমি ভীষন সরল। এই সরলতার জন্যই আজ জীবনে এত খেসারত দিচ্ছ বারবার। একই ভুল তুমি কোরো না।" আমার মুখটা কেমন গম্ভীর মতন হয়ে গেল। যেন একটা ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে আমি শুক্লার বাড়ীতে এসেছি। শুক্লা দরজা খুলে আমার ঐ ফ্যাকাসে মুখটাই দেখল। আমাকে বলল, "এ কি রে? কি হয়েছে তোর? এত মুখ ভার কেন তোর? আয় আয় ভেতরে আয়। শুক্লাকে তো পাত্তাই দিচ্ছিলি না তুই। দেখ, আমিই তোকে এখানে আসতে বাধ্য করালাম।" ফ্ল্যাটে ঢুকেই শুক্লা আমাকে ওর ড্রয়িং রুমটায় বসতে বলল। বেশ সুন্দর সাজিয়েছে ফ্ল্যাটটা। দেওয়াল জুড়ে শুধু কাঁচের আলমাড়ী। থাক থাক করে সাজানো গল্পের বই। শুক্লা গল্পের বই পড়তে খুব ভালোবাসতো আমি জানতাম। আমাকে বলল, "এগুলো সব আমার কালেকশন। গতবারে বইমেলা থেকেও অনেক বই কিনেছি আমি। একা একা থাকি। গল্পের বই পড়ে সময় কেটে যায়। কিছু তো করতে হবে। পুরোনো সেই সখটা আমার এখনো রয়ে গেছে বলতে পারিস।" আমি জানি শুক্লা খুব ভালো ছবি আঁকতেও পারে। দেওয়ালে খুব বড় একটা আঁকা ছবি দেখলাম। ছবিটা খুব সুন্দর করে বাঁধানো। শুক্লাকে বললাম, "এটা নিশ্চই তোর আঁকা? বাঃ সুন্দর হয়েছে ছবিটা।" এক যুবক স্বপ্নাতুর চোখে নীল আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে, আকাশের নীলিমার মাঝে একটা নারীমুখ ভেসে উঠেছে। যেন সুন্দরী ওই নারী যুবকের কোনো স্বপ্নের নারী। যুবক তাকেই চিন্তা করছে। আর সমস্ত পৃথিবীটা যেন রোদে স্নান করছে। রঙটাই আসতে আসতে পাল্টে যাচ্ছে।  -- "কি করেছিস রে? এ তো অনন্য কীর্তি। শিল্পের ছোঁয়া। এমন ছবি তো দেখাই যায় না।" শুক্লা বলল, "এ ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা তো আমি তোর কাছ থেকেই পেয়েছি। তুই জানিস না?" আমি অবাক হলাম, শুক্লা বলল, "ছবিটা আঁকতে শুরু করার সময়, আমি একটা সূত্র থুঁজে বার করার চেষ্টা করছিলাম। ভাবছিলাম, ঐ যুবকটা যদি দেব হয়, তাহলে ওর স্বপ্নের নারীটা কে? যাকে চিন্তা করে করেই দেব এতটা লাইফ কাটিয়ে দিল। বিদিশা ছাড়া নিশ্চই আর কেউ নয়।" মনে হল, এই রে আবার বিদিশাকে নিয়ে শুরু করল শুক্লা। এবারে দেখছি আমাকে পালাতে হবে এখান থেকে। ওকে বললাম, "তুই কিন্তু আমাকে সকালে যা বলেছিলিস, তার এক বর্ণও মিলছে না এখন। কেন বিদিশার কথা তুলছিস? থাক না ওই প্রসঙ্গ। তুই অন্য কথা বল।" শুক্লা বলল, "ভয় হয়। তুই যদি আবার রাগ করে উঠিস। ছবিটার কথা উঠলো বলে তাই তোকে বললাম। তা চা খাবি তো? নাকি ওটার কথাও বলতে পারবো না তোকে?" হেসে বললাম, "নিশ্চই খাবো। তবে শুধু চা। চায়ের সাথে অন্য কিছু নয়।" শুক্লা বলল, "অফিস থেকে ফিরলি। শুধু চা কেন? আমি সিঙ্গারা, নিমকি এসব আনিয়েছি। এক্ষুনি তোকে দিচ্ছি।" এত বড় ফ্ল্যাটটায় শুক্লা এখন একা থাকে। ওকে বললাম, "তোর আত্মীয়স্বজন, রিলেটিভ, বন্ধু বান্ধবরা কেউ আসে না? একা একা থাকিস, বই পড়ে আর ছবি এঁকেই কি সময় কেটে যায়?" শুক্লা বলল, "আমার মাসীরা আসে মাঝে মাঝে। দুই মাসী আছে আমার। দুজনেই মায়ের থেকে কয়েকবছরের ছোট। বিয়ের সময় এক মাসী সন্মন্ধটা করে বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছিল আমার। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর, মাসীর মনে একটা আফসোসটা থেকে গেছে। মাঝে মাঝে আমাকে সান্তনা দিতে আসে। মা, বাবা কেউ তো এখন বেঁচে নেই। তাদের অভাবটা আমি অনুভব করি। কেউ এলে ভালোই লাগে। মাঝে মধ্যে আমার জ্যাঠাও আসে। বেহালায় যেখানে আমরা থাকতাম, ওখান থেকে কিছুটা দূরেই জ্যাঠাদের বাড়ী। আমার খবর নিতে মাঝে মাঝে জ্যাঠা এখানে আসে। আর আসে চুমকী বলে একটা মেয়ে। ও বিবাহিতা। আমার অফিসে চাকরী করে। আমার কলিগ। মাঝে মধ্যে আড্ডা দিতে আমার এখানে চলে আসে।"  -- "বাড়ীতে কাজের লোক?" শুক্লা বলল, "হ্যাঁ। অমলা বলে একটা কাজের বউ আছে। দুবেলা কাজ করে চলে যায়। ওর সাথে কথা বলেও আমার সময়টা কেটে যায়।" একটু চুপ থেকে শুক্লা বলতে লাগলো, "জীবনটা বড়ই কঠিন দেব। আমরা যতটা সহজ মনে করি। জীবন ততটা সহজ নয়। অনেক ঝড় ঝাপাটা আছে, অনেক বাঁধা আছে। আমাদের সবাইকেই সেগুলো অতিক্রম করতে হয়। কেউ পারে, কেউ পারে না। আমি নতুন ভাবেই জীবনটাকে আবার সাজানোর চেষ্টা করছি। জানি সুখ ফিরিয়ে দেবার মতন, সেরকম আমার জীবনে কেউ নেই। তবুও একটা চেষ্টা। একটা আশা। যদি কিছু....." আমি বললাম, "তুই তো আবার একটা বিয়ে করতে পারিস। ভালো চাকরি করিস। তোর তো পাত্রের অভাব হবে না। তাছাড়া ডিভোর্স হয়ে গেলেই যে জীবন শেষ হয়ে যায় তা তো নয়। ভগবান তোর জন্য হয়তো কোনো অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে।" শুক্লা হেসে বলল, "পরিকল্পনা? ভালোই বলেছিস। হ্যাঁ। সেরকমই তো কিছু মনে হচ্ছে। তবে কি জানিস তো? মনের মিল হওয়াটা আজকালকার দিনে বড়ই কঠিন ব্যাপার। স্বামীরা স্ত্রীকে প্রাধান্য দিতে দিতে শেষকালে এতটাই প্রাধান্য দিয়ে বসে তখন শুরু হয় মতের অমিল। ইগো ক্ল্যাশ। তাসের ঘরের মত হূড়মূড় করে বিয়েটা তথন ভেঙে পড়ে। আগুন সাক্ষী রেখে বিয়ে, কিছুই তখন তার দাম থাকে না।" আমি বললাম, "আর স্বামীদের ক্ষেত্রে?" শুক্লা বলল, "স্বামীরা যদি বউকে একেবারেই সময় না দেয়, তখন এই সমস্যাটা হয়। বিয়ে করা বউ মানেই তো সে আমার দাসী নয়। তারও সখ আহ্লাদ আছে। মনের ইচ্ছা পূরণ করার তাগিদ আছে। কিন্তু সেরকম স্বামী না জুটলে সে বউয়ের কষ্ট বোঝে না। তখন সংসারটা ছাড়খাড় হয়ে ভেঙে যায়। সাত পাকে বাঁধার কোনো দাম থাকে না।" আমি ওকে প্রশ্ন করলাম, "হঠাৎ তোর লাইফে কেন এমন ঘটল, কারণটা আমাকে বলতে পারবি?" শুক্লা হেসে বলল, "কেন? বললে, তুই আমাকে বিয়ে করবি?" আমি বললাম, "তোর তো ইয়ার্কী মারাটা স্বভাব। ভাবিস, দেব কে একটু টেনশনে ফেলে দিই আর কি? আমি ওতে অত ঘাবড়াচ্ছি না। যাকে এতদিন ধরে দেখে আসছি, আমার থেকে ভাল কেউ তোকে চেনে না।" শুক্লা বলল, "হ্যাঁ। এটা তুই ঠিক বলেছিস, আমি অন্যের চোখে খারাপ হলেও, তোর চোখে কোনদিন খারাপ হবো না। তবে জানি না কেন তুই আমার উপরে চটে গেলি? কাল অতবার তোকে ফোন করলাম, সকালেও ফোন করলাম। অথচ ফোন ধরছিস না। আমি ভাবছি, তুই আমার ওপরে রেগে আছিস বোধহয়।" শু্ক্লাকে বললাম, "না রে, কাল বাড়ীতে ফিরে মার সাথেও কথা বলিনি। সোজা বিছানায় গিয়ে উঠেছি, আর সেই যে সকালে ঘুম ভেঙেছে, তারপরেই অফিস। তোর ফোন এসেছিল, আমি খেয়ালও করিনি।" আমাকে বসিয়ে রেখে শুক্লা ভেতরে চলে গেল। বলল, "এই যা ভুলে গেছি। বস, তোর জন্য আমি চা টা করে নিয়ে আসি।" মনে হল, আমাকে যেন ধাঁধায় ফেলে রেখে দিয়েছে, শুক্লা। এত কিছু বলছে, অথচ আমাকে এখানে ডাকার কারণটা কিন্তু ও খুলে বলছে না। ঠিক দশ মিনিট পরে শুক্লা চা করে নিয়ে এলো। প্লেট ভর্তি সিঙ্গারা নিমকি আর চানাচুর এনেছে। ওকে বললাম, "করেছিস কি? এত কে খাবে? পাগল নাকি?" শুক্লা জোর করল আমায়। আমি তবুও প্লেট থেকে একটা করে সিঙ্গারা আর নিমকি তুলে দিলাম। ওকে বললাম, "এখন আর এত বেশী খেতে পারি না। জানিস তো আমার পেটের সেই রোগ। একবার শুরু হলে, ভীষন কষ্ট দেয়।" সিঙ্গারা খেতে শুরু করলাম, সেই সাথে চায়ের কাপেও ঠোঁট ছোঁয়ালাম। শুক্লা চায়ের কাপটা মুখের কাছে ধরে আমার মতন চা খেতে লাগল। কিন্তু ওর দৃষ্টি আমার চোখের দিকে। দৃষ্টিটা আমি ভাল করে পড়তে পারছি না। কিন্তু বারে বারে একই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ও আসলে আমায় কি বলতে চাইছে?
Parent