অসীম তৃষ্ণা_Written By pinuram [দ্বাদশ পর্ব (চ্যাপ্টার ০৫ - চ্যাপ্টার ০৬)]
অসীম তৃষ্ণা
Written By pinuram
দ্বাদশ পর্ব
(#০৫)
অষ্টমীর রাত বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে মানুষের ভিড়। ওদের মন্ডপে যেন জন সমুদ্রের ঢল নেমে এসেছে। সোসাইটির সবাই, আশেপাশের কয়েকটা পাড়ার লোক, বাইরের লোকজন, মানুষ কিলবিল করছে। ঋতুপর্ণা আর আদিকে দেখেতে পেয়েই মণিমালা কোথা থেকে ছুটে এলো।
ঋতুপর্ণার হাত ধরে মিষ্টি করে বলে, "এত দেরি করে দিলে কেন আন্টি?"
পেছনেই সুপর্ণা আর স্বামী নন্দন ওদের দেখে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে। ঋতুপর্ণা আদির হাত শক্ত করে ধরে মিষ্টি হেসে বলে, "না মানে ছেলে ধুতি পড়তে জানে না ওকে ধুতি পড়িয়ে নিয়ে আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।"
ভিড়ের মধ্যে থেকে পুজোর উদ্যোক্তা, কমল জেঠু ওদের দেখে এগিয়ে এসে জানিয়ে দিল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ধুনুচি নাচ শুরু হয়ে যাবে। আদি যেন তৈরি হয়ে নেয়। পাশের পাড়ার, পাশের সোসাইটির কয়েকটা ছেলেও অংশ গ্রহন করেছে, সব মিলিয়ে জনা দশেক ছেলে হয়েছে, তবে অনেকেই আদির জন্য মুখিয়ে। আসলে যেহেতু আদির মা নাচ জানে সুতরাং আদির ওপরে ওদের সোসাইটির লোকজনের আশা একটু বেশি।
মণিমালা আদির কাছে এসে কুঁচি টেনে ইয়ার্কি মেরে বলে, "কি গো আদিদা, নাচের সময়ে ধুতি খুলে যাবে না তো?"
মনিমালার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয় আদি। আগে কচি হিসাবে যে মেয়েটাকে ওর বাড়িতে মায়ের কাছে নাচ শিখতে আসত, সেই-ই আজকে বড় হয়ে গেছে। সুপর্ণার আদলে দেহ বল্লরী নধর গোলগাল, অনেকটা নিজের মায়ের ছোট বেলার মতন। পরনে যেটা সেটা শাড়ি ঠিক নয়, আসাম দেশের মেখলা পড়েছে। ছোট শাড়িটা ঘন নীল রঙের তার সাথে মিলিয়ে গায়ে একটা তুঁতে রঙের চাদর আঁচলের মতন করে বাঁধা। সুন্দরী যেন এর রাতের জন্য নিজেকে তৈরি করেছিল। কাজল আঁকা ডাগর চোখে চক্ষুবান হেনে লাল ঠোঁটে মুচকি চাপা হাসি দিয়ে আদির দিকে মিটিমিটি করে তাকিয়ে থাকে।
আদিও মুচকি হেসে মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে মনিমালার কান টেনে বলে, "আমার ধুতি খুললে তোর শাড়ি কিন্তু আর তোর গায়ে থাকবে না।" বলেই হি হি করে হেসে দেয়।
আদির হাতে কানমলা খেয়ে ওর গায়ের কাছে ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে বলে গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, "এইটা শাড়ি নয়, এটাকে মেখলা বলে, আর এটার আঁচল খুললেও ক্ষতি নেই, শাড়ি খুলতে অনেক কষ্ট আছে বুঝলে আদিদা।" বলেই চোখ টিপে ওর বাজুতে একটা চিমটি কেটে দিল।
আদি ওর চোখের ইশারা দেখে মুচকি হেসে বলে, "আচ্ছা আঁচল খুললে ক্ষতি নেই তাহলে আঁচল কি একটু খুলে দেব?" বলেই মনিমালার সদ্যজাগ্রত উন্নত কুঁচের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে, "অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছিস মনে হচ্ছে।"
লজ্জায় কান লাল হয়ে যায় মণিমালার। মাথা নাড়িয়ে মুখ বেঁকিয়ে বলে, "শুধু কি দেখলে হবে, খরচা আছে! সেই রকম মানুষ এখন আসেনি যে মণির আঁচল টানবে।" বলেই চোখ টিপে বলে, "তবে ওয়েট করছি যদি দেখা পাওয়া যায়।"
আদি ইয়ার্কি মেরে বলে, "শাড়ি খোলার জন্য মনে হচ্ছে বেশ প্লান প্রোগ্রাম করে রেখেছিস?"
মণিমালা মুচকি হেসে উত্তর দেয়, "প্লান তো অনেকদিন ধরেই করি কিন্তু যার জন্য করি সেই ঠিক ভাবে দেখেনা তো আমি কি করব বল।" ওর বাজু আঁকড়ে আদুরে কণ্ঠে বলে, "আমি যদি তাকে দেখিয়ে দেই তাহলে তুমি একটু ওকে বলবে?"
আদি মাথা দোলায়, "হুম, তার মানে ইতিমধ্যে অনেক কিছুই ঠিকঠাক করে ফেলেছিস তাই না?"
মণিমালা মিষ্টি হেসে বলে, "ঠিক তো অনেক আগেই করেছি কিন্তু আমার কপাল বল।"
আদি ওর কাঁধে হাত রেখে বলে, "আচ্ছা তোর কপালের কি করা যায় পরে ভাবা যাবে। এখন যা, পরে কথা হবে।" বলে মণিমালাকে সরে যেতে অনুরোধ করে।
ঋতুপর্ণার চারপাশে মহিলারা ততক্ষণে ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আদি একবার আড় চোখে মাকে দেখে নিল, মনে হল যেন, সহস্র সখী বেষ্টিত মধ্যমণি, আদিত্য সান্যালের হৃদয় কামিনী অসামান্য লাস্যময়ী রমণী, ঋতুপর্ণা দাঁড়িয়ে। ওদের চোখের দৃষ্টি এক হতেই আদি মুচকি হেসে দিল। ধুতি পরানোর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আদির ঊরুসন্ধি টানটান হয়ে উঠল। ওর মাকে ভীষণ সুন্দরী দেখাচ্ছে, নিম্ন নাভির নিচে দুলতে থাকা লকেটের দিকে চোখ যেতেই আদির দেহ রিরি করে ওঠে। শাড়ির কুঁচিটা বেশ নিচে, নরম থলথলে পেটের চারদিকে কোমরবিছে বিছের মতন আঁকড়ে ধরে মায়ের নরম সুন্দর তলপেটের শোভা বহুগুন বাড়িয়ে তুলেছে। ঋতুপর্ণাও চাপা হেসে ইশারায় জানিয়ে দিল যে ওকে ধুতিতে দারুন দেখাচ্ছে। সবার অলক্ষ্যে গাঢ় লাল ঠোঁট জোড়া একটু কুঁচকে ছোট্ট একটা চুমু হাওয়া ছুঁড়ে দিল আদির দিকে। মায়ের মিষ্টি চুম্বনের প্রলেপ ওর হৃদয়ের ওপরে লেগে গেল। মায়ের মিষ্টি হাসি আর চুম্বন সারা গায়ে মাখিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে মাকে ইশারায় কাছে ডাকল। ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে পরিবেষ্টিত মহিলাদের কাছ থেকে একটু সময় চেয়ে আদির পাশে এসে দাঁড়াল।
আদির গা ঘেঁষে দাঁড়াতেই ওর বুকের হিল্লোল বেড়ে ওঠে। নিচু গলায় সামনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে রে? এইখানে কিন্তু একদম শয়তানি করবি না।"
আদি স্মিত হেসে বলে, "না না, একদম কিছু না। তুমি মা জননী সাক্ষাৎ দেবী।" মায়ের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বলে, "আশির্বাদ কর যেন ধুনুচি নাচে কোন অঘটন না ঘটে।"
স্মিত হেসে আদির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "তুই ঠিক পারবি যা এখন।"
ঠিক তখনি আদির ডাক পড়ে নাচের জায়গায়। ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন ওর হাতে একটা গামছা ধরিয়ে দিল, আদি সেই গামছা কোমরে বেঁধে নিয়ে দুই হাতে ধুনুচি নিয়ে তৈরি হয়ে গেল। ঋতুপর্ণা স্নেহভরা চোখে আদির দিকে একভাবে তাকিয়ে রইল। ঢাকের কুরকুরি কানে যেতেই ওর পা দুটো মাটির সাথে এটে বসে গেল। পা যে আর নড়ে না। এর আগে কোনোদিন জন সমক্ষে নাচেনি আদি, এই প্রথম বার। চারদিকে লোকে লোকারন্য, আদির মাথায় ঘামের বিন্দু, বুকের ধুকপুকানি থেমে গেল, গলার কাছে একটা কিছু দলা পাকিয়ে এলো।
আদির ঘর্মাক্ত অস্বস্তি ভরা চেহারা দেখে ঋতুপর্ণা হাত তুলে ইশারা করে বলে, সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই কোনদিকে না তাকিয়ে শুরু করে দে। মায়ের আশীর্বাদ বৃথা যায় না।
আদি মায়ের ইশারা দেখে অল্প মাথা নিচু করে ঢাকের তালে তালে নাচতে শুরু করে দিল। ওর কানে কোন কথা কোন চেঁচামেচি কিছুই তখন আর ঢোকে না। শুধু ঢাকের বাদ্যি আর মাঝে মাঝে নাচতে নাচতে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে। মায়ের মিষ্টি স্নেহ ভরা হাসি ওর বুকে শক্তির সঞ্চার করে। দম বন্ধ করে ঢাকের তালে একবার মাথার ওপরে ধুনুচি নিয়ে দাঁড়ায়। সেই দেখে হাততালিতে মন্ডপ ফেটে পড়ে। এক্সারসাইজ করা পেটান দেহ, এঁকে বেঁকে একবার দুই হাতে ধুনুচি নিয়ে পেছনের দিকে হেলে পড়ল। দ্বিতীয় বারের জন্য হাততালি। সেই হাততালি শুনে ঋতুপর্ণার মনের আনন্দ আর ধরে না। ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে হাত নাড়িয়ে জানিয়ে দিল দারুন হচ্ছে। ওর বুক ভরে গেল সকলের বাহবায়। ছেলের কৃতিত্ব দেখে ওর বুক উপচে পড়ে, চোখের কোণে এক চিলতে জল চলে আসে।
অনেকদিন আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে যায়। আদি স্কুলে একশ মিটার রেসে প্রথম এসেছিল, সেদিন দৌড়ের শেষে সেই মেডেল আদি মাকে পড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরে যতবার আদি কোন প্রাইজ জিতেছে ততবার ওকে এসে সেই মেডেল দিয়েছে।
ধুনুচি নামিয়ে, এক দৌড়ে মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "কেমন হয়েছে? জানো খুব ভয় করছিল।"
ঋতুপর্ণা আদির ঘর্মাক্ত কপাল আঁচল দিয়ে মুছিয়ে মিষ্টি করে বলে, "ভয় কিসের রে পাগলা। আমার ছেলে সামান্য এইখানে নাচতে গিয়ে ভয় পেয়ে যাবে? কখন নয়।"
মায়ের স্নেহ ভরা গলা শুনে আসস্থ হয়ে আদি বলে, "তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না মা, প্রথমে আমার পা একদম নড়তে চাইছিল না, তারপরে ওই যখন তুমি হাত তুলে আশীর্বাদ দিলে না, তখন যেন দেহে একটা শক্তি ভর করে এলো। তারপরে আর কিছু জানি না।"
ছেলের মুখে এই কথা শুনে ঋতুপর্ণার চোখের কোল ঝাপসা হয়ে উঠল। কিঞ্চিত অশ্রু সিক্ত গলায় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল, "জল খাবি? খুব টায়ারড হয়ে গেছিস না?"
এতক্ষণ নেচে ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছিল আদি। ওর গেঞ্জি ভিজে গিয়েছিল, পাঞ্জাবি গায়ের সাথে বুকের সাথে লেপ্টে গিয়েছিল। আদি মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে স্মিত হেসে বলল, "না তোমার পাশে দাঁড়ালে সব টায়ারডনেস চলে যায়।" কিছুক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করে, "তিস্তা আসার কথা ছিল, রাতে ঠাকুর দেখতে যাবে বলছিল। কিছু কি খবর পেলে?"
ঋতুপর্ণা মাথা নাড়িয়ে বলে, "না আমিও সেটাই ভাবছি, মেয়েটা আসবে বলে কোন ফোন করল না।"
ঋতুপর্ণা তিস্তাকে ফোন করে জানতে পারে যে ওরা কয়েকজন মিলে কোলকাতার বাইরে বেড়াতে বেরিয়ে গেছে। সেই শুনে ঋতুপর্ণা একটু আক্ষেপ করে আদিকে বলে, "দেখলি তো, তোর প্রানের বান্ধবী বলিস যাকে সে তোকে ফাঁকি দিয়ে বেড়াতে চলে গেছে।"
মায়ের এই কথা শুনে আদি গলা নামিয়ে মায়ের কানেকানে বলে, "প্রানের বান্ধবী কিন্তু আমাকে ফাঁকি দেয়নি, সে কিন্তু ঠিক আমার পাশেই আছে। ওরা তো দুদুভাতু, আসে যায়, ওরা কে এলো কে গেল সে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।"
কানের ওপরে চাপা গলা অনুধাবন করে ঋতুপর্ণা সতর্ক হয়ে ওঠে, "যা দুষ্টু সবাই আছে। শর্ত না মেনে চললে কিন্তু...."
আদি ফিসফিস করে বলে, "শর্ত মনে আছে মা।"
এমন সময়ে মণিমালা এক দৌড়ে আদি আর ঋতুপর্ণার কাছে এসে বলে, "আদিদা আদিদা, তুমি দারুন নেচেছ।"
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে মণিমালাকে জিজ্ঞেস করে, "তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলিস রে?"
মণিমালা উত্তর দেয়, "ওই একদম প্রথম রো তে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও করছিলাম।"
আদি মনিমালার মাথার পেছনে চাঁটি মেরে ইয়ার্কি মেরে বলে, "দেখলি তো, আমার ধুতি খুলল না।"
মণিমালা হেসে কুটোপুটি হয়ে উত্তর দিল, "ভাগ্যিস খোলেনি না হলে কি হত বল তো? একদম এহ যাহ হয়ে যেত।"
আদি ওর কান মুলে বলে, "এইবারে তোর শাড়ির পালা কিন্তু...."
ঋতুপর্ণা চাপা হাসি দিয়ে আদির দিকে তাকায়। যেন জিজ্ঞেস করতে চেষ্টা করে, কি চলছে। কচি মনিমালার হাসি আর উৎফুল্ল দেখে ঋতুপর্ণার নিজের পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে যায়। হৃদয়ের গভীরে কচি প্রেমের দোলা, সারা অঙ্গ এক ভীষণ উৎফুল্ল আনন্দে ভরপুর। মণিমালা যেন উপচে পড়ছে উচ্ছ্বাসে। এতদিন মনিমালার এই রূপ ঋতুপর্ণার চোখে কোনোদিন পড়েনি অথবা খেয়াল করেনি। মণিমালা আগে মাঝে মাঝে আদির কথা জিজ্ঞেস করত কিন্তু বাচ্চা মেয়ের অহেতুক প্রশ্ন ভেবে এতদিন এড়িয়ে গেছে সেইসব চোখের ঝলক। আদির চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হলেও মণিমালা বড় হয়ে উঠেছে, ক্লাস টেনে পড়ে। আজকালের মেয়েরা বয়সের চেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে ওঠে, মণিমালা কোন অংশে ব্যাতিক্রম নয়। মনিমালার কচি উচ্ছ্বাসে ঋতুপর্ণার হৃদয়ের এক কোনায় শরতের নির্মল মলয়ের উদয় হয়। এক লহমায় অনেক কিছুই ভেবে বসে ঋতুপর্ণা। আপন মনে মাথা ঝাঁকিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে দেখে। আদি আর মনিমালার বাচ্চা সুলভ মারামারি দুষ্টুমি আর বাচ্চা সুলভ বলে মনে হল না। মনে হল কোথায় যেন এই ছবিটাতে নিজে বড় বেমানান। আদির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মণিমালা আপন মনে অনেক কিছুই বকবক করে যাচ্ছে আদিও মাঝে মাঝে উত্তর দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকিয়ে দেখছে।
ঘড়ি দেখল ঋতুপর্ণা, রাত দশটা বাজে কিন্তু মন্ডপে ভিড় প্রতি নিয়ত বেড়েই চলেছে। অষ্টমীর পুজো বলে কথা, এখন ভিড় বাড়বেই, ভিড় কমতে কমতে রাত গড়িয়ে হয়ত সকাল হয়ে যাবে। গত কয়েক বছর ঠিক ভাবে পুজো দেখা হয়ে ওঠেনি। এইবারে ভেবেছিল তিস্তা কৌশিক আরো অন্যেরা মিলে ঠাকুর দেখতে যাবে। যদিও ঠাকুর দেখা উপলক্ষ্য মাত্র, আসলে একটু বাড়ির বাইরে বের হতে চেয়েছিল ঋতুপর্ণা। এতদিন গৃহবন্দি হয়ে ওর হৃদয় মুক্তির জন্য আকুলি বিকুলি করছিল। একটু নির্জনে নিভৃতে ছেলের পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু শহরের এই ভিড়ের মধ্যে সেই সুযোগ কিছুতেই আর হয়ে ওঠে না।
আদির বাজুতে একটা চিমটি কেটে ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করল, "কি রে তিস্তা তো যাচ্ছে না, তাহলে কি করা যাবে?"
আদি একটু ভেবে চিনতে উত্তর দেয়, "আগামী কাল আমি আর তুমি বিকেলে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে যাবো।"
ঋতুপর্ণার হৃদয় খুশিতে নেচে ওঠে, "সেটাই ভালো হবে, শুধু আমি আর তুই। রাতে কি প্লান তাহলে, আমি কিন্তু কিছুই রান্না করিনি ভেবেছিলাম...."
আদি মায়ের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে, "চল বাইরে কোথাও খেয়ে আসি।"
পাশেই সুপর্ণা দাঁড়িয়ে ছিল, ওদের কথাবার্তা শুনে বলল, "আরে ঋতুদি বাইরে কেন যাবে, চল আমাদের বাড়ি চল।"
মণিমালা সেই শুনে আদির দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে দিল। আদিও প্রতিউত্তরে একটু হেসে দিল। সুপর্ণার বাড়ি সোসাইটির কাছেই, বেশি দেরি হল না ওদের বাড়ি পৌঁছাতে। দুতলা বাড়ি, যদিও বেশি বড় নয়, ওপরের তলায় সুপর্ণা থাকে আর নিচের তলায় সামনের একটা বড় ঘরে বিউটি পার্লার খুলেছে। ঋতুপর্ণা কখন আগে সুপর্ণার বাড়িতে আসেনি, বরাবর সুপর্ণা ওর বাড়িতে এসে প্রসাধনি করে যেত। সুপর্ণা নিজের বিউটি পার্লার ঘুরিয়ে দেখায়। বড় ঘরটা বেশ সুন্দর করে সাজানো, একদিকে দেয়াল জুড়ে বড় আয়না বসানো, তার সামনে চারখানা চেয়ার পাতা। চেয়ার গুলো বেশ দামী, কুশন দেওয়া, হেলান দিলে পেছনে নেমে যায় তাতে বেশ সুবিধে হয়। সবকটা চেয়ার পর্দা দিয়ে ঘিরে ছোট ছোট কেবিনের আকার দেওয়া হয়েছে। ঘরের একপাশে একটা কাঠের দেওয়াল দেওয়া।
সুপর্ণা ঠোঁট টিপে হেসে ঋতুপর্ণাকে সেই কাঠের দেওয়ালে ঘেরা জায়গা দেখিয়ে কানেকানে বলে, "এটা ম্যাসাজের জায়গা বুঝলে। তোমার যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে চলে এসো একদিন।"
ঋতুপর্ণার কান লাল হয়ে যায় ওই কথা শুনে, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ওর ছেলে ওর দিকে কি লক্ষ্য করছে নাকি? আদিকে দেখতে পেল না ঋতুপর্ণা, ওকে নিয়ে মনে হয় মণিমালা উপরে চলে গেছে।
সুপর্ণার পিঠে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "আমার দরকার পড়লে তোমাকে বাড়িতেই ডেকে নেব।"
সুপর্ণা চাপা হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, "ইসসস...."
রাতের খাবারের সময়ে বেশ হাসি মজায় কেটে যায়। খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ওদের বেশ রাত হয়ে যায়।
বাড়িতে ঢুকে আদি আড়ামোড়া খেয় হাওয়ায় হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বলে, "নেচে আমার গা হাত পা বড্ড ব্যাথা করছে।" বলেই মায়ের দিকে মুচকি হেসে তাকায়।
সেই চটুল হাসির অর্থ ধরে ফেলে ঋতুপর্ণা, তাও অবুঝের ভান করে ঠোঁট টিপে হেসে বলে, "ভালো করে এখন হাত মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পর, সকালের মধ্যে এই ব্যাথা পালিয়ে যাবে।"
আদি কয়েক পা মায়ের দিকে এগিয়ে যেতেই ঋতুপর্ণা নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। মনের মধ্যে ঝড় ওঠে, এই বুঝি ছেলে ওকে জড়িয়ে ধরে ব্যাথা প্রশমন করে দিতে আবদার করে। কয়েক ঘন্টা আগেই ধুতি পরার মুহূর্তের ছবি ওর চোখের সামনে ভেসে উঠতেই, বুকের ওপরে হাত চেপে বুকের মধ্যে বিষাক্ত কামনার দংশন চেপে ধরে। মায়ের হঠাৎ করে ঠোঁট কামড়ে ওর দিকে তির্যক ভাবে তাকিয়ে থাকা, তারপরে স্তন বিভাজিকায় হাত রেখে চেপে ধরা কোন কিছুই দৃষ্টি অগোচর হয় না আদির।
আদি মুচকি হেসে মায়ের কানে কানে বলে, "না না তোমার কথা বলছিলাম না মানে বলছিলাম এই যে আগামী কাল একবার সুপর্ণা কাকিমার কাছে যাবো ম্যাসাজ করতে।"
কটমট করে আদির দিকে তাকায় ঋতুপর্ণা, হাত তুলে মৃদু ধমক দিয়ে বলে, "সুপর্ণার বাড়িতে গেলে কিন্তু ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব শয়তান।"
তারপরে কিছুক্ষণ আদির মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে অনুধাবন করতে চেষ্টা করে ঋতুপর্ণা। আসলে সুপর্ণার কাছে যাওয়া হয়ত একটা বাহানা, হয়ত আদি কচি মনিমালার রূপের প্রেমে পড়ে গেছে। মনিমালার চোখে প্রেমের আগুন ঋতুপর্ণার দৃষ্টি অগোচর হয়নি, আদিও মন্ডপে ওর পাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ গল্প গুজব করেছে। সত্যতা যাচাই করে দেখতে হবে, তবে ছেলের ওপরে ওর অগাধ বিশ্বাস, কোন কিছু হলে নিশ্চয় ওকে জানিয়ে দেবে।
আদি মাথা দুলিয়ে সুবোধ বালকের মতন উত্তর দেয়, "আচ্ছা বাবা আচ্ছা, সুপর্ণা কাকিমার কাছে যাবো না।"
ঋতুপর্ণা হাই তুলে মুচকি হেসে বলে, "বেশি ব্যাথা ট্যাথা জমিয়ে রাখিস না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর কালকে নবমী।"
আদি পাঞ্জাবি খুলে পেশি গুলো ঋতুপর্ণার লোলুপ চোখের সামনে নাড়িয়ে বলে, "ব্যাথা জমলে কি করব সেটা বললে না তো?"
ঋতুপর্ণা ওর গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "যা দুষ্টু, অনেক নাকামো মেরেছিস এইবারে শুয়ে পড়।"
আদি মায়ের কোমর জড়িয়ে গালে ছোট একটা চুমু খেয়ে বলে, "ওকে সোনা ডার্লিং, গুড নাইট।"
ঋতুপর্ণা চুম্বনের উত্তরে আদির বুকের কাছে ঘন হয়ে এসে ওর কপালে গালে মাথায় বেশ কয়েকটা ভিজে গাঢ় চুমু খেয়ে বলে, "গুড নাইট সোনা।"
(#০৬)
দুপুরে পর থেকে সাজগোজের শুরু। ঋতুপর্ণার হৃদয় খুশিতে ভরপুর, অনেকদিন পরে বেড়াতে বের হবে। আসলে খুশিটা বেড়াতে যাওয়ার জন্য নয়, ছেলে পাশে থাকবে ওকে ভিড়ের মধ্যে আগলে নিয়ে যাবে, একাকী দুইজনা নিভৃতে গাড়ির মধ্যে বসে থাকবে, খুশিটা এই নিয়ে। একবারের জন্য মনে হয় সেই ছোট বেলার ঋতুপর্ণা হয়ে যেতে। ইস, কত ভালো হত আবার সেই পুরানো দিন যদি ফিরে পেত। অনেকদিনের অপেক্ষার অবসান, কাঙ্খিত পুরুষের সন্ধান পেয়েছে ওর শুন্য হৃদয়। না না সেই ছোটবেলা ফিরে পেতে চায় না ঋতুপর্ণা, তাহলেই আবার অনেক কিছুই হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। এই বেশ, এই বিষাক্ত প্রেমে নিজেদের শরীর মন ডুবিয়ে ভেসে যাওয়াতেই অনাবিল আনন্দ, অনাবিল সুখ। একসাথে পুত্রের ভালোবাসা তার সাথে কাঙ্খিত পুরুষের প্রেম, কোন জননীর কপালে এই সুখ জোটে। ঋতুপর্ণার জানা নেই।
"এই আদি একটু শোন তো এইখানে।" আলমারি খুলে এক গাদা শাড়ি বের করে চেঁচিয়ে ডাক পারে ছেলেকে। কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারছে না কোন শাড়িটা পরবে।
আদি ভাত খেয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। মায়ের সাজতে ঘন্টা দুইয়েক, ততক্ষণে অনায়াসে একটা ছোট ঘুম দেওয়া যায়। ধ্যাত, এই মহিলা কিছুতেই ওকে শান্তিতে একটু ঘুমাতে দেবে না। "কি হল তোমার?" চেঁচিয়ে উত্তর দেয় আদি।
ঋতুপর্ণা এক গাদা শাড়ি হাতে আদির ঘরের পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে মধু ঢালা গলায় জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে সোনা, কিছুতেই বুঝতে পারছি না কোন শাড়ি পরব।"
আদি মায়ের হাতে এক গাদা শাড়ি দেখে ধন্দে পড়ে যায়। মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়, একটা তুঁতে রঙের জর্জেট জালের শাড়ি, একটা কচি কলাপাতা রঙের পাতলা স্বচ্ছ শাড়ি, একটা আকাশি নীল রঙের কটকি শাড়ি, একটা কাঁচা হলদে রঙের সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্কের শাড়ি। আদি মাথা চুলকে একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয়। ঋতুপর্ণা এক এক করে এক একটা শাড়ি আঁচলে জড়িয়ে আদিকে দেখাতে শুরু করে আর জিজ্ঞেস করে কোনটা পরবে।
আদি বেশ খানিকক্ষণ দেখার পরে মাকে বলে, "ওই কাঁচা হলদে রঙের শাড়িটা পরলে ভালো দেখাবে।"
ঋতুপর্ণা নাক কুঁচকে মুখ ব্যাজার করে বলে, "উহু, এর আঁচলটা অতটা সুন্দর লাগছে না রে।"
আদি ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে, "মেয়েদের এই হচ্ছে প্রবলেম, জিজ্ঞেস ঠিক করবে কিন্তু যখন মতামত জানাব তখন ফুট কাটতেই হবে।" আরো একটু দেখে বলে, "কচি কলাপাতা রঙের শাড়িটা পর, ওটা তো ভালো। আগে মনে হয় না পরেছ।"
ঋতুপর্ণা কচি কলাপাতা রঙের শাড়িটা কাঁধের ওপরে আঁচলের মতন জড়িয়ে একটু এদিক ওদিক ঘুরে বলে, "এর জমিনটা অত কাজ করা নয়। নবমীর ঠাকুর দেখতে যাবো একটা ভালো শাড়ি না পরলে হয়?"
আদি খেপে যায়, "ধুত্তেরি, তোমার যা ইচ্ছে হয় সেটা পর না। যদি এই ছিল তাহলে অত গুলো শাড়ি হাতে এইখানে কি করছ? এটার এইখানে প্রবলেম, ওটার ওইখানে প্রবলেম। তোমার মাথায় প্রবলেম।"
অভিমানী ঋতুপর্ণা মুখ বেঁকিয়ে আদিকে রাগত কণ্ঠে বলে, "যাঃ তুই একাই যা ঠাকুর দেখতে, আমি যাবো না।"
মায়ের অভিমানী চেহারা দেখে আদির বুক ব্যাথা করে উঠল। এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে থুঁতনিতে আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলল, "আচ্ছা বাবা," বলে মায়ের কপালে ছোট একটা চুমু খেয়ে বলল, "তুঁতে রঙের শাড়িটা পর তাহলে। মনে হয় এটাতে কোন প্রবলেম নেই।"
ওর কথা শুনে ঋতুপর্ণা হেসে ফেলে। মাথা দুলিয়ে জানায়, না এটাই পরবে। আদি মায়ের কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে প্রেমকাতর কণ্ঠে বলে, "অভিমান করলে তোমাকে ভারি সুন্দরী দেখায়, তবে" বলেই বুকের ওপরে একটা কিল মেরে বলে, "এইখানে বড্ড ব্যাথা করে।"
ঋতুপর্ণা রক্তে রঞ্জিত লজ্জিত চোখে আদির দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বলে, "এই যাঃ আর ওই মেকি বুলি ঝারতে হবে না। ম্যাসাজ নিতে তো সুপর্ণার কাছে জাচ্ছিলিস, যা না।"
আদি মায়ের কোমর জড়িয়ে নধর কোমল দেহের সাথে কঠিন দেহ মিশিয়ে আদর করে বলে, "খাঁটি সোনা ছেড়ে কে ওই ইমিটেশানের দিকে তাকায় বল। সুপর্ণা, তিস্তা সব মেকি, সব কিছুই টেম্পোরারি একমাত্র তুমি খাঁটি।"
ছেলের বুকের ওপরে হাতের তালু মেলে বলে, "আচ্ছা বাবা, এখন আমাকে একটু ছাড়, আমি সাজতে শুরু করি, তুই পারলে একটু রেস্ট নিয়ে নে।"
আদি মায়ের গালে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে, পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, "ওকে ডার্লিং, আপনার আদেশ শিরোধার্য। কিন্তু আমি কি পরব?"
ছোটবেলা থেকে বরাবর ওর মা-ই ওর জামা কাপড়ের দেখাশোনা করে এসেছে। কুড়ি বাইশ বছর বয়স হলে হবে কি, নিজের গেঞ্জি জাঙ্গিয়া পর্যন্ত মা কিনে এনে দেয়, শার্ট আর জিন্সের কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া যাক। ঋতুপর্ণা ছাড়া আদির এক পাও চলে না। ঋতুপর্ণা একটু চিন্তায় পড়ে গেল, এই স্বচ্ছ তুঁতে রঙের ভীষণ আকর্ষক শাড়ি পরে তো আর ছেলের সাথে ঘুরতে বেড়ানো যায় না, আদিকে অন্তত মানানসই কিছু পড়তে হয়। ওর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিল, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পুরুষত্ব ঠিকরে পড়ছে ছেলের বলিষ্ঠ দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বুকের পেশি গুলো বেশ ফুলো ফুলো, বুকের ওপরে বেশ লোম, দুই হাতেও লোম। উফফফ ভাবতে ভাবতে ওর শরীর জুড়ে ছটফটানিটা হঠাৎ করে বেড়ে গেল। ধুতি পড়াতে গিয়ে ওর নরম আঙ্গুলে আদির ঘন কালো কুঞ্চিত যৌন কেশের ছোঁয়া লেগে গিয়েছিল। ভাবতেই ওর গা শিরশির করে উঠল।
ঠোঁট কেটে চোখ বেঁকিয়ে হেসে বলে, "বাইরে হয়ত একটু ঠাণ্ডা পড়তে পারে, তুই তোর ওই গ্রে কালারের ব্লেজার পরে নিস। একটা গ্রে জিন্স আর সাদা গেঞ্জি পরে নিস।" আদির বুকের কাছে ঘন হয়ে এসে মুখ তুলে মিহি আদুরে কণ্ঠে বললে, "আসলে কি জানিস...."
মায়ের ভাসা ভাসা চোখের চাহনি দেখে আদির হৃদপিণ্ডের ধুকপুক ক্ষণিকের জন্য থেমে গেল। ঋতুপর্ণা ভাসা ভাসা গলায় বলল, "বড্ড ..." আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই ওর মনে হল ছেলের ভীষণ দৃষ্টি ওকে চুম্বকের মতন টেনে ধরে নিজের মধ্যে সেঁধিয়ে নিয়েছে।
আদি বুঝে গেল মায়ের চোখের অব্যাক্ত বানী। মাথা নামিয়ে মায়ের নাকের ডগায় আলতো জিব বুলিয়ে বলল, "বুঝে গেছি কি চাইছ।"
আদিও পড়তে পারে মায়ের চোখের ভাষা।
ছেলে ওর চোখের ভাষা পড়ে ফেলেছে বুঝতে পেরেই লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে ওঠে ঋতুপর্ণার সারা মুখমন্ডল। শাড়ি হাতে আদিকে একটু ধাক্কা মেরে নিজের বুক থেকে সরিয়ে বলে, "আচ্ছা আমি তৈরি হতে যাচ্ছি।"
আদি মাকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে জানিয়ে দিল, "দরকার পড়লে ডাক দিও।"
আদি জানে মায়ের ডাক পড়বেই, কারন এই তুঁতে রঙের শাড়ির ব্লাউজটা ভীষণ আকর্ষক, বেশ আঁটো আর সামনের দিকে গভীর কাটা। পিঠের দিকে কিছু নেই বললেই চলে, ব্লাউজের কাপড় দিয়েই পেছনের বাঁধনি কোন হুক নেই।
আদি মুচকি হেসে নিজের বিছানায় গড়িয়ে পড়ল। সারা অঙ্গে ছন্দ তুলে কোমর বেঁকিয়ে নিতম্ব দুলিয়ে ঋতুপর্ণা বেরিয়ে গেল আদির ঘর থেকে। ওর চোখের ঝলসানি দেখে আদি পাগল হয়ে গেল। এত পাশে থেকেও মনে হল মায়ের সাথে প্রতি মুহূর্ত কেমন যেন পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে, কিছুতেই যেন মাকে নিজের করে নিতে পারছে না। যজ্ঞ স্থানে, কাষ্ঠ ঘৃত কর্পূর তেল সব মজুত কিন্তু সেই আগুনের ফুলকি কেমন যেন বারংবার সামনে এসেও সঠিক ভাবে জ্বলতে পারছে না।
বেশ কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে তিস্তাকে একটা ফোন করল আদি। জানতে পারল যে কৌশিকের কয়েকজন বন্ধু মিলে ওরা সবাই দিঘা বেড়াতে গেছে আর সেইখানে উদ্দাম মজা করছে। আদি মুচকি হেসে জেনে নিল ওদের মজার আসল ঘটনা, তিস্তা বিশেষ কিছু না লুকিয়ে জানিয়ে দিল যে বেশ ভালোই মজা হচ্ছে কৌশিকের বন্ধুদের সাথে আর তাদের গার্ল ফ্রেন্ডদের সাথে!
আদিও বেশ কিছুক্ষণ পরে জামা কাপড় পরে তৈরি হয়ে নিল। চারটে বাজে, পাঁচটায় সন্ধ্যে নেমে যাবে, এরপরে বের হলে রাস্তায় প্রচন্ড ভিড় হবে মন্ডপে প্রচন্ড ভিড় হয়ে যাবে। ঠিক ভাবে ঠাকুর দেখা হবে না। তবে ঠাকুর দেখা উপলক্ষ্য মাত্র, আসলে মায়ের কাছে থাকতে চায় আদি, মায়ের ত্বকের সাথে ত্বক মিলিয়ে ভিড়ের মধ্যে মাকে জড়িয়ে মায়ের বুকের মধ্যে নিরাপত্তার আবেশ সঞ্চার করতে চায়।
আদি বসার ঘরে বসে থাকে অধীর অপেক্ষায়, কখন মা ডাক পাড়বে, বলবে আদি প্লিস আমার ব্লাউজটা একটু বেঁধে দিয়ে যাবি। আদির অপেক্ষার অবসান আর কিছুতেই হয় না, চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠে, ওদিকে ওর ডাক আর আসে না।
অধৈর্য হয়ে আদি নিজেই মাকে ডাক দেয়, "কি হল কতদুর সাজ হল?"
ঋতুপর্ণা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিল, সাজা গোজা সব শেষ। নিজেই পিঠের বাঁধনি বেঁধে নিয়েছে, জানতো আদিকে ডাক দিলেই ওর যাওয়া হয়ে যাবে। ছেলের পুরুষালী বাহুর বেষ্টনীতে বাঁধা পড়তে ওর কোমল সিক্ত চিত্ত যে ব্যাকুল হয়নি তা নয় তবে আদি এমন ভাবে দেখবে আর জড়িয়ে ধরবে তাতে বের হতে আরো বেশি দেরি হয়ে যাবে, ওর পুরুষ্টু জঙ্ঘা দুটো মাখনের মতন গলে পড়ে যাবে, ঊরুসন্ধি ভিজে যাবে, চ্যাপচ্যাপে যোনি রসে ভেজা প্যান্টি পরে ঠাকুর দেখতে যেতে বড্ড অসুবিধে হবে।
আদির ডাকের উত্তরে সারা দিয়ে ঋতুপর্ণা পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে এলো, "বড্ড তাড়া মারিস তুই।" বলেই নয়নের কোনায় ঝিলিক মেরে জিজ্ঞেস করে, "কি রে এইবারে ঠিক আছে? তোর মনের মতন হয়েছে তো?"
আদি হাঁ করে দাঁড়িয়ে মাকে দেখে। তুঁতে রঙের স্বছ পাতলা শাড়ির পরতে পরতে আগুন ঝিলিক খেলে বেড়াচ্ছে। ঋতুপর্ণার তীব্র মদোমত্তা কামোন্মত্ত ভরা যৌবনের পসরা নিয়ে আদির সামনে দাঁড়িয়ে। আঁচল জুড়ে ছোট ছোট রুপোলী ফুলের কাজ। পটল চেরা ডাগর চোখের কোণে টানা কাজল রেখা, চোখ দুটো ভাসা ভাসা প্রচন্ড আবেগ মাখানো অথচ যেন কত কথা লুকিয়ে। শাড়ির রঙের সাথে মিলিয়ে কপালে নীল রঙের বড় টিপ আঁকা। চোখের পাতায় নীলচে রঙের আবরন, চোখের পাতা টানাটানা। ঘন কালো মেঘের মতন কেশরাশি ঘাড়ের কাছে একটা খোঁপা করে বাঁধা তাতে আবার একটা কাঠের ক্লিপ। নরম ঠোঁট জোড়া গাঢ় লাল রঙ্গে রাঙ্গানো, দুটো পদ্ম কুড়ি মনে হয়। কানে মুক্তোর লম্বা দুল, মাথা নাড়ানোর সাথে সাথে দুই কানে মুক্তোর ঝিলিক, সেই সাথে লাল ঠোঁটের পেছন থেকে সারি সারি মুক্তোর ঝিলিক। ঋতুপর্ণার রূপে উন্মাদনার শেষ সীমান্তে পৌঁছে যায় আদির বুক। মনে হয় এখুনি জড়িয়ে ধরে চুম্বনে চুম্বনে লালচে গাল, নরম লাল ঠোঁট জোড়া কামড়ে নিংড়ে শেষ করে দেয়। গলায় মুক্তোর হার, একটা ছোট হার গলায় চেপে বসে আরেকটা লম্বা মুক্তোর হার স্তন ছাড়িয়ে স্তনের মাঝে দুলছে। আদির হাত নিশপিশ করে ওঠে, ওই মুক্তোর হারের জায়গায় নিজের হাত দুটো থাকলে কি হত। ছোট আঁটো ব্লাউজের সামনের দিকে বেশ গভীর কাট, স্তন বিভাজিকার অধিকাংশ উন্মুক্ত হয়ে উপচে বেরিয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে বুকের ওপরে দুটো বড় বড় গোল আকারের কিছু বসানো। ব্লাউজের হাতা দুটো জালের, সম্পূর্ণ রোমহীন বাহুমুল অনাবৃত হয়ে জালের হাতা থেকে ঠিকরে বেরিয়ে পড়েছে। বাহুমুলের কচি ভাঁজ দেখে আদির পুরুষাঙ্গ সটান দন্ডবত হয়ে কুর্নিশ জানিয়ে দিল। আঁচলের নিচের দিকে চোখের দৃষ্টি চলে গেল আদির। শাড়ির কুঁচি নিম্ন নাভির বেশ নিচে বাঁধা, সোনার কোমর বিছা দেখা যাচ্ছে না, হয়ত শাড়ির কুঁচির মধ্যে ঢুকে পড়ে গেছে। কিন্তু গভীর নিম্ন নাভির নিচে থলথলে পলি জমানো উপত্যকা স্বরূপ তলপেট দেখে আদির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। মৃদু তালে চলনের ফলে নুপুরের নিক্কন ধ্বনি ওর কানে এসে পৌঁছায়। পায়ের দিকে তাকিয়ে বিশেষ কিছুই দেখতে পেল না আদি তবে দুই রাঙ্গা পায়ে তখন মেহেন্দির রঙ্গে মাখামাখি। দুই হাতে কবজি পর্যন্ত তখন মেহেন্দির রঙ আবছা হয়ে রয়েছে, মুছে যায়নি। ডান হাতের কব্জিতে মুক্তোর মোটা ব্রেসলেট, বাম হাতের কব্জিতে সোনার ঘড়ি। সাক্ষাৎ দেবী প্রতিমা, অসামান্য দ্যুতি ছড়িয়ে অসামান্য যৌন আবেদনে অঙ্গ ভিজিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে। রক্তের তীব্র আলোড়ন কোন রকমে সংযত রেখে মায়ের পা থেকে মাথা পর্যন্ত বারেবারে চোখ বুলিয়ে গিলে খেয়ে নেয়। আদির পায়ের মাঝের বৃহৎ যৌনাঙ্গ অশ্লীল ভাবে ফনা তুলে দাঁড়িয়ে পড়ে।
বার কতক ঢোক গিলে আদি ফ্যাস ফ্যাসে গলায় বলে, "কাউকে মারতে যাচ্ছ নাকি গো?"
আদির দিকে এক পা একপা করে এগিয়ে এসে মিহি আবেগ জড়ানো, হৃদয় কাঁপানো গলায় বলে, "না রে সোনা...." বাকিটা আর মুখ থেকে বের হল না ঋতুপর্ণার, "নিজেই মরতে যাচ্ছি.... মরেই গেছি তোর ভালোবাসার আগুনে....."
আদি মায়ের ভারি নিতম্বের দিকে একভাবে তাকিয়ে গজগামিনীর চলনে মুগ্ধ হয়ে বুক চাপড়ে বলে, "অন্যের কথা জানি না তবে আমি মরে যাবো তোমার এই রূপে।"
আদির কাছ থেকে সরে গিয়ে বাড়ির চাবি নিতে নিতে বলে, "মরতে ভয় পাস নাকি রে?"
আদি মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "মরতে সবাই ভয় পায়, মা।"
চাবির গোছা ক্লাচের মধ্যে ঢুকিয়ে ছেলের বুকের কাছে সরে এসে আবেগ জড়ানো মিহি গলায় বলে, "মরতে সকল কে একদিন হবেই আদি, তাই বলে আজকের বেঁচে থাকার রসদ থেকে নিজেকে কেন বঞ্চিত করা। মৃত্যু হচ্ছে ভালোবাসার আরেক নাম। মৃত্যু কখন কালো নয়, মৃত্যু সমধুর, মৃত্যু সব ছেড়ে সব ত্যাগ করে দেওয়ার অন্য নাম। ভালোবাসার জন্য যদি ত্যাগ না করতে পারিস তাহলে ভালোবাসা প্রকৃত ভালোবাসা নয়। অন্যের ভালোতে বাস করাকে বলে ভালোবাসা।"
আদি কিছু বুঝল কিছু বুঝল না ওর চোখে শুধু মাত্র ওর প্রেমিকা, ওর মা ঋতুপর্ণার ছবি। মায়ের মুখের দিকে ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে বলে, "কি বললে কিছুই বুঝলাম না তবে এইটুকু বুঝলাম যে আমি...." বেশি আর বলতে পারল না আদি.... তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
ঋতুপর্ণার নরম কোমর দুই হাতের থাবার মধ্যে আঁকড়ে ধরে কাছে টেনে মুখের ওপরে মুখ নামিয়ে দিল আদি। তিরতির করে কেঁপে উঠল ঋতুপর্ণার সারা অঙ্গ, এক মৃদু কম্পন বয়ে গেল ওর সারা শরীর বয়ে। দুইজনে একাত্ম হয়ে হারিয়ে যেতে চাইল দুইজনের মাঝে। পরস্পরের চোখের তারা এক হয়ে গেল। ঋতুপর্ণার সারা বুক জুড়ে ভীষণ আবেগ দেখা দিল, চোখের পাতা ভারি হয়ে নেমে এলো। আদির মাথা ঝুঁকে গেল মায়ের চাঁদপানা মুখমণ্ডলের ওপরে। শ্বাসের ঘনত্ব বেড়ে উঠল দুইজনের, ঘন আবেগ মাখানো উষ্ণ শ্বাসে মা আর ছেলে নিজেদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
বুকের চিনচিন ভীষণ ভাবে বেড়ে উঠতেই ছেলের বুকের ওপরে ক্লাচ দিয়ে আলতো বাড়ি মেরে মিহি পরিহাস ছলে বলল, "কিরে এখন দেরি হচ্ছে না, তখন যে বড্ড তাড়া দিচ্ছিলিস।"
আদি ঋতুপর্ণার নাকের ডগার সাথে নাকের ডগা আলতো ঘষে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঝড়িয়ে বলল, "তোমাকে দেখার দেরি হচ্ছিল এখন তুমি আমার সামনে দেরি আর নেই।"
ঋতুপর্ণার পায়ের পাতা টানটান হয়ে গেল, পায়ের বুড়ো আঙ্গুল শক্ত হয়ে উঠল ছেলের এই প্রেম জড়ানো ভীষণ ভাষাতে। সারা শরীর কিলবিল করে উত্তেজিত হয়ে উঠল, ইচ্ছে করে একটু বুড়ো আঙ্গুলে ভড় দিয়ে ছেলের গলা দুই পেলব বাহু দিয়ে জড়িয়ে নিজেকে হারিয়ে দিতে। দাঁতে দাঁত পিষে সাপের মতন হিস হিস করে বলল, "ঠাকুর দেখতে যাবি না সোনা।"
শেষের দিকে ওর গলা খাদে নেমে গেল, একদম আর ইচ্ছে নেই এই বাহু বেষ্টনী থেকে নিজেকে মুক্ত করে বাইরে যেতে। কত ভালো হত যদি আদি ওকে এইভাবে সারা জীবন জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকত।
আদির চোখের পাতা অবশ হয়ে আসে মায়ের শ্বাসের উষ্ণ তাপে, "বাইরের প্রতিমা দেখে কি হবে। আমার মা আমার দেবী আমার প্রতিমা তাকেই পুজো করতে চাই তাকে নিয়েই থাকতে চাই।"
ছেলের এই ভীষণ প্রনয় প্লাবিত বাক্যে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারল না ঋতুপর্ণা। প্রেমের আবেগে ওর চোখের কোনায় জলের রেখা দেখা দিল। ফ্যাস ফ্যাসে গলায় ছেলেকে মৃদু কণ্ঠে বলে, "সোনা রে...."
আর বলতে পারল না ঋতুপর্ণা। ছেলের বুকের ওপরে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠল।
মায়ের মৃদু কান্না দেখে আদি চেপে ধরে ঋতুপর্ণাকে বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, "প্লিস মা কেঁদো না, তোমার চোখে জল একদম সহ্য করতে পারি না।"
চোখের কোনা মুছে মিষ্টি হেসে আদির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল ঋতুপর্ণা, "এই জল দুঃখের নয় রে সোনা।" চোখের কোনা থেকে এক চিলতে জল আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে ওর দিকে তুলে ধরে বলে, "মাঝে মাঝে মনে হয়...."
তিরতির করে কম্পমান ঠোঁট জোড়া আর কিছু বলতে পারল না, কিন্তু ওর বুকের পাঁজর ওর লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা চেঁচিয়ে উঠল। "তোর সাথে হারিয়ে যাই, অন্য কোথাও চলে যাই যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না, শুধু আমি আর তুই আর আমাদের এই ভালোবাসা কেউ বুঝবে না রে সোনা। অবৈধ না পাপ না বিষাক্ত জানি না কিন্তু তুই আমাকে ভরিয়ে দিয়েছিস, আমাকে হারিয়ে দিয়েছিস। অজানা দ্বিপে নিয়ে আমাকে পাগল করে দিয়েছিস।"
কিছুক্ষণ আদির ভাসা ভাসা চোখের দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "চল সোনা এইবারে চল।"
আদি হারিয়ে গিয়েছিল মায়ের কাজল টানা সিক্ত চোখের মাঝে। ওর চোখের কোনা একটু টানটান করে উঠেছিল মায়ের গলা শুনে। নিজেকে প্রবোধ দিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মাকে বলল, "চল মা, বাইরে যাই, বাড়িটা বড্ড গুমোট হয়ে উঠছে, একটু শান্ত বাতাসে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে।"
ঋতুপর্ণা মিষ্টি হেসে বলল, "চল এইবারে বেরিয়ে না পড়লে কোন ঠাকুর দেখতে পাব না সব জায়গায় প্রচন্ড ভিড় হয়ে যাবে।"