অসীম তৃষ্ণা_Written By pinuram [একাদশ পর্ব (চ্যাপ্টার ১৩ - চ্যাপ্টার ১৫)]
অসীম তৃষ্ণা
Written By pinuram
একাদশ পর্ব
(#১৩)
গাড়িতে উঠে বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে ঋতুপর্ণার দিকে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে। ছেলের ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি দেখে ঋতুপর্ণার লজ্জা ভীষণ ভাবে বেড়ে যায়। একটু আগেই যে ভাবে ওকে আদর করেছে আর জঙ্ঘা মাঝে নাক মুখ ঘষে দিয়েছে তাতে ঋতুপর্ণা কিছুতেই পুরুষ্টু জঙ্ঘা মাঝের উষ্ণ প্রসবন থামাতে পারছিল না।
যতবার মনে পড়ে যে আদি কি অসভ্যের মতন আচমকা ওর যোনির দোরগোড়ায় কামড় বসিয়েছে ততবার ওর যোনি কাঁচা রসে ভিজে যায়। সিল্কের প্যান্টি ভিজে যোনি চেরার মধ্যে চেপে যায় আর সেই সাথে সায়াটাও ভিজে যায়। থেকে থেকি পুরুষ্টু জঙ্ঘার অদম্য কাঁপুনি কিছুতেই দমাতে পারে না। দাঁতের মাঝে আঙ্গুল কেটে মাঝে মাঝে আড় চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে মোহিনী হাসি দিয়ে দেয়। মায়ের এই মোহিনী হাসি আদি মাঝে মাঝেই গাড়ির গতি ধীরে করে দেয়। প্যান্টের ভেতর আটকে থাকা সাপটা কিছুতেই মাথা নামাতে চাইছে না ওইদিকে ওর মা যেমন ভাবে মাঝে মাঝেই হেসে চলেছে আর চোখের মত্ত ইশারায় ওকে গাড়ি ঠিক করে চালাতে বলছে তাতে আদি যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দেবে। পায়ের ওপরে পা চেপে, পুরুষ্টু জঙ্ঘা পরস্পরের সাথে চেপে সিক্ত পিচ্ছিল যোনির দুর্নিবার বন্যা আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে ঋতুপর্ণা। ছেলের আগুনে চাহনি ওর তলেপেটের শিরা উপশিরায় গনগনে আঁচ ধরিয়ে দেয়।
ঋতুপর্ণা নিচের ঠোঁট দাঁতে কামড়ে ছেলের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে, "সামনে তাকিয়ে চালা না হলে এক্সিডেন্ট করবি।"
আদি মুচকি হেসে উত্তর দেয়, "ইসস মা তোমাকে ব্লাস করতে দেখলেই না বুকটা ভীষণ ভাবে ধক করে ওঠে।"
ঋতুপর্ণা আদির গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "হ্যাঁ অনেক হয়েছে। অসভ্যতামি ছাড় আমি কিন্তু এইবারে গাড়ি থেকে নেমে পড়ব সত্যি বলছি।"
আদি গাড়ি থামিয়ে হেসে বলে, "নেমে কোথায় যাবে যাও না দেখি। নামলেই কিন্তু...."
গাড়ি হঠাৎ করে থামিয়ে দিতেই পেছনের গাড়ি গুলো তীব্র সুরে হরন বাজাতে শুরু করে দেয়। আদি মুখ টিপে হেসে বলে, "দেখো নেমে যেতে চাইলে তাড়াতাড়ি বল না হলে বুঝতেই পারছ।"
ঋতুপর্ণা ছেলের কান্ড কারখানায় বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, "যা আর তোর সাথে কথা বলব না।"
গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে মায়ের দিকে একটু ঝুঁকে বলে, "আচ্ছা দেখা যাবে কতখন ছেলের সাথে কথা না বলে থাকতে পারো।"
ঋতুপর্ণা রুমাল মুখে চেপে ফিক করে হেসে ফেলে, "সত্যি তোর সাথে পেরে ওঠা অসম্ভব। চল চল তাড়াতাড়ি চল।"
দোকান খুঁজে খুঁজে চওড়া পাড়ের ধাক্কা পাড়ের ধুতি আর একটা লম্বা তসরের পাঞ্জাবি কেনা হল আদির জন্য। ধুতি কিনে বাড়ি ফিরে আসতে আসতে বেশ দেরি হয়ে গেল ঋতুপর্ণা আর আদির। পাতলা শাড়ির ভেতর থেকে আর আঁটো ব্লাউজের ভেতর থেকে ঋতুপর্ণার ভারি স্তন জোড়া মুক্তির আশায় ভীষণ ছটফট করছিল। হাঁটার সময়ে মায়ের উষ্ণ স্তনের কোমল মসৃণ ত্বক আদির বাজু একপ্রকার জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ভিড়ের ফলে ঋতুপর্ণাও আদির গা ঘেঁষে শরীরের সাথে শরীর মিশিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে হাঁটছিল। আদিও মাকে নিয়ে ভিড় বাঁচিয়ে কেনাকাটা সেরে রেস্টুরেন্টে ঢুকল। দুপুরের খাওয়া মধ্য কোলকাতার একটা বড় রেস্টূরেন্টে সেরে নিল মা আর ছেলে। রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই ওদের দেখে বিশেষ করে ঋতুপর্ণা যেভাবে আদির হাত আঁকড়ে ধরে ছিল আর ভারি স্তনের মাঝে ছেলের বাজু চেপে ধরেছিল তাতে অনেকেই ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল।
রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময়েই তিস্তা ঋতুপর্ণাকে ফোন করে জেনে নেয় ওরা কতদুর। তিস্তার ফোন পেয়েই আদিকে বলে তাড়াতাড়ি খাওয়া সারতে। বাড়ি ফেরার সময়ে আদি চুপচাপ গম্ভীর হয়ে গাড়ি চালায়। আদির হঠাৎ করে গম্ভির হয়ে যাওয়ার সদুত্তর ঋতুপর্ণা খুঁজে পায় না, শত প্রশ্ন করেও আদির পেট থেকে কথা বের করতে পারে না।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাড়ির সামনে এসে দেখে বাড়ির দরজা খোলা। ঋতুপর্ণা অবাক হয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখে, তিস্তা, কৌশিক, চৈতালি তার স্বামী রুদ্র, কমলিকা তার স্বামী সুরেশ এবং আরো অনেকে হাজির। আদি চুপচাপ মায়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ঠোঁট টিপে মুচকি হাসে আর মায়ের অবাক চেহারার দিকে তাকায়।
ঋতুপর্ণাকে ঢুকতে দেখেই ওরা সবাই স্বমস্বরে বলে ওঠে, "কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বল।"
ঋতুপর্ণা কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে তিস্তাকে জিজ্ঞেস করে, "তুই বাড়িতে ঢুকলি কি করে?"
তিস্তা ফিক করে হেসে আদির দিকে দেখিয়ে বলে, "ও তো গার্ডের কাছে চাবি রেখে গিয়েছিল।" তারপরে ঋতুপর্ণার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলে, "ঋতুদি, তোমার অভাব স্কুলের সবাই ফিল করেছে তাই তুমি সেদিন যখন বললে যে বাড়িতে অনুষ্ঠান করবে তখন আমি, চৈতালিদি কমলিকাদি নন্দিতাদি এদেরকে বললাম যে আমরাই আসলে অনুষ্ঠানটা করব। তোমাকে সত্যি আমরা খুব মিস করেছি আর তোমার ভালো হয়ে ওঠার খুশিতে এই উপহার আমাদের তরফ থেকে।"
ঋতুপর্ণা হাসবে না কাঁদবে কিছু ভেবে না পেয়ে সবার দিকে তাকিয়ে রইল। আনন্দেও মাঝে মাঝে চোখে জল চলে আসে, আদির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুই জানতিস?"
আদি মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "মানে এটা তিস্তার আইডিয়া তোমাকে সারপ্রাইস দেওয়ার ছিল তাই...."
কৌশিক এগিয়ে এসে বলে, "ঋতুদি ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড তাহলে আপনি আপনার সাজার দিকে মনোযোগ দিন বাকিটা আমাদের ওপরে ছেড়ে দিন।"
ঋতুপর্ণা চোখের কোল মুছে স্মিত হেসে তিস্তার গাল টিপে বলে, "তুই না সত্যি একটা পাগলি মেয়ে রে।"
তিস্তার গলা একটু বসে যায়, "পাগলি হ্যাঁ তা একটু বটে। তুমি যখন হসপিটালে ছিলে তখন এক এক করে পাঁজর ভেঙ্গে যেত জানো।" বলেই ওর গন্ড বেয়ে টসটস করে জলের ধারা বইতে শুরু করে দেয়।
পাশেই চৈতালি আর কমলিকা দাঁড়িয়ে ছিল। এদের ভাবাবেগের কথাবার্তা শুনে পাশে চৈতালির স্বামী, রুদ্র আবহাওয়া হালকা করার জন্য হেসে বলল, "যা বাবা, ভেবেছিলাম এইখানে নাচ গান হবে তা না দেখি গঙ্গা যমুনা বইছে।" কৌশিক আর সুরেশকে বললে, "আমরা হাত লাগিয়ে ফুল বেলুন এইসব দিয়ে বসার ঘর সাজিয়ে দিচ্ছি।" সবাই কাজে লেগে পড়ল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সুপর্ণা ওর মেয়ে মনিমালা কে নিয়ে হাজির হয়ে যায়। অনুষ্ঠান সুচি অনুযায়ী, প্রথমে কয়েকজন কিছু গান গাইবে তারপরে ঋতুপর্ণার নাচের স্কুলের চার ছাত্রী, মনিমালা, আনুশকা, কাবেরি আর চন্দনা একটা রবীন্দ্র সঙ্গীতের নাট্য উপস্থাপনা করবে আর সব শেষে ঋতুপর্ণা একাকী ওর লেখা এবং পরিচালিত শকুন্তলার বেশে এক নাচ পরিবেশন করবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে লোকজনের আসা শুরু হয়ে বিশেষ করে যারা নাচবে তারা সবাই আগেভাগে এসে যায়।
আদি বাকিদের নিয়ে কাজে লেগে পরে, লোক দিয়ে ওদের হল ঘরের সোফা, টেবিল খাওয়ার টেবিল সব সরিয়ে জায়গা তৈরি করে দেয়। ঋতুপর্ণা যে কামরায় নাচ শেখায় সেই ঘরে খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়। ওদের ফ্লাটটা বেশ বড় হলেও হল ঘরে সবার বসার আয়োজন হয় না। বেশ কিছু চেয়ার পাতা হয় আর বাকিদের জন্য মেঝেতে জায়গা করে দেওয়া হয়।
তিস্তা আর সুপর্ণা, ঋতুপর্ণা আর বাকি মেয়েদের নিয়ে সাজের ঘরে ঢুকে পরে। মনিমালা আর বাকি ছাত্রিরা অবশ্য আগে থেকে তিস্তাকে চেনে কারন ওদের স্কুলের শিক্ষিকা। তবে ইতিপূর্বে তিস্তার সাথে সুপর্ণার কোনোদিন দেখা হয়নি।
সুপর্ণা ইয়ারকি মেরে তিস্তাকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি ও নাচবে নাকি?"
তিস্তা চোখ টিপে হেসে উত্তর দেয়, "আমি নাচতে পারি তবে তাহলে যারা আসছে তারা ঋতুদির ঘর ভাসিয়ে দেবে।"
ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে মুচকি হেসে তিস্তার গালে আদর করে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "থাক তোর আর নাচ দেখাতে হবে না। তোর নাচ কৌশিক দেখুক তাতেই যথেষ্ট।"
আদি কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে মায়ের রুমে উঁকি মেরে দেখে কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় কিছুই দেখার অবকাশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। গত কয়েকদিনে মাকে যেভাবে চটকে পিষে আদর করে বুকের মধ্যে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে তাতে আদি অধৈর্য হয়ে উঠেছে। এর মাঝে কৌশিক জানিয়ে যায় যে কয়েক বোতল হুইস্কি যোগাড় করেছে, রাতে খাওয়া দাওয়ার আগে ছাদে গিয়ে কয়েক পেগ মেরে আসা যাবে। আদি মাথা নাড়ায়, ওর মা জানতে পারলে পিঠের ছাল চামড়া তুলে দেবে। কৌশিক আশ্বাস দিয়ে বলে, ওর মা জানতে পারবে না। কৌশিক ওর রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়া পরে একটা সিগারেট টানতে টানতে নিজের বাথরুমে ঢুকে পরে আদি।
টক টক টক টক, বাথরুমের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজে আদি জিজ্ঞেস করে, "আরে কৌশিকদা শান্তিতে একটু পেচ্ছাপ করতে দেবে না? তোমার কি এখুনি হুইস্কি টানার দরকার নাকি?"
দরজার অপার থেকে মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠ ভেসে আসে, "না মানে আমি মণি।"
মনিমালার গলার স্বর শুনে আদি ভড়কে যায়, হঠাৎ কি ব্যাপার, জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে রে?"
মনিমালা নিচু গলায় উত্তর দেয়, "আন্টি জিজ্ঞেস করছে ফুলের মালা কি আনা হয়েছে?"
আদি সিগারেট শেষ করে দরজা খুলে উত্তর দেয়, "না আনা হয়নি এই যাচ্ছি। তোদের সাজগোজ কি শেষ হয়ে গেছে?"
উদ্ভিন্ন যৌবনা ষোড়শী তন্বী তরুণী মনিমালার দিকে তাকিয়ে দেখল আদি। সুপর্ণা কাকিমা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের হলেও মেয়েটার গায়ের রঙ কাঁচা গমের মতন উজ্জ্বল। ষোড়শী তন্বী তরুণীর বাড়ন্ত দেহ বল্লরীর পরতে পরতে চেপে বসা কাঁচা হলুদ রঙের সিল্কের শাড়ি। বয়সের তুলনায় স্তনের আকার একটু বড় তবে এখন বাড়ন্ত। লাল ব্লাউজে ফুটন্ত কুচ যুগল ঢাকা। চোখের কোনে কাজল, গলায় সোনার চেন, সুন্দর সাজে সজ্জিত তন্বী যুবতীকে দেখে যে কারুর মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার যোগাড়।
আদি মনিমালাকে আপাদমস্তক একবার দেখে নিয়ে ভারি গলায় জিজ্ঞেস করে, "তুই কেন আসতে গেলি আর কেউ ছিল না?"
আসলে আদি ভেবেছিল হয়ত মা অথবা তিস্তা আসবে।
মণিমালা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলে, "না মানে তিস্তা ম্যাডাম আর মা, আন্টিকে সাজাতে ব্যাস্ত তাই আমাকে পাঠিয়ে দিল।"
আদি মাথা দোলায়, "আচ্ছা ঠিক আছে। বাকি মেয়েদের সাজ কি শেষ হয়ে গেছে?"
মণিমালা মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ হয়ে গেছে।"
ষোড়শী তন্বী দেহ বল্লরীতে ঢেউ খেলিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা তুমি নাকি অষ্টমীর রাতে ধুনুচি নাচবে?"
আদি জিজ্ঞেস করে, "তোকে কে বলল?"
মণিমালা মুচকি হেসে উত্তর দেয়, "না মানে আন্টি বলল তাই জানলাম।" আদির মুখের দিকে তাকিয়ে কৌতুক ভরা হাসি দিয়ে বলে, "তুমি ধুতি পড়তে জানো? দেখো বাবা নাচের সময়ে যেন আবার ধুতি খুলে না পরে যায়।" বলেই খিলখিল করে হেসে ওঠে।
আদি মজা করে মনিমালার কান ধরে বলে, "তোর অত চিন্তা কেন রে। আমার ধুতি খুলে যায় যাক, দেখিস আজকে নাচতে গিয়ে যেন তোর শাড়ি না খুলে যায়।"
"আআআআ" মিষ্টি করে চেঁচিয়ে ওঠে মণিমালা, "এই আদিদা প্লিস কান ছাড়ো লাগছে।"
আদি ওর কান ছেড়ে নরম গোলাপি টোপা গালে আলতো চাঁটি মেরে আদর করে দেয়। আদির হাতের পরশে মনিমালার সারা অঙ্গ জুড়ে অজানা এক শিহরন খেলে যায়। আদির দিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, "এ এ আমার শাড়ি কেন খুলতে যাবে? তুমি তোমার ধুতি ঠিক করে সামলিও তাতেই হবে।"
আদি কৌতুক ছলে মনিমালার হাত টেনে ধরতেই, মণিমালা টাল সামলাতে না পেরে আদির কঠিন ছাতির ওপরে ঢলে পড়ে যায়। তুলতুলে নধর উদ্ধত স্তন জোড়া পিষ্ট হয়ে যায় আদির প্রশস্ত ছাতির সাথে। উচ্চতায় মণিমালা আদির থেকে বেশ খাটো, ওর মাথা আদির বুকের ওপরে আছড়ে পড়ে। আদিও টাল সামলাতে না পেরে দুইজনেই বিছানার ওপরে ধুপ করে পড়ে যায়। ওপরে মণিমালা নিচে আদি। ভীষণ লজ্জায় মনিমালার মুখবয়াব রক্তে রঞ্জিত হয়ে ওঠে। পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে ওর বুকের ধড়ফড়ানি ভীষণ ভাবে বেড়ে ওঠে। মণিমালা আয়ত কাজল কালো ভাসা ভাসা চোখে আদির মুখের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। আদি নিশ্চল হয়ে মনিমালার মণির দিকে তাকিয়ে থাকে। ওদের ঠোঁট জোড়ার মাঝের ব্যাবধান কমে আসে। মনিমালার উষ্ণ শ্বাসের প্লাবনে প্লাবিত হয়ে যায় আদির চেহারা। নধর অনাহত তন্বী তরুণীর পরশ এর আগেও শরীরে মাখিয়েছে আদি, তবে মনিমালার দেহ বল্লরীর ছোঁয়ায় এক ভিন্ন পরশের উষ্ণ আবহ অনুভব করে। ওর ঊরুসন্ধি অনেক আগে থেকেই কঠিন হয়েছিল, মনিমালার ঊরুসন্ধির নিচে আদির কঠিন পুরুষাঙ্গ দুমদুম করে বাড়ি মারে। আদির বুকের ওপরে শুয়ে কেঁপে ওঠে তন্বী তরুণীর নধর দেহ পল্লব।
আদির ভিমকায় পুরুষাঙ্গের ছোঁয়া অনুভব করেই মণিমালা সঙ্গে সঙ্গে আদির দেহ থেকে উঠে কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলে, "ধ্যাত তুমি না বড্ড শয়তান ছেলে। আমার সাজ নষ্ট করে দিলে তো? এইবারে মা অথবা আন্টি দেখলে কি ভাব্বে বলত?" বলেই খেলার ছলে আদির বুকের ওপরে বার কতক চাঁটি মেরে দেয়।
আদিও চোয়াল চেপে চোখ টিপে হেসে ফিসফিস করে বলে, "তোর মাকে বলিস আমি তোর সাথে একটু দুষ্টুমি করেছি।"
সলজ্জ নয়নে আদির সামনে থেকে দুই পা পিছিয়ে গিয়ে কৌতুকচ্ছলে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, "যা দুষ্টু আর কোনোদিন তোমার কাছে আসব না।"
আদি হে হে করে হেসে বলে, "আসিস না বয়েই গেছে।"
আদির বুকে তো আর মনিমালার স্থান নয়, ওর বুক জুড়ে ওর প্রানেশ্বরী স্বর্গীয় অপ্সরা মায়ের স্থান।
হঠাৎ করে আদির মুখে ওই কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য আহত হয়ে যায় মণিমালা। নিচের ঠোঁট দাঁতে চেপে মিষ্টি হেসে বলে, "সত্যি আর কিন্তু কোনোদিন কাছে আসব না।"
আদি মাথা দুলিয়ে বলে, "হ্যাঁ রে বাবা, আসিস নে। আচ্ছা এখন যা আমি বের হব আর হ্যাঁ তোর আন্টিকে জিজ্ঞেস করিস ফুলের মালা ছাড়া আর কি কিছু আনার আছে।"
হঠাৎ করে মনিমালার মুখবয়াব পাংশু হয়ে যায়, ছলছল চোখে আদির দিকে তাকিয়ে বলে, "যাও আমি জিজ্ঞেস করতে পারব না। তুমি নিজে আন্টিকে জিজ্ঞেস করে নিও।"
মণিমালা মুখ চাপা দিয়ে আয়ত কাজল কালো চোখে এক অবুঝ বাক্য জানিয়ে দিয়ে সারা অঙ্গে মিষ্টি মাদক হিল্লোল তুলে এক দৌড়ে আদির রুম থেকে পালিয়ে যায়। মনিমালার চলে যাওয়ার দিকে বেশ কিছুক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থাকে আদি। অস্পর্শিত তন্বী তরুণীর মোহিনী হাসি আর দেহ বল্লরী জুড়ে মাদকতাময় হিল্লোলে আদির বুকের রক্ত ক্ষণিকের জন্যে ছলকে ওঠে। প্রায় তিন বছর ধরে মণিমালা ওর মায়ের কাছে নাচ শিখছে, কিন্তু কোনোদিন এইভাবে তাকিয়ে দেখেনি ওর দিকে। মেয়েটা হঠাৎ করে কেন ওর ঘরে একা এলো। আর কেনই বা ওই রকম করে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুই বুঝে উঠতে পারল না আদি।
আদি নিজের রুম থেকে বের হতেই কৌশিকের সামনে পড়ে গেল। কৌশিক ভুরু কুঁচকে একবার মনিমালার দৌড়ে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে দেখল পরক্ষনে আদির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, "একি ভায়া, টেপাটিপি করে দিয়েছ নাকি? কি ব্যাপার?"
আদি লজ্জা পেয়ে যায় কৌশিকের কথা শুনে। সল্লজ ভঙ্গিমায় মুচকি হেসে বলে, "ধ্যাত তুমি না। ও তো ভীষণ কচি, ও দিয়ে কি হবে? আমার চাই পাকা মাল!"
কৌশিক ওর কানেকানে বলে, "কচি মাল কিন্তু বড্ড টাইট হয় সেটা জেনে রেখো। কাঁচা পেয়ারা, কাঁচা আম, কাঁচা সবকিছুই কিন্তু খাওয়ার মজা আলাদা।"
আদিও ফিসফিস করে ওর কানেকানে বলে, "বেশি কাঁচা খেলে কিন্তু দাঁতে লাগে, তার চেয়ে ডাঁসা পেয়ারা, কাঁচা মিঠে আম এইগুলোর স্বাদ কিন্তু আরো বেশি ভালো।" চোখ টিপে মায়ের ঘরের দিকে ইশারা করে বলে, "যেমন তোমার গার্ল ফ্রেন্ড, সরস মাল।"
হো হো করে দুইজনেই হেসে ওঠে। কৌশিক আদির পিঠ চাপড়ে বলে, "সেদিন পার্টিতে যদি থাকতে তাহলে খুব মজা হত। ওই মনামিকে দেখেছিল না..."
আদি মাথা দোলায়। কৌশিক ওকে বলে, "মনামি তোমার কথা খুব জানতে চাইছিল।"
কই তিস্তা ও সেই ব্যাপারে কোনোদিন ওকে কিছু জানায় নি। আদি একটু ভাবুক হয়ে চিন্তাভাবনা করে হেসে বলে, "না না, মনামি আমার টাইপের নয়, বড় প্যাঁকাটি মার্কা। ডাঁসা নিয়ে আসো কাজে দেবে।"
কৌশিক চোখ টিপে ওকে বলে, "এই মেয়েটা কিন্তু বড় হলে দারুন হবে, এখনি সাঙ্ঘাতিক ফিগার আর যে গাছের ফল সেই গাছ দেখলেই বোঝা যায় বড় হলে কি মাল হবে।"
সুপর্ণার কথা ভেবেই আদি আর কৌশিক দুইজনেই হো হো করে হেসে ফেলে।
(#১৪)
অন্য রুমে তখন সুপর্ণা আর তিস্তা, ঋতুপর্ণাকে সাজাতে ব্যাস্ত। ঋতুপর্ণা সোনালি পাড়ের সাদা রঙের সাউথ সিল্কের শাড়ি পরে তৈরি।
তিস্তা ওর শাড়ি পড়ার ধরন দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে, "এই ঋতুদি একি করেছ! না না, শকুন্তলা কি শাড়ির আঁচল নিত নাকি? না না, শাড়ির আঁচল দিও না।"
সুপর্ণাও তিস্তার কথায় সায় দেয়, শাড়ির আঁচল দিতে হবে না।
লজ্জিত হয়ে ঋতুপর্ণা ওদের ধমক দিয়ে বলে, "ধ্যাত আঁচল ছাড়া শাড়ি কি করে পড়ব?"
সুপর্ণা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে, "খুলে ফেল আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।" বলে ওর আঁচল টেনে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘাগরার মতন শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলল, "এইভাবে শাড়ি পরত শকুন্তলা।"
ঋতুপর্ণা নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে, ইসসস, ঘর ভর্তি লোকের সামনে এইভাবে যাবে নাকি? ওর উদ্ধত স্তন জোড়া আঁটো সাদা কাঁচুলির মধ্যে হাঁসফাঁস করে উঠছে, শাড়ির কুঁচি নাভির বেশ নিচে, ছেলের দেওয়া কোমর বিছা ওর কোমরের সাথে অতপ্রত ভাবে পেঁচিয়ে রয়েছে। মা ছেলের নামের আদ্যাক্ষরের লকেটটা নাভির একটু নিচের দিক থেকে ঝুলছে। লাস্যময়ী উদ্ভিন্ন যৌবনবতী রূপসীকে দেখে মুনি ঋষিদের আসন টলে যাওয়ার উপক্রম। তিস্তা ওর পেছনে দাঁড়িয়ে কাঁচুলির গিঁটটা আরো শক্ত করে টেনে বেঁধে দিল।
সুপর্ণা মুচকি হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ গো তোমার সেই নতুন পুরুষকে আজকে ডাকো নি?"
তিস্তা সেই কথা শুনে হাঁ হাঁ করে উঠল, "কি কে গো?" ঋতুপর্ণাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "কই আমাকে ত জানাও নি যে তুমি প্রেমে পড়েছ?" বাচ্চা মেয়ের মতন আব্দার করে ওঠে, "এই প্লিস বল না কে?"
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে ওদের প্রশ্নের জাল কাটিয়ে উত্তর দেয়, "কেউ না সেদিন মজা করছিলাম সুপর্ণার সাথে।"
সুপর্ণা চোখ টিপে বলে, "মোটেই নয়। সেদিন তোমার লাজুক ব্লাশিং দেখেই বুঝে গেছিলাম তোমার বুকের মধ্যে নতুন কেউ এসে গেছে।" সুপর্ণা জোর করে চেপে ধরে ঋতুপর্ণাকে, "এই ঋতুদি বল না সেই মানুষ কে।"
তিস্তা ওকে আরো উত্যক্ত করে বলে, "বলো না হলে কিন্তু আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না।"
নিরুপায় ঋতুপর্ণা কি করবে খানিকক্ষণ ভেবে অতি সুকৌশলে উত্তর দেয়, "আছে একজন তবে এখুনি বলতে পারছি না।"
তিস্তা চোখ বড় বড় করে বলে, "বাপরে তাহলে অবশেষে নটে গাছ মুরল। লজ্জায় ত চেহারা লাল হয়ে গেছে, তা কতদুর এগিয়েছে তোমাদের সম্পর্ক।" চোখ টিপে ঋতুপর্ণার গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, "কিছু খোলা খুলি চটকা চটকি হল না খালি শুকনো গাল গল্প। আর কতদিন একা একা বিছানা কামড়ে পরে থাকবে?" বলেই আলতো করে ঋতুপর্ণার পায়ের মাঝে হাত বুলিয়ে দেয়।
ঋতুপর্ণা কিলবিল করে উঠে তিস্তার হাত সরিয়ে দিয়ে মৃদু বকুনি দিয়ে বলে, "সর এখান থেকে। আমি অন্তত তোর মতন হ্যাঙলা নই, যাকে তাকে দেখেই গাছে চড়ে যাবো।"
সুপর্ণা ঠোঁট চেপে হেসে বলে, "আচ্ছা বাবা আচ্ছা। তবে ঋতুদি গাছের দর্শন না করে কিন্তু গাছে চড়তে যেও না।" বলেই একগাল হেসে দিল। "সেদিন যে তোমাকে এত সাজিয়ে দিলাম তার কি কোন ফল হল?"
সলজ্জ আনত নয়নে মুখমন্ডলে রক্তিমাভা ফুটিয়ে মাথা দুলিয়ে বলে, "তা একটু হয়েছে।"
তিস্তা আর সুপর্ণার বাক্যবাণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ঋতুপর্ণা। পরক্ষনেই হাসি থামিয়ে একটু গম্ভির হয়ে বলে, "এই তোমরা আর ওই নিয়ে ঘাটাঘাটি কর না তো।"
কিন্তু ওদের এই দুষ্টু মিষ্টি কথাবার্তা বারেবারে ঋতুপর্ণাকে ওর ছেলের কথা মনে করিয়ে দেয়। সাজ গোজ এক উপলক্ষ্য মাত্র, মা আর ছেলের মধ্যে নিবিড় চিরন্তন প্রেমের টান আগেই জেগে উঠেছে। হৃদয়ের বাঁধনের সাথে সাথে দেহের বাঁধন হতেই বাকি।
সুপর্ণা হেসে বলে, "যাক বাবা আমার এত পরিশ্রম তাহলে বৃথা যায়নি।"
তিস্তা চোখ টিপে হেসে বলে, "এই ঋতুদি তাড়াতাড়ি চার হাত এক করে নাও। আদি কে কি জানিয়েছ?"
ছেলের নাম কানে আসতেই সারা অঙ্গ জুড়ে তৃষ্ণার্ত প্রেমের হিল্লোল দেখা দেয়, তবে ওর প্রেমের ব্যাখান এর বেশি করতে সক্ষম নয় বলেই মুখ চেপে হেসে বলে, "ছেলে বড় হয়েছে যখন জানানোর সময় হবে তখন ঠিক জানিয়ে দেব।"
আদি ফুল নিয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখে অনেকেই পৌঁছে গেছে। ততক্ষণে রুদ্র, কৌশিক আর আদির বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে বসার ঘর সাজিয়ে তৈরি করে ফেলেছে। ক্যাটারার মধুদা, বিকেলের খাবারের জিনিস পত্র নিয়ে চলে এসেছে। তবলা বাদক সুকোমলদা অনেক আগেই তবলায় তাল ঠুকে তৈরি। আদিকে দেখে একগাল হেসে জিজ্ঞেস করে, আয়োজন কতদুর। মায়ের স্কুলের টিচারদের মধ্যে অনেকেই হাজির হয়ে গেছে, সোসাইটির বেশ কয়েকজন কে নিমন্ত্রন করা হয়েছিল তারাও উপস্থিত। চৈতালি আর মণিমালা ওদের আপায়ন করতে ব্যাস্ত।
মনিমালার দিকে দেখিয়ে কৌশিক ওকে চোখ টিপে বলে, "দেখো দেখো এই ঘরে জায়গা করে নিচ্ছে কিন্তু।"
তিস্তা ওকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে, "ফুল আনতে এত দেরি লাগে নাকি? তুমি কি ফুলের গাছ লাগিয়ে ফুল তুলে নিয়ে আসছ?"
তিস্তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, "যা বাবা, কথা হয়েছিল একটা ফুলের মালা আর সাজ। দোকানে যাওয়ার পরে মা ফোন করে বলল, আরো চারখানা চাই, টাইম তো লাগবেই।"
মণিমালা কটাক্ষ দৃষ্টি হেনে তিস্তাকে বলে, "ম্যাডাম, আদিদার তেরো মাসে বছর হয় বুঝলে।"
তিস্তা একবার মনিমালার দিকে তাকায় একবার আদির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ঘটনা ঘটেছে। আদিও ভুরু নাচিয়ে ইশারায় জানিয়ে দেয় ওর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। ফুলের সাজ তিস্তার হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে ওর মায়ের সাজতে আর কত বাকি। তিস্তা হেসে উত্তর দেয়, ঠিক সময়ে ওর মাকে ওর সামনে প্রস্তুত করে দেবে, খেয়ে ফেলবে না।
সাতটা প্রায় বাজতে চলল, এইবারে অনুষ্ঠান শুরু করা উচিত যাদের আসার তারা সকলেই এসে পড়েছে, কিন্তু তখন গৃহকত্রি ঋতুপর্ণার দেখা নেই। কৌশিক উসখুস হয়ে আদিকে এক সময়ে জিজ্ঞেস করে ফেলল ওর মায়ের ব্যাপারে। আদি ভুরু কুঁচকে উত্তর দিল সে নিজেও জানে না কখন ওর মায়ের সাজ হবে। কৌতুকচ্ছলে জানিয়ে দেয় ওর মা এখন কৌশিকের গার্ল ফ্রেন্ডের হাতে সমর্পিত।
বেশ কিছুপরে সুপর্ণা, ঋতুপর্ণার রুম থেকে বেড়িয়ে এসে আদিকে ডেকে বলে, "আদি তোমার মা একবার তোমাকে ডাকছে।"
মায়ের রুমের পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে মায়ের রূপ দেখে বিহ্বল হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। সাক্ষাৎ এক স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরা ওর সামনে দাঁড়িয়ে, ঠিক যেন বন বিহারিণী নন্দন কাননের শকুন্তলা। ফুলের সাজে সজ্জিত অতীব রূপসী মমতাময়ী মা। সোনালি পাড়ের সাদা শাড়িটা কোমরের নিচে অতপ্রত ভাবে এঁটে বসে। ঋতুপর্ণার ঊর্ধ্বাঙ্গ শুধু মাত্র একটা ছোট সাদা কাঁচুলিতে ঢাকা, পেলব মসৃণ বাহু যুগল অনাবৃত, কাঁধ অনাবৃত। পানপাতার আকারের মুখবয়াবে চাঁদের কিরনের অনির্বাণ দীপ্তি ছড়িয়ে। সুপর্ণা কাকিমা আবার ইচ্ছে করেই মায়ের উপরের ঠোঁটের একটু উপরে একটা তিল এঁকে মায়ের মুখবয়াবের সৌন্দর্য শতধিক জাগিয়ে তুলেছে। ডাগর চোখের কোণে কাজল রেখা। দুই কোমল অধর টকটকে লাল রঙ্গে রাঙ্গানো। পীনোন্নত স্তনের নিচে পাঁজরের মাঝখান থেকে মধ্যচ্ছদা নেমে এসেছে ছোট সুগোল নরম ফুলো পেটে। সুগোল নরম পেটের মাঝখানে গভীর নাভিদেশের চারপাশে নরম মাংসের পরত। ঋতুপর্ণা ইচ্ছে করেই ওর কোমর বিছাটা শাড়ির কুঁচির ওপরে টেনে নিয়েছে আর লকেটখানি ইচ্ছে করেই সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাজুতে, কব্জিতে, মাথার চুড়ে, গলায় ফুলের সাজ। মায়ের দুই হাতের মেহেন্দির রঙ তখন পর্যন্ত মুছে যায়নি। পেলব নরম আঙ্গুল গুলোতে ছোট একটা আংটি জ্বলজ্বল করছে।
এই বিমোহিত সৌন্দর্য খর্ব করার শক্তি ওর নেই, ওর সামনে দাঁড়িয়ে যে নারী তাকে কিছুতেই আর নিজের প্রেমিকা অথবা বান্ধবী বলে ওর হৃদয় মানতে পারছে না। এ রূপ যেন আগুনে ঝলসানো মুরতিময়ি মায়ের রূপ। মায়ের প্রশান্ত অসামান্য রূপ ওর বুকের মধ্যে ভক্তি জাগিয়ে তুলল। ধিক্কার দিল ওর হৃদয়, এই রমণীকে কি করে নিজের ক্রোড়ে করবে, এযে সাক্ষাৎ দেবী।
আদি ধীর পায়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে ভাসা ভাসা চাহনি নিয়ে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে। মায়ের সোনা গলানো রূপের দর্শনে গলা কেঁপে ওঠে আদির, "মা গো আমাকে ক্ষমা করে দাও।" বলেই ওর দুই চোখ জলে ভরে গেল।
ঋতুপর্ণা ছেলের চেহারার অভিব্যাক্তি অনেক আগেই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল। আদির নিথর নিস্তব্ধ চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছিল ঠিক এইরকম কিছু একটা ঘটবে। দুই হাত বাড়িয়ে ছেলেকে বুকের ওপরে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল ঋতুপর্ণা, "ছি সোনা এইভাবে বলতে নেই।"
আদি মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসতেই ঋতুপর্ণা বিছানায় বসে ওর মাথা কোলের ওপরে টেনে নিল। আদি মাকে জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠল, "না মা, বড় পাপ করে ফেলেছি মা।"
কোনটা পাপ, কোন কর্ম পুন্য, কি বৈধ কোন কি অবৈধ কিছুই মাথায় ঢোকে না ঋতুপর্ণার। ঋতুপর্ণা ছেলের মাথা কোলে গুঁজে অশ্রুসিক্ত চোখে বলে, "বাড়ি ভর্তি লোক আছে সোনা, এইভাবে কাঁদে না। আমি ত আর তোকে ছেড়ে যাচ্ছি না তাহলে হঠাৎ কাঁদছিস কেন রে?"
আদি কিছুতেই মায়ের কোল থেকে মাথা উঠাতে নারাজ, "না মা, তোমার এই নিষ্কলঙ্ক রূপ দেখে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।"
হয়ত খুব বড় পাপ ওরা করেছে। কোন মা তার নিজের ছেলের সাথে ওদের মতন ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধে না তবে সমাজের বৈধতার জাল ওদের এই ভালোবাসা কোনোদিন বুঝে উঠতে পারবে না। ওদের নিকৃষ্ট প্রাণী হিসাবে সকলে গন্য করবে সমাজ থেকে বহিরভুত করে দেবে। কখন কি সমাজ বুঝতে চেষ্টা করবে ওদের বুকের ব্যাথা। যখন সুভাষ ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তখন আদিকে কে দেখেছিল। ঋতুপর্ণা ছাড়া আর কেউ আসেনি, কারন ঋতুপর্ণা ওর মা। যখন হসপিটালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছিল ঋতুপর্ণা তখন ওর মাথার কাছে রাতের পর রাত কে বসে কাটিয়েছিল, ওর একমাত্র সন্তান আদিত্য।
বুকের প্লাবন শক্ত করে বেঁধে ঋতুপর্ণা আদির মাথা কোল থেকে উঠিয়ে বলে, "তুই আমার সব, এখন কাঁদিস না এই নিয়ে পরে আমরা কথা বলব। তবে হ্যাঁ সোনা, একটা কথা মনে রাখ, প্রেম ভালোবাসা জীবনেরই এক অপরিহার্য অঙ্গ। মানুষ কোনোদিন প্রেম ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারে না। তোর নিঃসঙ্গ জীবনে আমিই একমাত্র নারী আর আমার নিঃসঙ্গ জীবনে তুই একমাত্র পুরুষ। এছাড়া আমাদের জীবনে কেউ কোনোদিন আসেনি আর আসতে পারবে না। আমরাই একে ওপরের পরিপূরক। এটাই আমাদের জীবনের এক অটুট বন্ধন, তাই ত এই সম্পর্কএর শুরুতে বাধা দিলেও আমাদের কেউই কিন্তু এর থেকে দূরে সরে থাকতে পারিনি। সুপ্ত অবচেতন মনে হয়ত আমিও তোর প্রতি কিছুটা ঝুঁকে গেছিলাম। দোষ তোর একার নয় রে আদি, শুধু আগুনের ফুলকি অথবা কাঠে আগুন জ্বলে না। আগুন জ্বালাতে হলে কাঠ আর আগুনের ফুলকি দুটোর প্রয়োজন হয়। তুই আমাকে কোনদিন জোর করিস নি, আমিও তোকে কোনদিন জোর করিনি। এই অমোঘ টান আমরা দুজনেই সমান ভাবে অনুভব করেছি বলেই এগোতে পেরেছি না হলে কি তুই আমার ওপরে জোর করতিস?"
মায়ের কথা শুনে আদি স্বস্তির শ্বাস নিয়ে ছলছল চোখে ঋতুপর্ণার ছলছল চেহারার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে দেয়, "তোমার ওপরে জোর" জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, "আমার গলা কেটে ফেললেও করতে পারব না মাগো।"
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে আদির গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "কেন করতে পারবি না রে শয়তান। আমি না তোর মা, আমার ওপরে তোর সব থেকে আগে অধিকার।"
আদি চোখ মুছে মুচকি হেসে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি। তাহলে সেই অধিকার কবে পাচ্ছি।"
এমন সময়ে সুপর্ণা ঘরে ঢুকে দেখে আদি ঋতুপর্ণার কোলে মাথা রেখে বসে। সুপর্ণার চোখের সামনে এক মা তার ছেলেকে আদর করছে এই দৃশ্য ভেসে ওঠে। সুপর্ণা মুচকি হেসে ঋতুপর্ণার ছলছল চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, "কি গো হঠাৎ করে তোমাদের একি হল? একি আদি...."
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "কিছু না, একমাত্র আদুরে ছেলে ত তাই এই সাজে মাকে দেখে একটু ইমোশানাল হয়ে পড়েছে।"
আদি মায়ের সামনে থেকে উঠে পড়ে। সুপর্ণা ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হেসে বলে, "তোমার জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে দেব।"
আদি চোখ বড় বড় করে সুপর্ণাকে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? কাউকে কি অলরেডি দেখে রেখেছ?"
সুপর্ণা ঋতুপর্ণার হাত ধরে বলে, "আমার মেয়ের ভাগ্য খুলে যাবে যদি ঋতুদির মতন সুন্দরী মমতাময়ী এক শ্বাশুড়ি পায়।"
অবাক হয়ে ঋতুপর্ণা একবার আদির দিকে তাকায় একবার সুপর্ণার দিকে তাকায়। আদিও এই কথা শুনে হতবাক হয়ে সুপর্ণা আর মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওদের বুঝতে অসুবিধে হয় না সুপর্ণা কি বলতে চাইছে। আদি তাই মস্করা করে সুপর্ণার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, "আগে গাছ দেখি তার পরে না হয় ফল খাবো" বলেই ঠোঁট টিপে হেসে দেয়।
আদির কথা শুনে সুপর্ণার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে, "ধ্যাত আদিত্য তুমি না বড্ড শয়তান।"
আদি সুপর্ণার সারা অঙ্গে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে, "আকন্দ গাছে তো আর আম ফলে না কাকিমা। আগে গাছটা ভালো করে দেখতে হবে তবেই না ঠিক ভাবে বোঝা যাবে কি ফল কেমন হবে?"
ঋতুপর্ণা মুখ বেঁকিয়ে আদির পিঠে আলতো চাপড় মেরে বলে, "হ্যাঁ অনেক হয়েছে তোর গাছ দেখা। এইবারে চল, দেরি হয়ে গেছে হয়ত সবাই...."
আদিও মাথা দুলিয়ে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই এসে গেছে।"
মাকে সঙ্গে নিয়ে আদি ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো লোক ভর্তি হল ঘরে। ওকে দেখে সবাই সমস্বরে ঋতুপর্ণার সাজের তারিফ করল। বিশেষ করে রুদ্র আর কৌশিক একটু বেশি করে তারিফ করল। আদি নিজের ক্যামেরা নিয়ে তৈরি হয়ে গেল ওদের অনুষ্ঠানের ফটো তোলার জন্য। এর আগেও মাকে বহুবার নাচতে দেখেছে আদি কিন্তু সেই নাচের মহত্ত্ব আর আজকের নিজের বাড়িতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের মহত্ত্ব আলাদা। মায়ের কলিগরা মায়ের শারীরিক সুস্থতা আর ভালোবাসা দিয়েই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ঋতুপর্ণা যেদিন তিস্তাকে এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জানিয়েছিল সেইদিন তিস্তা বাকিদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করে ফেলে যে এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ, সাজ গোজ সব কিছুই ওরা কয়েকজন মিলে করবে আর ঋতুপর্ণাকে উপহার স্বরুপ দেবে। আদিকেও সেই কথা সকালে জানিয়েছিল তাই আদি চুপিচুপি গাড়ি বের করার আগে গার্ডকে বাড়ির চাবি দিয়ে গিয়েছিল।
লোকজনের ভিড় ঋতুপর্ণাকে ছেঁকে ধরে, "কেমন আছো এখন?" "বাপরে সুপর্ণা বেশ সুন্দর সাজিয়েছে দেখছি।" "তুমি একদম আর চিন্তা করবে না বুঝলে, আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি।" ইত্যাদি।
আদি ধীরে ধীরে একপাশে সরে যায়। একটু দুর থেকে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে। ঠিক যেন শ্বেত শুভ্র রাজমাতাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে অনেক দাস দাসী আর রাজকন্যে।
(#১৫)
তিস্তা এর মাঝে ওর কাছে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, "কি হল তোমার। একটু ডাউন মনে হচ্ছে?"
আদি মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে বলে, "না না কিছু না। মানে অনেকদিন পরে মায়ের মুখে হাসি দেখছি তাই মনটা...."
তিস্তা ওর পিঠে হাত রেখে প্রবোধ দিয়ে বলে, "এত চিন্তা করোনা আদি, যাদের কেউ নেই তাদের উপর ওয়ালা ঠিক একটা না একটা সংযোগ তৈরি করে দেয়। দেখো ঘর ভর্তি লোক সব তো ঋতুদিকে ভালোবাসে বলেই এসেছে তাই না?"
আদি জানে, এদের মধ্যে অনেকেই আসেনি, ওর পাশে শুধু মাত্র অটল হয়ে দাঁড়িয়েছিল একমাত্র তিস্তা। তাই তিস্তার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে, "তুমি সব জানো তার পরেও এই কথা বললে। তুমি পাশে না থাকলে বড় অসহায় ফিল করতাম।"
তিস্তা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "ওই সব আলোচনা এখন না করাই ভালো আদি। এখন প্রেসেন্ট টাইম এঞ্জয় কর।" বলেই সবার দিকে হাত তালি দিয়ে সবার নজর কেড়ে জোর গলায় বলে, "সব তৈরি তাহলে প্রোগ্রাম শুরু করা যাক।" সবাই মাথা দুলিয়ে সায় দিল, "হ্যাঁ হ্যাঁ।"
তিস্তা, কমলিকা ম্যাডামের স্বামী সুরেশকে গান গাইতে অনুরোধ করল। সুরেশ ভালো গান গায়, চির সবুজ কিশোরের গান, "আধো আলো ছায়াতে কিছু ভালবাসাতে আজ মন ভোলাতে হবে যেন কার...."
গান শেষ হতেই উপস্থিত লোকজন ঋতুপর্ণা আর বাকি মেয়েদের নাচের জন্য পিড়াপিড়ি শুরু করে দিল।
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে বলল, "এখন দেরি আছে আগে, সুরেশদা আরো কয়েকটা গান গাক তারপরে না হয়ে নাচার প্রোগ্রাম শুরু করা যাবে।"
আদির বন্ধু সঞ্জীব আর ধিমান পিড়াপিড়ি শুরু করে দিল, "না না কাকিমা গান অনেক শুনেছি এই বারে আপনার নাচ দেখব।"
আদি এক কোনায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ সব দেখে যাচ্ছিল আর মুচকি মুচকি হাসছিল। ক্যামেরা হাতে সবার ফটো তুলতে তুলতে মাঝে মাঝেই ঋতুপর্ণার দিকে সাথে আড় চোখে তাকিয়ে ইশারায় জানিয়ে দেয়, যে আজকে ওর আর নিস্তার নেই। সঞ্জীব আর ধিমানের সাথে সাথে কৌশিক ও যোগ দিল, এইবারে গান ছেড়ে নাচের প্রোগ্রাম শুরু করা যাক। শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে নাচ শুরু করতে হল। প্রোগ্রাম অনুযায়ী আগে মণিমালা আর বাকিরা নাচ দেখাবে তার পরে সব শেষে ঋতুপর্ণা একাকী একটা নাচ উপস্থিত করবে।
মণিমালা আর বাকি মেয়েরা নাচের আগে একবার ঋতুপর্ণাকে প্রনাম করে নাচ শুরু করে দিল। "চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে, উথলে পরে আলো ও রজনী গন্ধা তোমার গন্ধ সুধা ঢালো... চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে..."
নাচতে নাচতে বারে বারে মণিমালা আদির দিকে তাকায় আর ফিক ফিক করে হেসে দেয়। আদি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ক্যামেরা হাতে ফটো তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
মনিমালার এই চাপা হাসি কৌশিক দেখে আদির কানেকানে বলে, "মাল পেকে গেছে, শুধু তুলতে দেরি। বল কি বস।"
আদি চাপা হাসি হেসে উত্তর দেয়, "তোমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে মনে হচ্ছে। তিস্তাকে বলব নাকি?"
কৌশিক একগাল হেসে বলে, "বলতে পারো কিন্তু বিশেষ কোন ফল হবে বলে মনে হয় না।" গলা নামিয়ে বলে, "ওর সামনেই ওর বান্ধবীদের সাথে ফ্লার্ট করেছি তিস্তার সেই আপত্তি নেই।" বুক চাপড়ে বলে, "শুধু এইখানে একজনের স্থান হলেই হল। বাকিটা পায়ের মাঝে কি করছে না করছে সেটা পায়ের মাঝেই থাকা ভালো।"
ওই কথা শুনে আদিও হেসে ফেলে।
আদির বন্ধুদের চোখ চারটে মেয়েকে প্রায় গিলে খায়, বিশেষ করে ধীমান। নাচ শেষ হতেই ধিমান চেঁচিয়ে ওঠে, "ধুত রবীন্দ্র সঙ্গীতে নাচ দেখে কি কিছু হয় নাকি? বড্ড প্যানপ্যানানি নাচ হয়ে গেল মজা এলো না। পিয়া তু আব তো আজা.... এই রকম কোন গানে নাচ হয়ে যাক তবে না...."
তিস্তা অন্যদিক থেকে চেঁচিয়ে ওঠে, "তোমার কি কোন গার্ল ফ্রেন্ড আছে?"
ধিমান মাথা নাড়ায়, না। তিস্তা উত্তর দেয়, "তাহলে কাকে এই নাচ দেখাবে?"
ধীমান মুচকি হেসে মনিমালার দিকে দেখিয়ে বলে, "এখন নেই তবে হতেই পারে একটু পরে।"
বলেই চোখ টিপে মনিমালার দিকে ইশারা করে। মণিমালা বেচারি আদির দিকে তাকিয়ে থাকে, কিছু একটা বল।
আদি নির্বিকার ভাবে বলে, "সত্যি ত একটু নাচো না এই গানে।"
অনেকেই ছেঁকে ধরে মেয়েদের যে অন্য গানে নাচতে হবে। ঋতুপর্ণা ওদের সবাইকে শান্ত করে কিঞ্চিত গম্ভীর কণ্ঠে বলে, "এটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সিনেমার গানে নাচ তো আমি এদের শেখাইনি।"
রুদ্র উত্তর দেয়, "সিনেমাও তো আমাদের সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে।"
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ তা পড়ে তাহলে।" বলে নিজেই নাচের আসরে নেমে আসে।
সবাই স্তব্দ, আদির বুকের ধুকপুকানি এক মুহূর্তের জন্য থেমে যায়। ঋতুপর্ণা মিউজিক সিস্টেমে গান চালায়, "নিলম পে নভ ছায়ে পোখরাজি ঝাঁকি, মেরে তো নেয়নো মে কিরনো কে পাঙ্খি, পাতি কে গোদি মে শোয়ি থি এক কলি...."
নাচ নয়, যেন চির যুবতী দেব ললনার লাস্যময়ী দেহবল্লরী আন্দোলিত হল।চঞ্চলা, ঝর্ণার মত নৃত্য পটিয়সী, লাস্যময়ীঋতুপর্ণার নাচের তালে তালে উপস্থিত সবার বুকের ধুকপুকানি থমকে যায়। যেন এক সুন্দর প্রজাপতিখোলা আকাশের নিচে উড়ে, সারা মাদলসা অঙ্গ দুলিয়ে দুলিয়ে সবাইকে মাতাল করে তুলতে প্রস্তুত। আদির কানে ভেসে আসে শুধু নুপুর নিক্কন।
চাপা গুঞ্জন ওঠে, "কোন সিনেমার গান রে? মনে হয় লতা গেয়েছে তাই না।"
এই গান আদিও আগে শোনেনি, সবাই চুপ কারুর মুখে কোন উত্তর নেই। কমলিকা ম্যাডাম একটু বয়স্ক তিনি উত্তর দিলেন, "উতসব সিনেমার গান, এই গানে রেখা নেচেছিল।"
হাতের মুদ্রা, ছোট পায়ে তড়িৎ বেগে ধেয়ে যাওয়া। একবার যখন কোমরে হাত রেখে বেঁকে দাঁড়ালো তখন আদির দুই হাত নিশপিশ করে উঠল মাকে জড়িয়ে ধরার জন্য। ফুলের সাজ আর গয়নার সাজে ঋতুপর্ণাকে সাক্ষাৎ স্বর্গের দেবীর মতন দেখতে মনে হচ্ছিল। নাচের তালে তালে যে ভাবে ঋতুপর্ণার অঙ্গ দুলে দুলে উঠছিল তাতে উপস্থিত দর্শক মন্ডলির সবার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে উঠছিল। চোখের কোণে কাজল, সেই পদ্ম পাতার মতন আঁখির পাশে যখন হংস মুদ্রা ধারন করল তখন চোখের মণি আর চোখের সৌন্দর্য যেন শতগুন বেড়ে গেল। আদির চোখ আর নড়ে না, নিস্পলক এক দৃষ্টিতে মায়ের অঙ্গি ভঙ্গির দিকে তাকিয়ে বিমুগ্ধ হয়ে যায়। পাতলা কোমর, সুগোল পেট, শাড়ির কুঁচি নাভির অনেক নিচে আর ঠিক সুগভীর নাভির নিচে ঝুলতে থাকা কোমর বিছার থেকে থেকে ঝলকানি সেই সাথে ওদের নামের আদ্যাখরের লকেটের দুলুনি। তাল লয় ছন্দে ভারি পীনোন্নত স্তন জোড়া দুলে দুলে ওঠে, ভারি নিতম্ব দোদুল্যমান তালে দুলে দুলে ওঠে। পুরুষের চাপা কণ্ঠে উফফ, উফফ ধ্বনি, সবার রক্তের চাপ বাড়তে শুরু করে দেয়। আদির রক্তের চাপ নিম্নগতি হয়ে লুক্কায়িত অঙ্গের পানে ধেয়ে চলে। দুই স্তনের মাঝে সঙ্খ মুদ্রায় দাঁড়াতেই মনে হল, স্তন জোড়া সঙ্খের মতন ফুলে উঠল। শ্বাসে আগুন, চোখে শীতল নীরব বানী, সারা অঙ্গে মন মাতাল করে দেওয়া ছন্দ।
নাচ শেষ হতেই সারা ঘর ফেটে পড়ল হাততালিতে। আদি ফটো কি তুলবে, মায়ের নাচ দেখে বিভোর হয়ে গিয়েছিল তাও মাঝে মাঝে বেশ কয়েকটা ফটো তুলেছিল। বাকিরা অনেকেই মোবাইল নিয়ে পুরো নাচটাই রেকরডিং করে ফেলে। নাচ শেষ হতেই সবার পীড়াপিড়ি না না আরো একটা নাচ দেখানো চাই।
ঋতুপর্ণা পাঁচ মিনিটের নাচেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিল, একটু বসে সবাইকে স্মিত হেসে বলে, "আরে বাবা একটু রেস্ট নিতে দেবে না নাকি। আচ্ছা এইবারে মেয়েরা নাচবে কেমন।" বলে মনিমালাকে কাছে ডেকে বলল, "তুই একটা নাচ।"
মণিমালা একবার আড় চোখে আদির দিকে তাকিয়ে ঋতুপর্ণাকে প্রশ্ন করে, "কি নাচব আন্টি। তোমার পরে কি কেউ আর আমার নাচ দেখবে?" বলেই হেসে ওর আন্টিকে জড়িয়ে ধরে। কচি মেয়ে, মায়ের পরে ঋতুপর্ণাকে খুব শ্রদ্ধা করে।
রুদ্র তিস্তাকে বলল, "তুমি একটা নাচ দেখাও না।"
আদি, কৌশিক আর অনেকে তিস্তাকে ছেঁকে ধরে, নাচো নাচো। তিস্তা মুচকি হেসে বলে, "এই আমি কিন্তু নাচ জানি না।" বলেই চোখ টিপে কৌশিকের দিকে ইশারা করে।
কৌশিক চাপা হাসি দিয়ে বলে, "আরে একবার তোমার ওই খাল্লাস নাচ হয়ে যাক।" ওই কথা শুনে সবাই বড় বড় চোখ করে তিস্তার দিকে তাকায়। পুরুষের মধ্যে অনেকেই হ্যাঁ হ্যাঁ করে ওঠে। "কোম্পানি" সিনেমার ইশা কোপিক্করের লাস্যময়ী জলে ভেজা সিক্ত বসনে নাচ।
তিস্তা সারা অঙ্গে হিল্লোল তুলে চোখ বেঁকিয়ে বলে, "তাহলে আর দেখতে হচ্ছে না।"
আদি ওর কাছে এসে বলে, "কেন হচ্ছে না, আমি না হয় তোমাকে জলে ভিজিয়ে দেব।"
কৌশিক কাছেই ছিল, আদির দিকে চোখ বড় বড় করে বলে, "একা তুমি ভেজাবে কেন ভায়া, গার্ল ফ্রেন্ড আমার ওকে ভেজানোর কিছুটা হক আমারো আছে ভায়া।"
রুদ্র তিস্তার দিকে চোখ টিপে মুচকি হেসে বলল, "শুধু কি জলে ভিজতে চাও সুন্দরী, হোস পাইপ আমাদের কাছেই আছে।"
সঙ্গে সঙ্গে চৈতালি কটমট করে স্বামীর দিকে তাকায়, "কি অসভ্যতামি শুরু করেছ, এটা কি তোমার অফিস পার্টি নাকি? এখন মদ যায়নি তাতেই এই অবস্থা ভাগ্যিস মদের ব্যাবস্থা নেই তাহলে কেলেঙ্কারি করে ফেলতে মনে হচ্ছে।"
আদি কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মায়ের কটমট চাহনি দেখে থেমে গেল। ঋতুপর্ণা সবাইকে থামিয়ে স্মিত হেসে বলল, "মণিমালা একটা নাচ দেখাক তার পরে না হয় আমি আমার শকুন্তলার নাচ দেখাবো।"
মনিমালার নাচের পালা শেষ হতেই সবাই আবার ঋতুপর্ণাকে নিয়ে পড়ল এইবারে আপনার নাচ দেখাতেই হবে। অগত্যা ঋতুপর্ণা নিজের কোম্পোজ করা নাচ, দুস্মন্তের বিরহে শকুন্তলা একটা নৃত্য নাটিকা উপস্থিত করল। নাচের পালা শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল। ঋতুপর্ণাকে ঘিরে সব মেয়েরা একসাথে বসে, ছেলেরা সবাই এক এক করে থালা হাতে বুফে সিস্টেমে খাওয়া দাওয়া করতে ব্যাস্ত।
ঋতুপর্ণা খাবারের থালা হাতে আদিকে কাছে ডেকে বলে, "আয় খেয়ে নে।"
আদি মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু গলায় বলে, "আরে তুমি খাও না আমি পরে খেয়ে নেবো।"
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে বলে, "কেন রে সবার সামনে মায়ের হাত থেকে খেতে লজ্জা লাগছে নাকি?" সত্যি আদির একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিল। ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে বলে, "হ্যাঁ অত লজ্জা মেতে হবে না, আয়। মায়ের হাতে খেলে এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।"
মণিমালা কোথা থেকে দৌড়ে এসে ঋতুপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "না না, আন্টি প্লিস তুমি আমাকে খাইয়ে দাও।"
মনিমালার কান্ড দেখে কৌশিক আদির কানে কানে বলে, "তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে যাও না হলে এইবারে তোমার মা হাত ছাড়া হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে আজকেই ওই মেয়েটা তোমার মাকে ভুলিয়ে তোমার জায়গা দখল করে নেবে।"
আদি মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, "মায়ের ভালোবাসা আমার কাছেই থাকবে কৌশিকদা।" ঋতুপর্ণার দিকে চোখ টিপে বলে, "তাই না মা!"
ওর চোখের দৃষ্টি মায়ের সারা অঙ্গে খেলে বেরিয়ে যায়।
ছেলের তরঙ্গায়িত ঝলসানো চাহনি দেখে ঋতুপর্ণার কান কিঞ্চিত রঞ্জিত হয়ে ওঠে, আলতো মাথা দুলিয়ে চাপা হাসি দিয়ে বলে, "হ্যাঁ, তুই আমার থাকবি সেই নিয়ে কোন দ্বিরুক্তি নেই।"
রুদ্র খেতে খেতে মেয়েদের কাছে এসে ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, "ভীষণ ভালো নেচেছে, দারুন।"
চৈতালি সমস্বরে বলে, "সত্যি ঋতুদি দারুন নাচ।"
রুদ্র হঠাৎ ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, "ঋতুদি তোমার ওই পেছনের দুটো বেশ বড় বড় আর নরম।"
ওর কথা শুনে সবাই হাঁ, বিশেষ করে সুপর্ণা, ঋতুপর্ণা তিস্তা চৈতালি সবার কান গাল গরম হয়ে যায়। হো হো করে হেসে ওঠে রুদ্র, "আরে বাবা সোফার কুশনের কথা বলছি কোথা থেকে কিনেছ।"
চৈতালি স্বামীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, "তুমি না বড্ড অসভ্য।"
পাশের ফ্লাটের পার্থ কাছেই ছিল, হেসে বলল, "যা বাবা এতে অসভ্যতামিটা কোথায় বলেন তো। কুশনের ব্যাপারে কি একটু জিজ্ঞেস করতে মানা?"
পার্থের স্ত্রী, কাকলি পার্থের পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে বলে, "না না একদম অসভ্যতামি নয় তবে কার সামনে কি বলছ একটু ভেবে চিনতে বলবে ত নাকি রে বাবা।"
ছোটোরা একটু দূরে থালা নিয়ে খেতে ব্যাস্ত ছিল সেই দিকে তাকিয়ে তিস্তা হেসে বলে, "আরে বাবা সবাই এখানে প্রাপ্ত বয়স্ক একটু হাসি মজা করা যেতেই পারে।" আদির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে বলে, "বেশ বড় আর গরম গরম হয়েছে বুঝলে খেতে বেশ মজা।"
মায়ের নাচ দেখে আদির কেন, অনেক পুরুষের রক্তে আগুন ধরে গিয়েছিল। বেশির ভাগ পুরুষের ঊরুসন্ধির দিকে তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায় ওদের সিংহ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। কৌশিক মজা করে উত্তর দিল, "কেন খাবে নাকি। চল একটু আদির রুমে খাইয়ে দিচ্ছি।"
তিস্তা হাতের কাবাব নাড়িয়ে মুচকি হেসে বলে, "ধ্যাত তোমার কথা থোরি বলছি, মধুদা কাবাব দারুন বানিয়েছে তার কথা বলছি।"
হাসি ঠাট্টায় রাত গভীর হয়ে ওঠে। নাচের আসর শেষে খাওয়া দাওয়া পালা শেষে সবাই নিজের নিজের ঘরে ফিরতে ব্যাস্ত।
সবাই চলে যাওয়ার পরে তিস্তা আর কৌশিক, ঋতুপর্ণাকে বলে, "আগামী কালের কি প্রোগ্রাম, ঠাকুর দেখতে যাবে?"
ঋতুপর্ণা একবার আদির দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে, "এখন সেই রকম কিছু ঠিক নেই, তবে আগামী কাল রাত ন’টার দিকে আদির ধুনুচি নাচের একটা প্রোগ্রাম আছে তারপরে সময় পেলে বেশ রাতের দিকে বেড়ান যেতে পারে।"
কৌশিক মাথা চুলকে বলে, "একটা প্রোপোসাল দিতে পারি।" বাকি তিনজনে কৌশিকের দিকে উন্মুখ হয়ে তাকাতেই উত্তর দেয়, "একটু রেস্ট নিয়ে শেষ রাতের দিকে যাওয়া যেতে পারে। মানে এখন বের হলে সব মন্ডপে প্রচন্ড ভিড়। যদি রাত দুটো তিনটেতে গাড়ি নিয়ে বেড়ান যায় তাহলে কিন্তু খালি পাবো আর ভালো করে ঠাকুর দেখা যাবে।"
নাচের ফলে ঋতুপর্ণা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, শুকনো মুখ করে তিস্তা আর কৌশিককে বলল, "না রে ভাই, আজকে শরীরে এক ফোঁটা শক্তি নেই। আগামী কাল না হয় ঠাকুর দেখতে যাওয়া যাবে।"
ঠিক হল অষ্টমীর রাতে আদির নাচের পরে বিশ্রাম নিয়ে গভীর রাতের দিকে গাড়ি করে ঠাকুর দেখতে যাওয়া হবে।
********** একাদশ পর্ব সমাপ্ত **********